বিষয়: গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখার নিয়ম,গর্ভবতী মায়ের রোজা,গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার নিয়ম,গর্ভাবস্থায় রোজা ইসলাম কি বলে
গর্ভবতী মায়ের যদি শারীরিক কোনো জটিলতা না থাকে তাহলে তাঁর রোজা থাকতে কোনো বাধা নেই। তবে রোজা রাখা যাবে কি যাবে না এটা নির্ভর করে রোগীর অবস্থার উপর।
গর্ভবতী মায়েরা কখন রোজা রাখতে পারবেন?
গর্ভকালীন অবস্থার উপর ভিত্তি করে তাঁর রোজা রাখা নির্ভর করে। কখন রোজা রাখা যাবে বা যাবেনা এর ভিত্তিতে গর্ভকালীন সময়কে তিনটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হলো।
১। গর্ভের প্রথম তিন মাস:
গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই উত্তম। এই সময় মায়ের গর্ভে অনাগত শিশুর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হতে থাকে। তাই এসময় মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পানি ইত্যাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ জরুরি। এ সময় যেহেতু মায়ের শরীর থেকেই গর্ভের শিশু তাঁর দরকারি জিনিস পায় সেহেতু এসময় মায়ের দেহে কোনো কিছুর অভাব ঘটলে পরবর্তী জীবনে শিশুর জীবনে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় অনেকের প্রেশার বা রক্তচাপ বেড়ে যায়। এ সময় তাঁকে নিয়মমতো কিছু ওষুধ খেতে হয়। রোজা রাখলে এর ব্যত্যয় ঘটে। তাছাড়া গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে যেহেতু গর্ভবতী মায়েদের বেশী বমি বমি ভাব হয়, মাথা ঘুরায়, খেতে কষ্ট হয় ও ওজন কমে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই এই প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো।
২। গর্ভের মধ্যবর্তী তিন মাস:
গর্ভকালীন মাঝের তিন মাস কিছুটা রিলাক্স থাকে। কারণ মধ্যবর্তী তিন মাসে গর্ভবতী মায়েরা একটু ভালো অনুভব করেন। আর এই সময়ের মধ্যেই বাচ্চাটির গঠনও তৈরি হয়ে যায়। তাই ইচ্ছা করলে যদি অন্য কোনো সমস্যা না থাকে এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভবতী মা রোজা রাখতে পারেন। তবে দিন ছোট থাকার কারণে শীতকালে কষ্ট কম হয় বলে এসময় তারা রোজা রাখতে পারেন। তবে গরমের সময় হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা না রাখাই উত্তম। যাঁদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের রোজা না রাখা ভালো।
৩। গর্ভের শেষ তিন মাস:
শেষের তিন মাস গর্ভবতী মাকে খুবই সতর্ক হয়ে চলা উচিত। যেহেতু এ সময় মায়ের পেটে বাচ্চা দ্রুত বাড়ে তাই গর্ভবতী মা ও তাঁর অনাগত সন্তানের পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাকে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া খুবই জরুরী। তাই এ সময় রোজা না রাখাই উত্তম।
এছাড়া যারা হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি বা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ করা অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিত। অনেক চিকিৎসার পরও যাদের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেসব হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি মায়েদের রোজা না রাখাই ভালো। রাখতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
গর্ভবতী মায়ের সেহরির খাবার কেমন হবে?
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখতে চাইলে সেহরিতে তাকে একজন স্বাভাবিক মানুষের খাদ্যতালিকার ন্যায় সুষম খাবার খেতে হবে। তাকে ক্যালরি ও আঁশযুক্ত খাবারের দিকে বেশি খেয়াল করা দরকার। গরমের সময় রোজা শুরু হলে পানিশূন্যতা ও শরীরে লবণের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে- এজন্য এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাই ইফতার ও সেহেরির সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাছাড়া যেসব খাবারে গ্যাস হয় বা বুক জ্বালা করে সেহরির সময় সেসব খাবারগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। তাই খাবার মেন্যুতে আপেল, কলা, খেজুর ইত্যাদি রাখা উচিত।
গর্ভবতী মায়ের ইফতারের খাবার কেমন হবে?
গর্ভবতী মায়েরা কয়েকটি খেজুর, ফলের জুস খেয়ে ইফতার শুরু করতে পারেন। এতে তাদের রক্তের সুগার লেভেল ঠিক থাকবে। ইফতারির মেন্যুতে দুধও রাখা যেতে পারে কারণ দুধে প্রচুর ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন আছে। এছাড়া খাবারের তালিকায় সবজি, স্যুপ, সালাদ, মাছ, মাংস, প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন ডাল, বাদামি চালের ভাত এবং গমের রুটি ইত্যাদি রাখতে পারেন।
রোজাদার গর্ভবতী মায়েদের জন্য কিছু সতর্কতামুলক পরামর্শ
গর্ভাবস্থায় গুরুপাক, ভারি, ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত ও বাসি খাবার ইত্যাদি পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন।
ইফতার ও সেহেরিতে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন। কোন অবস্থাতেই সেহরি না খেয়ে রোজা রাখার চেষ্টা করবেন না তাতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে।
গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি আঁশযুক্ত, প্রোটিনযুক্ত ও ফ্যাটসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করুন কারণ এসব উপাদান ধীরগতিতে পরিপাক হয় বিধায় ক্ষুধা কম লাগবে।
রোজার সময় বেশি বিশ্রাম নিন ও দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন।
এ সময় পরিমিত চিনিযুক্ত ও জাউ ভাত জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
এ সময় অনেকক্ষণ রোদে বা গরমে অবস্থান না করে বাতাস আছে এমন খোলামেলা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। পারলে রাতে খাবারের পর বিশ্রাম নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করুন।
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালরির প্রয়োজন হয় বলে একজন গর্ভবতী মাকে দিনে ছয়বার বা তারও বেশি খেতে বলা হয়। গরমকালে রোজা রাখলে সাধারণত শীতকালের চেয়ে অধিক সময় (প্রায় ১৪ ঘণ্টা) পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। এই দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই কষ্টকর। তাছাড়া গরমে গর্ভবতী মা প্রচুর ঘেমে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারেন।
এছাড়া রোজা রাখার ফলে অনাগত শিশুটি অপুষ্টি ও কম ওজন নিয়ে জন্ম নিতে পারে। পাশাপাশি গর্ভবতী মা মূত্রনালির ইনফেকশনেও ভুগতে পারেন। তাই গর্ভাবস্থায় রোজা রাখলে যদি মা-বা বাচ্চার ক্ষতি হয়, বা যদি ডাক্তারের কোন নিষেধাজ্ঞা থাকে, তাহলে এসময় রোজা না রাখাই ভাল।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও
- হাঁপানি রোগী জন্য পরামর্শ ও হাঁপানি রোগীর ঘরোয়া চিকিৎসা উপায়গুলো
- পুরুষের যৌনাঙ্গের রহস্য
- করোনা কি ভাবে ফুসফুস আক্রান্ত করে এবং তার প্রতিকার বিস্তারিত
- সেক্স প্রশ্ন: লজ্জা নয় সেক্স- সর্ম্পকিত যা
- লেবু কি পারে করোনাধ্বংস করতে !!!
- ডেঙ্গু জ্বরের ইতিহাস, ডেঙ্গু জ্বর উইকিপিডিয়া