লিখিত পরীক্ষায় ইংরেজি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এতে ভালো না করলে গড় নম্বর অনেক কমে যাবে। এখানে পার্ট এ এবং পার্ট বি মিলিয়ে মোট ২০০ নম্বর বরাদ্দ আছে। রিডিং কম্প্রিহেনশন থেকে ১০০ নম্বর; যা সাধারণ প্রশ্ন ৩০, ব্যাকরণ ৩০, পত্রিকা সম্পাদকের নিকট চিঠি ২০ এবং সারাংশ ২০ নম্বর যোগ করলে পাওয়া যায়। আর পার্ট বি–তে বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ ২৫, ইংরেজি থেকে বাংলা ২৫ এবং রচনায় ৫০ নম্বরসহ মোট ১০০ নম্বর।
সর্বমোট ২০০ নম্বর। সময় পাওয়া যাবে ৪ ঘণ্টা। আর ইংরেজিতে রাতারাতি ভালো করা যায় না। আবার অনেক টপিক আছে, যা সরাসরি পরীক্ষায় আসবে না। অর্থাৎ কমন পড়বে না। অনেকের ধারণা, কমন যেহেতু পড়বে না, তাহলে পড়ে লাভ কী! লাভ হলো, আপনার চর্চা বহাল থাকলে সহজে পরীক্ষার হলে উত্তর দিতে পারবেন।
একটা কথা মনে রাখবেন, কতগুলো অনুশীলন করলেন, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়; গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি কতটা বুঝে বুঝে অনুশীলন করলেন। তাই বুঝে বুঝে অনুশীলন করা ছাড়া ভালো কিছু হবে না।বিজ্ঞাপন
ভালো করার কিছু পরামর্শ:
ক) ১০ম থেকে ৪০তম বিসিএসের শুধু ব্যাকরণ অংশটি পড়ে নেবেন। বাকিগুলো না পড়লেও চলবে।
খ) কম্প্রিহেনশন যত পারেন, পড়ুন। পড়ার সময় চারটি বিষয় মাথায় রাখবেন। ১. অজানা শব্দের অর্থ অবশ্যই আয়ত্ত করবেন। ২. বাক্যের অর্থ বোঝার চেষ্টা করবেন। ৩. পুরো অনুচ্ছেদের মূলকথা বের করুন। ৪. সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন। বাকি প্রশ্নগুলো অনুশীলন না করলেও চলবে। প্রয়োজনে অল্প কম্প্রিহেনশন চর্চা করবেন। কিন্তু ভাসা ভাসা করে দ্রুত শেষ করতে যাবেন না। এতে সব বৃথা যাবে। আরেকটা কথা, ইংরেজি পত্রিকার সমসাময়িক তাৎপর্যপূর্ণ কলাম বা লেখা পড়তে পারেন। তার অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন। এটা পরোক্ষভাবে আপনাকে রিডিং কম্প্রিহেনশনে সাহায্য করবে। ৩৫তম বিসিএসে পত্রিকার একটি খবর থেকেই কম্প্রিহেনশন এসেছিল।
গ) ব্যাকরণ অংশে নতুন কিছু নেই। যা আপনি প্রিলিতে পড়েছেন, তা-ই। একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন। ওয়ার্ড ফরমেশন, পার্টস অব স্পিচ চেঞ্জিং, পাংচুয়েশন, সেনটেন্স মেকিং, মিনিং অব ওয়ার্ডস গুরুত্বপূর্ণ।
ঘ) প্যাসেজ থেকেই সামারি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ভুলেও কোনো হুবহু বাক্য গ্রহণ করতে যাবেন না। নিজের মতো করে লিখবেন। বাসায় অনুশীলন করুন, ভুল কমে আসবে। আর এটা এত পড়ার কিছু নেই। যদি কেউ একান্ত না পারেন, তবে শব্দ পরিবর্তন করে সমার্থক শব্দ নেবেন, বড় বাক্য ছোট করে নেবেন।
ঙ) সম্পাদকের নিকট চিঠি পড়ার কিছু নেই। শুধু নিয়মকানুন জেনে রাখুন। তাতেই হবে। আর দুই পৃষ্ঠার বেশি অবশ্যই লিখবেন না। এখানে যেন কাটাকাটি, বানান ভুল বা অসুন্দর কিছু না হয়!
চ) ফ্রি–হ্যান্ড রাইটিং ইংরেজিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোন কোন বিষয় আয়ত্তে থাকলে আপনি ইংরেজি লেখায় ভালো করবেন, তা বলা হলো:
১. শব্দের অর্থ শিখুন, যত পারা যায়। অনেকেই বলেন, মনে থাকে না। কিছু ভুলে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। সে জন্য পড়া থামাবেন না। যা গিয়ে, যা থাকে তা-ই লাভ। শব্দের অর্থ না জানলে আপনি লিখতে পারবেন না। তাই ফ্রি–হ্যান্ড রাইটিংয়ে ভালো করতে হলে আপনার শব্দভান্ডার মজবুত থাকতে হবে। আর এটি কিন্তু চলমান প্রক্রিয়া। শব্দ শেখার মধ্যেই থাকবেন। হোক অল্প।
২. মানসম্মত রাইটিংয়ের জন্য টেকনিক্যাল কিছু শব্দের অর্থ বা শব্দগুচ্ছ শিখবেন। যেমন ‘ধনী–গরিবনির্বিশেষে’—এর ইংরেজি হবে Irrespective of rich and poor. আপনি যদি অন্যভাবে বলেন, তাহলে মানসম্মত লেখা হবে না। আপনার লেখার মান ভালো হলে, নম্বর ভালো আসবে। এটা তো স্বাভাবিক।
৩. ইংরেজি বাক্য লেখার সময় আপনাকে Preposition ব্যবহার করতেই হয়। এতে অনেকেই ভুল করেন। তাই শুদ্ধ বাক্য লিখতে হলে এ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এ জন্য Prepositionগুলোর বাংলা অর্থ ও সাধারণ ব্যবহার জেনে নেবেন। অবশ্যই বুঝে বুঝে পড়বেন। আর কিছু Appropriate Preposition পড়ে নেবেন। তাহল ধীরে ধীরে ভুল কমে যাবে।
৪. Tense সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এটা ছাড়া কিচ্ছু করার নেই। ১২টি টেন্সের বাংলা সংজ্ঞা, চেনার উপায়, গঠনপ্রণালিসহ ভালো করে পড়বেন যেন বাক্য দেখলেই আপনি বোঝেন কোন Tense অনুযায়ী লিখতে হবে। ধরুন, আপনি বলতে চাচ্ছেন, ‘কাল স্কুলে যাব’, এটি যদি এভাবে লেখেন, ‘I was go school’, তাহলে কী হলো? যিনি খাতা দেখবেন, তিনি অজ্ঞান হয়ে যাবেন। আপনার কাউকে অজ্ঞান করার অধিকার নেই। তাই ভালো করে Tense পড়ুন।
৫. প্রচুর অনুশীলন করুন। বুঝে বুঝে করুন। ফ্রি–হ্যান্ড রাইটিংয়ের জন্য অনুশীলন ব্যাপক কাজে দেয়। সম্ভব হলে যে ফ্রি–হ্যান্ডে ভালো, তাঁর সাহায্য নিতে পারেন। লেখার পর তাঁকে দেখাতে পারেন। তিনি ভুলগুলো চিহ্নিত করে দিলে বুঝে নিন। লজ্জার কিছু নেই।
৬. ইংরেজি পত্রিকা থেকে একটু সাহায্য নেবেন। প্রতিদিন দরকার নেই। কলামগুলো পড়ার সময় খেয়াল রাখবেন, কীভাবে ওরা বাক্য তৈরি করল। এটা মাঝেমধ্যে নিজেও অনুসরণ করবেন। আর নতুন শব্দ পেলে মুখস্থ রাখবেন।
৭. যদি সম্ভব হয়, প্রতিদিন একটা টপিক ধরে এক পৃষ্ঠা করে লিখবেন। চর্চা না করলে তো হবে না। প্রথম দিকে সহজ টপিক নিয়ে লিখবেন। আস্তে আস্তে কঠিন নেবেন।
৮. তথ্যভিত্তিক ইংরেজি লেখা হলে শুধু ইংরেজিই লিখবেন না, সঙ্গে তথ্য দেবেন। এতে লেখার মান বাড়বে। আর রিডার সন্তুষ্ট হলে আপনার লাভ।
৯. Tense ও Preposition সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণার জন্য চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইনের এসএসসি ইংলিশ সেকেন্ড পেপার গাইডটা পড়তে পারেন। ইংরেজি পত্রিকা The Daily Star নিন।
ছ) অনুবাদের জন্য ফ্রি–হ্যান্ডের নিয়মগুলো বেশ কাজে দেবে। চর্চা করতে থাকুন। আর অনুবাদ শতভাগ মিলতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বড় বাক্য হলে ভেঙে একাধিক বাক্যও হতে পারে। বিষয়বস্তুটা বোঝাতে পারলেই নম্বর আসবে।
জ) রচনা কোনটা আসবে বলা কঠিন। তবে ১০টি সাধারণ বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যাবেন যা আপনার সাধারণ জ্ঞান এবং বাংলা রচনায়ও কাজে লাগবে। এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকুন। নোট করুন।
১. নারী (নির্যাতন, উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, মুক্তি) ২. শিক্ষা (সমস্যা, নীতি, সম্ভাবনা, হার)
৩. গণতন্ত্র (সমস্যা, সম্ভাবনা, বর্তমান চিত্র)
৪. দুর্নীতি চিত্র (টিআইবি, টিআই, বিভিন্ন খাতের অবস্থা)
৫. জ্বালানি পরিস্থিতি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, খনিজ তেল, উৎপাদন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা)
৬. শিল্প ( পোশাক, চামড়া, পর্যটন এবং এগুলোর সার্বিক দিক)
৭. দারিদ্র্য পরিস্থিতি (হার, কারণ, চিত্র, সরকারের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ)
৮. আইসিটি চিত্র (মুঠোফোন, ইন্টারনেট, পরিকল্পনা, সুবিধা, অসুবিধা)
৯. পরিবেশ অবস্থা (ভূমিকম্প, জলবায়ু পরিবর্তন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ)
১০. সন্ত্রাসবাদ (ধর্মীয়, রাজনৈতিক, আইএস, বোকো হারাম, প্রেক্ষাপট—বিশ্ব ও বাংলাদেশ, গৃহীত পদক্ষেপ)।
ঝ) তিনটি রচনার মধ্যে যে রচনায় আপনি তথ্য বেশি দিতে পারবেন বা তথ্য বেশি দেওয়ার সুযোগ আছে, সেটা লেখার জন্য নির্বাচিত করবেন। তাত্ত্বিক বা আধ্যাত্মিক বিষয়ে লেখা খুব কঠিন। যেমন- Nature vs Nurture খুব কঠিন একটি রচনা। লিখতে বহুজনই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন না।
ঞ) বাজার থেকে যেকোনো একটি লিখিত ইংরেজি গাইড সংগ্রহ করে নিন। অনুশীলন ও বিগত প্রশ্ন পড়তে কাজে লাগবে।
ট) রাইটিং সেকশনগুলোয় সম্ভব হলে Phrase and Idiom ব্যবহার করবেন। এতে লেখার একঘেয়েমি দূর হয়; পাঠক পড়ে আপনার দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাবে। তবে অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহার যেন না হয়।
অনেক কিছু তো হলো, আর দরকার নেই। এবার কাজে লেগে পড়ুন। আশা করি, আপনার ইংরেজির উন্নতি হবে। ধন্যবাদ।