প্রশ্ন সমাধান: জেন্ডার ভারসাম্য বলতে কী বুঝ?, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জেন্ডার ভারসাম্যের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের উপর একটি নিবন্ধ লিখ, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের বিস্তৃতি বর্ণনা কর।
ভূমিকা : ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কেবল এ স্বীকৃতিটুকুই মিলেছে। তাই যোদ্ধা নারীরাও তাদের নিজেদের বীরত্বের কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করে নি, কারণ তাতে সমাজ মানসে এ ধারণাটিরই সঞ্চার করা হতো যে, এ নারীই বঞ্চিত লাঞ্ছিত দুই লক্ষেরই একজন।
পরবর্তী সময়ে যখন বিভিন্ন সেক্টরে নারীর অবদান মূল্যায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখনো মুক্তিযুদ্ধে নারীকে পুরুষের সহযোগী, সহকর্মী, সহযোদ্ধা হিসেবে দেখানো হতে থাকে মাত্র। নব্বইয়ের দশকে এসে যখন নারী সংগঠনের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা নারীদের সামনে নিয়ে আসা শুরু হয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে উৎসাহিত করা হয়, তখনই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ যোদ্ধা হিসেবে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখা নারী বীর প্রতীকের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান লাভ করা সম্ভব হয়।
মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ : মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বাংলার সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। কেবল পুরুষেরা নয়, মহিলারাও ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। এজন্য তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণকে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট সকল সেক্টরে অংশগ্রহণ : বাংলাদেশের নারীসমাজ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পুরুষ যোদ্ধাদের মতোই যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট সকল সেক্টরে কর্মরত ছিল। সশস্ত্র যুদ্ধ থেকে শুরু করে, গোপন তথ্য আনয়ন, কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন পর্যন্ত সকল ধরনের কাজেই তাদের অবদান ছিল। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে আরো অবদান নারীরা রেখেছেন, তার কোনটিকেই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই । নারীরা তাদের যথাসাধ্য শ্রম দিয়ে, মানসিক সমর্থন দিয়ে দেশকে রক্ষা করতে চেষ্টা করেছেন।
২. যুদ্ধে পরামর্শ ও প্রণোদনা দান : যুদ্ধে প্রণোদনা দান, পরামর্শ প্রদান, কোন কোন ক্ষেত্রে প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাপকভাবে যোদ্ধাদের সংগঠিত করায় নারীরা সক্রিয় ছিলেন একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে। এ কাজে প্রধানত পুরুষগণই ব্যাপকভাবে তৎপর থাকলেও নারীদের কয়েকটি দৃষ্টান্ত সুধী সমাজের অনুসন্ধানে মিলেছে। যুদ্ধে পরামর্শ ও প্রণোদনা দানের কাজটিতে দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানসিকতাসম্পন্ন প্রায় প্রতি ঘরেই নারীরা যুক্ত হন। নারীর এ মৌন সম্মতি মুক্তিযুদ্ধকে আরো বেগবান করে তোলে।
আরো ও সাজেশন:-
৩. যোদ্ধাদের সংগঠিতকরণ : যোদ্ধাদের একত্রীকরণ ও সংগঠিতকরণে শিক্ষিত ও রাজনীতি সচেতন নারীগণ ছিলেন অক্লান্ত । কেবল নারীদের মধ্যে নয়, সংগঠিতকরণের কাজে নারীগণ নারী পুরুষ উভয় শ্রেণির মধ্যে কাজ করে থাকে। এ কাজে সারাদেশেই অসংখ্য নারী সক্রিয় হয়েছিলেন বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের মাধ্যমে। যেমন- মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা, তুলি কলম কণ্ঠ প্রভৃতি। এসব সংগঠন কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধকরণের কাজটিই করে নি, বরং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা ও শরণার্থীদের বেঁচে থাকতে সহযোগিতা করেছে।
৪. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠায় নারীদের অবদান ছিল অসামান্য। এটি প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের নিয়মিত কর্মী বেগম মুশতারী শফীর অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর দিকে এর সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত নারীদের মধ্যে আরো ছিলেন ডা. মঞ্জুলা আনোয়ার, অধ্যাপক তমজিদা বেগম প্রমুখ। এর পরবর্তী সময়ে অসংখ্য নারী এ বেতারের সাথে যুক্ত হন ও নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচারে অংশগ্রহণ করে থাকে।
৫. পত্রিকা প্রকাশ : ঢাকা শহরের সাংবাদিক সেলিনা পারভীন ‘শিলালিপি’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর সর্বশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদে ছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। তিনি নিজে কবিতা ও কলাম লিখতেন এবং বাম রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। যুদ্ধকালে যোদ্ধাদের তিনি তার বাসায় খেতে, আর্থিক সাহায্য ও আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের তিনি খাবার ও ঔষুধ প্রদান করে সহযোগিতা করেছেন। তার এসব ভূমিকা তাকে একজন দেশপ্রেমিক ও স্বদেশপ্রেমিক বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল । ১৩ ডিসেম্বর তারিখে তাকে অপহরণ করে নিয়ে রায়েরবাজার ইটাখোলার বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সাংবাদিকতায় তার ন্যায় আরো অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন।
৬. আশ্রয় ও খাদ্য সরবরাহ : ধনী পরিবারের নারীদের মতো দরিদ্র পরিবারের নারীরাও ক্ষুধার্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিজের সন্তানের ন্যায় যত্ন করে খাইয়েছেন, আশ্রয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সমগ্র দেশের অসংখ্য পরিবার মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাদ্য সরবরাহ না করলে আমাদের যোদ্ধাদের দ্বারা পাকসেনাদের বিরুদ্ধে বীরদর্পে যুদ্ধ করা সম্ভব হতো না। কাজেই আশ্রয় ও খাদ্য দানের এসব ঘটনা যোদ্ধাদের কর্তব্যকর্মে সচল রাখারই নেপথ্য উৎসাহ।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৭. অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহে নারী : গোপনে অস্ত্রশস্ত্র সংরক্ষণ ও যথাস্থানে তা সরবরাহ করা এবং বিভিন্ন যুদ্ধস্থলের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদানের ন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল কাজে নারীরা সীমাহীন পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন। নানা কারণেই পুরুষের মতো ব্যাপকভাবে নারীরা সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিতে পারেনি সত্য কিন্তু প্রাণবাজি রেখে যুদ্ধের যাবতীয় রসদ সংরক্ষণ ও সরবরাহ করে নারীরা মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধজয়ের নেপথ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।
৮. তথ্যসংগ্রহ ও আদানপ্রদান : তথ্যসংগ্রহ এবং তার আদানপ্রদানের কাজে নারীরা পুরুষের চেয়েও অধিক দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন বার বার। যুদ্ধকালীন প্রেক্ষাপটে এমন কিছু তথ্য থাকে, যা যথাস্থানে না পৌছালে শত শত যোদ্ধার জীবন বিপণ্ন হয়ে পড়তে পারে। কাজেই যে কোন যুদ্ধে বার্তাবহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে চিহ্নিত হয়। অশেষ গুরুত্বপূর্ণ এ কাজে নারীরা বার বারই সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। সমগ্রদেশে এমন বার্তাবাহক নারীর সংখ্যা অসংখ্য।
৯. নার্সিং : একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জেলায় ও ভারতের সীমান্ত এলাকায় নারীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আবার কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই সমপ্রদেশে অজস্র নারী সেবা কাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। সব প্রদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চিকিৎসক বোনদের মধ্যে যে যেখানে কর্মরত ছিলেন, সেখানেই তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সেবা ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিলেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। নারী পুরুষ, কৃষক-শ্রমিক, মজুর-মুটে, ধনী-দরিদ্র, শ্রমিক, পুঁজিপতিশ্রেণি সবাই মুক্তিযোদ্ধার অংশীদার এবং গর্ব করার অধিকারী। দেশকে হানাদার মুক্ত করতে যেসব সোনার টুকরো ছেলেমেয়ে স্বদেশপ্রেমে দীক্ষিত হয়ে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই দেশের জন্য অমূল্য প্রাণটিকে সপে দিতে দ্বিধা করেনি। এ প্রাণোৎসর্গের সংখ্যাটি আরো অনেক বেড়ে যেত যদি ঘরে ঘরে সেবাদর্শে দীক্ষিত এ নারীকুল সচেষ্ট না থাকতেন তাদের অসুস্থ ভাইকে সুস্থ করে তোলার জন্য। রক্তের প্রবাহ আরো দীর্ঘ হতো যদি ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে প্রতিষেধক না লাগিয়ে দিতেন এ মহিয়সী নারীরা। কাজেই নিজের প্রাণকে সংকটাপন্ন করে একাত্তরে যারাই এ ব্রতে নিয়োজিত হয়েছেন, তারা সবাই সমভাবে যোদ্ধার মর্যাদায় অভিষিক্ত। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার নারীদের স্বীকৃতিস্বরূপ বীর প্রতীক খেতাবসহ বিভিন্ন খেতাব প্রদান করেছে।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।
- দর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা কর