বাংলাদেশের অর্থনীতিতে MFI কি ভূমিকা পালন করে, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ক্ষুদ্র অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ব্যাখ্যা কর
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে MFI কি ভূমিকা পালন করে?, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ক্ষুদ্র অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ব্যাখ্যা কর।
‘ ভূমিকা : ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম দ্বারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্যতার উপর ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম আজ স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সমর্থ হচ্ছে।
দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য বিশেষায়িত ব্যাংক এবং সর্বোপরি বেসরকারি ও সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এ কার্যক্রমে বিশাল এক জনগোষ্ঠীকে সমবেত করার নিবিড় প্রয়াস চালিয়েছে। নিম্নে ক্ষুদ্র অর্থায়নের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. দারিদ্র্যতা হ্রাস : ক্ষুদ্র অর্থায়ন দ্বারা নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী তাদের সঞ্চয় এক করে থাকে এবং ঋণপ্রদান করে কোনো সক্রিয় কার্যক্রম দ্বারা দারিদ্র্যতা হ্রাস করতে পারে।
ক্ষুদ্র অর্থায়ন ঋণ আয় বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে সমাজ জীবনে তথা নারীর ক্ষমতায়নে সহায়তা করে। ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম আয় ও ব্যয়ের মাঝে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে সহায়তা করার মধ্য দিয়ে দারিদ্র্যতা হ্রাসে ভূমিকা রাখে ।
২. মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি : একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্ষুদ্র অর্থায়ন দেশের সমাজে নিম্ন ও মধ্যবর্তী শ্রেণির মধ্যে অর্থের সংস্থানের মধ্য দিয়ে তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। ক্ষুদ্র অর্থায়ন দেশের মোট বাজেটের একটি বড় অংশ বলে বিবেচিত হয়।
৩. আর্থিক স্বচ্ছলতা : ক্ষুদ্র অর্থায়নের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে পারে ।
৪. বেকারত্ব হ্রাস : ক্ষুদ্র অর্থায়ন বেকারত্ব কমাতে ভূমিকা পালন করে। ক্ষুদ্র অর্থায়নের দ্বারা উদ্যোক্তারা বিভিন্নরকম ক্ষুদ্র কুটির শিল্প স্থাপন করতে পারে। এতে করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বেকার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় ।
৫. দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হ্রাস : ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রম দ্বারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনগোষ্ঠীরা সংখ্যা অনেকাংশে কমে যায় এবং এসব লোকজন অর্থনীতির মূল স্রোতধারায় ফিরে আসে।
৬. অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধি : দেশের অলস অর্থ এ কার্যক্রম দ্বারা সঞ্চালিত হয়ে থাকে। যোগানকৃত অর্থ যত বেশি চক্রাকারে সচল থাকবে তত বেশি দেশের অর্থনীতি বেগবান হবে।
৭. সামাজিক বৈষম্য হ্রাস : ক্ষুদ্র অর্থায়ন সমাজের ধনী- দরিদ্র বৈষম্য হ্রাস করে থাকে। সামাজিক বৈষম্যের জন্য সমাজে একজন ধনী লোক আরো বেশি ধনী হয় এবং দরিদ্র লোকেরা আরো হতো দরিদ্র হয়।
৮. অর্থনৈতিক উন্নতি : একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ক্ষুদ্র অর্থায়নের ফলে সমাজে যাদের হাতে পর্যাপ্ত অলস অর্থ আছে তারা সেই অর্থ আমানত হিসেবে জমা রাখে, সেই অর্থ যাদের অর্থের দরকার তাদের কাছে ঋণ হিসেবে প্রদান করে । এর ফলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। আর এভাবেই অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হয় ।
উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, অর্থনীতির চাকা সচল ও যথাযথভাবে অর্থের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার দ্বারা ক্ষুদ্র অর্থায়নের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী তাদের স্বীয় অর্থনৈতিক মুক্তি লাভে সমর্থ হয়ে থাকে ।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।