কালিমা তায়্যিবা ও কালিমা শাহাদাত এর আলোকে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের

কালিমা তায়্যিবা ও কালিমা শাহাদাত এর আলোকে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের উপর একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।

কালিমা-ই তায়্যিবা এর অর্থ হল পবিত্র বাক্য। আমাদের দেশে কালিমা তাইয়িবা বা ‘পবিত্র বাক্য’ বলতে বুঝানো হয় তাওহীদ ও রিসালাতের একত্রিত ঘোষণা। কুরআন কারীমে আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন:

‘‘তুমি কি দেখ নি, কিভাবে আল্লাহ একটি উদাহরণ পেশ করেছেন: একটি ‘কালিমায়ে তায়্যিবা’ বা পবিত্র বাক্য একটি পবিত্র বৃক্ষের মত, তার মূল প্রতিষ্ঠিত এবং তার শাখা-প্রশাখা আকাশে প্রসারিত।’’ – [সূরা (১৪) ইবরাহীম: আয়াত ২৪]

  • কালিমা-ই তায়্যিবা আরবিতে

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ

  • কালিমা-ই তায়্যিবা বাংলা উচ্চারণ

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

  • কালিমা-ই তায়্যিবা বাংলা অনুবাদ

‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল।’’

*** উল্লেখ্য যে, কালিমা তায়্যিবার দুটি অংশ পৃথকভাবে কুরআন কারীমে ও হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। উভয় বাক্যই কুরআনের অংশ এবং ঈমানের মূল সাক্ষ্যের প্রকাশ। উভয় বাক্যকে একত্রে বলার মধ্যে কোনো প্রকারের অসুবিধা নেই। এজন্য আমরা ইসলামের প্রাচীন গ্রন্থগুলো দেখি যে, তাবিয়ীগণের যুগ থেকে ইমাম, ফকীহ, মুহাদ্দীসগণ কালিমা শাহাদতের মূল ঘোষণা হিসাবে এ বাক্যটির ব্যবহার করেছেন। এ বাক্যটি ব্যবহারের বিষয়ে কেউ কোনো আপত্তি করেন নি।

দ্বিতীয় কালিমা: কালিমা-ই শাহাদাত

কালিমা-ই শাহাদাত, যার অর্থ হল সাক্ষ্য বাক্য। কুরআন ও হাদীসে ইসলামী ঈমান বা বিশ্বাসের মূল হিসাবে দু’টি সাক্ষ্য প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা আমাদের দেশে ‘কালিমা শাহাদত’ হিসাবে পরিচিত। এ কালিমায় আল্লাহর তাওহীদ এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা হয়। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র কালিমা শাহাদতই হাদীস শরীফে ঈমানের মূল বাক্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

  • কালিমা-ই শাহাদাত আরবিতে

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

  • কালিমা-ই শাহাদাত বাংলা উচ্চারণ

আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসূলুহু।

  • কালিমা-ই শাহাদাত বাংলা অনুবাদ

‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ (উপাস্য) নেই। তিনি এক, অদ্বিতীয় এবং আমি আরও সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও প্রেরিত রাসূল।’’

তাওহিদ আরবি শব্দ। বাংলা ভাষায় একে বলা হয় একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে বিশ্বাস করাকে তাওহিদ বা একত্ববাদ বলা হয়।

আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা। তিনি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। তিনিই হলেন একমাত্র ইলাহ। আল্লাহ তায়ালার প্রতি এরূপ বিশ্বাসই হলো তাওহিদ।

আমাদের চারপাশে সুন্দর সুন্দর ফুল, ফল, গাছপালা, তরুলতা, পশুপাখি ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, সাগর-মহাসাগর।

আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না এমন অনেক বস্তু এবং প্রাণী ও রয়েছে। এসব কিছুই সৃষ্টি জগতের অন্তর্গত।

এগুলো সৃষ্টিকর্তা ছাড়া নিজে থেকে সৃষ্টি হয়নি। নিশ্চয়ই একজন স্রষ্টা এগুলো সৃষ্টি করেছেন। তিনি হলেন মহান আল্লাহ। তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তার কোন সাহায্যকারী প্রয়োজন হয়নি।

কালিমা তায়্যিবা অর্থ হলো পবিত্র বাক্য। এটি তাওহিদ, ইমান ও ইসলামের মূলভিত্তি।

উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই, মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসূল।

এ কালিমা স্বীকার না করলে কেউ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। এ কালিমার দুটি অংশ।

প্রথম অংশে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও একত্ববাদের কথা বলা হয়েছে।

আর দ্বিতীয় অংশে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতি বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে।

তাওহীদের বিশ্বাস এর জন্য প্রয়োজন পবিত্র অন্তর। অর্থাৎ প্রথমে অন্তর থেকে সব রকমের ভুল ও ভ্রান্ত বিশ্বাস দূর করতে হবে। ‘লা-ইলাহা’ দ্বারা এটাই করা হয়।

অতঃপর ‘ইল্লাল্লাহু’ দ্বারা আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা হবে।

চারপাশের নানা নিদর্শন উল্লেখসহ আল্লাহর একত্ববাদের উপর প্রতিবেদন

কালিমা শাহাদাত হলো- সাক্ষ্য দানের বাক্য।

অর্থাৎ, এ কালিমা দ্বারা ইমানের সাক্ষ্য দেওয়া হয়। এ কালিমা উচ্চারণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও মুহাম্মদ (স.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা হয়।

উচ্চারণ: আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (স.) তাঁর (আল্লাহর) বান্দা ও রাসুল।

এ কালিমাও দুটি অংশে বিভক্ত।

এর প্রথম অংশে তাওহিদ বা একত্ববাদের সাক্ষ্য দেওয়া হয়।

আর দ্বিতীয় অংশে মুহাম্মদ (স.)-এর রিসালাতের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

কালিমা শাহাদাত এর মাধ্যমে আমরা এ দুটো কাজই করতে পারি।

তা ছাড়াও মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতি আমাদের বিশ্বাসের প্রমান দিতে পারি।

তাওহিদ বা আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদে বিশ্বাস আকাইদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ইসলাম ও ঈমানের মূল ভিত্তি হলো তাওহীদ।

তাওহীদে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন বা মুসলিম হতে পারে না।

সকল নবী-রাসুল (আ.) তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। সকলেই ঘোষণা করেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর তুল্য কিছুই নেই।

তাওহীদে বিশ্বাস মানুষকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করে। আর তাওহীদে বিশ্বাসীগণ আখিরাতে জান্নাত লাভ করবে।

J.S.C

Leave a Comment