এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য অনুচ্ছেদ ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট,এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য অনুচ্ছেদ ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট

‘চাকরির পরিক্ষার জন্য অনুচ্ছেদ ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট অনুচ্ছেদ – ০১

চালু হলো স্বপ্নের মেট্রোরেল। এটি নিয়ে ঢাকাবাসীর আগ্রহ কতটা ভা দেখা গেছে উদ্বোধন অনুষ্ঠানেই। তবে এখন প্রশ্ন উঠেছে স্বপ্নের

মেট্রোরেল রাজধানীর যানজট নিরসনে কতটা ভূমিকা পালন করতে পারবে। পুরোপুরি যানজট নিরসন না হলেও নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে যাওয়ার একটি মাধ্যম তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া ঢাকার বেশিরভাগ এলাকার মানুষ মেট্রোরেলের সুবিধা ভোগ করলে বাকি এলাকায়ও গণপরিবহনের ওপর চাপ কমে আসবে। সে জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে মেট্রোর সব লাইন চালু হওয়া পর্যন্ত ।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি শহরের যানজট নিরসন অনেক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। মেট্রোরেল চালু হলেই যে যানজট নিরসন হয়ে যাবে তা বলা যাবে না। কেননা মেট্রো চালু হলেই সড়কে গাড়ির সংখ্যা কমবে না, সড়কের প্রশড়তাও বাড়বে না। মেট্রোরেলের সঙ্গে পুরো গণপরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো গেলে যানজট নিরসনে ইতিবাচক ফল আসতে পারে। তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনায় মেট্রো পরিচালনা করা গেলে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত ও সহজতর হবে।

ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরে মেট্রোরেল ছাড়া যানজটের তেমন কোনো সমাধান নেই। মেট্রোরেল চালু হওয়ায় অন্তত উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে ১১ মিনিটে যেতে পারবেন। আগামী জানুয়ারিতে আরও একটি লাইন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব লাইন চালু করতে পারলে ঢাকার অনেক এলাকার মানুষই এ সুবিধার আওতায় আসবে।

মেট্রোরেলে করে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অনেক মানুষ খুব সহজেই চলে এলেও সেখান থেকে কীভাবে তাদের গন্তব্যে যাবে তার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। মেট্রো স্টেশন থেকে মানুষ যেন সহজেই গন্তব্যে যেতে পারে সে জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।

মহানগরে (ঢাকা) যানজটের কারণে ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বছরে) ক্ষতি হচ্ছে। এমআরটি নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার পরে ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর সাশ্রয় হবে। লাইন-৬ চালু হয়ে গেলে ‘টাইম কস্ট’ ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা প্রতিদিন সাশ্রয় হবে। সঙ্গে ‘অপারেশন কস্ট’ বাবদ সোয়া কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
২০২৪ সালের জুন মাসে এমআরটি-৬ লাইন চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই প্রথম অংশ উদ্বোধন করা সক্ষম হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা নগরীতে ‘মাকড়সার জালের মতো’ মেট্রোরেল তৈরি করা সম্ভব হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় এমআরটি লাইন-৬-এর মতিঝিল অংশ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করার কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। তা ছাড়া এমআরটি লাইন-১ দেশের প্রথম পাতাল রেলের নির্মাণ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। এমআরটি লাইন-৫ ২০২৩ সালের জুলাই মাসে উদ্বোধনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আরও দুই লাইনের কাজ চলছে। এমআরটি লাইনে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। প্রতিদিন ৫ লাখ লোক চলাচল করতে পারবে। পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, পরিবেশ সহায়ক ও সাশ্রয় হবে।

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য অনুচ্ছেদ ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট অনুচ্ছেদ -০২

‘যানজট’ আর ‘ঢাকা’ যেন সমার্থক শব্দ হয়ে গেছে। রাজধানীর যানজটের বাস্তবতা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, যাত্রার সময়টি নিশ্চিত করে বলা যায়, কিন্তু পৌঁছানোর সময় নয়। এই যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনতে ফ্লাইওভার, লেন, রাস্তা প্রশস্তকরণ মিলিয়ে কতো রকম ব্যবস্থা যে নেওয়া হয়েছে- সে হিসেব মেলানো কঠিন। কিন্তু যানজট আর দুর্ভোগ থেকে কিছুতেই পরিত্রাণ মিলছে না। দিন দিন পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকেই যাচ্ছে। এই অবনতিতে যখন রাজধানীবাসীর নাকাল হওয়ার দশা, তখন যেন স্বস্তির শীতল হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল।

একটি সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিসীমা ঘণ্টায় মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। অর্থাৎ, ক্ষেত্রবিশেষে গতিসীমা পায়ে হাঁটার গতির চেয়েও কম।পথ চলার এই অনিশ্চয়তা ও অচলতা থেকে মুক্তি দিতেই মেট্রোরেলের মতো এমন বড় প্রকল্পের কর্মযজ্ঞে নেমে পড়েছে সরকার। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদেরও আশাবাদ, মেট্রোরেল নগরবাসীকে খুব কম সময়েই  গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। এই মেট্রোরেল নগরজীবনেও ভিন্ন মাত্রা ও গতি যোগ করবে। মানুষের জীবনযাত্রার যেমন উন্নয়ন হবে তেমনি আদি শহর ঢাকার মর্যাদাও কিছুটা  নিশ্চয় বাড়বে। এখন নানা সূচকে ঢাকাকে যারা পেছনে ঠেলে দেন তারাও নগরটিকে সমীহ করে চলবেন বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

একসময় মেট্রোরেলকে স্বপ্ন মনে করা হতো। বিশেষ করে বিপুল অংকের অর্থের প্রয়োজনীয়তা সামনে এলে স্বপ্ন ভাবাটাই যেন যৌক্তিক মনে হতো। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের সামনে মেট্রোরেল এখন দৃশ্যমান বাস্তবতারই অপর নাম। ২০১৯ সালের মধ্যেই এই প্রকল্প শেষ হওয়ার দিন গুনছেন নির্মাণকাজ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে কিছু এলাকায় পিলার দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে স্বপ্ন বাস্তবায়নের বার্তা। অনেক এলাকায়ও তুমুল গতিতে চলছে পাইলিং।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএমআরটিডিপি) বা মেট্রোরেল প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত, ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এই প্রকল্পে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার। ঘণ্টায় ১’শ কিলোমিটার বেগে ছুটবে যাত্রী নিয়ে। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।  

প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটারে ৯টি স্টেশন থাকবে। এগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়াও আগারগাঁও। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাকি ৮ দশমিক ৪ কিলোমিটারে স্টেশন থাকবে ৭টি। এগুলো হলো- বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব এবং মতিঝিলে (বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে)। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা।
 
প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএন সিদ্দিক বলেন, ২৪ ঘণ্টা মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই মেট্রোরেলের কাজ সম্পন্ন করবো। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা-আগারগাঁও রুট খুলে দেওয়া হবে। আর ২০২০ সালে মতিঝিলবাসী চড়তে পারবে এমআরটিতে।
 
রাজধানীবাসী যখন এই মেট্রোরেলের শীতল হাওয়া গায়ে মাখছে। তখন আরও দু’টি মেট্রোরেল বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। একটি হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে বাড্ডা-রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত। এই লাইনের একটি অংশ বসুন্ধরার পাশ দিয়ে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত চলে যাবে, যা পুরোটাই হবে এলিভেটেড। তবে কমলাপুর পর্যন্ত যে লাইন যাবে তার ১৬ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল ফরম্যাটে। অর্থাৎ রেল চলবে মাটির নিচ দিয়ে। এ লাইনে কমলাপুর পর্যন্ত স্টেশন থাকবে- খিলক্ষেত, কুড়িল, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা গেট, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর। আর পূর্বাচলের দিকে সম্ভাব্য স্টেশন থাকবে বসুন্ধরা, মাস্তুল, পূর্বাচল, পশ্চিম পূর্বাচল সেন্টার ও পূর্বাচল টার্মিনাল।


প্রশ্ন সমাধান
সাজেশন
চাকরি
ধর্ম
মতামত
শিক্ষা
শিক্ষা সংবাদ
নিয়োগ পরীক্ষা
জানা অজানা
Writing Side
অনার্স ও মাস্টার্স
এইচ এস সি
এসএসসি
ডিগ্রি ও উন্মুক্ত
স্বাস্থ্য
উদ্ভিদ ও প্রাণী
ঔষধি গুন
গোপন সমস্যা
রূপচর্চা
রেসিপি
রোগ প্রতিরোধ

‘এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য অনুচ্ছেদ ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট,অনুচ্ছেদ – ০৩

রাজধানীতে যত সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে যানজট সবচেয়ে ভোগান্তিকর৷ প্রতিনিয়ত এই যানজট হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি কর্মঘণ্টারও ক্ষতি করে৷ স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে যেমন ব্যাঘাত ঘটে তেমনি প্রভাব পড়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে। ক্ষতিটা ধীরে হলেও, এক সময় দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবটা চলে আসে অর্থনীতির ওপর। যানজটের মতো কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট দুরবস্থা বা অব্যবস্থাপনা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা তাই জরুরি ছিল।

রাজধানী হিসেবে ঢাকাকেই পুরো দেশের বেশিরভাগ চাপটা বহন করতে হয়৷ আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার পরিমাণ এখানে অত্যধিক। প্রতিনিয়ত জীবিকার অন্বেষণে, ভাগ্য বদলাতে শত শত লোক ঢাকায় পাড়ি জমায়। ফলে, সঠিক নগর ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা ছিল সময়ের দাবি৷ বিগত কয়েক দশকে সমস্যাগুলো যেমন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে- তেমনি সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থাপনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। মেট্রোরেল সে ধারাবাহিকতার এক বিশেষ সংযোজন। এমনকি মেট্রোরেলের পরিক্ষামূলক যাত্রা সেই স্বপ্ন পূরণের পথকে এগিয়ে দিয়েছে কয়েক ধাপ। এখন অপেক্ষা শুধু শেষ হওয়ার।

রাজধানীতে যত সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে যানজট সবচেয়ে ভোগান্তিকর৷ প্রতিনিয়ত এই যানজট হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি কর্মঘণ্টারও ক্ষতি করে৷ স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে যেমন ব্যাঘাত ঘটে তেমনি প্রভাব পড়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে। ক্ষতিটা ধীরে হলেও, এক সময় দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবটা চলে আসে অর্থনীতির ওপর। যানজটের মতো কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট দুরবস্থা বা অব্যবস্থাপনা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা তাই জরুরি ছিল। যেহেতু ঢাকা শহরে দিন দিন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তাই যানজট স্বাভাবিকভাবে কমত না।

যানজটের মতো কৃত্রিম এই দুরবস্থা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলো হাতে ‍ুনিয়েছিল তা অবশ্যই প্রশংসনীয়৷ এসব প্রকল্পে যেমন বদলে যাবে ঢাকা, তেমনি মানুষের দুর্ভোগও কমবে। ফিরে আসবে স্বস্তির হাওয়া। মেট্রোরেলের পাশাপাশি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও পাতাল রেলের কাজও হাতে নিয়েছে সরকার। নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে, ঢাকাকে বদলে দিতে এবং মানুষকে বাসযোগ্য এক নগরী উপহার দিতে এ প্রচেষ্টা নিশ্চয়ই সময়োপযোগী। অবসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে ঢাকার যে দুর্নাম ছড়াচ্ছিল চারদিকে সে দুরবস্থার মোক্ষম এক জবাব দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্পগুলো।

সাধারণ মানুষ যখন এসব কার্যক্রমের সুফল ভোগ করতে শুরু করবে ঠিক তখনই বদলে যাবে ঢাকা। এসব অবিশ্বাস্য রকমের বদলে যাওয়াকে সাধারণ মানুষ এখন আর গল্প মনে করে না বরং বিশ্বাস করে মনেপ্রাণে ‘আমরা পারি, বাংলাদেশ পারে’। বাংলাদেশে কষ্টকর সময় হিসেবে পরিচিত ১৯৭৫-১৯৯৫ সাল পর‌্যন্ত মানুষের বিশ্বাস এতটাই নিম্নমুখী করা হয়েছে যে, ভালো কাজের প্রতি বিশ্বাস জন্মানোটাও বড় চ্যালেঞ্জ।

সবকিছুর এক সময়োপযোগী জবাব প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন৷ যার নেপথ্যে ছিল দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং স্বচ্ছ বাস্তবায়ন৷ স্বভাবতই, ওসব নামধারী এজেন্টদের গালগপ্প এদেশের সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেনি বরং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে ‘আমরাও পারি’ নামক যে আত্মবিশ্বাসটা জন্মেছে- বাংলাদেশ বিনির্মাণে তা আরও প্রেরণা জোগাবে৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার স্বপ্ন যে অস্তমিত হয়নি তার প্রমাণ উন্নয়নের মহড়া এবং গণমানুষের আস্থা।

মানুষের আস্থা লাভের প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না তা আগেই উল্লেখ করেছি। প্রথমত, এ দেশের মানুষ যা কল্পনা করেনি তা নির্মাণ এবং বিশ্বাসের জায়গা অর্জন৷ দ্বিতীয়ত, ঘরের শত্রু বিভীষণদের সামলানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। গুজব-অসত্য বুলি শক্তহাতে দমন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।

মেট্রোরেল ব্যবস্থা চালু হলে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে চলমান প্রকল্পটি। চোখের পলকে ছুটবে ট্রেন। উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ৩৭ মিনিট। পাঁচ মিনিট অন্তর ছাড়বে এসি ট্রেন। সম্পূর্ণ এলিভেটেড মেট্রোরেলে প্রতি ঘণ্টায় উভয়দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকবে ১৬টি স্টেশন। সাড়ে তিন মিনিট অন্তর ট্রেন থামবে। থাকবে আধুনিক রেলস্টেশন।

চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে রাস্তা থেকে স্টেশনে প্রবেশ করা যাবে। ‘প্রিপেইড কার্ড’ দিয়ে ট্রেনের ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন যাত্রীরা। আবার টিকিট কেটে ভ্রমণেরও সুযোগ থাকবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলবে প্ল্যাটফর্মের প্রবেশদ্বার। বিদ্যুতে চলবে দ্রুতগতিসম্পন্ন এই ট্রেন। জাতীয় পতাকার সঙ্গে মিল রেখে মেট্টোরেলে থাকবে লাল সবুজের সমাহার।

মেট্রোরেল আধুনিক নগর পরিকল্পনায় এক বিস্ময়কর সংযোজন। যা মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিরসনে বা গতি আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কাজের গতি ও মানুষের সচেতনতার জন্য ইতোমধ্যে এমআরটি তথ্যকেন্দ্রে নমুনা ট্রেন রাখা হয়েছে। টিকিট কাটা, ওঠা-নামা ও সব ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যেখানে স্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। অনেকে মনে করেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ করেও নাকি যানজট কমানো সম্ভব হয়নি- সেখানে মেট্রোরেল কেমন ভূমিকা রাখবে? তাদেরকে গুজবের বশবর্তী হয়ে আগাম ভাবনা না ভেবে বাস্তবতা উপলব্ধি করার অনুরোধ জানাই।

মেট্রোরেল একদিকে যেমন যানজট কমাবে অন্যদিকে ঢাকাকে করে তুলবে দৃষ্টিনন্দন। নগরবাসীর এই স্বপ্ন পূরণ হবে আগামী ডিসেম্বরে। পাশাপাশি আগামী বছরের জুনে পদ্মাসেতু চালু করা হবে এবং তার পরই খুলে দেয়া হবে কর্ণফুলী সেতু। এই তিনটি প্রকল্প উন্নয়ন কার্যক্রমের এক মাইলফলক। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যার ভূমিকা থাকবে সর্বাধিক। এমন বৃহৎ প্রকল্পগুলো দেখুক আলোর মুখ। বাংলাদেশ হোক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। স্বপ্নকে সত্যি করে এগিয়ে যাক বীরদর্পে৷

জেএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য অনুচ্ছেদ ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট অনুচ্ছেদ-০৪

মেট্রোরেলের ওয়েবসাইটে গেলে বাংলা ও ইংরেজিতে যে কথাটি দেখা যায় তা হলো ‘বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ, যানজট কমাবে মেট্রোরেল’; অর্থাৎ এখানে মূলত তিনটি জিনিসকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। তা হলো সময়, যানজট ও পরিবেশ। এই তিনটির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘যানজট’। কারণ যানজট কমাতে পারলে সময় ও পরিবেশ দুটোই অর্জিত হয়ে যাবে। এখন যানজট কমাতে গেলে আগে এর কারণ ভালোভাবে বুঝতে হবে।

ঢাকার যানজটের কারণ নিয়ে অনেক কথা বলা সম্ভব কিন্তু মূল যে কারণগুলো রয়েছে তা হলো অল্প পরিমাণ রাস্তা, হেঁটে চলার পথের অব্যবস্থাপনা, অল্পসংখ্যক গণপরিবহন আর অধিক ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল। এখন মেট্রোরেল যেহেতু কোনো সড়কপথ নয়, তাই এর নির্মাণের ফলে ঢাকার মোট সড়কের পরিমাণের কোনো পরিবর্তন হবে না। একই কারণে মেট্রোরেলের ফলে পথচারীদের বর্তমান অবস্থারও কোনো পরিবর্তন হবে না।

কিন্তু মেট্রোরেল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যানজটের যে দুটি কারণের ওপর প্রভাব ফেলবে তা হলো গণপরিবহনের যে ঘাটতি ছিল, তা প্রত্যক্ষভাবে দূর করবে এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা অধিক হারে মেট্রোরেল ব্যবহারের ফলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমে যাবে, যা যানজট কমাতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করবে। মূলত এ কারণেই এত দিন পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ মানুষ মেনে নিয়েছিল।

কিন্তু সম্প্রতি মেট্রোরেলের ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে এবং তা হলো সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা, যা দিয়ে পরবর্তী দুটি স্টেশন যাওয়া যাবে এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ৯০ টাকা, যা দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল (প্রায় ১৯.৮ কিমি) পর্যন্ত যাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, ম্যাস রাপিড ট্রানজিট ( এমআরটি )- লাইন ৬-এ ১৬টি স্টেশন আছে, প্রতিটি স্টেশনের মাঝের গড় দূরত্ব এক কিলোমিটারের কিছু বেশি। এখন আমরা যদি ধরে নিই যে কর্র্তৃপক্ষ মেট্রোরেলের পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ও অন্যান্য খরচ বিবেচনা করে এই ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তাহলে তাত্ত্বিকভাবে মেট্রোরেল সফল বা লাভবান একটা প্রজেক্ট হয়তো হবে, কিন্তু বাস্তবিকভাবে যদি এ পরিমাণ ভাড়া বাস্তবায়ন হয়, তাহলে মেট্রোরেলের মূল যে উদ্দেশ্য, অর্থাৎ যানজট নিরসন তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এই আশঙ্কা করার কারণ হলো গণপরিবহনের বিকল্প ও ব্যক্তিগত গাড়ি হ্রাস করার ক্ষেত্রে এই ভাড়া একটা বড় অন্তরায় হতে পারে।

মেট্রোরেলের মতো একটি ব্যয়বহুল, যানজট নিরসনে পরীক্ষিত ও নিরাপদ যোগাযোগমাধ্যমের সফলতা নির্ভর করে কত বেশি তা গণমানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারল, তার ওপর। গণমানুষকে সম্পৃক্ত করার কার্যকর একটা মাধ্যম হলো সহনশীল ও অন্যান্য বিকল্প মাধ্যমের তুলনায় সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাড়া নির্ধারণ। এ ক্ষেত্রে অল্প লাভ রেখে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে ব্যবসায়িকভাবে যেমন সরকার লাভবান হতে পারে, তেমনি যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া ছুটির দিনে ভাড়া অর্ধেক নির্ধারণ করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, একটু স্বস্তি বা ঝামেলামুক্তভাবে বাজার করার জন্য যিনি সুপার শপে যান, তিনি সুবিধামতো ফুটপাত থেকেও একই জিনিস কিনতে পারেন। কিন্তু যিনি কিছু টাকা বাঁচানোর জন ফুটপাত থেকে বাজার করেন, তার কাছে সুপার শপের শীতল পরিবেশ বা আরাম মুখ্য নয়। মেট্রোরেল একটি গণপরিবহন, আমরা যেন একে সুপার শপ সেবায় পরিণত না করি।

মেট্রোরেল একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প হলেও এর সুবিধা অনেক। প্রথমত, মেট্রোরেলের সাহায্যে যাত্রীরা দ্রুত ও সহজে যাতায়াত করতে পারে। মেট্রোরেল একসঙ্গে অনেক যাত্রীকে বহন করতে পারে। সাধারণত ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম এ সক্ষমতা বোঝানোর জন্য Passenger Per Hour Per Direction (PPHPD) ( প্রতি ঘণ্টায় এক দিকে কতজন যাত্রী পরিবহন করতে পারে তার হিসাব) ধরা হয়। সে হিসাবে মেট্রোরেলের যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা প্রায় ৬০ হাজার PPHPD, যা বিআরটি সিস্টেমের চেয়ে ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি।

দ্বিতীয়ত, মেট্রোরেল যানজট কমানোর মাধ্যমে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে। মেট্রোরেলে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার সুবিধার কারণে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে দেবে, যা রাস্তার ওপর থেকে চাপ কমাতে সাহায্য করে। রাস্তার ওপর থেকে গাড়ির চাপ কমানো গেলে পথচারীদের হাঁটার জন্য বাড়তি জায়গা পাওয়া যাবে, যা একটি পথচারীবান্ধব শহরের জন্য প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, মেট্রোরেল যাতায়াতের খরচ কমাতে সাহায্য করে। কারণ যানজটে যে পরিমাণ জ্বালানির অপচয় হতো তা এ ক্ষেত্রে হবে না। যাতায়াতের খরচ ও সময় কমে যাওয়ার কারণে পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয়ও কমে যাবে, যা একটি প্রতিযোগিতামূলক নগরায়নের জন্য প্রয়োজনীয়। মেট্রোরেলের একটি অন্যতম সুবিধা হলো, পরিবেশদূষণ কমানো। পরিবেশদূষণ কমানো সম্ভব হলে মানুষের স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে, তেমনি জীবনের উৎকর্ষ আসবে।

রচনা ,প্রবন্ধউত্তর লিংক ভাবসম্প্রসারণউত্তর লিংক Paragraphউত্তর লিংক
আবেদন পত্র ও Applicationউত্তর লিংক অনুচ্ছেদ রচনাউত্তর লিংক Compositionউত্তর লিংক
চিঠি Letterউত্তর লিংক প্রতিবেদনউত্তর লিংক CVউত্তর লিংক
ইমেলEmailউত্তর লিংক সারাংশ ও সারমর্মউত্তর লিংক Seen, Unseenউত্তর লিংক
Essayউত্তর লিংকCompleting Storyউত্তর লিংকDialog/সংলাপউত্তর লিংক
অনুবাদউত্তর লিংকShort Stories/Poems/খুদেগল্পউত্তর লিংকSentence Writingউত্তর লিংক

Leave a Comment