গদ্য : বিলাসী, বিলাসীর পেশা কী ছিল?

গদ্য : বিলাসী

১। সৌদামিনী মালাে স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে ধানি জমি, বসত বাড়ি, পুকুরসহ কয়েক একর সম্পত্তির মালিক হয়। এই সম্পত্তির ওপর নজর পড়ে তার দেবর মনােরঞ্জনের। সে সম্পত্তি দখলের নানা কৌশল অবলম্বন করে। একবার দুর্ভিক্ষের সময় ধানখেতের পাশে সৌদামিনী একটি মানবশিশু খুঁজে পায়। শিশুটিকে সে পরম যত্নে লালন পালন করে। মনােরঞ্জন সৌদামিনীকে সমাজচ্যুত করতে প্রচার করে যে, নম শুদ্রের ঘরে ব্রাহ্মণ সন্তান পালিত হচ্ছে। এ  যে মহাপাপ; হিন্দু সমাজে জাত-ধর্ম শেষ হয়ে গেল

ক. বিলাসীর পেশা কী ছিল?

উত্তর: বিলাসীর পেশা সাপুড়ে

খ. মৃত্যুঞ্জয়ের জাত বিসর্জনের কারণ বর্ণনা কর।

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের জাত বিসর্জনের কারণ হলো বিলাসীর প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সমাজের চোখরাঙানি।


মৃত্যুঞ্জয় কায়স্থের ছেলে। তার বাবা-মা বেঁচে নেই। গ্রামের আর দশটা ছেলের মতো সেও লেখাপড়া করে।

কিন্তু ছাত্র হিসেবে ভালো নয় বিধায় সে কখনো থার্ড ক্লাস অতিক্রম করতে পারেনি। এদিকে পাড়ার এক সাপুড়ে মেয়ে বিলাসীর সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রামের রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ কিছুতেই সে সম্পর্ক মেনে নেয়নি।

কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় তার ভালোবাসার টানে এবং সমাজপতিদের নানা অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাপুড়ে কন্যা বিলাসীকে বিয়ে করার মধ্য দিয়ে জাত-ধর্ম বিসর্জন দেয়।

গ. ‘সৌদামিনী’ চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্যটি বিলাসীর চরিত্রের সাথে মিলে যায়? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: তৎকালীন হিন্দু সমাজের দিক থেকে বিচার করলে জ্ঞাতিজন কর্তৃক সমাজচ্যুত করার অপচেষ্টার ক্ষেত্রে সৌদামিনী মালো চরিত্রের সঙ্গে বিলাসী চরিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আবার জাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে কাউকে ভালোবাসার ক্ষেত্রেও উভয়ের মধ্যে একই বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে।


সৌদামিনী মালোর স্বামীর মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া সম্পত্তির ওপর নজর পড়ে সৌদামিনীর দেবর মনোরঞ্জন মালোর। অন্যদিকে, মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পত্তির ওপর নজর পড়ে জ্ঞাতি খুড়ার।


সৌদামিনী মালো দুর্ভিক্ষের সময় ধানখেতের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া এক অসহায়, অসুস্থ মানবশিশুকে তুলে এনে একান্ত আপনজনের মতো করে লালন-পালন করে। ফলে সমাজ থেকে সে ধিক্কার পায়।

অন্যদিকে, সাপুড়ে কন্যা বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়কে ভালোবেসে বিয়ে করেও সমাজ কর্তৃক ধিক্কৃত হয়। পরিশেষে আমরা বলতে পারি, সৌদামিনী মালো চরিত্রের সঙ্গে বিলাসী চরিত্রের এক অপরূপ মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ঘ. ‘মনােরঞ্জন যেন ‘বিলাসী’ গল্পের খুড়ারই প্রতিচ্ছবি’ – বিষয়টি মূল্যায়ন কর।

উত্তর: উদ্দীপকের মনোরঞ্জন মালো ও ‘বিলাসী’ গল্পের খুড়া একে অন্যের প্রতিচ্ছবি। সৌদামিনী মালো তার স্বামীর মৃত্যুর পর বসতবাড়ি, পুকুরসহ বেশ কয়েক একর জমির মালিক হয়।

এ সম্পত্তির ওপর নজর পড়ে সৌদামিনীর জ্ঞাতি দেবর মনোরঞ্জন মালোর।
অন্যদিকে, ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পত্তির ওপর কু-নজর পড়ে তার এক জ্ঞাতি খুড়ার। সে ছলে-বলে-কৌশলে মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পত্তি দখলে নিতে চায়। অর্থাৎ উভয়ের মধ্যেই অন্যের সম্পত্তি হস্তগত করার একটা মানসিকতা দিবালোকের মতো পরিষ্কার।
মনোরঞ্জন মালো সৌদামিনীকে সমাজচ্যুত করার লক্ষ্যে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে।

সে বলে বেড়াচ্ছে যে নমশূদ্রের ঘরে ব্রাহ্মণ সন্তান পালিত হচ্ছে। এ যে মহাপাপ, হিন্দু সমাজের জাত-ধর্ম সব শেষ হয়ে গেল। অন্যদিকে, মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুড়া মৃত্যুঞ্জয়ও বিলাসীর মৃত্যুর পর এই বলে অপপ্রচার চালিয়েছিল যে মৃত্যুঞ্জয় কায়স্থের ছেলে হয়ে সাপুড়ে মেয়েকে বিয়ে করছে। এমনকি তার হাতে ভাত পর্যন্ত খেয়েছে।

মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুড়া একে অন্নপাপ বলতে পিছপা হয়নি। সুতরাং আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে বলা যায়, মনোরঞ্জন যেন ‘বিলাসী’ গল্পের খুড়ারই প্রতিচ্ছবি।

H.S.C

Leave a Comment