অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের একাদশ অধ্যায় ‘মুন্ডা’র

মুণ্ডা বাংলাদেশে বসবাসরত অন্যতম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল, সিলেট জেলার চা বাগান এবং বৃহত্তর যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় এদের বসবাস। মুণ্ডা শব্দটি সংস্কৃতি থেকে উৎপত্তি হয়েছে, যার প্রকৃত অর্থ গ্রামপ্রধান। মুণ্ডারা মুণ্ডারি বা মান্দারি ভাষায় কথা বলে।

এটি অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। মুণ্ডারা কোথাও কোথাও কোল নামে পরিচিত। বাংলাদেশে মুণ্ডাদের সাতটি গোষ্ঠীর উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন—কম্পাট মুণ্ডা, খাঙ্গার মুণ্ডা, খাড়িয়া মুণ্ডা, পাথর মুণ্ডা, দেরগে মুণ্ডা, সাঙ্কা মুণ্ডা ও মাঙ্কী মুণ্ডা।

মুণ্ডারা সাধারণত বন-জঙ্গল ও মাটি কাটার সঙ্গে আদিকাল থেকেই সম্পৃক্ত রয়েছে এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও মুণ্ডারা বিভিন্ন চা বাগানের চা শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। এখন তারা মাছ ধরা এবং ছোটখাটো ব্যবসায়ও নিয়োজিত আছে। মুণ্ডাদের সাধারণত একই গোত্রের মধ্যে বিবাহবন্ধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

মুণ্ডাদের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠানের আগে মুখ দেখা পর্ব পরিলক্ষিত হয়। উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী একজন আরেকজনকে দেখে পছন্দ করে। তাদের পরবর্তী অনুষ্ঠান লোটাপানি অনুষ্ঠান করে। লোটাপানি অনুষ্ঠান হলো ছেলে বা মেয়ের পছন্দ হওয়ার পর তাদের নতুন বস্ত্র পরিধান করানো।

বিয়ের আগের রাতে বরযাত্রী কনের বাড়িতে আসে এবং সেই রাতে ঝুমুর ও নৃত্যগীতির সঙ্গে হাড়িয়া নামের দেশি মদ খাওয়ার ধুম পড়ে। মুণ্ডা সমাজে আমোদ-ফুর্তিতে রাত জাগরণ শেষে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়। মুণ্ডা সমাজে কনেকে পণ দেওয়ার প্রথার প্রচলন রয়েছে। মুণ্ডা বিধবারা সাগাই নামের ধর্মীয় প্রথার মাধ্যমে আবার বিয়ে করতে পারে।

বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে উভয় পক্ষের অনুরোধে। মুণ্ডাদের ধর্মীয় দেবতার নাম সিং, বোঙ্গা বা সূর্য। এরা সূর্য দেবতার পূজায় অভ্যস্ত। এদের প্রায় সব উৎসবই ঋতু ও ফসলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মুণ্ডাদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী থাকলেও বেশির ভাগই সনাতন ধর্মের অনুসারী। দেব-দেবীর উপাসনা করে থাকে।

মুণ্ডা সমাজ ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য রাজা, মন্ত্রী, চৌধুরী, ডাকুয়া নির্বাচন করা হয়। বংশানুক্রমিকভাবে রাজা, মন্ত্রী, চৌধুরী বা ডাকুয়া নির্বাচন করা হয়। মুণ্ডাদের বিশেষ পছন্দের খাদ্য সিদ্ধ চালের ভাত, রুটি, কাঁচা ফল। মুণ্ডাদের পোশাক পরিধানে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়।

যেমন— মহিলারা গলায় হাঁসুলি, হায়কল, শ্রীবন্ধী, পায়ে কাঁকন পরত। পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছিল ধুতি বা গামছা-গেঞ্জি।

J.S.C

1 thought on “অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের একাদশ অধ্যায় ‘মুন্ডা’র”

Leave a Comment