কোম্পানি সচিবের নিয়োগের পদ্ধতি
কোম্পানি সচিব একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং এর নিয়োগ পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং আইন অনুসরণ করে। বিভিন্ন দেশের কোম্পানি আইন এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানি সচিব নিয়োগ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা যাচাই, নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং চুক্তির শর্তাবলী অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কোম্পানি সচিবের নিয়োগের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর
নিচে কোম্পানি সচিব নিয়োগের ধাপ ও পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
১. আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী সচিবের প্রয়োজন নির্ধারণ
কিছু নির্দিষ্ট আকারের কোম্পানির জন্য আইনত কোম্পানি সচিব নিয়োগ বাধ্যতামূলক। যেমন:
- ভারতের কোম্পানি আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি রুপির বেশি, তাদের জন্য সচিব নিয়োগ বাধ্যতামূলক।
- বাংলাদেশের কোম্পানি আইন অনুসারে, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য সচিব নিয়োগ একটি আবশ্যক শর্ত।
এ ধাপে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোম্পানির জন্য সচিব নিয়োগ প্রয়োজন কিনা।
২. যোগ্যতা নির্ধারণ
কোম্পানি সচিব পদের জন্য প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত নিচের যোগ্যতাগুলো প্রয়োজন:
- প্রার্থীকে কোম্পানি সেক্রেটারিয়াল প্রফেশনাল কোর্স (যেমন: Institute of Chartered Secretaries বা সমমানের প্রতিষ্ঠান থেকে) উত্তীর্ণ হতে হবে।
- আইন, ফিন্যান্স, বা অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে দক্ষতা থাকতে হবে।
- প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি।
৩. বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
যদি কোম্পানিটি সচিব নিয়োগের জন্য প্রস্তুত হয়, তবে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
- বিজ্ঞপ্তিতে পদের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, দায়িত্ব, অভিজ্ঞতা এবং চুক্তির শর্তাবলী উল্লেখ করা হয়।
- এটি সাধারণত স্থানীয় সংবাদপত্র, প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, বা অনলাইন রিক্রুটমেন্ট প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয়।
৪. আবেদনপত্র সংগ্রহ ও প্রাথমিক বাছাই
প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করা হয়।
- প্রাথমিক যাচাই প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা বিবেচনা করে প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়।
- সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
৫. সাক্ষাৎকার এবং নির্বাচন
- বোর্ডের একটি বিশেষ কমিটি (নিয়োগ কমিটি) প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।
- সাক্ষাৎকারে প্রার্থীর আইনি দক্ষতা, কর্পোরেট সুশাসন সম্পর্কিত জ্ঞান, এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়।
- নির্বাচিত প্রার্থীকে বোর্ড অনুমোদন প্রদান করে।
৬. বোর্ডের অনুমোদন
কোম্পানি সচিব নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বোর্ড সভায় অনুমোদিত হয়।
- বোর্ড সভার কার্যবিবরণীতে (Minutes) এই সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করা হয়।
- বোর্ডের অনুমোদনের পরেই প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
৭. চুক্তি স্বাক্ষর
নির্বাচিত প্রার্থীর সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করা হয়।
- চুক্তিতে দায়িত্ব, বেতন, সুযোগ-সুবিধা, চাকরির মেয়াদ, এবং অন্যান্য শর্তাবলী স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
- প্রার্থী এবং বোর্ড উভয়ের সম্মতিতে চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়।
৮. নিয়োগপত্র প্রদান
নিয়োগ চূড়ান্ত হলে, প্রার্থীর কাছে একটি আনুষ্ঠানিক নিয়োগপত্র (Appointment Letter) প্রদান করা হয়।
- নিয়োগপত্রে চাকরির শর্তাবলী, দায়িত্ব এবং বেতন উল্লেখ করা হয়।
- প্রার্থী নিয়োগপত্র গ্রহণের মাধ্যমে তার নতুন দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
৯. সরকারী রেজিস্ট্রেশনের জন্য নথি জমা
সচিব নিয়োগের পরে, প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়।
- সচিব নিয়োগের বিষয়ে Registrar of Companies (ROC) বা অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থায় নথিপত্র দাখিল করতে হয়।
- বাংলাদেশে ফরম-৩৬ পূরণ করে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (RJSC) -এ জমা দিতে হয়।
১০. প্রশিক্ষণ এবং দায়িত্ব হস্তান্তর
- নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সচিবকে কোম্পানির নীতি, কাঠামো এবং কাজের পরিবেশ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
- পূর্ববর্তী সচিব থাকলে, তিনি নতুন সচিবকে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
উপসংহার : কোম্পানি সচিব নিয়োগ একটি সুনির্দিষ্ট এবং আইনত নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া। সঠিক যোগ্যতা সম্পন্ন এবং দক্ষ ব্যক্তি নিয়োগ করা একটি প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট সুশাসন এবং কার্যক্রমের সফলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সতর্কতা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রতিষ্ঠানটির পেশাদারিত্ব এবং সুশাসন নিশ্চিত করে।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।
আর্টিকেলের শেষ কথাঃ কোম্পানি সচিবের নিয়োগের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর
বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস সর্বশেষ আপডেট পেতে Google News অনুসরণ করুন
আরো পড়ুন:
- কোম্পানি সচিবের নিয়োগের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর
- সরকারের উত্তম বিধি পালনের বিষয়টা বর্ণনা করে
- যুক্তরাজ্যের কর্পোরেট গভর্নেন্সের বিধি এবং গাইডলাইন সম্পর্কে আলোচনা কর
- কর্পোরেশন কাকে বলে, কর্পোরেট অর্থায়ন কাকে বলে উদাহরণসহ বুঝিয়ে লেখ
- মুদ্রা বাজার ও মূলধন বাজার পার্থক্য