আজকের বিষয়: কুরবানির পশু জবাই করার নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া, কুরবানির পশু জবাইয়ের দোয়া ও পদ্ধতি, পশু কোরবানির নিয়ম-দোয়া,পশু কোরবানি করার দোয়া
কুরবানি পশু জবেহ করার জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিজের কুরবানির পশু তাঁর নিজ হাতে জবাই করেছেন। যার যার কুরবানির পশু তাদের নিজ হাতে জবাই করার কথাও এসেছে হাদিসে। কুরবানির পশু জবাইয়ের রয়েছে নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া।
অধিকাংশ মানুষ কুরবানি নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া না জানার কারণেই নিজের কুরবানি নিজেরা করেন না। অথচ কুরবানির নিয়ম-পদ্ধতি ও দোয়া সহজ। তবে পশু জবাইয়ের সময় সুন্নাতের অনুসরণে জবাই করাই উত্তম। তাহলো-
১. পশু জবেহ করার সময় ‘بِسْمِ الله:বিসমিল্লাহ’ বলে জবেহ করা। অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলেই ছুরি চালানো শুরু করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যেন পশু জবেহ করা না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখা।
২. পশু জবেহ করার সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী আর দুই পাশে থাকা দুটি নালী কেটে দেয়া। এ নালীগুলে কাটা হয়ে গেলেই পশু জবেহ বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
৩. পশু জবেহ করার জন্য ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। যাতে জবেহ করার সময় পশুর কষ্ট না হয়। অনেকে একটি ছুরি দিয়ে একাধিক পশু কুরবানি করে থাকেন। সেক্ষেত্রে শেষ দিকে ছুরির ধার কমে যায়। তাই ছুরিতে ধার দিয়ে নেওয়া উত্তম। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পশু জবেহ করার আগে ছুরি-চাকুতে ভালোভাবে ধার দিয়ে নেয়া।’ (মুসলিম)
আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ
৪. একটি পশুর সামনে অন্য পশুর জবেহ না করা। পশুর সামনে ছুরি-চাকুতে ধার না দেওয়া। এতে পশু ভয় পেয়ে যায়। এটি পশুকে কষ্ট দেওয়ারও শামিল।
৫. কুরবানি করার সময় পশুকে পশুর বাম কাতে শোয়ানো। সে সময় পশুর পাগুলো পশ্চিম দিকে থাকবে।
৬. পশু জবাইয়ের দোয়া
কুরবানির পশু জবেহ করার জন্য শোয়ানোর পর দোয়া পড়া। দোয়াটি হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। যদিও অনেকে দোয়াটির সনদের ব্যাপারে মতপার্থক্য করেছেন। তবে এ দোয়াগুলো পড়ে কুরবানি করা উত্তম। তবে কেউ শুধু বিসমিল্লাহ বলে নালীগুলো কেটে দিলেই কুরবানি শুদ্ধ হয়ে যাবে। দোয়াটি হলো-
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
৭. যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন তবে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়বেন-
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।
৮. নিজের পশু নিজে কুরবানি করলে পশু জবেহ করার পর এ দোয়া পড়া-
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।’
৯. অন্য কেউ কুরবানি বা অন্য কারো কুরবানি করলে এ দোয়া পড়া-
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।’
উল্লেখ্য, যদি কেউ একাকি কুরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে মিন্নি; আর অন্যের কুরবানির পশু জবাই করার সময় ‘মিনকা-মিনকুম’ বলে যারা কুরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত নিয়মে কুরবানির পশু জবেহ করার তাওফিক দান করন। সবার কুরবানিকে কবুল করুন। আমিন।