অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের নবম অধ্যায়ে ‘মাথাপিছু আয়’

একটি দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের যোগফলকে সেই দেশের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। মাথাপিছু গড় আয় কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত আয় নয়।

একটি দেশের মোট আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে একটি দেশের মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করা হয়। যে দেশের মাথাপিছু আয় যত বেশি সে দেশের জনগণের সার্বিক জীবনযাত্রার মান তত উন্নত এবং অর্থনীতি তত বেশি সমৃদ্ধ বলে ধরে নেওয়া হয়। অর্থাৎ,

মাথাপিছু আয় = কোনো নির্দিষ্ট বছরের মোট জাতীয় আয় গু ঐ বছরের মধ্যে মোট জনসংখ্যা

যেমন—২০১১ সালে একটি দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ১০ কোটি এবং ওই সময়ে মোট জাতীয় উৎপাদন হলো ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার।

সুতরাং মাথাপিছু আয়

= ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার গু ১০ কোটি = ৫০০ মার্কিন ডলার।

যেকোনো দেশের কৃষি, শিল্প, সেবাসহ যাবতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের আয় বৃদ্ধি করা। জনগণের আয় বৃদ্ধি পেলে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায় এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি দেশ কতটা উন্নত বা অনুন্নত তা বিচার করা হয় কতগুলো সূচক বা মানদণ্ডের সাহায্যে। এই মানদণ্ডগুলো হলো দেশটির মোট জাতীয় উৎপাদন, জনগণের মাথাপিছু আয়, জীবনযাত্রার মান প্রভৃতি। এই সব দিক বিচারে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নতি লাভ করেছে। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার প্রতিবছরই পূর্ববর্তী বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

এখন বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু গড় আয় দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৪ ডলার।

তার আগের অর্থবছরে মাথাপিছু গড় আয় ছিল এক হাজার ৯০৯ ডলার। অর্থাৎ দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় এক বছরের ব্যবধানে ১৫৫ ডলার বেড়েছে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি মুদ্রায় মানুষের মাথাপিছু আয় বছরে দাঁড়াচ্ছে গড়ে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ মাসে গড় আয় ১৪ হাজার ৬০০ টাকার মতো। তবে অনেক সময় মাথাপিছু আয় তত্ত্বের কিছু অসুবিধাও আছে। সাধারণত একটি দেশে ধনীর সংখ্যা যত বেশি থাকবে, সেই দেশের মাথাপিছু আয় ততই বেশি দেখাবে।

কিন্তু সেই দেশের সবাই যে ওই মাথাপিছু আয়ের সুফল ভোগ করে না কিংবা কিছু মানুষ যে কত খারাপ অবস্থায় জীবন যাপন করে, মাথাপিছু আয়ের মাধ্যমে সেই তথ্য আমরা পাই না। তবু একটি দেশের মানুষের আয় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেতে এই তত্ত্ব আমাদের সাহায্য করে।

J.S.C

Leave a Comment