গরমের দাপটে অতিষ্ঠ সবাই। বাইরে বেরোনো তো দূরের কথা, গরমে ঘরে থাকাই দায় হয়ে উঠছে। গ্রীষ্মের আবহাওয়া মানেই নানা অসুখের প্রকোপ। গরমে ঘামের পর ঠান্ডা পানীয়ে চুমুক বা খাওয়াদাওয়ার সামান্য অনিয়ম হলেই নানা অসুখবিসুখ দেখা দেয়। এসব রোগের মধ্যে অন্যতম হল ডায়রিয়া।
গরমে ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। শিশুদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও কম থাকে। তবে বড়দের ক্ষেত্রেও সময় মতো চিকিৎসা শুরু না করলে এই অসুখ মারাত্মক আকার নিতে পারে।
গরমে ডায়রিয়ার ঝুঁকি কমাতে কী করবেন, গরমে ডায়রিয়ার ঝুঁকি, ডায়রিয়ার প্রতিরোধে যা করণীয়, গরমে ডায়রিয়া হলে করণীয়
ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত ব্যাকটেরিয়া থেকে ছড়ায়। শরীর থেকে পানি বেরিয় যাওয়ায় এই অসুখ আব্রান্তকে দুর্বল করে তোলে। প্রয়োজনে স্যালাইনও দিতে হয়। এই অসুখ থেকে দূরে থাকতে কতগুলি নিয়ম মানা জরুরি-
চারদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা অনেক কারণেই হতে পারে। গরমে যেমন ডায়রিয়া হয়, শীতেও এর প্রকোপ বাড়তে পারে। ডায়রিয়া হলে সবাই কী খাবেন, সেটা নিয়ে বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েন। যেহেতু এটি পেটের সমস্যা, তাই এই সময় কী খাওয়া উচিত আর কী খাওয়া উচিত নয়, এ ব্যাপারে নানা ধরনের সংশয় কাজ করে। এ নিয়ে নানা কুসংস্কারও আছে।
কী খাওয়া যাবে, কী খাওয়া যাবে না
আসলে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে তেমন বিশেষ কোনো খাবারের প্রয়োজন নেই। বলা হয়, দৈনন্দিন স্বাভাবিক খাবারই এ সময় খাওয়া যায়। তবে গুরুপাক বা তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত মসলাদার খাবার, চা-কফি পরিহার করাই ভালো। কারণ, এসব খাবারে হজমশক্তির ব্যাঘাত ঘটে বলে পাতলা পায়খানার সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
ডায়রিয়ায় শরীর পানিশূন্য হয়ে যায় বলে এই সময় তরল বা তরলজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া দরকার। বিশেষ করে খাওয়ার স্যালাইন, চিড়ার পানি, ভাতের মাড় ইত্যাদি খাবার খেলে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করা যায়।
পাতলা পায়খানা হলে পানির সঙ্গে সঙ্গে শরীরে লবণের ঘাটতিও ঘটে। তাই এ সময় ডাবের পানি শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। তবে লবণ ও পানিশূন্যতা প্রতিরোধে খাওয়ার স্যালাইনের বিকল্প নেই।
পাতলা পায়খানা হলে একটা বিশেষ প্রচলিত খাবার হচ্ছে কাঁচকলা সেদ্ধ বা কাঁচকলার তরকারি। কাঁচকলায় আয়রন, পটাশিয়ামসহ আরও অনেক খনিজ পদার্থ আছে। আয়রন যেহেতু কোষ্ঠকাঠিন্য করতে পারে, তাই কাঁচকলা খেলে মল একটু শক্ত হয়।
দই বা ঘোলে থাকে প্রোবায়োটিকস বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া। তাই অনেকের মতে ডায়রিয়া হলে এসব খাবার খেলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে। অতিরিক্ত পাতলা পায়খানার কারণে শরীর যেমন পানিশূন্য হয়ে কিডনির ক্ষতি করতে পারে, তেমনি শরীরের উপকারী লবণের ঘাটতি হলে নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
তাই ডায়রিয়া হলে কোনো বিশেষ খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে এমন খাবার বেছে নিতে হবে, যেগুলো খেলে পানিশূন্যতা প্রতিরোধের পাশাপাশি লবণের ঘাটতি পূরণ করা যায়।
সুতরাং ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়ার স্যালাইন এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ খাবারগুলো খেলেই চলবে। তেমন বিশেষ কিছুর প্রয়োজন পড়ে না।
ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায় কী
ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত ব্যাকটেরিয়া থেকে ছড়ায়। শরীরের পানি বেরিয়ে যায় বলে এ অসুখ খুবই দুর্বল করে ফেলে। দরকারে স্যালাইনও দিতে হয়। তবে এ অসুখ থেকে দূরে থাকতে কতগুলো নিয়ম মানতেই হবে-
▶ চিকিৎসকদের মতে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে এ অসুখ এড়ানো সম্ভব। রান্নাঘর ও খাওয়ার জায়গা পরিষ্কার রাখুন। বাসন মাজার জন্য পরিষ্কার পানি ব্যবহার করুন। মুখ ধোয়ার সময়ে ব্যবহার করুন পরিষ্কার পানি।
▶ সারা বছরই পরিষ্কার পানি খেতে হবে। রাস্তাঘাটের যে কোনো জায়গা থেকে পানি খাবেন না। প্রয়োজনে বোতলবন্দি বা ফোটানো পানি খান। তবে পানি বেশি করে খেতে হবে।
▶ গরমের সময়ে খাবার বেশিক্ষণ ফেলে রাখবেন না। গরম অবস্থাতেই খান। ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার গরম করে তবেই খান। কারণ, খাবার ঠান্ডা হলে তাতেও কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে, যা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা ডেকে আনে।
▶ ডায়েরিয়ার প্রকোপ থেকে বাঁচতে এ সময়ে রাস্তার খাবার যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে বেশি তেল ও মসলাযুক্ত খাবার একেবারেই খাবেন না। মোট কথা, যেসব খাবারে টক পানি রয়েছে বা যাতে স্যুপের আকারে পানি সরাসরি পেটে যায়, সেসব এড়িয়ে চলুন। অপরিষ্কার হোটেল বা রেস্তরাঁয় না খাওয়াই শ্রেয়।
▶ গরমে ফল খাওয়া ভালো। তা বলে কাঠফা?টা গরমে বেরিয়েই রাস্তার কাটা ফল খাবেন না। গোটা ফল কিনে ভালো করে ধুয়ে, তবে খান। শরবত, ঘোল, লেবুর পানির মতো পানীয় রাস্তার ধারের অপরিচ্ছন্ন দোকান থেকে না খাওয়াই শ্রেয়।
পরিশেষে : গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে যা করবেন,গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁঁচার উপায়,গরমে আইসিডিডিআরবিতে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী
আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট