“একজন নারী যদি বেপর্দায় চলে তাহলে ৪ জন পুরুষ জাহান্নামে যাবে”-এ হাদিসটি কি সঠিক? (পরিবার প্রধানের দায়িত্ব-কর্তব্য)
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
প্রশ্ন: নিম্নোক্ত হাদিসটি সহিহ কি না জানতে চাই: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“একজন নারী যদি বেপর্দায় চলে তাহলে ৪ জন পুরুষ জাহান্নামে যাবে। তারা হল, ঐ নারীর বাবা, বড় ভাই, স্বামী ও বড় ছেলে।”
উত্তর:
ইদানীং এমন একটা কথা ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেই বুঝে-না বুঝে দেদারসে তা কপি-পেস্ট ও শেয়ার করে চলেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হাদিস। এমন কোন হাদিস নির্ভরযোগ্য কোন হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয় বরং এটি একটি ইসলামের মূলনীতি পরিপন্থী কথা। কেননা বিয়ের পূর্বে একজন নারীর দায়িত্বশীল তার বাবা আর বিয়ের পর তার স্বামী।
সুতরাং বিয়ের পূর্বে কোন মহিলা বেহায়াপনা ও প্রকাশ্যে অন্যায়-অপকর্ম করলে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বিচারের কাঠগড়ায় তার অভিভাবক তথা বাবাকে প্রশ্ন করবেন; তার বড় ভাই বা অন্য কাউকে নয়।
আর বিয়ের পর তার উপর কর্তৃত্বশীল তার স্বামী। বিয়ের পর সে বেহায়াপনা ও প্রকাশ্যে অন্যায়-অপকর্ম করলে তাকে আল্লাহর কাঠ গড়ায় জবাবদাহী করতে হবে; তার ছেলে, ভাই বা অন্য কাউকে নয়।
অর্থাৎ যে নারী আল্লাহর বিধান পর্দা লঙ্ঘন করবে, প্রকাশ্যে পাপাচার, বেহায়াপনা এবং অন্যায়-অপকর্ম করবে সে নিজে যেমন গুনাহগার হবে তেমনি তার অভিভাবক তাকে বাধা না দেয়ার কারণে হাশরের ময়দানে সেও আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হবে। কেননা মহান আল্লাহ অভিভাবক তথা পরিবারের প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন, সে যেন নিজেকে এবং তার পরিবার তথা স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততিকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করে।
● আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” (সূরা আত তাহরিম: ৬)
এ আয়াতের ব্যাখ্যা:
قال مجاهد “قوا أنفسكم وأهليكم نارا” قال اتقوا الله وأوصوا أهليكم بتقوى الله وقال قتادة تأمرهم بطاعة الله وتنهاهم عن معصية الله وأن تقوم عليهم بأمر الله وتأمرهم به وتساعدهم عليه فإذا رأيت لله معصية قذعتهم عنها وزجرتهم عنها وهكذا قال الضحاك ومقاتل حق المسلم أن يعلم أهله من قرابته وإمائه وعبيده ما فرض الله عليهم وما نهاهم الله عنه
➧ মুজাহিদ বলেন, “তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” এই আয়াতের অর্থ হল: আল্লাহ বলছেন, “তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকেও আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দাও।”
➧ কাতাদা বলেন: “তুমি তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্য করার নির্দেশে দাও এবং তাঁর অবাধ্যতার ব্যাপারে নিষেধ করো। তুমি তাদের উপর আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি তাদেরকেও আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দাও এবং তাদেরকে এ ক্ষেত্রে সাহায্য করো। আর যদি তুমি তাদেরকে আল্লাহর নাফরমানি করতে দেখো তাহলে তাদেরকে বাধা দাও ও সতর্ক করো।”
➧ অনুরূপভাবে যাহহাক এবং মুকাতিল বলেন, “একজন মুসলিমের উপরে অপরিহার্য দায়িত্ব হল, সে তার স্বজনদের মধ্যে পরিবার তথা স্ত্রী-সন্তান এবং দাসী দাস-দাসীকে আল্লাহর ফরজ বিধান এবং আল্লাহর যা নিষেধ করেছেন সে বিষয়ে জ্ঞান দিবে।” (তাফসিরে ইবনে কাসির)
● হাদিসে এসেছে:
ইবনে উমর রা.সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالأَمِيرُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ بَعْلِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ وَالْعَبْدُ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ” .
“জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
– আমীর (শাসক) তার প্রজাদের উপরে দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
– একজন পুরুষ পরিবার (স্ত্রী-সন্তানদের) উপর দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
– একজন স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ী ও সন্তানের উপর দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
– একজন গোলাম তার মনিবের অর্থ-সম্পদের উপর দায়িত্বশীল। সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (সহিহ মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা আমাদের নিজেদেরকে ইসলামের পথে পরিচালিত করার পাশাপাশি আমাদের স্ত্রী-পরিবারকেও ইসলামের পথে পরিচালিত করার মাধ্যমে জাহান্নামে আগুন থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়া
- লিভারেজ ইজারার সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ লিখ
- হাঁপানি রোগী জন্য পরামর্শ ও হাঁপানি রোগীর ঘরোয়া চিকিৎসা উপায়গুলো
- ২০২৫ এর সেরা ১০ জন তারকারা গুগলিং সার্চে করে
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা