উৎসের ভিত্তিতে তহবিল বা অর্থায়নের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে চিত্রের সাহায্যে আলোচনা কর

উৎসের ভিত্তিতে তহবিল বা অর্থায়নের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে চিত্রের সাহায্যে আলোচনা কর,একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের তহবিলের বিভিন্ন উৎস সংক্ষেপে বিবৃত কর,বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অর্থায়নের উৎসসমূহ কি কি?

উৎসের ভিত্তিতে তহবিল বা অর্থায়নের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে চিত্রের সাহায্যে আলোচনা কর

উৎসের ভিত্তিতে তহবিল বা অর্থায়নের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :

(ক) অভ্যন্তরীণ উৎস : প্রয়োজনীয় তহবিলের যে অংশ প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তর হতে সংগ্রহ করা হয় তাকে অভ্যন্তরীণ উৎস বলে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে নিম্নলিখিত বিভিন্ন উৎস হতে তহবিল সংগ্রহ করা যেতে পারে :

১. উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক মূলধন : যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাগণ প্রাথমিকভাবে যে মূলধন সরবরাহ করেন তাকে উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক মূলধন বলে। উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক মূলধন যেকোনো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ তহবিলের
প্রথম উৎস হিসেবে গণ্য হয়।

২. অবণ্টিত মুনাফা : প্রতিষ্ঠানের অর্জিত মুনাফার যে অংশ মালিকদের মধ্যে বণ্টন না করে সংরক্ষণ করা হয় তাকে অবণ্টিত মুনাফা বলে। এরূপ অবণ্টিত মুনাফাকে প্রতিষ্ঠানের তহবিলের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

৩. প্রতিপূরক তহবিল : প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ বা স্থায়ী সম্পত্তি প্রতিস্থাপনের জন্য প্রতি বছর অর্জিত মুনাফার একটি অংশ বাধ্যতামূলকভাবে যে তহবিলে সঞ্চয় করা হয় তাকে প্রতিপূরক তহবিল বলে ।

৪. বকেয়া খরচ : প্রায় কল প্রতিষ্ঠানেই এমন কিছু খরচ থাকে যা সংগঠিত হওয়ার সাথে সাথে পরিশোধ করতে হয় না; বরং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তর অন্তর প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরেই কোনো পাওনাদারকে পরিশোধ করতে হয়। যেমন- বকেয়া বেতন, মজুরি, ওভারটাইম ইত্যাদি খরচ সংগঠিত হওয়ার তারিখ হতে অর্থ পরিশোধের তারিখ পর্যন্ত বকেয়া অর্থ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের জন্য অন্য কোন খাতে ব্যবহার করা যায়। এরূপ বকেয়া খরচসমূহ প্রতিষ্ঠানের তহবিলের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।

৫. বিবিধ সঞ্চিতি তহবিল : প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কল্যাণার্থে বিভিন্ন রকম সঞ্চিতি তহবিল গঠন করা হয়। যেমন : কর্মচারী কল্যাণ তহবিল, কর্মচারী নিরাপত্তা তহবিল, কর্মচারী বদান্য তহবিল, কর্মচারী ভবিষ্যৎ তহবিল, কর্মচারী পেনশন তহবিল, কর্মচারী ক্ষতিপূরণ তহবিল ইত্যাদি। এসকল তহবিলের অর্থ সাধারণত কর্মকাল শেষে কর্মচারীগণ প্রাপ্য হয়। ফলে যতক্ষণ পর্যন্ত কর্মচারীগণ চাকরি ত্যাগ বা অবসর গ্রহণ না করে বা তহবিলের অর্থ প্রাপ্য না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের তহবিলের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে এসব সঞ্চিতি তহবিল ব্যবহার করা যায় ।

(খ) বাহ্যিক উৎস : প্রয়োজনীয় তহবিলের যে অংশ প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তর হতে সংগ্রহ না করে প্রতিষ্ঠানের বাহিরের কোনো উৎস হতে সংগ্রহ করা হয় তাকে বাহ্যিক উৎস বলে ।

বাহ্যিক উৎসকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।

যেমন : ১. মালিকানা তহবিল, ২. পাওনাদারদের তহবিল। নিম্নে বাহ্যিক উৎসসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. মালিকানা তহবিল : প্রতিষ্ঠানের সূচনালগ্নে সাধারণত মালিকগণ যে তহবিল সরবরাহ করেন তাকে উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক মূলধন বা অভ্যন্তরীণ মালিকানা তহবিল বলে । পরবর্তী পর্যায়ে মালিকগণ যে কারবারের ক্ষেত্রে অংশীদারগণ এবং যৌথ মূলধনী কোম্পানির ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারগণ মালিকানা মূলধন সরবরাহ করেন। মালিকানা তহবিল সবচেয়ে নিরাপদ, স্থায়ী ও স্থায়ী আর্থিক ব্যয়মুক্ত বাহ্যিক তহবিলের উৎস ।

২. পাওনাদারদের তহবিল : মালিকানা তহবিল প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত হলে অথবা মূলধন ব্যয় ন্যূনতম করার উদ্দেশ্যে পাওনাদারদের নিকট হতে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। ঋণ, অগ্রাধিকার শেয়ার মূলধন, পাওনাদার, বকেয়া খরচ, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদি পাওনাদারকে তহবিলের উৎস। এই তহবিল নিম্নলিখিত প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস হতে সংগ্রহ করা যায় :

(a) প্রাতিষ্ঠানিক উৎস : ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে তহবিলের প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠাকন জন্ম লাভ করে। এ সকল প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য ও নীতিমালার আলোকে বিভিন্নপ্রতিষ্ঠানে তহবিল সরবরাহ করে থাকে। নিম্নে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক F তহবিলের উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

(i) বাণিজ্যিক ব্যাংক : তহবিলের প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলোর 5 | মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জামানতের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদি তহবিল সরবরাহ করে। এছাড়াও { বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে জামানতযুক্ত ও জামানতমুক্ত উভয় প্রকার স্বল্পমেয়াদি তহবিল পাওয়া যায় ৷

(ii) বিমা কোম্পানি : বিমা কোম্পানিসমূহ সাধারণত স্বল্পমেয়াদি তহবিল সরবরাহ করে না। দীর্ঘমেয়াদি ও কম ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে বিমা কোম্পানিসমূহ তহবিল সরবরাহ করে ।

(iii) বিনিয়োগ ব্যাংক : বিনিয়োগ ব্যাংকসমূহ যৌথ মূলধনী -কোম্পানির নতুন ইস্যুকৃত শেয়ার ক্রয়, শেয়ার অবলেখন, সেতু অর্থায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

(iv) ইজারা কোম্পানি : মধ্যমেয়াদি অর্থায়নের উৎস ‘ হিসেবে ইজারা কোম্পানিসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘ ইজারা কোম্পানিসমূহ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ী সম্পত্তি ব্যবহারের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে তহবিল সরবরাহ করে থাকে ।

(v) উন্নয়ন ব্যাংক : শিল্প স্থাপন ও সম্প্রসারণের জন্য স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণদান, শেয়ার অবলেখন, ঋণ পরিশোধের গ্যারান্টি প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে তহবিল সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। উন্নয়ন ব্যাংকসমূহ সেতু অর্থায়ন ও চলতি মূলধন সরবরাহ করে থাকে ।

(vi) বিশ্লেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান : বিশ্লেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সাধারণত বিশেষ ধরনের আর্থিক কর্মকাণ্ড ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে তহবিল সরবরাহ করে না। এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে গৃহনির্মাণ ঋণদান সংস্থা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য ।

(b) অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস : প্রাতিষ্ঠানিক উৎসের পাশাপাশি বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকেও তহবিল সংগ্রহ করা যায়। এসকল অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসের তহবিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের ধরন প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও ঋণ ধারণ ক্ষমতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। নিম্নে বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

(i) ব্যবসায় ঋণ : ধারে পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে যে তহবিলের অভাব পূরণ হয় তাকে ব্যবসায় ঋণ বলে। ব্যবসায় ঋণ ক্রেতার তহবিলের স্বল্পমেয়াদি চাহিদা পূরণ করে ।

(ii) বকেয়া খরচ : প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেরই এমন কিছু খরচ থাকে যা সংগঠিত হওয়ার সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের বাহিরের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হয় না; বরং একটি নির্দিষ্ট তারিখ অন্তর অন্তর পরিশোধ করতে হয় ।

(iii) বন্ধকি ঋণ : স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা যায় ।

(iv) বন্ড বা ঋণপত্র : বড় বড় শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানসমূহ (Blue chip firm) কোন প্রাতিষ্ঠানিক উৎসের সাহায্য ছাড়া সরাসরি জনসাধারণের নিকট বন্ড বা ঋণপত্র বিক্রয় করে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে ।

(v) বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন : সাধারণত একমালিকানা এবং অংশীদারী কারবারের ক্ষেত্রে মালিক বা অংশীদারগণ নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের নিকট হতে স্বল্পমেয়াদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করে থাকে ।

(vi) মহাজন : একমালিকানা এবং অংশীদারি প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশি মহাজনদের নিকট হতে উচ্চ সুদের হারে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে।

একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ উৎসের ভিত্তিতে তহবিল বা অর্থায়নের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে চিত্রের সাহায্যে আলোচনা কর,একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের তহবিলের বিভিন্ন উৎস সংক্ষেপে বিবৃত কর,বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অর্থায়নের উৎসসমূহ কি কি?

Leave a Comment