ঊনবিংশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর উৎপত্তি বিকাশ আলোচনা কর
ভূমিকা : জাতীয়তাবাদ হল একটি রাজনৈতিক ধারণা। আর জাতীয়তাবাদের বিকাশের অনিবার্য ফল রাজনৈতিক সচেতনতা। তবে তা একদিনে গড়ে উঠে নি। জাতীয়তা সৃষ্টিতে অনেক বিষয় নিহিত আছে। তেমনি জাতীয়তাবাদের ফসল যে রাজনৈতিক সচেতনতা তা একদিনে সম্ভব হয় নি। ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনের প্রার্থমিক পর্যায় থেকে ভারতবাসী কোম্পানির শোষণ, নির্যাতনে অতিষ্ঠ হওয়ার পর একপর্যায়ে তাদের মাঝে চেতনাবোধ জাগ্রত হয় যে, কোন ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি পেশ না করলে তা সফল হবে না। আর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে গিয়ে সংঘ, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব হয়। আর এ প্রতিষ্ঠানগুলো যখন দাবি আদায়ে অবদান রাখে তখন তা ভারতবাসীর মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে । এভাবে ভারতবর্ষে রাজনৈতিক দল বা সমিতির আবির্ভাব হয়।
সমিতি/সংঘ/রাজনৈতিক সমিতির উদ্ভব : ভারতীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে রাজা রামমোহন রায় প্রথম ভারতে রাজনৈতিক সংস্কার বিষয়ে আন্দোলনের প্রবর্তন করেন। তাঁকেই ভারতে সংঘটিত রাজনৈতিক আন্দোলনের জনক বলা হয়। এক্ষেত্রে অপরাপর যেসব নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এঁরা হলেন, বোম্বাইয়ের দাদাভাই নৌরাজী, বদরুদ্দীন তায়েবজী, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে এবং বাংলার আনন্দমোহন বসু, সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, নবগোপাল মিত্র প্রভৃতি।
এসব নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করেছিলেন যে, বিক্ষিপ্ত বা একক প্রতিবাদের স্থলে সমিতির মাধ্যমে যুক্তভাবে অগ্রসর হলে ভারতবাসীর মধ্যে জনমত জাগ্রত করা সম্ভব হবে। এ চিন্তাচেতনা থেকেই ঊনবিংশ শতকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক সমিতি গঠনের সূত্রপাত হয়। রাজনৈতিক সমিতিগুলো প্রথমে ভারতে প্রেসিডেন্সিগুলোর রাজধানীতে গড়ে উঠে। এর কারণ প্রেসিডেন্সিগুলো ছিল ইংরেজদের প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র। ব্যবসায় বাণিজ্য, শিল্প ও ইংরেজি শিক্ষারও এগুলো কেন্দ্র ছিল। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মুখপাত্ররা প্রেসিডেন্সি শহরগুলোতে বসবাস করত। এসব কারণে প্রেসিডেন্সি শহরগুলো কেন্দ্র করে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক সমিতিগুলো গড়ে উঠে। অনিল শীল এ সমিতির যুগকে রাজনৈতিক সমিতির আদিযুগ বলে অভিহিত করেছেন। এ সমিতি গঠনের মাধ্যমেই ভারতবর্ষ আধুনিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পথে এগিয়ে যায়।
নিম্নে বাংলার বিভিন্ন রাজনৈতিক সমিতির বিবরণ দেওয়া হল :
১. জমিদার সমিতি (Landholders Society) : জমিদার সমিতিকে ভারতে প্রথম রাজনৈতিক দল/সমিতি হিসেবে ধরা হয়। ১৮৩৭ সালে রাধাকান্ত দেবের সভাপতিত্বে জমিদার সমিতি গঠিত হয়। জমিদাররা সাধারণত এ সমিতির সদস্য হতেন। এ সমিতির প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল জমিদারদের স্বার্থরক্ষা করা। ১৮৩৮ সালে এ সমিতির নাম পরিবর্তন করে Land Holders Society করা হয়। এর প্রাণ পুরুষ ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। প্রথম থেকে ল্যান্ডহোল্ডারস সোসাইটি ঘোষিত উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে সংকীর্ণ জাতিভেদ বা আঞ্চলিকতার বিরুদ্ধে একটি উদারনৈতিক নীতি প্রতিফলিত হয়। সমিতির অন্যতম নেতা রাজেন্দ্রলাল মিত্র ভূমি মালিকক্ষে। স্বার্থের পাশাপাশি রায়ত বা কৃষকদের অধিকার রক্ষার কথা বলেছিলেন। তিনি সমিতির মাধ্যমে ভারতবাসীর নিয়মতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করতেন। বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ ব্রজেন্দ্রলাল মিত্রের মতে, এ সোসাইটি ছিল এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা ।
২. বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি (Bengal British India Society) : ১৮৪৩ সালে থম্পসন নামে উদারপন্থি এক ইংরেজ এ বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণ এবং ন্যায্য অধিকার সুরক্ষা করাই ছিল এ সমিতির লক্ষ্য। ভারতীয় জনগণের অবস্থা ইংল্যান্ডে প্রচারের ক্ষেত্রে এ সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এ সমিতি সরকারের কাছে সরকারি চাকরিতে বেশি সংখ্যক ভারতীয়দের নিয়োগ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, জুরি ব্যবস্থা দ্বারা বিচার, প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ব্যবস্থা গঠনের জোর দাবি জানায়। এ সমিতির দাবির ফলেই ভারতের কোম্পানি সরকার ভারতীয়দের মধ্য থেকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদে নিয়োগ দান করেছিলেন।
৩. ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান এ্যাসোসিয়েশন (British Indian Association) : ব্রিটিশ ইন্ডিয়া এ্যাসোসিয়েশন মূলত ল্যান্ড হোন্ডাস সমিতি এবং বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান এ্যাসোসিয়েশন এ দুটি সমিতির মিলনের মাধ্যমে ১৮৫১ সালে গঠিত হয়। প্রথম থেকে এ সংস্থা ছিল সর্বভারতীয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ এ সমিতিতে যোগ দেন। এ্যাসোসিয়েশনের বেশিরভাগ সদস্য ছিলেন জমিদার। ভারতের জমিদার শ্রেণি এ এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমেই তাঁদের স্বার্থ সংরক্ষণ করত। জমিদার ছাড়াও বড় বড় ব্যবসায়ী এবং রাম গোপাল ঘোষ, রাজেন্দ্রলাল মিত্র ও হরিশ মুখোপাধ্যায়ের মত অভিজাত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ সমিতির সদস্য হয়েছিলেন। ১৮৫২ সালে এ সভা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দাবিদাওয়া সংক্রান্ত এক দীর্ঘ স্মারকলিপি প্রেরণ করে।
এ সভা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের বয়স কমানোর প্রতিবাদ করে এবং ইংল্যান্ডে হেইলেবেরী কলেজ লোপ করার দাবি জানায়। এছাড়া এ সভা প্রজাস্বত্ব আইন এবং ১৮৪৯ সালের খাজনা আইনের প্রতিবাদ জানায়। এ দাবি আদায়ের জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করে। ক্রমে এ সমিতি জমিদার শ্রেণির স্বার্থ ও মর্যাদা সম্পর্কে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠায় নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি এর থেকে দূরে সরে যায়। তাছাড়া সদস্যদের উপর অত্যধিক চাঁদা ধার্য করার ফলে এ সভার সদস্য সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। “
৪. ইন্ডিয়া লীগ (India Leagua) : ব্রিটিশ ইন্ডিয়া Association এর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ১৮৭৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ইন্ডিয়া লীগ গঠিত হয়। অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক শিশির কুমার ঘোষ ছিলেন এ লীগের প্রতিষ্ঠাতা ইন্ডিয়া লীগের বেশিরভাগ সদস্য ছিলেন পূর্ববাংলার। ইংরেজি সংবাদপত্র The Englishman এ সমিতিকে “The first market sign of the awakening of the people of this side of India to praetieal life বলে প্রশংসা করেছেন। ব্রিটিশ ইন্ডিয়া এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এ সমিতি গঠিত হয়। শুধু মধ্যবিত্ত নয় সাধারণ মানুষকেও আকর্ষণ করতে চেয়েছিল ইন্ডিয়া লীগ। এ কারণে সদস্যদের চাঁদার হার করা হয় বছরে ৫ টাকা। এ সমিতির প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি এবং রাজনৈতিক শিক্ষায় উৎসাহ প্রদান। ইন্ডিয়া লীগ স্বল্পকাল স্থায়ী হলেও ভারতের জাতীয় জাগরণের ইতিহাসে এর অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়।
৫. ভারতসভা (Indian Association) : ইন্ডিয়া লীগ উঠে গেলে ১৮৭৬ সালে সুরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক ভারতসভা গঠিত হয়। রাজনীতি সচেতন যুবশক্তিকে সংগঠিত ও পরিচালিত করার প্রয়োজনেই ভারতসভার উদ্ভব হয়। এ সভার উদ্দেশ্য ছিল ভারতে এক শক্তিশালী জনমত গঠন করা। ভারতীয়দের সাধারণ রাজনৈতিক স্বার্থ ও আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করা। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের প্রসার এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে জনসাধারণকে যুক্ত করা। ভারতসভার মাধ্যমে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়স ২১ থেকে ১৯ করা হলে প্রতিবাদ জানায়। সুরেন্দ্রনাথ এ আইনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার জন্য শহরগুলোতে জনসভার আয়োজন করেন। ভারতসভার পক্ষ হতে ভারতীয় ছাত্রদের সুবিধার জন্য একটি আবেদনপত্র ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাঠানো হয়। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত করাতে সুরেন্দ্রনাথ এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সুরেন্দ্রনাথ রাজনৈতিক নেতার আসনে অধিষ্ঠিত হন। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ব্রিটিশ সরকার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বিধিগুলো পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
১৮৭৮ সালে বড়লাট লিটনের শাসনামলে মাতৃভাষা সংবাদপত্র আইন যে (Vernacular Press Act) ও অস্ত্র আইন (Arms Act) পাস করা হয়। সংবাদপত্রগুলোর কণ্ঠরোধ এবং ভারতবাসীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য লিটন এ দুটি আইন পাস করেন। সুরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ভারতসভা এ দুটি প্রতিক্রিয়াশীল আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলে। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার আইনগুলোর কয়েকটি ধারা সংশোধন করতে বাধ্য হয়। পরে এ সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ভারতীয়রা ইলবার্ট বিল আন্দোলনের সময় অবদান রাখে। তবে ইলবাটও পরে সংশোধিত হয়েছিল ।
৬. বাংলার বাইরে রাজনৈতিক সমিতি : নিম্নে বাংলার বাইরের রাজনৈতিক সমিতির বিবরণ দেওয়া হল :
ক. বোম্বাই এ্যাসোসিয়েশন : কলকাতার মত বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি শহরেও রাজনৈতিক সমিতির উদ্ভব হয়। ১৮৫২ সালে বোম্বাই এ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। পার্সি, গুজরাটি ও মুসলিম বণিক সম্প্রদায়ের মুখপাত্ররা এ সমিতির কর্মকর্তা ছিলেন। এ সমিতি ১৮৬৯ সালে একযোগে বিলাতে ও ভারতে I.CS পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানায়। ১৮৭১ সালে সরকারের কর বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এ সমিতি প্রতিবাদ জানায়। এ সংগঠনের রাজনৈতিক তৎপরতা ছিল সীমিত। এ সমিতি ধনিক শ্রেণির প্রতিষ্ঠান হওয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাথে সংঘাত দেখা দেয় ।
খ. বোম্বে প্রেসিডেন্সি এ্যাসোসিয়েশন : ১৮৮৫ সালে মারাঠি, গুজরাটি, পার্সি ও মুসলমানদের সমবেত প্রচেষ্টায় বোম্বে প্রেসিডেন্সি এ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সমিতির রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা ছিল সীমিত। এ সমিতি সাধারণ মানুষের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলত। ফলে বাইরে এর কোন শাখা স্থাপিত হয় নি।
গ. গুনা সার্বজনিক সভা : ১৮৬৭ সালে পুনা সার্বজনিক সভা নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিখ্যাত স্বদেশী হরি দেশমুখ ছিলেন এর অন্যতম সদস্য। মহারাষ্ট্রের সুসন্তান মহাদেব গোবিন্দ রানাডে ছিলেন এ সভার প্রাণ পুরুষ। বাংলার রাজনৈতিক জীবনকে যেমন উজ্জীবিত করেছিল ভারতসভা, পুনার সার্বজনিক সভা সে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল পশ্চিম ভারতে। ১৮৭৯ সালে বোম্বাইয়ের গভর্নর এ সভা সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, “Never have I known in India a national and political ambition so continuous, so enduring, so for reaching, so utterly impossible for us to satisfy as that of the brahmins of western India,” এ সভা ১৯৭৪ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতীয় প্রতিনিধি গ্রহণের দাবি জানায়। এছাড়া অনেক বিষয়ে প্রতিবাদ করেছিল।
ঘ. মাদ্রাজ নেটিভ এ্যাসোসিয়েশন : মাদ্রাজে প্রথম রাজনৈতিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫২ সালে। এ সমিতির নাম মাদ্রাজ নেটিভ এ্যাসোসিয়েশন। কলকাতায় ব্রিটিশ ইন্ডিয়া এ্যাসোসিয়েশনের শাখা হিসেবে মাদ্রাজে এ এ্যাসোসিয়েশন স্থাপিত হয়। অল্পকাল পরে কলকাতা সমিতির সাথে এ সমিতি বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন সত্তা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। রাজস্ব আদায়ে উৎপীড়ন করা চলবে না- এটাই ছিল তাদের প্রধান দাবি ।
৬. মহাজন সভা : ১৮৮৪ সালে মাদ্রাজের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি মহাজন সভা প্রতিষ্ঠা করে। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনে, বিশ্ববিদ্যালয় ও বণিক সংঘে গণতান্ত্রিক নীতির প্রসার ছিল এ সমিতির অন্যতম লক্ষ্য।
চ. বিবিধ : উপরিউক্ত সংগঠনসমূহ ছাড়াও ভারতে ও বিদেশে ঐ সময় কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমিতি জাতীয় জাগরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। এদের মধ্যে দেশে চৈত্রমেলা’ পরে ‘হিন্দুমেলা’ নামে প্রসিদ্ধ এবং বিদেশে ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’, ‘ইন্ডিয়া রিফর্থ সোসাইটি’, ১৮৬৬ সালে দাদাভাই নৌরাজী প্রতিষ্ঠিত ইস্ট ইন্ডিয়া এ্যাসোসিয়েশন’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ছিল। তবে এ সমিতিগুলো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে নি। তবে না পারলেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
উপসংহার : অতএব বলা যায় যে, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রারম্ভ পর্যায় থেকে ভারতবর্ষে তাদের অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতনের জন্য ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয়তার চেতনার/জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশস্বরূপ একাধিক রাজনৈতিক সমিতি গঠিত হয়েছিল। এ সমিতিগুলোর মাধ্যমেই ভারতবাসী তাদের মতামত ব্রিটিশ সরকারের কাছে তুলে ধরেছিল। তবে যদিও এগুলোর মাধ্যমে তেমন সাফল্য অর্জিত হয় নি। তথাপিও এগুলোর অবস্থার প্রেক্ষাপটে সমিতিগুলোর প্রয়োজন ছিল। এগুলোর চেতনা থেকে পরবর্তীতে ভারতে সর্বভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং, ভারতের কংগ্রেস পূর্ব সমিতিগুলো ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।