অবচয় কাকে বলে । অবচয় কত প্রকার ও কি কি । অবচয় সুবিধা ও অসুবিধা । অবচয় বৈশিষ্ট্য । অবচয় গুরুত্ব
অবচয় কাকে বলে । অবচয় কত প্রকার ও কি কি । অবচয় সুবিধা ও অসুবিধা । অবচয় বৈশিষ্ট্য । অবচয় গুরুত্ব
অবচয় কাকে বলে :-
কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত স্থায়ী সম্পত্তি ব্যবহার, কালের আবর্তন, অপ্রচলন, সরাসরি ভোগ, বাজার মূল্যের স্থায়ী পতন ইত্যাদি দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান কারণে সম্পত্তির গুণ পরিমাণ ও মূল্যের যে হ্রাস ঘটে তাকে অবচয় বলে।
অবচয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ Depreciation ল্যাটিন শব্দ Depretium হতে উদ্ভুত হয়েছে। De অর্থ হ্রাস পাওয়া এবং Pretium অর্থ মূল্য। সুতরাং Depretium শব্দের অর্থ মূল্য হ্রাস পাওয়া। অর্থাৎ সম্পত্তি ব্যবহারের ফলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পায় তাকে অবচয় বলে।
আধুনিক হিসাববিজ্ঞানে অবচয়কে একটি বণ্টন প্রক্রিয়া বলা হয়। সম্পত্তির মূল্য হতে ভগ্নাবশেষ মূল্য বাদ দিয়ে সম্পত্তির কার্যকর জীবনকালের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হল অবচয়। অন্যান্য চের মত অবচারও একটি খরচ এবং প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান হিসাবে ডেবিট করা হয়। ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দালান কোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি স্থায়ী সম্পত্তি অর্জন ও ব্যবহার করতে হয়।
প্রত্যেক স্থায়ী সম্পদের একটি কার্যকর জীবন থাকে। সময়ের আবর্তনে উক্ত কার্যকর ক্ষমতা ক্রমাগত হ্রাস পায়। জগতের কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত পরিসম্পদও এই নিয়মের অধীন। দৃশ্য বা অদৃশ্য কারণে সম্পত্তির কার্যকর ক্ষমতা যে পরিমাণ হ্রাস পায় তাই অবচয়।
অবচয়ের বিভিন্ন ধারণার উপর ভিত্তি করে অবচয়ের যে বিভিন্ন সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তার কয়েকটি নীচে উল্লেখ করা হলঃ
R.N Carter, Depreciation is the gradual and permanent decrease in the value of an asset from any cause. অর্থাৎ যে কোন কারণে সম্পত্তির স্থায়ী ও ক্রয় মূল্যাবনতিই হল অবচয়।
স্পাইসার এবং পেগলার হিসাবে, যে কোন কারণে নির্দিষ্ট সময়ে সম্পত্তির কার্যকরি ক্ষমতা হ্রাসের মূল্যমান কে অবচয় বলে সংজ্ঞায়িত করা যায়।
সুতরাং, ব্যবহার বা সময় অতিবাহনের ফলে সম্পত্তির ক্রমাগত মূল্যাবনতি যা মেরামত বা আংশিক প্রতি স্থাপনের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হয় না তাকে অবচয় বলা হয় ।
অবচয়ের কারণসমূহ :-
অবচয়ের কারণসমূহকে প্রধানত দু’টি ভাগে বিভক্ত করা হয়।
(১) অভ্যন্তরীণ কারণ (Internal Causes),
(২) বাহ্যিক কারণ (External Causes)
অভ্যন্তরীণ কারণ :-
সম্পতির অন্তর্নিহিত স্বাভাবিক কারণে অবচয় সৃষ্টি হলে তাকে অবচয়ের অভ্যন্তরীণ কারণ বলে। এ জাতীয় কারণ নিম্নরূপঃ
(ক) ব্যবহারজনিত ক্ষয় (Wear and Tear) :
স্থায়ী সম্পত্তি ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে জীর্ণ হয়ে পড়ে এবং কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে অবচয়ের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের স্থায়ী সম্পত্তি হল কলকব্জা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি। এসব সম্পত্তির ক্ষয়-ক্ষতি ও অবচয় ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
(খ) সময়ের প্রবাহ (Effusion or Passage of Time) :
কিছু কিছু সম্পত্তির ব্যবহার না হলেও সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে মূল্য হ্রাস পায়। যেমনঃ ইজারা সম্পত্তি গ্রন্থস্বত্ব, পণ্যস্বত্ব ইত্যাদি। এসব সম্পত্তি ব্যবহার হোক বা না হোক সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে তার প্রাপ্ত হয় এবং অবচয় ধার্য হয় ।
(গ) সন্তোপ বা নিষ্কাশন (Consumption or Extraction) :
সরাসরি সম্রোগ বা নিষ্কাশনের মাধ্যমে কিছু সম্পত্তির হ্রাস ঘটে ফলে অবচয় ধার্য করতে হয়। যেমন- তেলখনি, লৌহখনি, বনভূমি ইত্যাদি। এসব সম্পত্তির সম্ভোগ বা নিষ্কাশন যত বেশী হবে সম্পত্তির পরিমাণ তত হ্রাস পাবে। সুতরাং সম্ভোগ বা নিষ্কাশনের পরিমানের ওপর অবচয়ের পরিমাণ নির্ভর করে।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
বাহ্যিক কারণ :-
সম্পত্তির অন্তনিহিত স্বাভাবিক কারণ ছাড়া যখন অন্যকোন কারণে মূল্য হ্রাস ঘটে তখন সে কারণকে বাহ্যিক কারণ বলা হয়। অবচয়ের বাহ্যিক কারণ নিম্নরূপ:
(ক) অপ্রচলন (Obsolescence) :
নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ভোক্তার চাহিদা পরিবর্তনের ফলে কোন চালু সম্পত্তি হঠাৎ অপ্রচলিত হয়ে যেতে পারে। এই অপ্রচলনের ফলে চালু সম্পত্তির অবচয় ধরতে হয় কেননা অপ্রচলনের ফলে সম্পত্তির ব্যবহারিক মূল্য থাকে না। কোন যন্ত্রপাতি অপ্রচলনের জন্য অন্যয় সৃষ্টি হলে তার জন্য যন্ত্রপাতি দায়ী নয়, প্রত্যক্ষভাবে দায়ী হল নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার।
(খ) বাজার দরের স্থায়ী হ্রাস (Permanent Fall in the Market Price) :
বাজার দর স্থায়ী হ্রাস পাওয়ার ফলে কোন কোন সম্পত্তির অবচয় ধার্য করতে হয়। যেমন- শেয়ার, সিকিউরিটি ইত্যাদি সম্পত্তির বাজার মূল্যের স্থায়ী পতন জনিত ক্ষতি অবচয় রূপে বিবেচিত হয়।
(ঘ) অব্যবহার (Left Unused) :
অনেক সময় সম্পত্তি অব্যবহার অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে উহার গুণ, মান পরিমাণ ও মূল্য হ্রাস পেতে পারে। অব্যবহারজনিত এই মূল্য হ্রাস অবচরে সৃষ্টি হয়।
(ঙ) অস্বাভাবিক কারণ (Abnormal Causes) :
অস্বাভাবিক কিছু কারণেও অবচয় সৃষ্টি হতে পারে। যেমনঃ আগুন, বন্যা, কড়, ভূমিকম্প ইত্যাদির ফলে সম্পত্তির ক্ষতি হতে পারে ফলে সম্পত্তির মূল্য হ্রাস পায় এবং অবচনা সৃষ্টি হয়।