অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১। দুটি অসমান ভেক্টরের লব্ধি কি শূন্য হতে পারে—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : দুটি অসমান ভেক্টরের লব্ধির মান কখনো শূন্য হতে পারে না। কারণ দুটি অসমান ভেক্টরের লব্ধির সর্বনিম্ন মান হলো ভেক্টরদ্বয়ের মানের বিয়োগফলের সমান, যা কখনো শূন্য হতে পারে না।
২। দুটি ভেক্টর কখন সমান্তরাল হয়? বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : মান শূন্য নয় এমন দুটি ভেক্টরের ক্রস গুণন শূন্য হলে ভেক্টরদ্বয় পরস্পর সমান্তরাল হয়।
৩। দুটি ভেক্টর কখন পরস্পর লম্ব হয়? বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : মান শূন্য নয় এমন দুটি ভেক্টরের ডট গুণন শূন্য হলে ভেক্টরদ্বয় পরস্পর লম্ব হয়।
৪। গাড়ির টায়ারের বাইরের দিক খাঁজযুক্ত করে তৈরি করা হয় কেন?
উত্তর : খাঁজ গাড়িকে যথাযথভাবে চালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় ঘর্ষণ বল লাভ করতে সহায়তা করে। টায়ারের খাঁজ থাকার ফলে টায়ার রাস্তাকে ভালোভাবে আঁকড়ে ধরে। এতে গাড়িটি স্থিতিশীল অবস্থা থেকে গতিশীল অবস্থায় অথবা গতিশীল অবস্থা থেকে স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছাতে পারে। খাঁজ না থাকলে টায়ার পিছলে যেত। তাই গাড়ির সঠিক গতির জন্য এবং যথাযথভাবে চালনা করার জন্য টায়ারের বাইরের দিক খাঁজযুক্ত করে তৈরি করা হয়।
৫। খোলা অবস্থায় বায়ুপূর্ণ বেলুন ছেড়ে দিলে খোলা মুখের বিপরীত দিকে ছুটতে থাকে কেন?
উত্তর : বেলুন চেপে ধরে খোলা মুখ দিয়ে বায়ু বের করার সময় বায়ুর ওপর একটি বল প্রয়োগ করা হয়। ফলে খোলা মুখ দিয়ে বায়ু সজোরে বেরিয়ে আসে। নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রানুসারে এ সময় বায়ুও বেলুনের ওপর একটি বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে। তাই বায়ুপূর্ণ বেলুনের মুখ খোলা অবস্থায় ছেড়ে দিলে খোলা মুখের বিপরীত দিকে ছুটতে থাকে।
৬। শক্ত মাটির চেয়ে বালুকাময় নরম মাটিতে হাঁটা কষ্টকর কেন?
উত্তর : বালুকাময় নরম মাটির ওপর পা যথেষ্ট বল প্রয়োগ করতে পারে না। ফলে পায়ের ওপর নরম মাটির প্রতিক্রিয়া বল এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া বলের অনুভূমিক উপাংশ কম হয়। এ জন্য বালুকাময় নরম মাটিতে হাঁটা কষ্টকর।
৭। একজন দৌড়বিদ দৌড়ের শুরুতে সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ভূমির প্রতিক্রিয়া বল ভূমির সঙ্গে কম কোণ উৎপন্ন করে। ফলে ভূমির প্রতিক্রিয়া বল এর অনুভূমিক উপাংশ বেশি হয় বিধায় দৌড়বিদ সামনের দিকে বেশি বল অনুভব করে এবং গতিশীল হয়। তাই দৌড়বিদ দৌড়ের শুরুতে সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে।
৮। ভর ও জড়তার ভ্রামকের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ভর ও জড়তার ভ্রামকের মধ্যে পার্থক্য হলো ভর বস্তুর রৈখিক গতির পরিবর্তনে বাধার সৃষ্টি করে, অপরপক্ষে জড়তার ভ্রামক বস্তুর ঘূর্ণন গতির পরিবর্তনে বাধার সৃষ্টি করে।
৯। একজন নৃত্যশিল্পী নাচতে গিয়ে ঘূর্ণনের সময় দুই হাত ভাঁজ করে নেয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : যেহেতু হাত ভাঁজ করলে ব্যাসার্ধ কমে যায়। তাই জড়তার ভ্রামক কমে যায়। জড়তার ভ্রামক কমে গেলে কৌণিক বেগ বেড়ে যায়। সে জন্য নৃত্যশিল্পী কম শক্তিতে বেশি কৌণিক বেগে ঘুরতে পারেন। তাই তিনি ঘূর্ণনের সময় হাত ভাঁজ করে নেন।
১০। বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণনশীল বস্তুর কেন্দ্রমুখী বল ব্যাসার্ধের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণনশীল বস্তুর কেন্দ্রমুখী বল ব্যাসার্ধের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। কারণ কেন্দ্রমুখী বল ব্যাসার্ধের সমানুপাতিক। সে জন্য কেন্দ্রমুখী বল বৃত্তের ব্যাসার্ধ বৃদ্ধিতে বৃদ্ধি পায় এবং ব্যাসার্ধ হ্রাসে হ্রাস পায়।
১১। বক্রপথে যানবাহন চলার জন্য বাঁকের মুখে রাস্তায় ব্যাংকিংয়ের প্রয়োজন হয় কেন?
উত্তর : অনুভূমিক রাস্তা বা রেললাইনের মোড় বা বাঁক নিতে হলে বাঁকের স্থলে রাস্তার বাঁকের ভেতরের দিকে নিচু এবং বাইরের দিকে উঁচু করে রাস্তা ঢালু করা থাকে। একে রাস্তার ব্যাংকিং বলে।
এখন চলন্ত গাড়ি বা যানবাহনকে বক্রপথে বাঁক নেওয়ার সময় বাঁকের কেন্দ্রের দিকে হেলে থাকতে হয়। কারণ বক্রপথে চলার সময় একটি কেন্দ্রমুখী বলের প্রয়োজন হয়, যা সমতল রাস্তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ফলে গতিশীল গাড়ি বা যানবাহন কেন্দ্রের বাইরে উল্টে পড়ে। তাই প্রয়োজনীয় কেন্দ্রমুখী বল জোগান দেওয়ার জন্য এবং গতি জড়তাকে প্রশমিত করে বক্রপথে গাড়ি বা যানবাহনকে ঘোরানোর জন্য বক্রপথে ব্যাংকিং তথা রাস্তার বাঁকে ভেতরের প্রান্ত থেকে বাইরের প্রান্ত উঁচু করে তৈরি করার প্রয়োজন হয়।
১২। বল ও সরণ শূন্য না হলেও কাজ শূন্য হতে পারে কি না—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পারে, যখন বল ও সরণের মধ্যবর্তী কোণ সমকোণ হয়। কারণ তখন কাজ W = Frcos900 = 0 (শূন্য) হয়।
১৩। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, কিন্তু কোনো কাজ করছে না। কেন?
উত্তর : সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যকার মহাকর্ষ বলের সঙ্গে পৃথিবীর সরণ লম্বিক হয়; অর্থাৎ q = 900 হয়। ফলে মহাকর্ষ বলের দিকে পৃথিবীর সরণের অনুভূমিক উপাংশের মান হয় rcos900। তাই সে ক্ষেত্রে কাজ, W = Frcos900 = 0 (শূন্য) হয়।
১৪। ঢিল মারলে জানালার কাচ টুকরা টুকরা হয়ে যায়; কিন্তু বন্দুক দ্বারা গুলি করলে একটি ছোট গর্ত হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ঢিলের বেগের চেয়ে বন্দুকের গুলির বেগ অনেক বেশি। তাই কাচের সঙ্গে ঢিলের সংঘর্ষকাল, গুলির সংঘর্ষকাল অপেক্ষা অনেক বেশি। ফলে ঢিলের গতিশক্তি সমগ্র কাচে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে কাচটি টুকরা টুকরা হয়ে যায়। পক্ষান্তরে গুলির সংঘর্ষকাল অনেক কম হওয়ায় গুলির গতিশক্তি শুধু সংঘর্ষের স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে কাচে গুলির পরিমাপ অনুযায়ী ছোট গর্ত হয়।
১৫। কোনো বস্তুর শক্তি থাকলে ভরবেগ না-ও থাকতে পারে; কিন্তু ভরবেগ থাকলে অবশ্যই শক্তি থাকবে—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উঁচুতে অবস্থিত কোনো স্থির বস্তুর স্থিতিশক্তি তথা শক্তি থাকে; কিন্তু সেখানে বেগ না থাকায় ভরবেগ থাকে না। আবার কোনো বস্তুর ভরবেগ থাকলে অবশ্যই বেগ থাকবে। আর বেগ থাকলে অবশ্যই বস্তুর গতিশক্তি তথা শক্তি থাকবে।
১৬। অভিকর্ষীয় বল অথবা, মহাকর্ষ বল সংরক্ষণশীল বল—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : (ক) অভিকর্ষ বল (বা মহাকর্ষ বল) দ্বারা কৃতকাজ আদি ও কোষ শেষ অবস্থানের ওপর নির্ভর করে; কিন্তু গতি পথের ওপর নয়। (খ) এই বল দ্বারা কৃতকাজ পুনরুদ্ধার করা যায়।
(গ) এই বল দ্বারা পূর্ণচক্র পরিভ্রমণে মোট কাজ শূন্য হয়। এসব কারণে অভিকর্ষ বল (বা মহাকর্ষ বল) সংরক্ষণশীল বল; কিন্তু অসংরক্ষণশীল বল নয়।
১৭। ঘর্ষণ বল অসংরক্ষণশীল বল—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ঘর্ষণ বল দ্বারা কৃতকাজ আদি ও শেষ অবস্থানের ওপর নির্ভর করে না; বরং গতিপথের ওপর নির্ভর করে। ঘর্ষণ বল দ্বারা কৃতকাজ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। এসব কারণে ঘর্ষণ বল অসংরক্ষণশীল বল কিন্তু সংরক্ষণশীল বল নয়।
১৮। সেকেন্ড দোলক মানেই সরল দোলক; কিন্তু সরল দোলক মানেই সেকেন্ড দোলক নয়—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : সেকেন্ড দোলক এক প্রকার দোলক, যার দোলনকাল শুধু দুই সেকেন্ড। কিন্তু সব সরল দোলকের দোলনকাল দুই সেকেন্ড নয়। যেসব সরল দোলকের দোলনকাল শুধু দুই সেকেন্ড হয়, সেই সব সরল দোলককে শুধু সেকেন্ড দোলক বলা হয়।
১৯। একটি দোলন ঘড়ি শীতকালে দ্রুত এবং গ্রীষ্মকালে ধীরে চলে কেন?
উত্তর : শীতকালে দোলক ঘড়ির সরু তারে দৈর্ঘ্য কমে যায় এবং গ্রীষ্মকালে সরু তারের দৈর্ঘ্য বেড়ে যায়। সুতরাং শীতকালে দোলক ঘড়ির দোলনকাল কমে যায় এবং ঘড়ি দ্রুত চলে। গ্রীষ্মকালে দোলক ঘড়ির দোলনকাল বেড়ে যায় এবং ঘড়ি ধীরে চলে।
২০। সব পর্যাবৃত্ত গতি সরল দোলন গতি নয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : সব পর্যায়বৃত্ত গতি স্পন্দন গতি হয় না। যে পর্যায়বৃত্ত গতিসম্পন্ন কণা পর্যায়কালের অর্ধেক সময় তার গতিপথের একদিকে এবং বাকি অর্ধেক সময় তার বিপরীত দিকে গমন করে ওই পর্যায়বৃত্ত গতি হবে স্পন্দন গতি বা দোল গতি। আর এই স্পন্দন গতি বা দোল গতিসম্পন্ন কণার গতি যদি তার গতিপথের যেকোনো মুহূর্তে ত্বরণ সাম্যাবস্থা হতে সরণের সমানুপাতিক এবং বিপরীতমুখী হয় শুধু সেই ধরনের স্পন্দন গতি বা দোল গতিসম্পন্ন পর্যাবৃত্ত গতি হবে সরল দোল গতি। এ ছাড়া অন্য সব পর্যাবৃত্ত গতি সরল দোলন গতি নয়।
২১। দোলায়ওমান দোলনার শিশুর পাশে আরো একটি শিশু, একই অবস্থানে পাশাপাশি বসলে দোলনার পর্যায়কালের পরিবর্তন হবে কি না—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : হবে না; কারণ সরল দোলন গতিসম্পন্ন দোলনার পর্যায়কাল তার ওজন বা ভরের ওপর নির্ভর করে না।
২২। সরল দোল গতির ক্ষেত্রে সাম্যাবস্থানে ববের বেগ সর্বনিম্ন কি না—ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর : সাম্যাবস্থানে ববের বেগ সর্বনিম্ন হয় না; বরং সর্বোচ্চ হয়। কারণ সাম্যাবস্থানে x = 0 হয়, তখন ববের বেগ, যা সর্বোচ্চ মান নির্দেশ করে।
২৩। গরমের দিনে একই তাপমাত্রায় কক্সবাজার অপেক্ষা দিনাজপুরে অধিক স্বস্তিবোধ হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা বলে এই এলাকার বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতার মান বেশি; আর দিনাজপুর সমুদ্র উপকূল থেকে অনেক দূরে বলে এই এলাকায় বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম হয়। ফলে শরীরের ঘাম দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং আমাদের স্বস্তিবোধ হয়।