অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে ‘কুপি বাতি’

[অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে ‘কুপি বাতি’র কথা উল্লেখ আছে]

কুপি বাতি হচ্ছে জ্বালানি তেলের মাধ্যমে আলো জ্বালানোর একটি বাতি। একসময় আবহমান গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে এই কুপি বাতি আলো দিত। অমাবস্যার রাতে মিটি মিটি আলো জ্বালিয়ে গ্রামের পথ চলার স্মৃতি এখনো বয়স্করা রোমন্থন করেন। তখন কুপিই ছিল মানুষের অন্ধকার নিবারণের অন্যতম অবলম্বন।

প্রাচীনকালে আগুন ব্যবহারের মাধ্যমে বাতির প্রচলন হয়। তারপর ধীরে ধীরে কুপি বানাতে শেখে মানুষ। শুধু তাই নয়, সেকালের রাজপ্রাসাদেও ছিল বাহারি রকমের কুপি বাতি।

নিকট অতীতেও বনেদি ঘরগুলোতে ছিল নানা ধরনের বাহারি কুপি বাতি। এমনকি ট্রেনের সিগন্যাল, পৌরসভায় আলোর জন্য ব্যবহৃত হতো বাহারি ডিজাইন ও রঙের এই কুপি বাতি।

কিন্তু কালের আবর্তে সেই কুপি বাতির স্থান দখল করে নিয়েছে বাহারি বৈদ্যুতিক বাল্ব, চার্জার লাইট, টর্চ লাইট, মোবাইল লাইটসহ আরো অনেক কিছু। ফলে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় এই নিদর্শনটি। একটা সময় ছিল যখন গ্রামবাংলার আপামর জনসাধারণের অন্ধকারে আলোকবর্তিকার কাজ করত কুপি।

মাটি, বাঁশ, লোহা, কাচ বা পিতল দিয়ে তৈরি করা হতো এই কুপি বাতি। সবচেয়ে কম দামের ছিল মাটির তৈরি কুপি। মধ্যম দামের ছিল টিনের তৈরি কুপি। একটু বেশি দামি ছিল কাচের তৈরি কুপি। পিতলের তৈরি কুপি ছিল সবচেয়ে দামি। সামর্থ্য অনুযায়ী লোকজন কুপি কিনে সেগুলো ব্যবহার করত।

বাজারে বিভিন্ন নকশা ও ধরনের কুপি পাওয়া যেত। কুপি হতে বেশি আলো পাওয়ার জন্য ছোট কুপিগুলোর জন্য কাঠ, মাটি বা কাচের তৈরি গজা বা স্ট্যান্ড ব্যবহার করা হতো। গেঞ্জি অথবা সুতি কাপড়ের তেনা (নেকড়া) ছিঁড়ে দড়ি পাকিয়ে পলতে বানিয়ে ঢোকানো হতো কুপি বাতিতে। কুপি বাতি জ্বালানোর জন্য জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন তেল ব্যবহার করা হতো।

কেরোসিন ছিল দুই রকম—সাদা ও লাল। সাদা কেরোসিনের দাম লাল কেরোসিনের চেয়ে একটু বেশি ছিল। সাদা কেরোসিনের ধোঁয়া কম হতো; কিন্তু তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেত। এ জন্য লাল কেরোসিন বেশি ব্যবহৃত হতো।

বর্তমানে আধুনিক সভ্যতায় হারিকেন ও কুপি বাতির পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ ও সোলার প্লান্ট ও চার্জার লাইট। হয়তো এমনও সময় আসবে যখন ছেলে-মেয়েদের কুপি বাতি চেনানের জন্য জাদুঘরে নিয়ে যেতে হবে।

শিক্ষা

2 thoughts on “অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে ‘কুপি বাতি’”

Leave a Comment