কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো

১। কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো

শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার

উত্তর:

মাল্টি শব্দের অর্থ দুইয়ের অধিক, কিন্তু কম্পিউটারের ক্ষেত্রে একের অধিক। অভিধানিকভাবে মাল্টিমিডিয়ার অর্থ হল বহু মাধ্যম। মানুষ তার ভাব প্রকাশ করার জন্য যে সব মিডিয়া বা মাধ্যম ব্যবহার করে মাল্টিমিডিয়া তার সমনি¦ত রূপ।

কম্পিউটারের বিশাল কার্যক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত নাম মাল্টিমিডিয়া। লিখিত ভাষ্য (বর্ণনা বা ), দৃশ্য (চিত্র ) ও ধ্বনি (শব্দ ) সমনয়ে সৃষ্ট বহুমাত্রিক উপস্থাপনাই হল মাল্টিমিডিয়া। অনেক আগে থেকে টেলিভিশন, সিনেমা, ডকুমেন্টারী ইত্যাদিতে শব্দ ও সচলচিত্রের সমন¦য় ঘটেছে। কিন্তু তাকে কেউ মাল্টিমিডিয়া হিসাবে চিহ্নিত করেননি। কম্পিউটারে যখন ভাষার লিখিত রূপ, শব্দ, ভিডিও, এ্যানিমেশন, স্থির ও সচল চিত্রের
একত্রিভূত উপস্থাপনের মত ঘটনা ঘটলো তখন তা মাল্টিমিডিয়া নামে পরিচিত হয়ে উঠলো। কম্পিউটারের ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার সবচেয়ে যে বড় সুবিধাটি আছে তার নাম হল ইন্টারক্টিভিটি।

মাল্টিমিডিয়ার প্রকারভেদ
তথ্য পরিবেশনের প্রকৃতি অনুসারে মাল্টিমিডিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া
২. নন-ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া

ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া


ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া হল পরস্পর ক্রিয়াশীল মাল্টিমিডিয়া। এই ধরনের মাল্টিমিডিয়াতে শব্দ, বর্ণ ও চিত্র সবই থাকে এবং এগুলো ব্যবহারকারী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং একটির সাথে অপরটির সম্পর্কযুক্ত থাকে। ধরা যাক জীব বৈচিত্রের
উপর একটি প্যাকেজ তৈরী করা হয়েছে। এই প্যাকেজে বিভিন্ন প্রাণীর তালিকা আছে। এখন হরিণ নামক প্রাণীটির উপর ক্লিক করলে হরিণের বিবরণ ও ছবি দেখা যাবে। যদি হরিণের ডাক শুনতে ইচ্ছা হয় তাহলে শব্দের জন্য নির্ধারিত স্থানে ক্লিক করলে তা শোনা যাবে। যদি হরিণের চলাফেরা ও আচরণ দেখতে চান তাহলে মুভি নামক স্থানে ক্লিক করলে তার চলাচল এবং আচরণ দেখা যাবে। এক্ষেত্রে একটি প্যাকেজের মধ্যে পরস্পর আন্তঃক্রিয়াশীল বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে। সুতরাং এই প্যাকেজটিকে বলা হয় ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া।

নন-ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া


কিছু কিছু মাল্টিমিডিয়াতে উপরোক্ত সুবিধা নেই। সেখানে শব্দ, স্থির ছবি, সচল ছবি, বর্ণ সবই আছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে নেই। এই ধরনের মাল্টিমিডিয়াকে নন-ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া বলে। সাধারণত বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানি ও সফটওয়্যার নির্মাতারা তাদের নির্মাণকৃত সামগ্রীকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের জন্য বা ডেমো দেখানোর জন্য নন-ইন্টারএক্টিভ মাল্টিমিডিয়া প্যাকেজ তৈরী করে থাকেন।
মাল্টি শব্দের অর্থ দুইয়ের অধিক, কিন্তু কম্পিউটারের ক্ষেত্রে একের অধিক। কম্পিউটারের বিশাল কার্যক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত নাম মাল্টিমিডিয়া। লিখিত ভাষ্য, দৃশ্য ও ধ্বনির সমন¦য়ে সৃষ্ট বহুমাত্রিক উপস্থাপনায় হল মাল্টিমিডিয়া।

মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার


বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার একটি বিশাল ক্ষেত্র হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার কম্পিউটার ব্যবহারকারীর অনেক কাজকে সহজ করে তুলেছে। নিম্নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ায়
ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

শিক্ষা ঃ শিক্ষার ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার বহুবিধ। মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে আজকাল শিক্ষামূলক বহু সিডি, কার্টুন ইত্যাদি তৈরী করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে। আজকাল বাচ্চাদের অক্ষরজ্ঞান শেখানোর জন্য শব্দ ও ছবির সমন¦য়ে বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া সিডি তৈরী হয়েছে। শিক্ষামূলক বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রেও মাল্টিমিডিয়া
ব্যবহার করা যায়।

গবেষণা ঃ আজকাল বিজ্ঞান ও সামাজিক বিভিন্ন রকম গবেষণার ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, মহাকাশ বিদ্যা, গণিত ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে গবেষণার কাজে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করা যায়।

যোগাযোগ ঃ যোগাযোগ ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার বিশাল প্রকৃত প্রয়োগ হল ইন্টারনেট। আরো পরিষ্কার করে বলা যেতে পারে ওয়েব পেজ। একটি অনলাইন ওয়েব পেইজই একইসাথে উপস্থাপিত করতে পারে একটি মাল্টিমিডিয়ার পূর্ণাঙ্গরূপ।


ব্যবসা-বাণিজ্য ঃ মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র উন্নত করেছে। বিভিন্ন আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয়ের উপস্থাপনা, মডেলিং, বাজার সিমুলেশন, টিভি বিজ্ঞাপন তৈরি, ইন্টারনেট বিজ্ঞাপন তৈরি, বিনিয়োগ বিশ্লেষণ, ভিডিও ভিত্তিক বিপণন ও প্রমোশন ইত্যাদি কাজে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করা যায়। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

বিনোদন ঃ বিনোদন প্রত্যেকটি মানুষের ব্যক্তিগত মানসিকতার উপর নির্ভরশীল। মাল্টিমিডিয়া মানুষের বিনোদনের পদ্ধতিই পাল্টে দিয়েছে। মাল্টিমিডিয়ার বিনোদন ক্ষমতা বিশাল। সচিত্র সঙ্গিত (কণ্ঠ সংগিত, নৃত্য, বাদ্য ইত্যাদি), চলচিত্র, কম্পিউটার গেমস, এনিমেশন (কার্টুন ধর্মী ছবি), যে কোন মজার ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন ইত্যাদি মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে তৈরি করা যায়।

প্রকাশনা ঃ কিছুদিন আগেও প্রকাশনা বলতে কাগজে মুদ্রিত প্রকাশনা বুঝাতো। বর্তমানেও কাগজ ভিত্তিক প্রকাশনা ব্যাপক ব্যবহৃত। তবে বর্তমানে মাল্টিমিডিয়া ভিত্তিক ডিজিটাল প্রকাশনা প্রকাশনার জগতকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এ রকম আরও অনেক ক্ষেত্রে আজকাল মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে।

কম্পিউটার বর্তমানে শিক্ষায় একটি অনন্য ভূমিকা পালন করছে। ক্লাসের নির্দেশাবলী পরীক্ষা বইটি দেখে শুরু হয় এবং পাঠদান, গাণিতিক সমস্যা সমাধান, শিক্ষাব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক কাজ, পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, কম্পিউটার গ্রন্থাগারগুলি বই গণনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নীচে শিক্ষায় কম্পিউটারের ব্যবহার রয়েছে
কয়েকটি মূল বিষয় সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়।

১. শিক্ষকতা কম্পিউটার কম্পিউটার বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাইমারী ক্লাসে কার্টুনের মাধ্যমে চরিত্রগুলি পরিচয় করানো, গল্পের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া, উচ্চারণ শেখা, প্রশ্নোত্তর শেখানো ইত্যাদি কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। সিডি ব্যবহার করে পাটিগণিত, বীজগণিত, রসায়ন এবং গণনা গণনা করতে স্থির এবং চলমান চিত্রগুলি ব্যবহার করুন পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি শেখানো যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ব্যবহার করে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে পারে। শিক্ষার ক্ষেত্রে এখন ব্যাপকভাবে
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের একটি সহজ এবং ধ্রুবক মাধ্যম
মত. আপনি যদি কম্পিউটার শেখার জন্য ব্যবহার করেন তবে আপনি একই বিষয়টি আপনার পছন্দ হিসাবে এবং যখনই আপনি চান যখনই শিখতে পারেন।

২.শিক্ষা প্রশাসনে কম্পিউটার: কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক দিকটি সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন- যে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া, শ্রেণি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা, পরীক্ষার বই দেখা,
পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করা, শ্রেণি রুটিন তৈরি করা, শিক্ষার্থীদের বেতনের দিকে নজর রাখা; সাধারণ শিক্ষক এবং কর্মীরা নাম, ক্লাস পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির বিবরণ এবং সর্বশেষ তথ্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কোনও শিক্ষার্থী তা করে না কোনও পিতা-মাতা যদি কোনও সময়ে তাদের সন্তানের সম্পূর্ণ তথ্য জানতে চান তবে এটি এক বা দুই মিনিটের মধ্যে একটি কম্পিউটার থেকে সরবরাহ করা যেতে পারে।

৩. পরীক্ষার ফলাফল সংরক্ষণ করা: প্রতিবছর শিক্ষার ক্ষেত্র থেকে কতজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন? ফলাফল কী, কতজন উত্তীর্ণ হয়েছে, কতজন ব্যর্থ হয়েছে, কতজন প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ পেয়েছে, আপনি কতটি তারকা পেয়েছেন, কম্পিউটারের স্মৃতিতে এই প্রতিটি বিষয়ের একটি অ্যাকাউন্ট রাখা সম্ভব। এমনকি 100 বছর বয়সী ফলাফলগুলিও সংরক্ষণ করা যায়। প্রয়োজনে যে কোনও বছরের ফলাফল কম্পিউটারের সহায়তায় তাত্ক্ষণিকভাবে দেখা যায়।

৪. শিক্ষায় যোগাযোগ: স্কুল পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরণের যোগাযোগের প্রয়োজন। যেমন শিক্ষা বিভাগ, থানা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় যে কোনও ধরনের যোগাযোগের মাধ্যমে
যোগাযোগ করা হয়। এই চিঠিগুলি লেখার ক্ষেত্রে অনেক ভুল রয়েছে যা পরিবর্তন করা দরকার। চিঠিটি পুরো টাইপ করতে হয়েছিল কারণ এটি টাইপরাইটারের সাহায্যে করা হয়েছিল। তবে আজকাল কম্পিউটার এটি স্মৃতিতে রাখা এবং প্রয়োজনে সংশোধন এবং অনুলিপি করা যেতে পারে। কম্পিউটার সহ এখন মডেম কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন অফিস নামে পরিচিত একটি ডিভাইস সংযুক্ত হয়
যোগাযোগ সম্ভব।

৫.প্রশংসাপত্র: শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর স্কুল থেকে প্রশংসাপত্র দিতে হয়। প্রশংসাপত্রগুলির মধ্যে রয়েছে নাম, পিতার নাম – বছর, তারিখ ইত্যাদি include
এটি ফাঁকা মুদ্রিত এবং প্রশস্ত প্রশংসা সেই জায়গাতে একটি কলম দিয়ে লেখা হয়। এই প্রশংসাপত্র কয়েক বছরের মধ্যে এটির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই ধরনের প্রশংসাপত্রগুলি কম্পিউটারের স্মৃতিতে রাখা যেতে পারে তবে প্রদত্ত জায়গাতে নাম, তারিখ, বছর দেওয়া যেতে পারে। পুরো প্রশংসাপত্রটি যদি এভাবে মুদ্রিত হয় এটি নষ্ট হওয়ার ভয় নেই।

৬.গাণিতিক সমস্যা: কঠিন বৈজ্ঞানিক সমীকরণ এবং গণনা, পরিসংখ্যান এবং গাণিতিক বিশ্লেষণের সমাধান কম্পিউটার ব্যবহার দ্রুত এবং সহজ সমাধান সরবরাহ করে।

H.S.C

2 thoughts on “কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো”

Leave a Comment