এলাচের উপকারিতা ও অপকারিতা
এলাচ (Cardamom) গাছ খানিকটা আদা গাছের মতোই। এটি গুচ্ছাকারে জন্মে। তবে পাতা আদার থেকে বড়, ঘন ও সুগন্ধযুক্ত। এলাচি আকারে গোল না হয়ে কিছুটা লম্বাকৃতির হয় এবং এর মধ্যে ধূসর বা তামাটে রঙের অনেকগুলি বীজ থাকে। এলাচ সাধারণত বছরে দু’বার জন্মে। এর মধ্যে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে যে এলাচ উৎপাদিত হয় তা অতি উত্কৃষ্ট। রান্নার স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানো এলাচের অন্যতম কাজ।
পুষ্টিগুণ
এতে আছে প্রোটিন, কার্বোহাড্রেট, কোলেস্টেরল, ক্যালোরি, ফ্যাট, ফাইবার, নিয়াসিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, পাইরিডক্সিন, থিয়ামিন, ইলেকট্রোলাইট, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, কপার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, সি ইত্যাদি
এলাচের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১.চুলকানি প্রতিরোধ
চুলকানি ভোগাচ্ছে, সাধারণ মলম ব্যবহারেও রেহাই নেই। এ ক্ষেত্রে বড় এলাচি চন্দনের মতো ঘষে লাগিয়ে এক ঘন্টা পর ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যাবে
২.হৃদযন্ত্রের জন্য
এলাচের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হার্টের জন্যে ভালো। কোলেস্টেরল কম করতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপেও দারুণ একটি ওষুধ এলাচ।
৩.গ্যাস্ট্রিক সমস্যা
এলাচ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধ করে, অ্যাসিডিটি দূর করতে চিবাতে পারেন একটি এলাচ। এটি ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। পেটের যে কোনও সমস্যা যেমন বদহজম (digestive system) নিরাময়ে সহায়তা করে। এক কাপ গরম জলে একটি এলাচ থেঁতো করে পান করুন। দেখবেন হজমের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।
এলাচের উপকারিতা ও গুণাগুণ
৪. শ্বাসকষ্টে
এলাচ বিভিন্ন রকমের সমস্যা যেমন সর্দি, কাশি, ফুসফুসের সমস্যা ও রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা ইত্যাদি থেকে মুক্তি দেয়। ব্রঙ্কাইটিস বা শ্বাসপ্রশ্বাসের কোনো রকম সমস্যা থাকলে এলাচ খাওয়া ভালো।
৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় এলাচ খুব উপকারী। ওষুধের কাজ করে এটি। স্যুপ বা স্টু-এর মধ্যে এলাচ মিশিয়ে খেলে খুব সহজেই কিছু দিনের মধ্যে রক্তচাপ নীচে নামতে শুরু করে।
৬.মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে
মুখের দুর্গন্ধ সকলের জন্যই একটা বিব্রতকর সমস্যা। অনেকেই মুখের দুর্গন্ধজনিত সমস্যায় পড়ে থাকেন। ভালো ভাবে মুখ পরিস্কার করার পরও কারো কারো মুখে থেকে যায় দুর্গন্ধ। একটি এলাচ নিয়ে চিবোতে থাকুন। দেখবেন একেবারে দূর হয়ে গিয়েছে দুর্গন্ধ।
৭. ডিপ্রেশনে
ডিপ্রেশনের মতো মানসিক সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে এলাচ দারুণ সাহায্য করে। প্রতি দিন চায়ের মধ্যে কয়েক দানা এলাচ ফেলে ফুটিয়ে পান করা ভালো।
৮. ক্ষুধা বৃদ্ধিতে
এলাচ খিদে বাড়াতে সাহায্য করে। এলাচের তেল ব্যবহার করলে খাওয়ার প্রতি ইচ্ছে বাড়ে ও খিদেও বাড়ে।
৯.হজমের কাজে
এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান যা বিপাকের ব্যাধি থেকে শরীরকে মুক্তি দেয়। যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয়ের উন্নতি ঘটায়। ফলে হজম ভালো হয় ফলে বুকে জ্বালা বা পেট খারাপ এবং অম্বলের মত সমস্যা থেকেও অনায়াসে রেহাই পাওয়া যায়।
এলাচ খাওয়ার উপকারিতা,এলাচের উপকারিতা কি
১০. ডিটক্সিফিকেশন
শরীরে যত বেশি পরিমাণ ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রবেশ করে, ভেতর থেকে তত বেশি পরিষ্কার ও সতেজ থাকে। এলাচ শরীরে বাইরে থেকে আসা যে কোনো বিষক্রিয়া থেকে মুক্তি দেয় ও ডিটক্সিফাই করে।
১১. স্মৃতিশক্তি প্রখর করে
এলাচে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্ককে শান্ত করে ও স্মৃতিশক্তি প্রখর করে তুলতে সাহায্য করে। প্রতি দিন দুধের সঙ্গে দু’টি এলাচ ফুটিয়ে সেটি পান করুন। ফল অবশ্যই পাবেন।
১২.হেঁচকির হাত থেকে রেহাই
শরীরের যে কোনো মাংসপেশিকে শান্ত করতে এলাচের উপকারিতা অনেক। তাই কোনো কারণে যদি হেঁচকির সমস্যায় পড়েন, তাহলে এক কাপ গরম জলে এক চা চামচ এলাচ মিশিয়ে ১৫ মিনিট রেখে সেটি আসতে আসতে পান করলে উপকার হয়।
১৩.ঠোঁটের জন্যে
এলাচ দিয়ে ঠোঁটের নানা রকমের বাম, গ্লস বা তেল তৈরি হয় যা ঠোঁটের কোমলভাব ফুটিয়ে তোলে। গোলাপি ভাব বজায় রাখে। ঘরেও প্যাক তৈরি করে সারা রাত ঠোঁটে লাগিয়ে রাখা যায়। এই প্যাক করতে লাগে এলাচের গুঁড়ো, অলিভ অথবা আমন্ড অয়েল এবং একটুখানি অ্যালোভেরা জেল। প্রতি দিন এটি ঠোঁটে লাগিয়ে রেখে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
১৪. ত্বকের এলার্জি
এলাচে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল উপাদান ভরপুর। এটি খুব ভালো অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি। ফলে ত্বককে মোলায়েম করে, ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তাই এলাচ ত্বকের জন্যে একটি ওষুধও। মধু এবং কালো এলাচের মিশ্রণ এলার্জি হওয়া অংশে লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবেন।
১৫.দাঁত ও মুখের জন্যে
এলাচের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান মুখের ভেতরের অংশের অর্থাৎ মাড়ি ও দাঁতের খুব উপকার করে। এলাচের ঝাঁঝালো স্বাদ নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে ও তরতাজা ভাব আনে।
এলাচের অপকারিতা
১৬.যৌন স্বাস্থ্য
এলাচের মধ্যে নানান খাদ্য উপাদানের কারণে এটি স্নায়ুকে শান্ত করে ও যৌনইচ্ছাকে বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া, বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতেও এলাচ সাহায্য করে
১৭.ক্যানসারে
এলাচের খাদ্যগুণের কারণে অনেক ধরনের ক্যানসারের টিউমার বা কোষগুলি বাড়তে পারে না। কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে এলাচের গুনাগুণ বিশেষ ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
১৮.উজ্জ্বল ত্বকে
ত্বকের ফর্সাভাব ও ঔজ্জ্বল্যের জন্যে এলাচ দারুণ কাজ করে। ত্বকে ব্রণ ও কালচে ভাব দূর করে। মধু ও এলাচের প্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে ফল পেতে পারেন।
১৯.রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে
এলাচে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এগুলি ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো করে।
২০.মাথা ব্যাথা দূর করে
গরম জলেতে এলাচ গুঁড়ো ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে তৈরি করে নিন এলাচ চা। মাথা ব্যথায় ভুগে থাকলে এক কাপ গরম এলাচ চা খেয়ে দেখুন। দেখবেন মাথা ব্যাথা নিমেষেই দূর হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও এলাচ চা মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে।
২১.চুলের যত্নে
মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকলে চুলের গোড়া মজবুত হয় ও চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এলাচের মধ্যে থাকা পুষ্টিকর উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে চুলকে ঝলমলে ও লম্বা করতে সাহায্য করে।
২২.মাথার ত্বকের জন্যে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে মাথার ত্বক ভালো রাখে। এলাচ চুলের ফলিকলগুলিকে মজবুত করে। এলাচ ভেজানো জল দিয়ে চুল ধুলে বা এলাচের গুঁড়ো চুলে লাগানোর পর শ্যাম্পু করলে সব থেকে ভালো ফল পাওয়া যায়। এলাচের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকের ইনফেকশনকে দ্রুত সারিয়ে তোলে ।
পরিশেষে : এলাচের উপকারিতা-ব্যবহার-ক্ষতিকর দিক,প্রতিদিন এলাচ খাওয়ার বিস্ময়কর উপকারিতা জেনে নিন
আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট
স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ