কাযা বলতে কী বুঝ? কাযার নামাজ আদায়ের পদ্ধতি সংক্ষেপে লিখ, কাযা নামাজ কী? কাযা নামাজ আদায়ের পদ্ধতি আলোচনা কর , কাযা নামাজ কাকে বলে? কাযা নামাজ আদায়ের পদ্ধতি বর্ণনা কর।
ভুলবশত কিংবা অন্য কোনো বিশেষ কারণে কোনো ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে না পারলে এই নামাজ পরবর্তীতে আদায় করাকে কাজা নামাজ বলা হয়। ফরজ কিংবা ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে তার কাজা আদায় করা আবশ্যক।সুন্নত কিংবা নফল নামাজ আদায় করা না গেলে কাজা আদায় করতে হয় না।
কেউ যদি কাজা নামাজ আদায় না করে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং রোগে মারা যায় আর অসুস্থাবস্থায় লোকটি ওয়ারিশদের তার পক্ষ থেকে কাজা নামাজের ফিদইয়া (মূল্য) দেয়ার কথা বলে যায় এমতাবস্থায় তার ওয়ারিশদের ওপর ফিদইয়া দেয়া ওয়াজিব। এমন অনেক লোক রয়েছে, যাদের জিম্মায় অনেক কাজা নামাজ রয়েছে। তাদের উচিত এসব নামাজ দ্রুত আদায় করে নেয়া।
আরো ও সাজেশন:-
‘উত্তম আমল কোনটি?’ এমন প্রশ্নের জবাবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ পড়া অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে নামাজ আদায় করাই হলো সর্বোত্তম আমল। তারপরও বিভিন্ন কারণে মানুষের নামাজ ছুটে যায়। নামাজ ছুটে গেলে পরবর্তীতে তা কাজা করতে হয়।
নির্ধারিত ওয়াক্তে ফরজ বা ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে না পারলে, সময় চলে যাওয়ার পর তা পড়াকে ‘কাজা’ আদায় বলা হয়। ফরজ নামাজ ছুটে গেলে তা ‘কাজা’ করা ফরজ আবার ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলেও তা ‘কাজা’ করা ওয়াজিব।
কাজা আদায়ের কিছু নিয়ম
১. নফল নামাজেরও কাজা আদায় করতে হয। যদি কোনো কারণে নফল নামাজ নষ্ট হলে অথবা শুরু করার পর কোনো কারণে যদি ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে তার পরে ‘কাজা’ করাও ওয়াজিব।
২. সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং নফল নামাজের কোনো কাজা নেই। তবে ফজরের নামাজ সুন্নত-ফরজ উভয়টা পড়তে না পারলে সুন্নত-ফরজ এক সঙ্গে কাজা করা উত্তম। দুপুরের চার রাকাত সুন্নত পড়তে না পারলে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পরও পড়ে নেয়া যায়।
৩. জোহরের ফরজ নামাজের পর যে দুই রাকাত সুন্নাত আছে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পর ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদার আগেও পড়া যায় এবং পরেও পড়া যায়। তবে জোহরের ওয়াক্ত চলে গেলে জোহরের আগের এবং পরের যথাক্রমে ৪ ও ২ রাকাত সুন্নাতের কাজা আদায় ওয়াজিব নয়।
৪. জুমার নামাজের কাজা নেই; যদি কেউ জুমার নামাজ কোনো কারণে আদায় করতে না পারে তবে জুমার নামাজের পরিবর্তে ঐ ওয়াক্তে সম্ভব হলে জোহরের ৪ রাকাত নামাজ পড়ে নেবে। আর ওয়াক্ত চলে গেলেও ৪ রাকাত জোহর কাজা আদায় করতে হবে।
[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
কাজা নামাজ আদায়ের সময়
আগের ওয়াক্তের নামাজ ‘কাজা’ আদায়ের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট সময় নেই। নামাজের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর যখনই নামাজের কথা স্মরণ হবে তখনই পড়ে নেয়া উত্তম। যেমন ধরুন- যদি কেউ ঘুমের কারণে ফজরের নামাজ আদায় না করতে পারে; তবে সে ঘুম থেকে যখনই উঠবে, তখনই নামাজ আদায় করবে। তবে নিষিদ্ধ সময়গুলোতে মনে পড়লে অপেক্ষা করতে হবে।
দীর্ঘ দিনের কাজা নামাজ আদায়
কোনো মানুষ যদি দীর্ঘকাল (কয়েক মাস এবং বছর) নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকে। তার উচিত- একটা অনুমান করে নামাজের ‘কাজা’ আদায় শুরু করা।
এ অবস্থায় নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের নিয়ম হবে এ রকম- ওই ব্যক্তি যখন প্রতিদিনের নির্ধারিত ওয়াক্তের নামাজ আদায় করবে; তখন সে ওয়াক্তের সঙ্গে মিল রেখে ধারাবাহিকভাবে ঐ ওয়াক্তের ‘কাজা’ আদায় করে নেওয়া। এভাবে ‘কাজা’ আদায়ে ধরাবাহিকতা রক্ষা করা।
ভ্রমণের সময়ের কাজা
সফরের সময় যে নামাজ ছুটে যাবে; ঐ নামাজের ‘কাজা’ আদায় মুসাফির অবস্থায় যেমন হবে; মুকিম স্থায়ী হওয়ার পর সে হুকুমই থাকবে। অর্থাৎ কোনো মানুষ যদি সফরের সময়ে ওয়াক্তমতো নামাজ আদায় করতে না পারে। তবে সে সফর এবং মুকিম (বাড়িতে আসার পর) অবস্থায়ও ‘কাজা’ কসর (জোহর, আসর ও ইশার নামাজ ২ রাকাত) আদায় করবে।
আবার কেউ যদি সফরে থেকে ফিরে মুকিম সীমানায় উপস্থিত হয় এবং ঐ সময় নির্ধারিত কোনো ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে না পারে তবে ঐ নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের ক্ষেত্রের পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।
আল্লাহ তা্অলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের ‘কাজা’ আদায়ে এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।