আমির প্রথম মুহাম্মদের কৃতিত্ব বর্ণনা কর | আমির প্রথম মুহাম্মদের কৃতিত্ব আলোচনা কর
আমির প্রথম মুহাম্মদের কৃতিত্ব লিখ
- আমির প্রথম মুহাম্মদের কৃতিত্ব বর্ণনা কর
- আমির প্রথম মুহাম্মদের কৃতিত্ব আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আমির প্রথম মুহাম্মদ (৮৫২-৮৮৬ খ্রি.) মোট ৩৪ বছর স্পেনে মুসলিম আমির হিসেবে কৃতিত্বের সাথে রাজত্ব করেন। এসময় স্পেনে যেসব বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় তা তিনি নিজে অথবা প্রেরিত সেনাপতি দ্বারা মূলোৎপাটন করেন।
স্পেনে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু তার শাসনামলে ওমর বিন হাফসুনকে চূড়ান্তভাবে দমন করা সম্ভব হয়নি। ফলে ওমর বিন হাফসুন দীর্ঘদিন স্পেনে তার বিশৃঙ্খলাপূর্ণ কর্মতৎপরতা পরিচালনা করতে থাকেন। তথাপি আমির প্রথম মুহাম্মদের রাজত্বকাল স্পেনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।
→ প্রথম মুহাম্মদের ও কৃতিত্ব : প্রথম মুহাম্মদ তার পিতার মতো একজন রাশভারি মেজাজের ও শান্ত স্বভাবের লোক ছিলেন। তার সমালোচকগণ তাকে কৃপণ বলে ভাবেন। সম্ভবত এজন্যই তিনি কোষাধ্যক্ষের হিসাব নিজেই তদারকি করতেন । আমির প্রথম মুহাম্মদের চরিত্র ও কৃতিত্বসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
আরো ও সাজেশন:-
১. দুর্নীতি হ্রাস : আমির নিজে অথনৈতিক দিক দেখাশোনা করতেন বলে দুর্নীতির কোনো সুযোগ ছিল না। এর ফলে দুর্নীতি পরায়ণ কর্মচারীদের দুর্নীতি করার দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় । একবার এক কোষাধ্যক্ষ তার হিসেবে ১৫ দিরহাম গরমিল দেখা দিলে আমির নিজে সে হিসাব মিলিয়ে দেন ।
২. শিল্প সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক : তিনি ছিলেন শিল্প ও সাহিত্যের একজন উদার পৃষ্ঠপোষক। তিনি নিজে একজন কবি, সাহিত্যিক ও বাগ্মী ছিলেন। তিনি পণ্ডিত ব্যক্তিদের সমাদর করতেন। ‘কিতাবুল হাইয়ান’ গ্রন্থের রচয়িতা বিখ্যাত মুতাজিলা মতবাদের সমর্থক জাহিজের গ্রন্থাবলি তার সময়ে স্পেনে আনা হয় ।
৩. জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক : মুক্ত বুদ্ধির অধিকারী আমির প্রাচ্য চিন্তাবিদ ও হাদিসবেত্তা বাকি ইবনে মাখলাদকে অনুপ্রাণিত করেন। আন্দালুস এর শিয়া মতাবলম্বীদের মধ্যে বাকি ছিলেন সুপরিচিত। বিখ্যাত ধর্মীয়তত্ত্ব বিশারদ ইবনে আবী শায়বাহর মতবাদের উপর তিনি বক্তৃতা করেন।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
আইন বিজ্ঞানের ব্যাপারে বাকি হাদিসের অন্তর্নিহিত আদর্শের অনুসরণে মুক্ত চিন্তার মাধ্যমে আইন প্রণয়ণের সমর্থক ছিলেন। প্রথম মুহাম্মদের শাসনামলে প্রাচ্যের একজন বিখ্যাত চিকিৎসাবিদ স্পেনে আগমন করেন এবং সেখানে একটি চিকিৎসক পরিবারের সূচনা করেন। পরবর্তীকালে অর্থাৎ খিলাফতকালে এ সকল চিকিৎসাবিদগণ প্রচুর যশ ও খ্যাতি অর্জন করেন ।
৪. জনহিতকর কার্যাবলি : তিনি একজন জনদরদী আমির ছিলেন। প্রথম মুহাম্মদ ৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষে এবং ৮৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রচণ্ড ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জন্য রিলিফের ব্যবস্থা করেন। প্রথম মুহাম্মদ পিতা কর্তৃক আরাদ্ধ কর্ডোভার সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ অব্যাহত রাখেন ।
৫. জাঁকজমকপূর্ণ জীবন : তিনি পিতার মতো জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপন করতেন। তিনি বৃহৎ অট্টালিকা ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। তার সময়ে কর্ডোভা মসজিদের সম্প্রসারণ করা হয়। ৩০০ পাউন্ড ওজনের একটি স্বর্ণমূর্তি নির্মাণ করে একে মণিমুক্তা ও মূল্যবান পাথর দিয়ে সুসজ্জিত করে এর দ্বিগুণ মূল্যে একটি বেদি নির্মাণ করা হয় । আমিরের আদেশে মূর্তিটিকে খ্রিস্টানদের স্বর্ণ গির্জায় দান করা হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রথম মুহাম্মদের শাসনকাল একাধিক অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দরুণ উল্লেখযোগ্য । কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করা সত্ত্বেও গোলযোগ আরও বৃদ্ধি পায় । তথাপি আমির মোহাম্মদের রাজত্বকাল স্পেনের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য সময়কাল হিসেবে বিবেচিত। তিনি সকল বিদ্রোহ দমন করে রাজ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠা করে কৃতিত্বের পরিচয় দেন।