অ্যানিমিয়া কী?, চিন্তার গতি কত?, চুল কীভাবে বাড়ে?,মানুষ নাক ডাকে কেন?,আমরা হাই তুলি কেন?
মানুষ নাক ডাকে কেন?
অনেকের জন্য ঘুমানো খুব কঠিন হয়ে যায় যখন তার পাশের মানুষটি ঘুমের সময় নাক ডেকে চলে। যে নাক ডাকে সে বোঝে না, আশেপাশের মানুষরাই তা উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু মানুষ নাক ডাকে কেন?
আমরা যখন ঘুমাই আমাদের গলার পেশি শিথিল হয়ে যায়। ফলাফল স্বরূপ বাতাস আসা-যাওয়ার পথ চিকন হয়ে যায়। যখন আমাদের মুখের ওপরের অংশ, আল-জিহবা, নাকের বিভিন্ন অংশ এবং জিহবার তল বেশি শিথিল হয়ে যায় তা মুখে বাতাস আসা যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়।
শরীর স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস নিতে চাইলে মানুষের গলায় অতিরিক্ত বাতাসের চাপ গলার আশেপাশে মসৃণ টিস্যুকে প্রকম্পিত করে। বাতাস যাতায়াতের পথ যত চিকন হয় তার নাক ডাকার শব্দ হয় তত তীব্র। ছেলে হোক বা মেয়ে কিছু কিছু কারণে নাকা ডাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাংসপেশি শিথিল হয়ে পড়ে।
তাই নাক ডাকার হার বেড়ে যায়। একইভাবে ওজন বেশি হলে তা গলায় ফ্যাটি টিস্যু বাড়িয়ে দেয় যা বাতাসের যাতায়াতের পথকে আরও সরু করে দেয়। ফলে যাদের ওজন বেশি তারা নাক ডাকে বেশি। এমনকি ঘুমানোর ভঙ্গির উপর নাক ডাকার হার নির্ভর করে। উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমালে বাতাস বেশি বাধাপ্রাপ্ত হয় ফলে নাক ডাকা বেশি হয়।
দেখা যায় মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা বেশি নাক ডাকে। এর পেছনে নানা ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে। ছেলেদের গলার জায়গা তুলনামূলকভাবে বেশি ফলে জিহবা শিথিল হয়ে গলার ফাঁকা জায়গায় ঝুলে পড়লে বাতাসের আসা-যাওয়ার পথ সরু হয় কিন্তু বন্ধ হয়ে যায় না।
মেয়েদের ক্ষেত্রে সে জায়গা অনেক ছোট। তাই যখন জিহবা শিথিল হয়ে ঝুলে পড়ে তা বাতাস আসা-যাওয়ার প্রায় সম্পূর্ণ পথই বন্ধ করে দেয় ফলে মেয়েদের ঘুম ভেঙে যায় এবং জেগে ওঠে। তাই তারা আর নাক ডাকে না।
সারা দিনে শরীরে পানি ঠিকমত পৌঁছালে নাক হাইড্রেটেড থাকে। ফলে মানুষ নাক কম ডাকে। অতিরিক্ত একটি বালিশ নিয়ে মাথা একটু তুলে শোবেন। এতে নাক ডাকা বন্ধ করা যাবে।
আমরা হাই তুলি কেন?
শুধু মানুষ নয় বিড়াল, কুকুর, পাখি এমনকি সাপও হাই তোলে। এমনকি গর্ভজাত শিশুরাও হাই তোলে। কিন্তু আমরা হাই তুলি কেন? বিভিন্ন সময় এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে হাই তোলার সময় আমরা বেশি পরিমাণ বাতাস গ্রহণ করি। তাই হাই তোলার পেছনে মূল কারণ বেশি পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ।
কিন্তু পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৮৭ সালে এটি প্রমাণিত হয় যে হাই তুলবার ফলে শরীরে অক্সিজেন বা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়েও না বা কমেও না-অর্থাৎ রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াবার ক্ষেত্রে হাই তোলার কোনো ভূমিকা নেই। ২০০৭ সালে প্রথম ধারণা করা হয় যে মাথার তাপমাত্রা ঠাণ্ডা করাই হাই তোলার পেছনে একটি প্রধান কারণ।
মস্তিষ্কের তাপমাত্রার মূল নিয়ন্ত্রক তিনটি। সেগুলো যথাক্রমে শরীরের তাপমাত্রা, রক্তপ্রবাহ এবং মেটাবলিজম। হাই তোলার সময় আমরা চোয়ালের পেশি টানটান করি যা মুখে, ঘাড়ে এবং মাথায় রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয় এবং তা মাথা ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করে। এ লক্ষ্য একটি পরীক্ষা করা হয়। সে পরীক্ষায় যথাক্রমে কিছু ব্যক্তিকে হাই তোলার ভিডিও দেখানো হয়।
যাদের মধ্যে কারও কারও মাথা গরম বাক্সে আবদ্ধ রাখা হয় এবং বাকি ব্যক্তিদের ঠাণ্ডা বাক্সে। মানসিকভাবে হাই তোলার ছবি দেখলে আমরাও হাই তুলি। এ প্রবণতা শুধুমাত্র শিম্পাঞ্জি এবং মানুষদের মধ্যেই দেখা যায়। এটি নিজেকে যাচাইয়ের একটি প্রক্রিয়া এবং সামাজিকতা থেকে এ প্রবণতা তৈরি হয়। খুব ছোট শিশুদের মধ্যে বা অটিস্টিকদের মধ্যে তাই তা দেখা যায় না।
পরীক্ষায় দেখা যায়, যাদের মাথা গরম বাক্সে ছিল তাদের প্রায় ৪১% ঘন ঘন হাই তুলতে থাকে। অন্যদিকে যাদের মাথা ঠাণ্ডা বাক্সে আবদ্ধ ছিল তাদের মধ্যে মাত্র ৯% ব্যক্তি হাই তোলে। পরবর্তীকালে ২০১০ সালে ইঁদুরের মস্তিষ্কের ওপর পরীক্ষা করে দেখা হয় যে হাই তোলার পর মাথার তাপমাত্রা কমে যায়।
আমরা জানি যে মাথায় রক্তের তাপমাত্রা ধমনির রক্তের চেয়ে প্রায় ০.২ সেন্টিগ্রেড বেশি। তাই যখন আমরা হাই তুলি মাথায় রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়, মাথার গরম রক্ত বের হয়ে আসে এবং নিচ থেকে ঠাণ্ডা রক্ত মাথায় প্রবেশ করে।
এছাড়াও এসময় শীতলিকরণ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়। আমরা হাই তোলার সময় মুখ বা নাক দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস নিই। তা ধমনীর গরম রক্তের সংস্পর্শে এসে তাকে ঠাণ্ডা করে দেয় এবং সে উত্তাপকে বাইরে নিয়ে যায়।
তাই আমাদের শরীরের চারপাশে তাপমাত্রা বেশি থাকলে হাই বেশি ওঠে এবং শরীরের চারপাশে তাপমাত্রা কম থাকলে হাই ওঠা কমে যায়। হাই তোলা কমানোর উপায় হলো হাই তোলা ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা, উঠে হেঁটে আসা, লম্বা শ্বাস নেওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা।
শীতে হাত পা ফাটে কেন?
মাত্র শীত পড়া শুরু হয়েছে। এর মাঝেই হাত-পা ফাটা শুরু করেছে। মনে হচ্ছে চাইলেই হাত-পায়ে ছবি আঁকতে পারব। ত্বক মসৃণ রাখতে হলে শীতে হাত পায়ের যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। শীতে হাত-পা ফাটা, ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া, মুখ রুক্ষ হয়ে যাওয়ার পেছনের কারণ শীতের ঠাণ্ডা বাতাস শরীরের আর্দ্রতা শুষে নেয়। চামড়া আর মসৃণ থাকে না।
এমনকি চামড়া উঠতেও শুরু করে। শীতে চামড়া আর্দ্রতা ধরে রাখার ২৫% ক্ষমতাই হারায়। তাই এসময় হাত-মুখ সবই শুকিয়ে আসে। সব ঠিক থাকলে ত্বকের গ্রন্থিগুলো থেকে ‘সেবাম’ (সেরাম না) নামে একধরনের তেল বেরোয় যা ত্বক মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
কিন্তু শীতে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে বলে তা শুকিয়ে যায় সেজন্যই আমাদের চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়, ফাটা শুরু করে। তাই এ সময় প্রয়োজন পড়ে বিশেষ যত্নের। এজন্য আমরা শরীরে ময়েশ্চারাইজার বা কোল্ড ক্রিম মাখি। এটি শীতের ঠাণ্ডা বাতাস ও ত্বকের মাঝে এক ধরনের দেয়াল তৈরি করে যা চামড়ার তেলতেলে ভাবকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
শীতে স্বাভাবিকভাবে আমরা গরম পানি দিয়ে গোসল করি। কিন্তু বেশি গরম পানি শরীরের চামড়ার জন্য আরও ক্ষতিকর। এটি চামড়ার শুষ্কতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এজন্য শীতে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাই ভালো।
শীতে ওজন কমানোর উপায় হলো সুষম ও কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা ফলে অনায়াসে ওজন কমানো সম্ভব। শীতের টাটকা সবজি এবং ফলমূল আপনার আহার যেমন একঘেয়েমি দূর করে তেমনি সমানতালে চলবে ডায়েট। এ সময়ে বাজারে হাতের নাগালেই পাওয়া যায় নানা ধরনের ভেষজ প্রোটিন, কম ক্যালরি ও অধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ শাকসবজি। এগুলো বেশি পরিমাণে খাবেন।
চোখের পানি লবণাক্ত কেন?
আজকে ক্লাসে স্যারকে একটি বিষয় কীভাবে হয়, কেন হয় এই প্রশ্ন করার জন্য সবার সামনে আমাকে এমনভাবে বকা দিলো যে, যতবার সে কথা ভাবছি চোখ ছলছল করছে। কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ মনে হলো, এই যে আমি কাঁদছি-চোখ বেয়ে পানি পড়ছে, চোখের পানি লবণাক্ত কেন? খাবারের সাথে লবণ খাই দেখেই কি আমাদের চোখের পানি লবণাক্ত।
নাকি এর পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে? আসলে চোখের পানি লবণাক্ত কারণ এতে বহু ধরনের লবণ থাকে। তাদের বেশির ভাগই আসে রক্ত থেকে। খাবার থেকে লবণ অন্ত্র দিয়ে শোষিত হয় এবং আমাদের রক্তে প্রবেশ করে। লবণ চোখের পানিতে প্রবেশ করে যখন রক্ত লেক্রিমাল গস্ন্যান্ড দিয়ে প্রবাহিত হয়। যেখানে চোখের পানি উৎপন্ন হয়। ফ্রেঞ্চ কেমিস্ট ল্যাভয়সিয়ে প্রথম বলেন চোখের পানিতে অনেক ধরনের লবণ রয়েছে তার মধ্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড প্রধান।
দ্বিতীয় যে লবণটি রয়েছে তা হলো পটাসিয়াম ক্লোরাইড। এছাড়াও চোখের পানিতে ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায় যে চোখের পানিতে লবণের পরিমাণ প্লাজমাতে লবণের পরিমাণের সমানই। তাই চোখের পানির স্বাদ লবণাক্ত। তবে চোখ দিয়ে পানি পড়া আলাদা একটি রোগ। অনেকে চোখের যত্নে চশমা নিয়ে থাকেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নেওয়া উচিত না।
চোখের পানির রাসায়নিক সংকেত: NaCl.nH2O. চোখ দিয়ে পানি পড়ার চিকিৎসা হলো শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের কোণে মালিশ এবং অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে প্রোবিং সার্জারির প্রয়োজন পড়তে পারে। তরুণ বয়সে নেত্রনালির সমস্যার কারণে চোখ দিয়ে পানি পড়লে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েডের মিশ্রণ ব্যবহার করলে সমস্যা চলে যায়। প্রবীণদের ক্ষেত্রে ডিসিআর করা সম্ভব হয় না। তখন ডিসিটি অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে লেজার রশ্মির মাধ্যমেই চামড়া না কেটে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব।
চুল সাদা হয় বা পাকে কেন?
চুল সাদা হওয়ার কারণ জানেন কি? স্বাভাবিকভাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের চুল সাদা হয়ে যায়। তবে অনেকসময় দুঃশ্চিন্তায় তরুণ বয়সেও অনেকের চুল সাদা হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত দায়িত্ব, কাজের চাপ ও দুশ্চিন্তা চুল পাকার হার বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু আমাদের মাথার চুল পাকে কেন? চুলের কোষে রঞ্জক পদার্থের উৎপাদন কমে গেলেই চুল সাদা হয়। এই উৎপাদন হার অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা রঞ্জক পদার্থের উৎপাদন-হার অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। চুলের রং বিশেষ ধরনের রঞ্জক মেলানিনের ওপর নির্ভর করে।
এটি মূলত দুই ধরনের অ্যামিনো এসিড থেকে উৎপাদিত হয়। মেলানোসাইটস নামক কোষ থেকে মেলানিনের উৎপত্তি। যে প্রক্রিয়ায় মেলানিন উৎপাদিত হয় তাকে মেলানোজেনেসিস বলে। মেলানোসাইট কোষ আমাদের সারা দেহেই রয়েছে। এটি দ্বারা যে মেলানিন উৎপন্ন হয় তা আমাদের ত্বক, চোখ ও চুলের রঙের জন্য দায়ী।
মূলত দুই ধরনের মেলানিন রয়েছে, যথা ইউমেলানিন যা চুলের কালো রঙের জন্য দায়ী এবং ফিওমেলানিন যা হলুদাভ রঙের জন্য দায়ী। এই দুই প্রকারের মেলানিন কীভাবে ও কী পরিমাণে মিশ্রিত হচ্ছে তার ওপর চুলের রং নির্ভর করে। কেরাটিনোসাইটস মূলত কেরাটিন প্রস্তত করে। কেরাটিন হচ্ছে একধরনের প্রোটিন কোষ যা আমাদের চুল গঠন করে।
কেরাটিনে স্বল্প মেলানিন চুল পাকার পেছনের কারণ। চুল সাদা হয়ে যায় যখন কোনো মেলানিন থাকে না। বিভিন্ন কারণেই চুল পাকতে পারে। স্বাভাবিকভাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের চুল পাকে। এর কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেলানোসাইটস নামক কোষের কর্মদক্ষতা কমতে থাকে, যদিও উপস্থিত থাকে।
ধীরে ধীরে মেলানোসাইটসের সংখ্যা কমে যায়। ফলাফলস্বরূপ খুব কম মেলানিন উৎপনণ হয় এবং একসময় আর উৎপন্নই হয় না। তাই আমাদের চুল বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে ধূসর থেকে সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায়। অল্প বয়সে অনেক সময় চুল পেকে যায়।
এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। যেমন জিনগত ত্রুটি, অস্বাভাবিক হরমোন নিঃসরণ যা হতে পারে কোনো আঘাত বা ভয়ংকর দুশ্চিন্তা থেকে, সারাদেহে মেলানিনের অস্বাভাবিক বিতরণ ইত্যাদি। এমনকি পরিবেশগত কারণে চুল পাকতে পারে। দুশ্চিন্তায় অনেক নিউরোট্রান্সমিটার নির্গত হয় বলে চুল পেকে যায়।
সাধারণত এসব নিউরোট্রান্সমিটার স্বল্পায়ু বিশিষ্ট। যার অনেক সুবিধাও আছে। নানা উত্তেজনার সময়, যেমন: অনেক জোরে ছুটে আসা গাড়ির সামনে থেকে বাঁচতে বা সিংহের কাছ থেকে ছুটে পালাতে, এসব নিউরোট্রান্সমিটার সাহায্য করে।
কিন্তু বহুকাল ধরে নিউরোট্রান্সমিটারের উপস্থিতি ডিএনএর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই ক্ষতির ফলাফল স্বরূপ মেলানিনের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয় এবং চুল সাদা হয়ে যায়। চুল সাদা হলে করণীয় হলো দুশ্চিন্তা না করা, বেশি পানি পান করা, ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার পরিহার করা।
অ্যানিমিয়া কী?
অ্যানিমিয়া বলতে বুঝায় যখন রক্তে স্বাভাবিক পরিমাণ হিমোগ্লোবিন বা লোহিত রক্তকণিকা থাকে না। রক্তের নানাবিধ ব্যাধি প্রকাশ করতেই রক্তশূন্যতা বা রক্তাল্পতা বা রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) শব্দটি ব্যবহৃত হয়। অ্যানিমিয়ার পেছনে মূল কারণ স্বল্প রক্ত উৎপাদন, কোষ নষ্ট হওয়া বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।
এর ফলে নানা ধরনের শারীরিক অসুখও দেখা যায়। কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অতিরিক্ত রক্ত ঝরলে এক ধরনের অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। শরীরের অন্যান্য তরল রক্তের সাথে মেশে, যার ফলে এনিমিয়া হয়। আরেক ধরনের অ্যানিমিয়া হয় যদি অতিমাত্রায় লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হয়। এটি অনেক সময় বংশগত সূত্রে অথবা অনেক জ্বর, অ্যালার্জি বা লিউকোমিয়া থেকে হতে পারে।
আরেক ধরনের অ্যানিমিয়া আছে যাকে নিউট্রিশনাল অ্যানিমিয়া বলে। শিশুদের অ্যানিমিয়া এই নামে পরিচিত। সবচেয়ে সাধারণ ও কম মারাত্মক অ্যানিমিয়া এটি। লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের জন্য যখন যথেষ্ট আয়রন থাকে না তখনই এমনটি দেখা যায়। দেহে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য আয়রন প্রয়োজন।
আমরা যেসব খাবার খাই তাতে সামান্য আয়রন থাকে। অনেকের পক্ষক্ষ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার সামর্থ্য থাকে না, যেমন সব সময় প্রয়োজনীয় মাংস, ডিম, সবজি খাওয়া হয়ে ওঠে না। তাই আয়রনের অভাব খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অ্যানিমিয়ার লক্ষণগুলো হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। রোগী যথেষ্ট বিশ্রামের সুযোগ পেলে সহজে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে। ফলমূলে ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে।
প্রতিদিন আয়রনযুক্ত ফল যেমন আপেল, টমেটো, বেদানা, কলা, আঙ্গুর, কমলা, গাজর ইত্যাদি খেলে রক্তশূন্যতা দূর করা যায়। তাই সরাসরি আয়রন গ্রহণ করতে প্রতিদিন ফলমূল ও শাকসবজি খেতে ভুলবেন না।
চিন্তার গতি কত?
চিন্তা কি সবচেয়ে দ্রুতগামী? আগে সেই ধারণাই করা হতো। সেজন্য বলা হতো চিন্তার মতো দ্রুতগামী। কিন্তু এখন আমরা জানি যে চিন্তা হচেছ এক প্রকার স্পন্দন। এখানে বলে রাখি, আমরা কল্পনা নিয়ে বলছি না, বলছি চিন্তার বিষয়ে, যা আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়।
যার বেগ এখন সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। বিস্ময়কর বিষয় যে আমাদের এই স্পন্দনের বেগ বেশ ধীর। শিরার মধ্যদিয়ে স্পন্দনের বেগ ঘণ্টায় ১৫৫ মাইল-অর্থাৎ শরীরের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তথ্য প্রেরণ করতে যে সময় লাগে তার চেয়ে অনেক দ্রুত দেহের বাইরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তথ্য প্রেরণ সম্ভব।
আমাদের দেহের তুলনায় টেলিভিশন, রেডিও, টেলিফোন এসব দ্বারা তথ্য অনেক দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণ সম্ভব। যদি আমাদের নাড়ির মাধ্যমে কোন তথ্যকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয় তবে টেলিফোন বা রেডিওর মাধ্যমে প্রেরিত তথ্যের চেয়ে ঘন্টাখানেক দেরিতে পৌঁছবে।
আমাদের পায়ের আঙুলে ব্যথা পেলে সে তথ্যও মাথা পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশ বেশ সময় নেবে। আমরা মনে করতে পারি যদি আমাদের মাথা হয় উত্তর আফ্রিকা তবে আমাদের পা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা-অর্থাৎ সোমবার কোনো কিছু পায়ে কামড় দিলে সে তথ্য মাথা পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশ সময় নেবে, এমনকি বুধবারও হয়ত হয়ে যাবে।
আর তখন পা সরাতে চাইলে সে তথ্য পা পর্যন্ত পৌঁছাতে সপ্তাহই শেষ হয়ে যাবে। আমরা বিভিনণ ধরনের সংকেতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাই ভিন্ন বেগে। আমরা সাধারণত আলোর চেয়ে শব্দে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করি।
তেমনি সাদামাটা আলোর চেয়ে উজ্জ্বল আলোতে, প্রিয় কিছুর চেয়ে অপ্রিয় কিছুতে প্রতিক্রিয়া আরও দ্রুত হয়। প্রত্যেকের নাড়ির মধ্যদিয়ে প্রবাহিত সংকেতের বেগ ভিন্ন। তাই কেউ কেউ হয়তো নানা সংকেতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করে অন্যদের চেয়ে।
চুল কীভাবে বাড়ে?
চুল এবং নখের বৃদ্ধি একই রকম। আমরা চুল কাটার কিছুদিন পরেই দেখি তা বড় হয়ে উঠছে। কিন্তু চুল কিভাবে লম্বা করা যায়? চুলের বৃদ্ধি আমাদের দেহের শৃঙ্গাকৃতি চামড়া থেকে। চুল বাড়ে যখন চামড়ার একটা অংশ নিচের স্তরে যায় এবং সেখানকার মূলকে ধাক্কা দেয়।
তারপর তা চামড়ার চামড়ার বিভিনণ স্তর ভেদ করে চুল হয়ে বেরিয়ে আসে। চুলের মূলে চার স্তরে কোষ রয়েছে। এরা চুলের কোষকে ভাগ করতে, চুলকে ঠেলে চামড়া ভেদ করে উপরে উঠতে সাহায্য করে। চুল যত বড় হতে থাকে এর কোষ তত শৃঙ্গাকৃতি চামড়ায় রূপান্তরিত হয় আমদের বাইরের চামড়ার মতো।
চুলের বাইরের তলে কোষগুলো চেপ্টা এবং একে অপরের গায়ে গায়ে লেগে থাকে। মূলের কাছাকাছি কোষগুলো বড় গোলাকার, মোটা যা থেকে চুল গঠনের উপাদানগুলো আসে। চুলের মূল মূলত টিস্যুতে প্যাঁচানো থাকে। তাই চুল টেনে ছিড়লেও আমরা মূলসহ ছিড়তে পারি না। চুল মূলত এক মাসে আধা ইঞ্চি করে বাড়ে।
অবাক করা বিষয় যে চুল সবসময় একই হারে বাড়ে না। রাতে চুল খুব ধীরে বাড়ে। আর দিনে চুল বৃদ্ধির গতি বাড়ে। বিকেলের দিকে তার গতি আবার ধীর হয়ে যায়। ছেলেদের মাথায় চুল মূলত তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত থাকে। মেয়েদের মাথায় চুলের স্থায়িত্ব প্রায় সাত বছর। সেদিক থেকে চোখের পাপড়ির স্থায়িত্ব মাত্র ছয় মাস।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সারা দেহে প্রায় তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখের মতো চুল থাকে। ডিম, মাছ, দুধ, দই, ছানা নিয়মিত খেতে হবে। ব্রকলি, পালং শাক, বাঁধাকপির মতো সবুজ শাকসবজি চুলের কেরাটিন মজবুত করে চুল ঘন করে তোলে। কমলা, স্ট্রবেরি, পেয়ারার প্রতিদিন খেলেও চুল ঘন হয়।
মানুষ ঘুমের সময় হাঁটে কেন?
আমাদের জীবনে ঘুম খুব জরুরি। ঘুম আমাদের দেহের ক্লান্ত টিস্যু এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে উজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের আট ঘণ্টার মতো ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু মানুষের ঘুম পায় কেন এবং কীভাবে ঘুমাই?
অনেক সময় ঘুমের মাঝে অনেকে হাঁটেই বা কেন? ধারণা করা হয় আমাদের মস্তিষ্কে ঘুম কেন্দ্র রয়েছে। যা আমাদের ঘুম এবং হাঁটাকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু মস্তিষ্কের এই ঘুমকেন্দ্র কি দ্বারা পরিচালিত হয়? মস্তিষ্কের ঘুমকেন্দ্রের মূল পরিচালক রক্ত। সারাদিন আমাদের শরীরের ভেতরে নানা কাজকর্মের মধ্যদিয়ে রক্তে বিভিন্ন উপাদান নিঃসৃত হয়।
তার মধ্যে অন্যতম হলো ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম ঘুমকেন্দ্রকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কে ঘুমকেন্দ্র মূলত দুটি কাজ করে। প্রথমত, এটি মাথার একটি অংশকে নিস্তেজ করে দেয় ফলে আমাদের আর নড়াচড়ার ইচ্ছা থাকে না। যাকে আমরা মস্তিষ্কের ঘুমও বলতে পারি। দ্বিতীয়ত, এটি আমাদের দেহের কিছু রগ ও নালিকেও নিস্তেজ করে দেয়।
যার ফলে আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঘুমিয়ে পড়ে। যাকে আমরা দেহের ঘুম বলতে পারি। এই দুই ধরনের ঘুম স্বাভাবিকভাবে একসূত্রে গাঁথা। কিন্তু দুটি ঘুম আলাদাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়তো মস্তিষ্ক ঘুমিয়ে থাকবে কিন্তু শরীর জেগে থাকবে। যাদের নার্ভ সঠিকভাবে কাজ না করে তাদের ক্ষেত্রেই এমনটি দেখা যায়।
সেসময় একজনের মস্তিষ্ক ঘুমিয়ে থাকলেও শরীর নড়াচড়া করতে পারে। ফলে সে হাঁটা-চলাসহ সবই করতে পারবে, কিন্তু নিজের অজান্তে। কেননা তার মস্তিষ্ক ঘুমিয়েই থাকবে। তাই যাদের দুটি ঘুম আলাদা, তারাই ঘুমের মাঝে হাঁটে অর্থাৎ তাদের শরীর জেগে থাকে।
দেহের ভেতরে রক্তের রং কী?
রক্তের রং বলতে প্রথমেই আমাদের যা মনে হয় তা হলো লাল। কখনো প্রশ্ন জেগেছে রক্তের রং লাল কেন? দেহের ভেতরে রক্তের রং সাধারণত গাঢ় লাল বা কালচে লাল। রক্তের রং যে বিষয়টির উপর নির্ভর করে সেটি হলো এটি ধমনির রক্ত না শিরার রক্ত।
ধমনিতে লাল রক্ত কোষগুলো ফুসফুস থেকে দেহতন্তু বা টিস্যু পর্যন্ত অক্সিজেন বহন করে থাকে। লাল রক্ত কোষগুলোতে হিমোগ্লোবিন থাকে। যা ফুসফুসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে অক্সিহিমোগ্লোবিন তৈরি করে। এর রং উজ্জ্বল লাল।
তাই ধমনির রক্তের রং উজ্জ্বল লাল। রক্তকোষগুলো দেহকোষে অক্সিজেন দিয়ে আবার ফুসফুসে ফেরার জন্য যখন শিরায় প্রবেশ করে তখন তাতে আর অক্সিজেন থাকে না। তাই তার রং হয় অনেকটা কালচে লাল, প্রায় বেগুনির কাছাকাছি। শিরার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এই রক্ত দেহের বাইরে থেকে নীলচে দেখায় এর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে।
প্রথমত আমাদের দেহের শিরাগুলো খুব পাতলা এবং চামড়ার মধ্যে দিয়ে তা দেখলে অনেকটা নীলচে দেখায়। ত্বকের উজ্জ্বলতার ওপর অনেকাংশে রক্তের রং নির্ভর করে। শিরার তুলনায় ধমনির চামড়া অনেক পুরু এবং ধমনি দেহের অনেক ভেতরে অবস্থিত। তাই ধমনির রক্ত খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।