প্রশ্ন সমাধান: উহুদ যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব,উহুদ যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল, বর্ণনা কর- উহুদ যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্ব, উহুদের মর্মান্তিক ঘটনা ও তার শিক্ষা, উহুদের যুদ্ধের ফলাফল ও মুসলমানদের পরাজয়ের কারণসমূহ, উহুদ যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল উহুদ যুদ্ধের প্রকৃত
আরবী মাস অনুযায়ী রমজানের পরের মাস হচ্ছে শাওয়াল। ইবাদতের দিক থেকে ওই মাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
এই মাস থেকেই হজের সময় শুরু। তবে শাওয়ালের গুরুত্বের আরেকটি দিক হচ্ছে ওই মাসে উহুদের মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো। যেখানে বহু সাহাবায়ে কেরাম সহ স্বয়ং নবী করীম (সা.) গুরুতর আহত হয়েছিলেন। উহুদ থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। নিম্নে উহুদের ইতিহাস ও তা থেকে কিছু শিক্ষা তুলে ধরা হলো।
উহুদের পরিচয়: উহুদ মদীনা থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে অবস্থিত একটি পাহাড়ের নাম। সেখানে হজরত হারুন (আ.) এর কবর রয়েছে। বর্ণিত আছে যে, হজরত মুসা ও হারুন (আ.) হজ বা উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কায় সফর করেন। আসার সময় উহুদের কাছে এসে হজরত হারুন (আ.) অসুস্থ হয়ে যান। এবং সেখানেই ইন্তেকাল করেন। তার দাফনও সেখানে সম্পন্ন হয়। নবী করীম (সা.) কোনো অভিযান শেষ করে ফিরে আসার সময় উহুদের পাহাড় দেখে বলতেন, ‘ওই পাহাড়টা আমাদের ভালোবাসে আমরাও তাকে ভালোবাসি।’ (সহীহ বোখারী)।
ইহুদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পৃথক, একক। যেহেতু উহুদ পাহাড় অন্যান্য পাহাড় থেকে পৃথক তাই ওকে উহুদ নামে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে উহুদে পার্শ্বে, উহুদের শহীদগণের কবর রয়েছে।
উহুদ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট: হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে বদর যুদ্ধে কুরাইশদের বড় বড় কয়েকজন নেতা নিহত হয়। আমরা জানি বদর সংঘটিত হয়েছিলো একটি বাণিজ্য কাফেলাকে কেন্দ্র করে। মক্কার মুশরেকদের আয়ের একমাত্র উৎস ছিলো শামের ব্যবসা। সেখান থেকে তারা যা কামাই করতো তা দ্বারা নিজেরা চলতো এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যয় করতো। তাই রাসূল (সা.) চাইলেন ওদের ব্যবসার পথকে বন্ধ করতে। সে উদ্দেশ্যে একটি কাফেলাকে পাকড়াও করতে গিয়ে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওই ব্যবসায়ী কাফেলা কিন্তু নিরাপদে মক্কায় পৌঁছে ছিল। মক্কায় যখন বদরের সংবাদ পৌঁছে তখন সকলেই ওই ব্যবসায়র লাভ মুসলমানদেরকে শায়েস্তা করার জন্য দিয়ে দেয়। যার পরিমাণ ছিলো প্রায় পঞ্চাশ হাজার দিনার। এবং নতুন নেতা নির্বাচন করা হয় আবু সুফিয়ানকে।
আরো ও সাজেশন:-
যুদ্ধের প্রস্তুতি: আবু সুফিয়ান দায়িত্ব গ্রহণ করেই প্রত্যেক গোত্রে দূত পাঠিয়ে দিলো। বার্তা হচ্ছে প্রত্যেক গোত্রের নওজোয়ান বাহাদুররা যেন এই যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। আবু সুফিয়ানের এই আহ্বানে ব্যাপক সাড়া পড়ে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে তিন হাজারের এক বিশাল বাহিনী তৈরি হয়। এদের মধ্যে সাতশ ছিলো লৌহবর্ম পরিহিত। দুশ ঘোড়সওয়ার। সঙ্গে ছিলো তিন হাজার উট। উক্ত বাহিনী আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের পাঁচ তারিখ মক্কা থেকে রওয়ানা হয়।
যুদ্ধের ময়দানে নারীদের ব্যবহার: যুদ্ধের ময়দান হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। নারীদের সেখানে অবস্থান খুবই বিপদজনক। কিন্তু মক্কার মুশরিকরা সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে, যুদ্ধের ময়দানে পুরুষদেরকে সাহস যোগানোর জন্য প্রায় পনের জন নারীকে সঙ্গে নিলো।
হজরত আব্বাস (রা.) এর সংবাদ প্রেরণ: নবী করীম (সা.) এর চাচা আব্বাস (রা.) যিনি তখনো মুসলমান হননি, মক্কায় অবস্থান করছিলেন। তিনি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ লেখে নবী করীম (সা.) এর কাছে দূত পাঠিয়ে দিলেন। হজরত আব্বাস (রা.) দূত পাঠানোর সময় তিন দিনের মধ্যে চিঠি পৌঁছানোর ব্যাপারে খুব তাকিদ দিলেন। আল্লাহর রহমতে দূত যথা সময়ে চিঠি পৌঁছে দেয়।
রাসূল (সা.) এর স্বপ্ন: সংবাদ পৌঁছার দিনটা ছিলো বৃহস্পতিবার। ওই দিবাগত রাতে রাসূল (সা.) স্বপ্নে দেখেন, তিনি একটি মজবুত কেল্লাতে আছেন আর একটি গরু জবাই করা হচ্ছে। তিনি স্বপ্নে আরো দেখেন, তার তরবারিটা হেলানোর পর সামনের অংশটা ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে। ভেঙ্গে পড়ে যাওয়ার পর যখন দ্বিতীয়বার তরবারিটা নাড়া দিলেন তখন তা পূর্বের চেয়ে আরো মজবুত হয়েছে। রাসূল (সা.) প্রথম স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলেন, যে আমার সাহাবিগণের মাঝে কিছু সংখ্যক নিহত হবেন। আর মজবুত কেল্লা দ্বারা তিনি উদ্দেশ্য নেন মদীনা শরীফ। তরবারির তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাহাবায়ে কেরাম। কারণ, কাফেররা সাহাবায়ে কেরামকে তরবারির ন্যায় ভয় পেতেন। আর হেলানোর দ্বারা উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন জিহাদের ময়দানে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ দ্বিতীয় স্বপ্নের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাহাবায়ে কেরামকে উহুদের ময়দানে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তাদের কতক সেখানে শাহাদাত বরণ করবেন। তবে এর দ্বারা তারা দুর্বল হবেন না বরং আগের চেয়ে আরো মজবুতির সঙ্গে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবেন।
যে রাতে তিনি এই স্বপ্ন দেখেন, তার পরের দিন সকালে যুদ্ধের বিষয়ে পরামর্শে বসেন। যেহেতু রাসূল (সা.) স্বপ্নে দেখেছেন কতক সাহাবি নিহত হয়েছেন। তাই তিনি মদীনার বাইরে যেয়ে যুদ্ধ করতে চাচ্ছিলেন না। এ ব্যাপারে মদীনার ব্যাপারে বিজ্ঞ লোকদের থেকে পরামর্শ নিলেন। তাদের বক্তব্য ছিলো, যখনি আমরা মদীনার বাইরে গিয়ে শত্রুদের সঙ্গে মোকাবেলা করেছি তখন আমরা পরাজিত হয়েছি। আর মদীনার ভেতর থেকে ওদের মোকাবেলা করলে আমরা বিজয়ী হয়েছি। মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলূল এরও এই মত ছিলো। এ সকল কারণে রাসূল (সা.) ও বিজ্ঞ সাহাবায়ে কেরামের মত ছিলো মদীনার ভেতর থেকে ওদের মোকাবেলা করা। কিন্তু কতক নওজোয়ান সাহাবি, যারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেন নাই তাদের মত ছিলো মদীনার বাইরে ওদের মোকাবেলা করা। সর্বশেষ তাদের মতকেই রাসূল (সা.) গ্রহণ করলেন এবং মদীনার বাইরে উহুদ নামক পাহাড়ের কাছে ওদের মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
মুসলিম মুজাহিদদের মদীনা থেকে রওয়ানা: তৃতীয় হিজরির এগারই শাওয়াল, জুমার দিন আসরের পর এক হাজারের বাহিনী নিয়ে নবী করীম (সা.) মদীনা থেকে বের হন। তিনি ছিলেন ঘোড়ায় সওয়ার। শাইখাইন নামক স্থানে পৌঁছে তিনি বাহিনীর একটা হিসেব নিলেন। সাহাবায়ে কেরামের মাঝে যাদের বয়স কম ছিলো তাদেরকে তিনি সেখান থেকে ফেরৎ পাঠান। অল্প বয়স্ক সাহাবাদের মাঝে, দ্বীনের জন্য যে জযবা ও প্রেরণা ওই দিন দেখা গিয়েছে মনে হয় বিশ্ব ইতিহাসে তার কোনো দৃষ্টান্ত নেই। আজো মুসলিম যুবকদের প্রেরণা ওই কম বয়সী সাহাবায়ে কেরামই যাদের ত্যাগ ও কোরবানির বদৌলত ইসলাম আজ এ পর্যন্ত এসেছে।
উহুদের ময়দানে সেনা বিন্যাস: উহুদের ময়দানে পৌঁছে নবী করীম (সা.) মুজাহিদ বাহিনীকে বিন্যাস করেন। মদীনাকে সামনে ও উহুদ পাহাড়কে পেছনে রেখে যুদ্ধের কৌশল ঠিক করেন। এই কৌশল ছিলো ঝুঁকিপূর্ণ আবার সুবিধাজনক বটে। উহুদের পিছন থেকে এক জায়গা দিয়ে হামলার আশংকা ছিলো তাই নবী করীম (সা.) সেখানে পঞ্চাশ জনের একটি তীরান্দাজ বাহিনী বসান। এবং তাদেরকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেন যে, মুসলিম বাহিনী বিজয়ী হোক বা পরাজয় বরণ করোক সর্বাবস্থায় তোমরা এখানে অটল থাকবে। যুদ্ধের শুরুতে মুসলিম বাহিনী বিজয়ী হলে তারা পাহাড়ের ওই গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছেড়ে চলে আসে। তখন খালিদ বিন ওয়ালিদ, যিনি তখনো মুসলমান হননি পেছন দিক থেকে আক্রমন করে যুদ্ধের দৃশ্য পাল্টিয়ে দেন। তখন হজরত হামযা (রা.)সহ বহু বড় বড় সাহাবি শহীদ হন। স্বয়ং নবী করীম (সা.) গুরুতর আহত হন।
রাসূল (সা.)কে শহীদ করার জন্য কাফেররা বার বার আক্রমন করে। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের জীবনের বিনীময়ে তিনি রক্ষা পান। শয়তানের পক্ষ্য থেকে প্রচার করা হয় নবী করীম (সা.) শাহাদাত বরণ করেছেন। এতে সাহাবায়ে কেরামের মনোবল ভেঙ্গে যায়। বিশৃঙ্খলার কারণে মুসলমানদের হাতে মুসলমানরা শহীদ হন। অবশেষে রাসূল (সা.) এর দৃঢ় অবস্থানের কারণে কাফেররা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে চলে আসে। এবং ঘোষণা দিয়ে আসে আগামী বছর বদরে আবার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ হবে।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
উহুদের শিক্ষা: আল কোরআনে যে কয়টি যুদ্ধের আলোচনা হয়েছে তার মাঝে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উহুদের যুদ্ধ নিয়ে। সেখানে তোলে ধরা হয়েছে উহুদের শিক্ষণীয় অনেক দিক। নিম্নে কিছু দিকে নিয়ে আলোচনা করা হলো-
এক. সবকিছুর ভরসা এক আল্লাহ: উহুদের যদ্ধে নবী করীম (সা.) যখন দেখলেন, আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা কবিতা দিয়ে কাফেরদের মাঝে উম্মাদনা সৃষ্টি করছে তখন নবী করীম (সা.) এই দোয়া পড়েন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছ থেকেই শক্তি সঞ্চয় করি, তোমার নামেই যুদ্ধ পরিচালনা করি এবং তোমার দ্বীনের জন্যই লড়াই করি। আমার জন্য আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট-তিনি উত্তম অভিভাবক।’ এই দোয়ার প্রতিটি শব্দ আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার সম্পর্ককে নিবিড় করে।
দুই. অমুসলিমদের জন্য বদদোয় না করা: উহুদের যুদ্ধে আহত হয়ে নবী করীম (সা.) বলেন, ওরা কেমন নিজেদের মাঝে প্রেরীত নবীকে আঘাত করে। তখন কোরআনের আয়াত নাজিল হয়। যাতে বলা হয়েছে, তাদের তওবা কবুল করা বা তাদেরকে শাস্তি দেয়া আল্লাহর ইচ্ছায়। এখানে আপনার কোনো দখল নেই।
তিন. দায়িত্বশীলের নির্দেশ মান্য করার গুরুত্ব: উহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয়ের বাহ্যিক কারণ মনে করা হয় তীরান্দাজ বাহিনী নিজেদের স্থান ত্যাগ করা। অথচ তাদের বলা হয়েছিলো কোনো অবস্থাতেই ওই স্থান ত্যাগ করা যাবে না। এর দ্বারা আমীর বা নেতৃত্বে নির্দেশ মানার গুরুত্ব বুঝে আসে। সকল বিষয়ের প্রকৃত গুরুত্ব আমীর বা নেতার উপলব্ধিতেই থাকে। তাই অন্যদের দৃষ্টিতে ভিন্ন কিছু মনে হলেও সকলের উচিত নেতার নির্দেশকেই একবাক্যে মেনে নেয়া।
চার. প্রশিক্ষণের গুরুত্ব: রাসূল (সা.) আমাদের মতোই মানুষ। আর মানুষ মাত্রই মরনশীল। তাই তিনি যেকোনো মুহূর্তে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারেন। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম, যারা নিজেদের জীবনের চেয়ে তাকে ভালোবাসতেন হঠাৎ তিনি বিদায় নিলে তারা সহ্য করতে পারবেন না। তাই তাদের উপলব্ধিকে জাগ্রত করার জন্য রাসূল (সা.) এর মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হলো। যেন তাদের উপলব্ধিতে থাকে যে তিনি মৃত্যুবরণ করতে পারেন। তাছাড়া আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল, দুনিয়ার প্রতি লোভের ক্ষতি ইত্যাদিও উহুদের যুদ্ধ থেকে শেখা যায়।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- ব্যবসায়িক ঝুকি বলতে কি বুঝায় উদাহরণ সহ আলোচনা করো
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy