অপারেশন সার্চলাইট কি? | অপারেশন সার্চলাইট বলতে কী বুঝ? |অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর
অপারেশন সার্চলাইট কী?, অপারেশন সার্চলাইট বলতে কী বুঝ?
মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক যখন কোনভাবেই একমত হতে পারছিল না তখনই গোপনে গোপনে পাকিস্তানি হানাদাররা ষড়যন্ত্রের জাল বুনে। একদিকে লোক দেখানো বৈঠক আর অন্যদিকে চলে অস্ত্রের মজুত। অতঃপর ২৫ মার্চ রাতে টিক্কা খান ও তার সহযোগীরা যে নীল নকশা অঙ্কন করে তাই ‘অপারেশন সার্চলাইট’।
অপারেশন সার্চলাইট : মানবজাতির ইতিহাসের এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নাম অপারেশন সার্চলাইট। এটা মূলত ছিল পূর্ব পাকিস্তানি জনগণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধ্বংস করার পূর্ব পরিকল্পনা।
অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর, অপারেশন সার্চলাইট কাকে বলে?
১. প্রণেতা ও গঠন : সিদ্দিক সালিক ‘Witness to Surrender’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ১৭ মার্চ জেনারেল টিক্কা খান, লে. জে. খাদেম হোসেন ও রাও ফরমান আলী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বা বাঙালির উপর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ‘নীল নকশা’ প্রণয়ন করেন।
২. ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন : ২০ মার্চ রাষ্ট্রপ্রতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান, জেনারেল হামিদ, টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর প্রমুখকে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সামরিক প্রস্তুতি তথা অপারেশন সার্চলাইট চূড়ান্ত অনুমোদন করেন।
অপারেশন সার্চলাইট সংজ্ঞা দাও,অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে ধারণা দাও
৩. কর্মকাণ্ড : ২৫ মার্চ রাতে প্রায় ১১.৩০ মিনিটের দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। এ সময় প্রথম হামলার শিকার হন ফার্মগেট এলাকায় মিছিলরত বাঙালি ছাত্র জনতা।
৪. পুলিশ ও ইপিআর-এ আক্রমণ : এ সময়ে প্রায় একই সঙ্গে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ফার্মগেট এলাকায় ও পিলখানায় পাকবাহিনী আক্রমণ চালায়। বাঙালি পুলিশ ও ইপিআর সদস্যরা জীবন বাজি ধরে যুদ্ধ শুরু করলেও ভারী অস্ত্রের কাছে পরাজয় বরণ করে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দেন।
অপারেশন সার্চলাইট বলতে কি বোঝায়, অপারেশন সার্চলাইট কি
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হত্যাকাণ্ড : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালানো হয় সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। জগন্নাথ হল, জহুরুল হক হলে পাক সৈন্যরা রকেট হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। রুমে রুমে তল্লাশি চালিয়ে গুলি ও বেয়োনেট দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে শত শত লাশ সিঁড়িতে ও বারান্দায় স্তূপ করা হয়। রোকেয়া হলে ছাত্রীদের নির্মম পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা।
অপারেশন সার্চলাইট পরিচিতি লিখ,অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে লিখ
৬. গণহত্যা শুরু : ২৫ মার্চ রাতে পুরান ঢাকায় তাঁতী বাজার, শাঁখারি বাজার, কচুক্ষেত, মিরপুর, রায়ের বাজার, ধানমণ্ডিসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চলে গণহত্যা।
অপারেশন সার্চলাইটের হত্যাযজ্ঞ কেবল ঢাকায় সীমাবদ্ধ ছিল না। কুমিল্লা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সৈয়দপুর ও সিলেটসহ সর্বত্র গণহত্যা চালায় পাক হানাদার বাহিনী।
অপারেশন সার্চলাইট আলোচনা কর, অপারেশন সার্চলাইট সংক্ষেপ বণনা কর
অপারেশন সার্চলাইট বলতে কি বুঝায় অপারেশন সার্চলাইট বলতে কী বোঝো,
৭. বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার : রাত দেড়টার দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিশেষ সার্ভিস গ্রুপের এক প্লাটুন কমান্ডো সৈন্য ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে আক্রমণ করে বাঙালি জনগণের নেতা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। তবে তার আগেই বঙ্গবন্ধু ইপিআর এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করে দেন।
অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর, অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর,
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অপারেশন সার্চলাইট ছিল মানবজীবনের এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নাম। আর যা হয়েছিল নিরীহ বাঙালি জাতির ভাগ্যে। তবে এ নিরীহ জাতি তা মুখ বুজে সহ্য করেনি। পাল্টা দাঁত ভাঙা জবাব দিয়েছে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ঘৃণিত ঐ জাতিকে বাংলার বুক থেকে মুছে ফেলে চিরতরে। তবুও যেন বাঙালির মনে আজও স্বস্তি নেই নব্য হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের জন্য ।