কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব, কোরবানির আর্থসামাজিক গুরুত্ব, কোরবানির সামাজিক গুরুত্ব, কোরবানি ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব
কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব,আরও একবার জানুন কোরবানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা
ঈদ মানে আনন্দ। বাঙালির সংস্কৃতিতে সব মানুষের আন্তরিক মিলনমেলা ও হৃদ্যতার মেলবন্ধন যে কয়েকটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়, তার মধ্যে ঈদ অন্যতম। বছরে দুটি ঈদ উদযাপিত হয়, একটি ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আজহা। তবে ঈদুল আজহার তাৎপর্য মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট বিশেষ অর্থ বহন করে থাকে। ঈদুল আজহাকে আবার কোরবানির ঈদও বলা হয়। কারণ এই ঈদে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ ও নৈকট্য লাভের প্রচেষ্টা চালায়।
কোরবানির পরিচয়: ধন-সম্পদের মোহ ও মনের পাশবিকতা দূরীকরণের মহান শিক্ষা নিয়ে প্রতি বছর আসে পবিত্র কোরবানির ঈদ। ইসলাম ধর্মে কোরবানির দিনকে ঈদুল আজহাও বলা হয়। কোরবানি আরবি শব্দ, আরবিতে কুরবানুন বা কুরবুন শব্দ থেকে নির্গত। যার অর্থ নৈকট্য, উৎসর্গ, বিসর্জন ও ত্যাগ ইত্যাদি। কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলামের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিনটি দিনে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট নিয়মে হালাল পশু জবেহ করাই হলো কোরবানি। ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয় বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করাই কোরবানির অন্যতম তাৎপর্য।
কোরবানির ইতিহাস ও প্রচলন: পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কোরবানি হলো মানবগোষ্ঠীর আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের মাঝে সংঘটিত হওয়া কোরবানি। হাবিল প্রথম মানুষ যে আল্লাহর জন্য একটি পশু কোরবানি করেন। ইবনে কাসির বর্ণনা অনুযায়ী, হাবিল একটি ভেড়া এবং কাবিল তার ফসলের কিছু অংশ স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদন করেন। এখান থেকেই কোরবানির প্রথম প্রচলন শুরু হয়। তবে পবিত্র ইসলামে আমরা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্মরণে কোরবানি করে থাকি।
এ প্রসঙ্গে ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে, হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, কতিপয় সাহাবি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কোরবানি কী? হজরত রাসূলে মকবুল (সা.) বললেন, তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। সাহাবারা বললেন, এতে আমাদের জন্য কী প্রতিদান রয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। (ইবনে মাজাহ-৩১২৭)।
কোরবানির গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে ইবরাহিম! স্বপ্নে দেওয়া আদেশ তুমি সত্যে পরিণত করেই ছাড়লে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কোরবানির বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম”। (সূরা সাফফাত, আয়াত নং ১০৪-১০৭)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে নবী! আপনি বলুন- আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সব কিছুই সারা জাহানের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্য নিবেদিত”। (সূরা আনআম : ১৬২)।
সূরা আল-কাওসারের ২নং আয়াতে নির্দেশ এসেছে- “সুতরাং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর এবং কোরবানি কর।” হযরত উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) মদিনায় ১০ বছর অতিবাহিত করার সময়ে প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। (আহমদ ও তিরমিযি)।
সূরা কাওসারের ছোট্ট একটি আয়াতের মাধ্যমে ঈদুল আজহার নামাজ ও কোরবানির নির্দেশ এক সঙ্গেই এসেছে। সুতরাং কোরআন ও হাদিসের ভাষ্যগুলো পর্যালোচনা করলে এখানেই সুস্পষ্ট হয় যে, ইসলামে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও ইসলামের অন্যতম শেয়ার বা নিদর্শন।
কোরবানির সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব: ঈদুল আজহাকে ভারতীয় উপমহাদেশে “বকরি ঈদ” এবং ব্যবহারিক অর্থে “কোরবানির ঈদও” বলা হয়। বকরি ঈদ বলার কারণ এই ঈদে খাশি কুরবানি করা হয় আবার বাকারা বা গরু কোরবানির ঈদ হিসেবেও ভাবা হয়। আরবি পরিভাষায় এই ঈদকে বলা হয় ঈদুল আজহা বা আত্মত্যাগ বা উৎসর্গের উৎসব।
সুতরাং ঈদুল আজহার তাৎপর্যগত বৈশিষ্ট্য বিচারে এই উৎসব পালনে গরু বা পালিত পশু খোদার সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ বা কোরবানি করা। আর এই কোরবানির আগে পবিত্র হজ পালনের প্রসঙ্গটিও স্বতঃসিদ্ধভাবে এ উৎসবের সাথে এসে সংযুক্ত হয়। ঈদুল আজহার এই উৎসব হজ পালন ও পশু কোরবানিসূত্রে সমাজ ও অর্থনীতিতে বিশেষ তাৎপর্যবাহী প্রভাব ও কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ঈদুল আজহা উদযাপনে পশু উৎসর্গের মধ্যে রয়েছে বিশেষ আর্থসামাজিক তাৎপর্য। হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক পুত্র ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর উদ্দেশে উৎসর্গ করার ইচ্ছা প্রকাশের মহান স্মৃতিকে স্মরণ করে ইতিহাসের ধারাবাহিতায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানির মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে নিজের পাশবিক প্রবৃত্তি, অসৎ উদ্দেশ্য ও হীনম্মন্যতাকেই কোরবানি করা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই বিশেষ ঈদ উৎসবে নিজের চরিত্র ও কুপ্রবৃত্তিকে সংশোধন করার সুযোগ আসে। জীবজন্তু উৎসর্গ করাকে নিছক জীবের জীবন সংহার হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি আত্মশুদ্ধি ও নিজের পাশবিক প্রবৃত্তিকে অবদমন প্রয়াস প্রচেষ্টারই প্রতীকী প্রকাশ মাত্র।
মুসলমানদের জীবনে কোরবানির গুরুত্ব ও আনন্দ অপরিসীম। উৎসব হিসেবে পবিত্র ধর্মীয় অনুভূতি এর সাথে সম্পৃক্ত। ইসলামের জীবন আর ধর্ম একই সূত্রে গাঁথা। তাই কোরবানির শুধু আনন্দের উৎসব নয় বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে কর্তব্যবোধ, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের বৈশিষ্ট্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্প্রীতির ভাবটা এখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এলাকার লোকেরা ঈদের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট ঈদগাহে সমবেত হয়। এতে সকলের মধ্যে একাত্মতা ও সম্প্রীতি ফুটে ওঠে। ইসলামের মহান ভ্রাতৃত্ববোধে সবাই উদ্দীপ্ত হয়। পরস্পর কোলাকুলির মাধ্যমে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পর ভাই বলে গৃহীত হয়। ধনী-গরিবের ব্যবধান তখন প্রাধান্য পায় না। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগ করে নেয়। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা, সাদা-কালো জাতি, ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিয়ে সমাজের সব মানুষকে একই সুতোয়, একই কাতারে নিয়ে আসে ঈদুল আজহার এই ধর্মীয় উৎসব। এর ফলে ধনী-দরিদ্র, শত্রু-মিত্র, আত্বীয়-স্বজন সবাই পরস্পর ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে।
ঈদ উল আজহার যে কোরবানি দেওয়া হয় তার মাধ্যমে মানুষের মনের পরীক্ষা হয়, কোরবানির রক্ত-মাংস কখনই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। শুধু দেখা হয় মানুষের হৃদয়কে। ইরশাদ হচ্ছে, “এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর, এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।”[আল হাজ্জ্ব: আয়াত নং ৩৭]।
ঈদের মধ্যে আছে সাম্যের বাণী, সহানুভূতিশীল হৃদয়ের পরিচয়। পরোপকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় মানুষের মন। সামাজিক কল্যাণ সাধনে সংশোধিত মানব চরিত্র বলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। হজ পালন কোরবানি ও ঈদুল আজহা উৎসবের একটি বিশেষ অংশ। পবিত্র হজ অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের মুসলমানরা সমবেত হন এক মহাসম্মিলনে। ভাষা ও বর্ণগত, দেশ ও আর্থিক অবস্থানগত সব ভেদাভেদ ভুলে সবার অভিন্ন মিলনক্ষেত্র কাবা শরিফে একই পোশাকে, একই ভাষায় একই রীতি রেওয়াজের মাধ্যমে যে ঐকতান ধ্বনিত হয় তার চাইতে বড় ধরনের কোনো সাম্য মৈত্রীর সম্মেলন বিশ্বের কোথায়ও অনুষ্ঠিত হয় না। হজ পালনের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন রং ও গোত্রের মানুষের মধ্যে এক অনির্বচনীয় সখ্য সংস্থাপিত হয়। বৃহত্তর সামাজিক কল্যাণের যা অনুপম আদর্শ বলে বিবেচিত হতে পারে। ঈদুল আজহা উদযাপনে অর্থনীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ, শিল্প উপাদন ও ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটে। এ উৎসবে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ব্যাপক আর্থিক লেনদেনসহ বহুমুখী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় যা গোটা অর্থনীতি তথা দেশজ উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় শনাক্তযোগ্য প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার কোরবানি হয়। এর মাধ্যমে প্রথমত, যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো- অর্থনৈতিক লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়া। কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে ধনীদের সম্পদের কিছু অংশ দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে। গরিব মানুষ সারা বছর গরু লালন পালন করে কোরবানির হাটে নিয়ে আসে। কোরবানির পুরো টাকাটাই গরিবের ঘরে যায়। গরিব মানুষ একসাথে গরুর টাকা পেয়ে তারা তাদের চাহিদা পুরণ করে। গরিবের অর্থনৈতিক চাকা সচল হয়। তাদের ক্রয়-ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে গ্রামে-গঞ্জের বাজারগুলো সচল হয়ে ওঠে। তাদের কেনা-বেচা ভালো হয়। এজন্য সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ঈদ-উল-আজহায় পশু কেনা-বেচা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি খুঁটি। (১৭ জুলাই-২০২১ বিবিসি বাংলা)।
২০২১ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেব মতে বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি ১৯ লাখ গবাদি পশু জবাইয়ের জন্য ছিল। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খামার) জিনাত হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “প্রতি বছর কোরবানির পশু থেকে গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার মতো বেচা-বিক্রি হয়। যদি বিক্রি কম হয়, তাহলে তো অর্থনীতির উপর এটি বিরূপ প্রভাব পড়বেই।” (১৭ জুলাই ২০২১,বিবিসি বাংলা)। কাজেই এখানেই অনুমেয় বাংলাদেশের অর্থনিতিতে কোরবানির ব্যাপকতা কতটা গভীরে।
এই কোরবানিকে কেন্দ্র করে দেশে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গবাদী পশু খামারি ও চামড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান। কোরবানির সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের ট্যানারি শিল্পগুলো। এই শিল্পে বার্ষিক বিনিয়োগ প্রায় ১০০০ (এক হাজার) কোটি টাকা। যার মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে থাকে সরকারি ব্যংক এবং ১০০ কোটি টাকার মতো বেসরকারি ব্যাংকগুলো। কোরবানির চামড়ার বহুমুখী উপকারিতা আমরা লক্ষ করি। একদিকে চামড়া ব্যবসায়ীদের একসাথে আড়ৎ ভরপুর হয়ে উঠে চামড়ায়। তারা স্বল্পমূল্যে চামড়া ক্রয় করে বেশি মূল্যে বিদেশে রফতানি করতে পারে। দেশের চামড়াজাত পণ্যগুলোর বাজার সরগরম হয়ে ওঠে। একদিকে চামড়া ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়, অপরদিকে গরিব অসহায় মানুষকে এই চামড়ার পুরো টাকাটা দান করতে হয়। এতেও গরিব মানুষ কোরবানির মাধ্যমে লাভবান হয়। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান।
আবার কোরবানির মাংসের রান্না-বান্নার মসলার বাজার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মতো, গবাদী পশু আনা-নেয়া, বাজারজাতকরণ, পশুখাদ্য, ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য পরিবহন সুবিধা, কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক কামারদের কর্মব্যস্ততা, ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ীদেরও ব্যাপক বিনিয়োগ থাকে। এক কথায় এই কোরবানিকে কেন্দ্র করে এই দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যাবস্থার অনেকাংশ পরিচালিত হয়ে থাকে। ফলে দেশের গরিব মানুষদের বড় একটা অংশ সরাসরি লাভবান হয়ে থাকে।
কোরবানির অন্যতম এক বিধান এটি যে, কোরবানির গোস্তের এক-তৃতীয়াংশ আত্বীয়-স্বজনদের মাঝে বিলি করতে হয়, এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হয়। এর মাধ্যমে ধনীদের ঘরে সঞ্চিত স¤পদ থেকে কিছুটা হলেও ভাগ পায় গরিব মানুষ। গরিবের উনুন গোশতের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে ওঠে। গরিব শিশুরা কোরবানির গোস্ত পেয়ে যারপরনাই খুশি হয়। কোরবানির দিন গরিব-দুখী সব মানুষের ঘরে গোস্ত পাক হয়। সবাই একই ধরনের আহার গ্রহণ করতে পারে। কোরবানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক মহত্ত্ব এখানেই।
আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা
ঊর্ধ্বমুখী বাজারের পাগলা ঘোড়ায় চড়ে এমন অনেক গরিব মানুষ আছেন, যারা সারা বছরে এক টুকরো গোস্তের ঘ্রাণও নিতে পারে না। কোরবানির এই সুন্দর প্রথার কারণে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পারস্পরিক মিল-মুহাব্বত আরও বৃদ্ধি পায়। সামাজিক ঐক্য ও সংহতি আরো মজবুত হয়।কোরবানির মাংস গরিব আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করার যে বিধান তার মধ্যে নিহিত রয়েছে সামাজিক সমতার মহান আদর্শ। কোরবানির মাংস গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার যে শিক্ষা এরম মাধ্যমেও ধনী-গরিবের মধ্যকার বিবেদ কমে আসে। গরিবরা কোরবানির মাংসের মাধ্যমে তাদের আমিষের চাহিদা কিছুটা পুরণ করতে পারে।
কোরবানির দিন পরিশ্রমী গরিব মানুষের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। তারা সামর্থ্যবান ধনীদের কোরবানির গোস্ত কেটে দিয়ে নগদ পয়সা উপার্জন করে। উপরন্তু তারা অতিরিক্ত কিছু গোস্তও পায়। ঈদের দিনে তাদের একদিকে আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়, অপরদিকে গোস্ত খাওয়ার তথা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো খাবারের আয়োজনেরও সুযোগ হয়। দেশে যত বেশি কোরবানি হবে, তত বেশি গরু চাষিদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে। তারা গরুর ভালো দাম পাবে। দেশে গরুর লালন-পালন বাড়বে। কোরবানি বেশি হলে চামড়া শিল্পের বিকাশ দ্রুত হবে।
কোরবানি হলো গরিব-অসহায়, দুঃখী-দুঃস্থদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। এভাবে কোরবানির বিষয়টি চিন্তা করলে দেখা যায় যে, কোরবানির রয়েছে বহুমুখী অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধা। এর মাধ্যমে অর্থের কোনো অপচয় হয় না। কোরবানির প্রতিটি বিষয় মানুষের উপকারে আসে। গরিবের কল্যাণে আসে।