ক্ষতিপূরণ দাবি
অনেক সময় বিমাগ্রহীতা জানেন না বিমাকৃত কোম্পানির দাবি পরিশোধের সক্ষমতা বা গ্রাহক সেবার মান কেমন। এসব না জানার কারণে অগ্নিকান্ডের ক্ষতিগ্রস্ত হলে অধিকাংশ গ্রাহককে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। এবার আসুন ক্ষতিপূরণ দাবী সম্পর্কে জেনে নিই।
কোম্পানিগুলো সাধারণত অগ্নি বিমা দাবিটি সঠিক কিনা তা যাচাই করতে জরিপকারী নিয়োগ করে।
এক্ষেত্রে অগ্নিকান্ডের ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ করতে গ্রাহককে সচেতন থাকতে হয়। কেননা দাবিটি নিষ্পত্তি করার জন্য বিমা কোম্পানি নানান কৌশল অবলম্বন করে। সঠিকভাবে দাবি উত্থাপন ও তা আদায় পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:
অগ্নি বিমা থেকে সুবিধা পেতে প্রত্যেক গ্রাহককে অগ্নি বিমা পলিসি করার সময় থেকেই সচেতন থাকা উচিত। এক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত তা হলো, বিমা চুক্তিতে প্রয়োজনীয় সব বিষয় আছে কিনা তা নিশ্চিত করা।
সেগুলো অবশ্যই দেখে-বুঝে নিতে হবে। যেমন, তার কি ধরণের কভারেজ আছে, কি কি বিষয় কভারেজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং কি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
অগ্নিকান্ডের ক্ষতিগ্রস্ত হলে দাবি উত্থাপনের শর্তগুলো কি, কত দিনের মধ্যে দাবি উত্থাপন করতে হবে ইত্যাদি বিষয় বুঝে নেয়ার পর তাকে নিশ্চিত হতে হবে, পলিসির প্রিমিয়ামের টাকা সঠিকভাবে কোম্পানিতে জমা হলো কি না। এক্ষেত্রে পলিসি করার জন্য কোনো ব্যক্তির হাতে প্রিমিয়ামের টাকা না দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রিমিয়াম জমা করা উচিত।
বিমা কোম্পানির অ্যাডজাস্টার বা সমন্বয়কারীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে রেকর্ড রাখুন। এসব রেকর্ডের পৃথক ফাইল করুন। যখন কোন তথ্য বা নথি অ্যাডজাস্টারের কাছে জমা দেবেন তখন সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রতিটি নথির অনুলিপি সংগ্রহ করুন। বিমাচুক্তি চূড়ান্ত বিশ্বাসের চুক্তি। তাই চুক্তিভুক্ত দুটি পক্ষের যে কেউ যদি মিথ্যার আশ্রয় নেয় তবে চুক্তি বাতিলযোগ্য।
বিমাপত্রে যে সকল তথ্য চাওয়া হয় তার মধ্যে বিমাকৃত সম্পত্তি পূর্বে বিমা করা হয়েছে কিনা, বিমা গ্রহীতার কখনও লোকসান হয়েছে কিনা, কোন বিমা কোম্পানি উক্ত সম্পত্তি বিমা করতে বা নবায়ন করতে অস্বীকার করেছে কিনা ইত্যাদি প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিলে বা মিথ্যা বর্ণনার আশ্রয় নিলে চূড়ান্ত বিশ্বাস ভঙ্গ হয় এবং বিমা বাতিলযোগ্য হয়। ফলে বিমাকারী বিমা দাবী অস্বীকার করতে পারে।
অগ্নিজনিত কারণে ক্ষতিসাধন হলে যে নিয়মে দাবী উত্থাপন করতে হয় তা এখানে উল্লেখ করা হলোঃ
(ক) ক্ষতি হওয়ার সাথে সাথে বিমাগ্রহীতা বিমাকারীকে বিলম্ব না করে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানাবে;
(খ) ক্ষতি সংঘটিত হবার ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ লিখিতভাবে বিমাকারীকে জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে খরচ বিমাগ্রহীতা বহন করবে।
(গ) বিমাকারী চাইলে বিমাগ্রহীতাকে দাবীর স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ ও তথ্যাদিসহ একটি সংবিধিবদ্ধ ঘোষণা পেশ করতে হবে।
(ঘ) বিমাকারী বা তার প্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংশপ্রাপ্ত সম্পদের দখল নিতে পারবে বা যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে প্রবেশ করতে পারবে;
(ঙ) বিমাকারী বিমাকৃত সম্পত্তির দখল নিতে পারবে এবং সম্পত্তির হস্তান্তর গ্রহণ করতে পারবে;
(চ) বিমাকারী যুক্তিসঙ্গত সময়ের জন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের দখল বজায় রাখতে এবং ব্যবহার করতে পারবে। বিমাকারী ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদের ভবিষ্যৎ ক্ষতি কমাতে তার অধিকার সংরক্ষণ ও প্রয়োগ করতে পারেন। আরও উল্লেখ্য
যে, বিমা গ্রহীতা এ ধরনের কাজে বাধা দান করলে বিমাকারী বিমাগ্রহীতার অধিকার বাজেয়াপ্ত করতে পারে।
অনেক সময় একই সম্পত্তি একাধিক বিমাকারীর নিকট বিমা করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ক্ষতি হলে সকল বিমাকারীকে অনুপাতিক হারে ক্ষতি প্রদানে অংশগ্রহণ করতে হয়। একাধিক বিমাকারীর সাথে বিমা করা হলে সহবিমাকারীগণ ক্ষতির
অংশ আনুপাতিক হারে পূরণ করে দিবে। বিমাকৃত সম্পত্তির মোট বিমাকৃত অর্থের সাথে সব ক’টি বিমাপত্রের বিমাকৃত অর্থের যে অনুপাত হয় সব ক্ষতিকে সে অনুপাতে ভাগ করলে প্রত্যেক বিমাকারীর ক্ষতির অংশ বের হয়ে যায়।
বর্ণিত সূত্র অনুসারে তা নির্ণয় করা হয়ঃ
সহবিমাকারীর ক্ষতি পূরণের অংশ = ক্ষতি *
বীমাপত্রের অংশের পরিমাণ/ সকল বীমাপত্রের মোট অর্থের পরিমাণ যেমন- মনে করুন,
জনাব শরিফ
তার বাড়ি ও আসবাবপত্র “ক” কোম্পানির নিকট ৬০,০০০ টাকার বিমা করে এবং “খ” কোম্পানির নিকট শুধু বাড়ি ৩০,০০০ টাকা বিমা করে। অগ্নিকান্ডের ফলে জনাব শরিফের ৪০,০০০ টাকা পরিমাণ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ১০,০০০ টাকা পরিমাণ আসবাবপত্র ক্ষতি হয়। এক্ষেত্রে বাড়ির ক্ষতিপূরণ নিচে বণ্টিত হবে-
বাড়ির জন্য “ক” কোম্পানির অংশ গ্রহণ হবে
= ৪০,০০০* (৬০‚০০০/ ৯০‚০০০)
= ২৬,৬৬৬.৬৭ টাকা
বাড়ির জন্য “খ” কোম্পানির অংশ গ্রহণ হবে
= ৪০,০০০ *(৩০‚০০০/৯০‚০০০)
= ১৩,৩৩৩.৩৩ টাকা
আর আসবাবপত্রের জন্য শুধু “ক” কোম্পানি দিবে ১০,০০০ টাকা
ফলে “ক” কোম্পানির দায় প্রদেয় ২৬,৬৬৬.৬৭ + ১০,০০০= ৩৬,৬৬৬.৬৭ টাকা
এবং ”খ” কোম্পানির প্রদেয় ১৩৩৩৩.৩৩ টাকা। পক্ষান্তরে আসবাবপত্রের ক্ষতিপূরণ প্রথম ধরা হলে ক্ষতিপূরণের অংশগ্রহণ হবে নিন্ম
আসবাব পত্রের জন্য “ক” কোম্পানির প্রদেয় ১০০০০ টাকা
এখন “ক” কোম্পানির অবশিষ্ট থাকল ৬০,০০০- ১০,০০০
=৫০,০০০ টাকা
বাড়ির জন্য “ক” কোম্পানির দেয় ৪০,০০০(৫০‚০০০/৮০‚০০০) = ২৫,০০০ টাকা বাড়ির জন্য “খ” কোম্পানির দেয় ৪০,০০০ (৩০‚০০০/৮০‚০০০)
= ১৫,০০০ টাকা।
তাহলে,
বাড়ির জন্য ‘ক’ কোম্পানির দিতে হয় মোট ১,০০০০+২৫,০০০০=৩৫,০০০/-
এবং ‘খ’ কোম্পানিকে দিতে হয় মোট = ১৫,০০০ টাকা।
H.S.C
- দুর্ঘটনা বীম কী,বাংলাদেশের বীমা শিল্পের সমস্যা ও সমাধানের উপায়সমূহ বর্ণনা কর
- অগ্নি অপচয়ের কারনগুলাে উল্লেখ কর, পুন:বীমা ও যুগ্নবীমা মধ্যে পার্থক্য লিখ।
- বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি ব্যাংকের গুরুত্ব আলোচনা কর
- বৈদেশিক বিনিময় হার উঠা-নামার কারনগুলো উল্লেখ কর, ইসলামী ব্যাংকের মূলনীতি কী
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বর্ণনা কর
- দীর্ঘ মেয়াদি ঋন কি? জামানত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বিবেচ্য বিষয়সমূহ বর্ণনা কর।
- ঝুঁকির প্রকারভেদ বর্ণনা কর, কিভাবে জীবন বীমার দাবি আদায় করা হয় বর্ণনা কর।
- বীমা বলতে কী বোঝায়? বাজি চুক্তি ও বীমা চুক্তির মধ্যে পার্থক্য লিখ
- বিনিময় বিলের সংজ্ঞা দাও, প্রত্যয়ন পত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ কর।
- বিভিন্ন প্রকার ব্যাংক হিসাবের বর্ণনা দাও? চেক কী?
1 thought on “অগ্নিবীমার দাবি আদায় ও মীমাংসা পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর”