কার্যপত্র কাকে বলে । কার্যপত্র কত প্রকার ও কি কি । কার্যপত্র সুবিধা ও অসুবিধা । কার্যপত্র বৈশিষ্ট্য । কার্যপত্র গুরুত্ব

কার্যপত্র কাকে বলে । কার্যপত্র কত প্রকার ও কি কি । কার্যপত্র সুবিধা ও অসুবিধা । কার্যপত্র বৈশিষ্ট্য । কার্যপত্র গুরুত্ব

কার্যপত্র কাকে বলে । কার্যপত্র কত প্রকার ও কি কি । কার্যপত্র সুবিধা ও অসুবিধা । কার্যপত্র বৈশিষ্ট্য । কার্যপত্র গুরুত্ব

কার্যপত্র কাকে বলে :-

বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লেনদেনের সংখ্যা বেশি থাকে, যার ফলে দফার সংখ্যা ও সমন্বয়ের পরিমাণও বেশি থাকে। অধিক সংখ্যক সমন্বয় থাকার কারণে আর্থিক বিবরণী তৈরি করতে হিসাবরক্ষকের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এ অসুবিধা দূর করার জন্য এবং আর্থিক বিবরণী দ্রুত ও নির্ভুলভাবে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের হিসাব তথ্যসমূহকে সুশৃঙ্খল ভাবে লিপিবদ্ধকৃত বছঘর বিশিষ্ট সহায়ক বিবরণীকে কার্যপত্র বা Work sheet বলে।

বিভিন্ন লেখক কার্যপত্রের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।

Weygandt, Kieso and Kimmel-এর মতে- “কার্যপত্র হচ্ছে বহুঘর বিশিষ্ট ছক যা সমন্বয় প্রক্রিয়া সম্পাদন এবং আর্থিক বিবরণীসমূহ প্রস্তুত করার জন্য ব্যবহার করা হয়।” (“A worksheet is a multiple column form that may be used in the adjustment process and in preparing financial statements.”)

Dr. Walter & Dr. Robert এর মতে- “কার্যপত্র হচ্ছে একটি সময়কাল শেষে সুবিধাজনক পদ্ধতিতে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত প্রয়োজনীয় সব ধরনের হিসাব তথ্যের বহুঘর বিশিষ্ট বড় শিট কাগজ।” (“A worksheet is a large columnar sheet of paper, especially designed to arrange in a convenient systematic form of all the accounting data required at the end of the period”)

Pyle & Larson-এর মতে- “কার্যপত্র হচ্ছে একজন হিসাবরক্ষক কর্তৃক ব্যবহৃত আর্থিক বিবরণী, সমন্বয় দাখিলা প্রস্তুতের জন্য ব্যবহার যোগ্য সুশৃঙ্খলভাবে একত্রিত তথ্যসমূহের খসড়া কাগজ।”

উপরোক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে বছর বিশিষ্ট যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাকে কার্যপত্র বা Work sheet বলে।


আরো ও সাজেশন:-


কার্যপত্রের বা ওয়ার্কশীটের প্রয়োজনীয়তা :-

কার্যপত্র একটি খসড়া বা সহায়ক কার্য বলে আর্থিক বিবরণীসমূহ তৈরির পূর্বে ইহা তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্বত্তপত্র তৈরির আগে এক শিট কাগজে ইহা তৈরি করা হয়। খাড়া কার্য হলেও কার্যপত্র বা Work sheet নানাবিধ উদ্দেশ্য প্রয়োজন মিটায়। নিম্নে কার্যপত্রকে উদ্দেশ্য বা সুবিধাগুলো বা গুরুত্বসমূহ আলোচনা করা হলো।

১. গাণিতিক ভুল এড়ানো (Avoiding the mathematical error) :-

কার্যপত্রে রেওয়ামিলের ডেবিট ও ক্রেডিট অন্তর্ভূক্ত খতিয়ানের জেরগুলো সর্বপ্রথম বলে। এরপর সমন্বয়ের দফাগুলো সমন্বয় কলামে বসে। এর ফলে গাণিতিক ভুল এড়িয়ে নির্ভুলভাবে কার্যপত্র প্রস্তুত করা সম্ভব হয়।

২. খতিয়ানের জেরগুলো একত্রে উপস্থাপন (To show the balances of ledger accounts) :-

প্রতিষ্ঠানের রেওয়ামিলে প্রদর্শিত খতিয়ানের জের এবং রেওয়ামিলে বর্হিভূত তথ্যগুলো সমন্বয় করে খতিয়ানের সকল জের কার্যপত্রে একত্রে উপস্থাপন করা হয়। এর দ্বারা খতিয়ানের সকল দফা রেওয়ামিলে প্রদর্শন করা সহজ হয়।

৩. অন্তবর্তীকালিন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি (To prepare interim financial statement) :-

কার্যপত্র তৈরির মাধ্যমে হিসাব বছরের যে কোনো সময় খতিয়ানের জের বদ্ধ না করেই যে কোনো মেয়াদেই যেমন: ২ মাস, ৩ মাস, ৬ মাস, ৯ মাসের জন্য আর্থিক বিবরণী তৈরি করা যায়। কার্যপত্র তৈরি না করে অন্তর্বর্তীকালিন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

৪. চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী তৈরিতে সহায়তা (To help the preparing of financial statement) :-

[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

প্রতিটি কারবারি প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে সাধারণত এক বছর শেষে চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণীসমূহ প্রস্তুত করে। আর্থিক বিবরণী তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য কার্যপত্র বা Work sheet থেকে পাওয়া যায়। সুতরাং চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে কার্যপত্র সহায়তা করে।

৫. আর্থিক অবস্থা জানা (To know the result of financial position) :-

কার্যপত্র থেকে সম্পত্তি ও দায়সমূহ নিয়ে উচ্চত পরা তৈরি করা হয়। আর্থিক বিবরণী তৈরি করার পূর্বেই কার্যপত্র তৈরি করা হয়। আর্থিক বিবরণী তৈরি করার পর কার্যপত্র থেকেই সম্পত্তি ও দায়ের পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়।

৬. আয়বায় ও সম্পত্তি-দায় চিহ্নিতকরণ (Identification of income expenditure and assets-liabilities) :-

কার্যপত্রে সমন্বিত রেওয়ামিলে এক নজরে আয়ব্যয় ও সম্পত্তি দায়সমূহ দেখানো হয়। কিন্তু আয় বিবরণী ও উদ্বৃত্তপত্রে আয়বায় ও সম্পত্তি দায়সমূহকে আলাদাভাবে দেখানো হয়।

৭. সমাপনী দাখিলা সহজিকরণ (Easy to prepare closing entry) :-

কার্যপত্র বা Work sheet এ সকল তথ্য ব্যবহার উপযোগী করে রাখা হয়। এজন্য কার্যপত্র থেকে সমাপনী দাখিলা প্রস্তুত করা সহজ হয়।

৮. দ্রুত ও নির্ভুল আর্থিক বিবরণী তৈরিতে সহায়তা (Help to prepare true financial statement promptly) :-

কার্যপত্রে অসমন্বিত রেওয়ামিল থেকে সমন্বয়গুলো সমন্বয় করে সমন্বিত রেওয়ামিল তৈরি করা হয়। যার ফলে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে আর্থিক বিবরণী তৈরি করা যায়।

কার্যপত্রের প্রস্তুত করণ :-

রেওয়ামিল প্রস্তুতের পর আর্থিক বিবরণী তৈরি করার পূর্বে হিসাবের সমন্বয় ও সমাপনী দাখিলাগুলোকে সংশ্লিষ্ট খতিয়ান উদ্বৃত্তগুলোর সাথে সমন্বয় করে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে কার্যপত্র তৈরি করা হয়।

আরও পড়ুন :- প্রচার কাকে বলে?

কার্যপত্র প্রস্তুতের নিয়মাবলি নিম্নে বর্ণিত হলো :

১. প্রতিষ্ঠানের নাম ও কার্যপত্র প্রস্তুতের সময়কাল :-

কার্যপত্রের উপরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম ও প্রস্তুতের সময়কাল সর্বপ্রথম লিখতে হবে।

২. ঘর অংকন ও ঘরের শিরোনাম চিহ্নিত করা :-

কার্যপত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ঘর অংকন করে এর প্রত্যেক ঘরে শিরোনাম লিখতে হবে। যেমন প্রথম ঘরে ক্রমিক নং, দ্বিতীয় ঘরে হিসাবের নাম, পরবর্তী জোড়া ঘরগুলো যথাক্রমে (১) রেওয়ামিল (২) সমন্বয় (৩) সমন্বিত রেওয়ামিল (৪) আয় বিবরণী (৫) উদ্ধতপত্র ইত্যাদি শিরোনাম লিখতে হবে।

প্রতিটি জোড়া ঘরের একটিতে ডেবিট অন্যটিতে ক্রেডিট লিখতে হবে। যৌথ মূলধনী কারবারের ক্ষেত্রে Retained earning নামে আরও একটি ঘর, যেটি Income statement এবং Balance sheet এর মাঝামাঝি জায়গায় বসবে। অবশ্য আটঘরা Worksheet তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে উল্লিখিত ১০টি ঘরের Adjusted trial balance ঘরটি বসবে না।

৩. রেওয়ামিল :-

রেওয়ামিল করে দেওয়া থাকলে উক্ত রেওয়ামিল হবহু Worksheet এর রেওয়ামিল ঘরে লিখতে হবে এবং টাকার অংক বসিয়ে Close করতে হবে।

৪. সমন্বয় :-

যে লেনদেনগুলোর সমন্বয় প্রয়োজন সেগুলির সমন্বয় জাবেদা করে সমন্বয় ধরে বসাতে হবে এবং সমন্বয় ঘরের ডেবিট ও ক্রেডিট যোগ করে Close করতে হবে।

৫. সমন্বিত রেওয়ামিল :-

সমন্বিত রেওয়ামিল ঘরের হিসাবের পর সমন্বিত জ্বের সমন্বিত রেওয়ামিলের ডেবিট ও ক্রেডিট দিকে লিখতে হবে। অর্থাৎ অসমন্বিত রেওয়ামিলের দফার সাথে সমন্বয়গুলোর নিয়মমাফিক সমম্বয়সাধনের মাধ্যমে সমন্বিত রেওয়ামিলের ঘরগুলো পূরণ করতে হয়। এর উভয় পার্শ্বের যোগফল বের করে গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা

৬. আয় বিবরণীর ঘর :-

সমন্বিত রেওয়ামিলের ঘর পূরণের পর উহা হতে মুনাফা জাতীয় আয় ও ব্যয়সমূহ আয় বিবরণীতে লিখতে হয়। আয়সমূহ আয় বিবরণীর ক্রেডিট দিকে এবং ব্যয়সমূহ ব্যয়বিবরণীর ডেবিট দিকে বসাতে হয়। আয় বিবরণীর ব্যয়ের সমষ্টি অপেক্ষা আয়ের সমষ্টি বেশি হলে নিট পাত হয়। পক্ষান্তরে ব্যয়ের সমষ্টি আয়ের সমষ্টি অপেক্ষা বেশি হলে তাকে নিট ক্ষতি বলে। আয় বিবরণীর লাভ বা ক্ষতি উর্ধ্বতপত্রে স্থানান্তরিত হয়।

৭. উদ্বতপত্র :-

সমন্বিত রেওয়ামিলের সম্পত্তি জাতীয় দফাগুলো উদ্বতপত্রের সম্পত্তির দিকে এবং দায় জাতীয় দফাগুলোও স্বত্ত্বাধিকার সংক্রান্ত দফাগুলো দায়ের দিকে লিখতে হয়। আয় বিবরণীতে যদি নিট লাভ হয় তবে উদ্বর্তপত্রের দায়ের দিকে এবং যদি নিট ক্ষতি হয় তবে উদ্বর্তপত্রের সম্পত্তির তথা ডেবিট দিকে বসবে। তখন উতপত্র মিলে যাবে।

উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, কার্যপত্রের ঘরের সংখ্যা, ঘর অংকন, ঘরের শিরোনাম, প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, চাহিদার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

Leave a Comment