অধিকার কি? অধিকারের সংজ্ঞা ও প্রকার, অধিকারের সংজ্ঞা দাও,অধিকারের প্রকারভেদ, নৈতিক অধিকার কাকে বলে
সাধারণ অর্থে অধিকার বলতে নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু করার ক্ষমতাকে বুঝায়। এই অর্থে অন্যকে হত্যা করাও অধিকার বলে বিবেচিত হতে পারে কিন্তু পৌরনীতিতে অবাধ ও স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতাকে অধিকার বলে না।
অধিকার বলতে সমাজ স্বীকৃত বা আইন ও সংবিধান নিয়ন্ত্রিত ক্ষমতাকে বুঝায়। পৌরনীতিতে অধিকার বলতে কতকগুলো সুযোগ-সুবিধাকে বুঝায় যা ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিত্ত্বের বিকাশ সম্ভব নয়। এটি প্রায়শই আইন ও প্রবিধান দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। সমাজের মধ্যে ব্যক্তির মঙ্গল, স্বায়ত্তশাসন এবং সমতার জন্য অধিকার অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়।
আরো ও সাজেশন:-
বিভিন্ন ধরনের অধিকারের মধ্যে রয়েছে যেমন, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকার এবং পরিবেশগত অধিকার। নাগরিক অধিকার ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সুরক্ষার সাথে সম্পর্কিত। রাজনৈতিক অধিকার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন ভোট দেওয়ার অধিকার এবং সরকারী পদে থাকার অধিকার।
অর্থনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে রয়েছে শ্রম অধিকার, সম্পত্তির মালিকানা এবং অবাধ বাণিজ্য করার অধিকার জড়িত। সামাজিক অধিকারগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত।
অধিকারের সংজ্ঞা
বিখ্যাত কিছু মানুষের অধিকারের সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হল।
“অধিকার হল সমাজ স্বীকৃত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রযুক্ত দাবি।”-বোসাংক
‘‘অধিকার তা নয় যা কেউ আপনাকে দেয়; এটি তা যে কেউ আপনার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে না।’’ – রামসে ক্লার্ক
‘‘একজন মানুষের অধিকার হুমকির মুখে পড়লে প্রত্যেক মানুষের অধিকার খর্ব হয়।’’ – জন এফ কেনেডি
‘‘অধিকার মানে ক্ষমতা, এবং একটি মুক্ত জাতিকে মুক্ত রাখা যায় শুধুমাত্র সেই জনগণের দ্বারা যারা তাদের স্বাধীনতার জন্য সজাগ।’’ – ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট
“অধিকার সমাজ বহির্ভূত বা সমাজ নিরপেক্ষ নয়, এটা সমাজভিত্তিক।” অধ্যাপক লাস্কি
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
অধিকারের প্রকারভেদ
প্রথমত অধিকারকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
১. নৈতিক অধিকার এবং
২. আইনগত অধিকার।
যেসব অধিকার সামাজিক ন্যায়নীতিবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, সেগুলিকে নৈতিক অধিকার বলে। এটি ভঙ্গের অপরাধে রাষ্ট্র কোনরূপ শাস্তি বিধান করতে পারে না। নৈতিক অধিকার ভঙ্গকারী কেবল নিজ বিবেকের দংশন অনুভব করে এবং সমাজ কর্তৃক নিন্দিত হয়। অন্যদিকে, যেসব অধিকার আইন ও সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সমর্থিত, সেগুলিকে আইনগত অধিকার বলা হয়। আইনগত অধিকার প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা হয় যেমন,
১. পৌর অধিকার।
২. সামাজিক অধিকার।
৩. রাজনৈতিক অধিকার এবং
৪. অর্থনৈতিক অধিকার।
১. পৌর অধিকার
যেসব সুযোগসুবিধা ছাড়া মানুষ সভ্য ও সামাজিক জীবনযাপন করতে পারে না এবং যে-সুযোগের অভাবে ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশসাধন ব্যাহত হয়, সেইসব সুযোগসুবিধাকে পৌর অধিকার বলা হয়। বর্তমানে নিম্নলিখিত পৌর অধিকারগুলিকে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ বলে মনে করা হয় ।
- জীবন ধারণের অধিকার
- চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার
- ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার
- কার্যের অধিকার
- সম্পত্তির অধিকার
- পরিবার গঠনের অধিকার
- ধর্মের অধিকার
- শিক্ষার অধিকার
২. সামাজিক অধিকার
নাগরিকদের সামাজিক জীবন সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তোলার জন্য কতকগুলি সামাজিক সুযোগ-সুবিধা একান্ত অপরিহার্য। রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হলে, সেগুলিকে সামাজিক অধিকার বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের সামজিক অধিকারের মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য-
- শিক্ষার অধিকার
- ধর্মের অধিকার
- বসবাসের অধিকার
- স্বাস্থ্যের অধিকার
- সাম্যের অধিকার
৩. রাজনৈতিক অধিকার
রাজনৈতিক অধিকার বলতে রাষ্ট্রীয় কার্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকে বোঝায়। জনগণই হল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সার্বভৌম। তাই জনগণের রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি ছাড়া সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন অসম্ভব। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকারগুলো হল যেমন,
- ভোটদানের অধিকার
- নির্বাচিত হওয়ার অধিকার
- সরকারি চাকুরি লাভের অধিকার
- অভিযোগ করার অধিকার
- সমালোচনার অধিকার
- বিপ্লবের অধিকার
- মিছিল মিটিং করার অধিকার
- সমাবেশের অধিকার
ঘ. অর্থনৈতিক অধিকার
অর্থনৈতিক অধিকার হল সেইসব অধিকার, যেগুলি মানুষের অভাব-অনটন ও অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিয়ে জীবনকে সুখস্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও নিরাপদ করে তোলে। দৈনন্দিন অন্নসংস্থানের ব্যাপারে যুক্তিসংগত অর্থ উপার্জনের সুযোগ ও নিরাপত্তাকেই মূলত অর্থনৈতিক অধিকার বলে। গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অধিকারসমূহ হল যেমন,
- কর্মের অধিকার
- উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অধিকার
- অবকাশের অধিকার
- প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার