প্রশ্ন সমাধান: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব,বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব কি কি?, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব Importance of International Trade
সভ্যতার গোড়া থেকেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য চলে আসছে । একসময় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি ‘ (Engine of Economic Growth) বলা হতো। বর্তমানেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম । বিভিন্ন আঞ্চলিক অর্থনৈতিকগোষ্ঠী বা আঞ্চলিক বাণিজ্যগোষ্ঠীর উদ্ভবই এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization – WTO), ইউরোপীয় মুক্তবাণিজ্য সংস্থা (Buropean Free Trade Association – EFTA) , দক্ষিণ এশীয় অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্য সংস্থা (SAPTA) প্রভৃতি আঞ্চলিক বাণিজ্যগোষ্ঠীর উদ্ভব অবাধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্ব বহন করে । আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো :
১. আন্তর্জাতিক বিশেষীকরণ : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মুক্ত বা অবাধ বাণিজ্য পরিচালিত হলে দেশের আন্তর্জাতিক বিশেষীকরণ সম্ভব হয় । এর ফলে তুলনামূলক ব্যয়নীতির ভিত্তিতে যে দেশ যেসব দ্রব্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা পায় সে দেশ সেসব দ্রব্য উৎপাদনে পারদর্শী হয়ে ওঠে।
২. অনুৎপাদিত দ্রব্য ভোগের সুবিধা : কোনো দেশই তার প্রয়োজনীয় সব দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না । আন্তর্জাতিক বাণিজোর মাধ্যমে একটি দেশ তার প্রয়োজনীয় অনুৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী সহজেই বিদেশ হতে সংগ্রহ করতে পারে যেমন : তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাট উৎপাদিত হয় না । অপরপক্ষে , বাংলাদেশে তেল উৎপাদন হলেও প্রচুর পাট জন্মে । এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাট রপ্তানি এবং তেল আমদানি করতে পারে।
৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ : কোনো দেশ যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন : বন্যা , মহামারি , দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে সে দেশ দূর্যোগপূর্ণ এলাকার জনগণকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য , বস্ত্র , ওষুধ ইত্যাদি বাণিজ্যের মাধ্যমে সহজেই বিদেশ হতে আমদানি করতে পারে।
৪. উদ্বৃত্ত পণ্য বিদেশে রপ্তানির সুযোগ : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে কোনো দেশের উদ্বৃত্ত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বা অন্য কোনো দ্রব্য আমদানি করা সম্ভব । এভাবে একটি দেশ তার উদ্বৃত্ত পণ্যকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিয়োজিত করতে পারে।
আরো ও সাজেশন:-
৫. কম মূল্যের দ্রব্য ক্রয় করা যায় : যেসব দ্রব্য দেশের মধ্যে উৎপাদন করা ব্যয়বহুল তা কম দামে অন্য কোনো দেশ হতে ক্রয় করা সম্ভব । আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে একটি দেশ নিজের দেশের ব্যয়বহুল দ্রব্য উৎপাদন না করে তা কম দামে বিদেশ হতে আমদানি করে দেশীয় মূলধনের সংস্থান করতে পারে।
৬. দেশীয় উৎপাদকগণের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় : বৈদেশিক বাণিজ্যের ফলে উৎপাদনকারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যায় । ফলে উৎপাদন খরচ হ্রাস পায় এবং উৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উৎপাদকগণ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সচেষ্ট হয়।
৭. প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক ব্যয় সংকোচন : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যরত দেশগুলোর শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ সম্প্রসারিত হয়ে থাকে। ফলে ঐসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক বায় হ্রাস পায়। কেননা আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে শিল্পায়নের আকারও বৃদ্ধি পায়।
৮. আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আদান – প্রদানের পথ প্রশস্ত হয় । এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।
৯. দেশীয় বাজার সম্প্রসারণ : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কারণে বিশ্বব্যাপী দেশীয় বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ বৃদ্ধি পায় । ফলে উৎপাদনকারীদের উৎপাদন ক্ষমতা এবং মুনাফা উভয় বৃদ্ধি পায়।
১০. কারিগরি জ্ঞানের উন্নয়ন : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত দেশ থেকে কারিগরি জ্ঞানের উৎকর্ষতা অর্জনে সহায়তা পেতে পারে এবং উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় মূলধন দ্রব্য সংগ্রহ করতে পারে । এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অংশ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের বিশেষজ্ঞরা উন্নত দেশে প্রশিক্ষণের সুবিধা পেয়ে থাকে।
১১. অর্থনৈতিক উন্নয়ন : বর্তমান যুগে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি । রপ্তানি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে না পারলে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ব্যয় সংস্থান করা যাবে না। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলো তার অবকাঠামো উন্নয়নে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলো থেকে সহযোগিতা পেয়ে থাকে। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জিত হতে পারে।
সুতরাং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন একান্তভাবেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল তাই বাংলাদেশের উন্নয়ন কৌশল বৈদেশিক ঋণ নির্ভর না হয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য নির্ভর হওয়া উচিত।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য Characteristics of International Trade of Bangladesh
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হলো :
১. আমদানি নির্ভরতা : বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্যসামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করে তা অপেক্ষা অধিক পরিমাণ পণ্যসামগ্রী বিদেশ হতে আমদানি করে থাকে । ভারত হলো এ দেশের সবচেয়ে বড় আমদানি দ্রব্যের দেশ।
২. পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি: বাংলাদেশ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাট উৎপাদনকারী দেশ । বর্তমান পৃথিবীর মোট উৎপাদিত পাটের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ বাংলাদেশে জন্মে । ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাস অর্থাৎ জুলাই – ফেব্রুয়ারি মেয়াদে পাট ও পাটজাত খাতের পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৪ লাখ ডলার । মিশর , সিরিয়া , তুরস্ক , ইরানসহ বিভিন্ন দেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ | মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় পাটজাত দ্রব্যের প্রচুর চাহিদা আছে।
৩. শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি : বাংলাদেশ বিদেশ থেকে শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী আমদানি করে থাকে । যেমন : কলকজা লোহা , ইস্পাত , যন্ত্রপাতি , ওষুধ , রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি।
৪ . জনশক্তি রপ্তানি : বাংলাদেশ । বিভিন্ন দেশে প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি করে । এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় , যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
৫ . খাদ্যশস্য আমদানি : খাদ্যঘাটতি পূরণের জন্য বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে বাংলাদেশকে খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হয় । প্রতি বছর গড়ে ২৫-৩০ লক্ষ টন খাদ্য আমদানি করে থাকে।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
৬ . প্রতিকূল ভারসাম্য : বাংলাদেশ প্রধানত কাঁচামাল ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে । বৈদেশিক বাজারে এ সব দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক । পক্ষান্তরে , বাংলাদেশ বিদেশ হতে প্রধানত শিল্পের প্রয়োজনীয় কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি আমদানি করে । এসব দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক । এর ফলে সর্বদা প্রতিকল ভারসাম্য অবস্থা বিরাজ করে।
৭. প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক : স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারত , পাকিস্তান , চীন , নেপাল , মিয়ানমার প্রভৃতি প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৮. মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য: সম্প্রতি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
৯. নৌপথে বাণিজ্য ; বাংলাদেশের বহিবাণিজ্যের অধিকাংশই সমুদ্রপথে পরিচালিত হয়ে থাকে । বৈদেশিক বাণিজ্যে আমদানি – রপ্তানি চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে।
১০. ওয়েজ আর্নার্স স্কিম : বিদেশে কর্মরত প্রবাসী ব্যক্তিদের জন্য বাংলাদেশে ওয়েজ আর্নাস স্লিম প্রবর্তন করা হয়েছে । ওয়েজ আর্নার্স স্কিমের আওতায় বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করা হয়।
১১. বিলাসদ্রব্যের আমদানি হ্রাস : স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বাংলাদেশ সরকার বিলাসদ্রব্যের আমদানি যথাসম্ভর হ্রাস করেছে । আমদানি তালিকায় অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যসামগ্রী , শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল , কল কারখানার যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশ প্রভৃতির ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
১২. বিদেশিদের প্রভাব : বাংলাদেশের অধিকাংশ বাণিজ্য বিদেশি ব্যাংক , বিমা কোম্পানি বা ব্যবসায়ীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- সোয়াপ (SWAP) কাকে বলে? , সোয়াপ (SWAP) কতো প্রকার বিস্তারিত আলোচনা করো
- ব্যবসায়িক ঝুকি বলতে কি বুঝায় উদাহরণ সহ আলোচনা করো
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization