উপন্যাস: পদ্মা নদীর মাঝি, কুবের কে?

উপন্যাস: পদ্মা নদীর মাঝি

৩. রশিদ মিয়া একজন বর্গাচাষী। অন্যের জমিতে কঠোর পরিশ্রম করে সে ফসল ফলায়। ফসলের অর্ধেক অংশ জমির মালিক ও বাকি অর্ধেক সে পায়। কিন্তু ক্ষেতের মালিক নানা কৌশলে রশিদ মিয়াকে ঠকিয়ে ফসলের সিংহভাগ কেড়ে নেয়। গরীব চাষীর রক্ত চুষে এরা ফুলে ফেঁপে উঠে। কিন্তু চলতে পারে না একদিন তারা রুখে দাঁড়ায় শােষক জোতদারদের বিরুদ্ধে।

ক. কুবের কে?

উত্তর: পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুবের। উপন্যাসের নায়ক

খ. “ইলিশের মৌসুম ফুরাইলে বিপুলা পদ্মা কৃপন হইয়া যায়”- পদ্মা কেন কৃপন হয়ে যায়?

উত্তর: ইলিশের মৌসুম হচ্ছে বর্ষাকাল। কিন্তু বর্ষাকাল চলে গেলে বিশাল পদ্মার বুকে ইলিশ খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য।

পদ্মায় ইলিশ ধরার উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল। এ সময় ডিম পাড়ার জন্য ইলিশ মাছ সমুদ্র থেকে নদীতে ছুটে আসে, ফলে জেলেরা নদীতে জাল ফেলে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ শিকার করতে পারে।

কিন্তু বর্ষাকাল চলে গেলে নদী থেকে ইলিশগুলো সরে পড়ে অথবা অধিকাংশ ইলিশ জেলেদের হাতে ধরা পড়ে।

যে কারণে ইলিশের মৌসুম ফুরিয়ে যাওয়ার পর বিশাল পদ্মার বুকে জাল ফেলে জেলেরা খুব সামান্যই ইলিশ শিকার করতে পারে। যেন বর্ষাকাল উদার আর বর্ষাকাল শেষে সে পদ্মা কৃপণ হয়ে যায়। মূলত জেলেরা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ইলিশ পায় না বলেই ইলিশের মৌসুম শেষে পদ্মাকে এখানে কৃপণ বলা হয়েছে।

গ. রশিদ মিয়ার মানসিকতার সাথে কুবের মাঝির মানসিকতার কতটুকু মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উদ্দীপকের রফিকের সঙ্গে শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠার বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে পদ্মা নদীর মাছি উপন্যাসের কুবের মাঝির মানসিকতার অনেকাংশে মিল পাওয়া যায়।


আলোচ্য উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুবের। কুবের পদ্মাতীরের কেতুপুর গ্রামের এক দিনমজুর জেলে।

সে একান্তই দীন-দরিদ্র সাধারণ মানুষ। জীবিকা নির্বাহের জন্য সে উত্তাল পদ্মার বুকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু কষ্টের ফসল সে সবটুকু পায় না। মালিক ধনঞ্জয় তাকে ঠকায়। যে কারণে তাকে দারিদ্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়।


উদ্দীপকের রফিক খুবই গরিব। বর্গাচাষের মাধ্যমে সে তার জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু জমির মালিক জমিতে না গিয়েও রফিককে নানা কৌশলে ঠকিয়ে ফসলের সিংহভাগ কেড়ে নেয়। কুবেরের মালিক ধনঞ্জয় যেমন জাল ও নৌকার মালিকানার অজুহাতে কুবেরকে কৌশলে ঠকায়, তেমনি রফিকের চাষকৃত জমির মালিকও রফিককে ঠকায়। মূলত কুবের এবং রফিক উভয়ই শোষিত শ্রেণীর প্রতিনিধি।

এতে দারিদ্র্যের সুযোগে মালিকপক্ষ এদের ঠকায়। আলোচ্য উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুবের অবশ্য নানা প্রতিকূলতায় এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস দেখায়নি কিন্তু উদ্দীপকের রফিক ঠিকই শোষক জোতদারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

সব শেষে বলা যায়, প্রতিবাদী হয়ে ওঠার বিষয় মিল না থাকলেও জীবিকার প্রয়োজনে নিরলস শ্রম দেওয়া, মালিকের শোষণের বিষয়টি বুঝতে পারাসহ অন্য সব বিষয়েই কুবের ও রফিকের মানসিকতার মধ্যে মিল রয়েছে।

ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও রশিদ মিয়া ও কুবের শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছে”। উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও রফিক ও কুবের শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে—উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকের রফিক গরিব বর্গাচাষি। বহু কষ্টে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অন্যের জমিতে ফসল ফলিয়েও সে তার ন্যায্য অংশ পায় না। অপর দিকে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুবের মাঝিও দিন-রাত পরিশ্রম করে তার ন্যায্য অংশ পায় না।
রফিককে শোষণ করছে জোঁকের মতো রক্তচোষা জোতদার।

সে খেতমজুর, খেতের মালিক নয়। যে কারণে জমির মালিক জমিতে না গিয়ে নানা কৌশলে রফিককে ঠকিয়ে ফসলের সিংহভাগ কেড়ে নেয়। অপর দিকে হতদরিদ্র এক জেলে।

নিজের জাল ও নৌকা নেই বলে সে ধনঞ্জয়ের সঙ্গে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে। উত্তাল পদ্মার বুকে দিন-রাত পরিশ্রম করেও সে তার ন্যায্য অংশ বা ভাগ পায় না। রফিক ও কুবের—দুজনেরই মনেই না-পাওয়ার বেদনা, ক্ষোভ।

তাদের মতো শ্রমজীবীরা প্রতিটি প্রেক্ষাপটেই বঞ্চিত হয়, শোষিত হয়। প্রতিবাদের ভাষা থাকলেও কর্মহারা হওয়ার ভয়ে সেই ভাষা প্রয়োগের সুযোগ নেই। একান্ত বাধ্য হয়ে নীরবে তারা এসব অত্যাচার সয়ে যায়। কখনো আবার কোনো কোনো অঞ্চলে তারা সংঘবদ্ধ হয়, শোষকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তবুও তাদের ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন ঘটে না।


প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও রফিক ও কুবের দুজনই শোষিত। একজন জমিতে আর অন্যজন নদীতে কাজ করে। কিন্তু শোষকের কালো থাবা যে সর্বত্রই বিস্তৃত। শোষণের এ চিত্র শুধু রফিক ও কুবেরের জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এ দুজন শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি।

H.S.C

Leave a Comment