বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস, প্রি-ডায়াবেটিসের পাশাপাশি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের (জিডিএম) হার বাড়ছে।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ছয়জনের মধ্যে একটি শিশু জন্মের সময় মায়ের ডায়াবেটিসের কারণে জটিলতার সম্মুখীন হয়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীর সন্তান ধারণে জটিলতা বেশি; যেমন বেশি ওজনের শিশু জন্ম ও জন্মের পরই বা গর্ভে শিশু মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। অকালে সন্তান প্রসব ও শিশুদের জন্মগত ত্রুটির হারও বেশি।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস,গর্ভবতী নারীদের ডায়াবেটিস,গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
Table of Contents
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কেবল নবজাতক বা গর্ভস্থ শিশুর জটিলতা নয়, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসজনিত কারণে মাতৃমৃত্যুও বাড়ছে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ডায়াবেটিস থাকলে অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রি-একলাম্পশিয়া, একলাম্পশিয়া, গর্ভে পানির তারতম্য, কিডনি জটিলতা ইত্যাদি হতে পারে। তাই সন্তান নিতে চাইছেন, এমন প্রত্যেক নারীকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
- যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস জানা থাকে, তাহলে সেই নারীর সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা নেওয়া প্রয়োজন। এ সময় চিকিৎসক তাঁর রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, সে বিষয়ে জোর দেবেন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা চর্বি নিয়ন্ত্রক অনেক ওষুধ গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর, তাই আগে থেকে তা বন্ধ করে গর্ভকালীন নিরাপদ ইনসুলিন নিতে হবে। সন্তান নিতে ইচ্ছুক নারীর কিডনি, প্রস্রাবে আমিষ, চোখের রেটিনা ইত্যাদি পরীক্ষা করে নিতে হবে আগে।
- ডায়াবেটিস নেই বা আগে থেকে জানা নেই, এমন প্রত্যেক প্রজননক্ষম নারীরও গর্ভধারণের আগে এ-সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে জানা থাকা প্রয়োজন। সন্তান নেওয়ার আগে বা প্রেগন্যান্সি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথম চেক-আপেই রক্তচাপ, শর্করা মাপতে হবে। এ সময় রক্তের শর্করা স্বাভাবিক এলেও নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই। ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহে এ পরীক্ষা আবার করাতে হবে।
- ডায়াবেটিস আছে, এমন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে প্রথমেই স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবারে আগ্রহী হতে হবে। ক্যালরিবহুল ও চর্বিযুক্ত খাবার বিশেষত ফাস্ট ফুড, ঘি, ডালডা ইত্যাদি কম খাওয়া, শর্করাবহুল খাবার যেমন চাল, আটা/ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার ও মিষ্টি ফল পরিমিত খাওয়া, আঁশবহুল খাবার বেশি খাওয়া, চিনি/মিষ্টিজাতীয় খাবার বাদ দেওয়া।
- দৈনিক ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। একসঙ্গে ৩০ মিনিট না পারলে ১০ মিনিট করে তিনবার হাঁটলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
- নিয়মিত একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।
গবেষণার তথ্য মতে, দেশের শতকরা প্রায় ৩৫ শতাংশ গর্ভবতী নারীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিক পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রতি ছয়জন গর্ভবতী মায়ের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
টাইপ ১ এবং ২ ডায়াবেটিসের মধ্যে পার্থক্য,ডায়াবেটিস কি,ডায়াবেটিস কয় প্রকার?
বিস্তারিত
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মা ও প্রসূতি বিভাগ, ফিটোমেটাল মেডিসিন বিভাগ ও অ্যান্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগ প্রেগন্যান্সি বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে।
এতে বলা হয়, সন্তান জন্মের ৬ সপ্তাহ পর শতকরা ৫০ শতাংশ গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিক হয়নি। আমাদের দেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে মা ও অনাগত শিশু উভয়ইে ঝুঁকির সম্মুখীন। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এর কুফল থেকে মা ও সন্তানকে মুক্ত রাখা যায়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস
গাইনোকোলজিষ্ট ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগীকে একজন ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। প্রয়োজনে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয়। পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকায় মাকে স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস সারা জীবন ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় কোনো মায়ের ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। এ ডায়াবেটিস অনাগত নবজাতকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বিএসএমএমইউ মা ও প্রসূতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাসরিন বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের খুব নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করতে হয়। আর প্রসূতি মায়েদের যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাহলে আরো অনেক বেশি যত্মশীল হতে হয়।
কারণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের মধ্যে না থাকলে রোগী এবং অনাগত সন্তানের জীবন শঙ্কা দেখা দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে সবাইকে আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের গ্রাম এবং শহর এলাকায় সমান হারে বাড়ছে ডায়াবেটিসের রোগী। গত দুই বছরে ৫৬ শতাংশ রোগী বেড়েছে। এছাড়া নিয়মিত চিকিৎসা না করায় ইনসুলিন নেয়ার পরও ৮০ ভাগের বেশি রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কিভাবে হয়
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ৫৪ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ২০৪৫ সালে তা প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
সন্তান নেওয়ার সঠিক বয়স,বাবা-মা হওয়ার সঠিক বয়স কত?
বিস্তারিত
বিএসএমএমইউ অ্যান্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম বলেন, সর্বশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে যে গবেষণা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, দেশে মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে। ডায়াবেটিস থেকে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।
এর মধ্যে প্রধান হলো হৃদরোগ। হৃদরোগের ৮০ শতাংশই রোগী ডায়াবেটিসের কারণে মারা যায়। ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশের কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয় ডায়াবেটিসের কারণে।
এছাড়া অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস রোগীর ২৯ শতাংশ রেটিনোপ্যাথিতে ভুগছেন। ডায়াবেটিসের কারণে প্রজনন ক্ষমতাও কমছে।
বারডেম অ্যাকাডেমির পরিচালক ও হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো: ফারুখ পাঠান বলেন, ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ।
এ রোগ কখনো সম্পূর্ণ সারে না। সারাবিশ্বেই এই রোগটি আছে। এই উপ-মহাদেশে প্রকোপ কিছুটা বেশি। ডায়াবেটিসের কিছু ঝুঁকি আছে পরিবর্তন করা যায় এবং কিছু যায় না।
কারো পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বংশে কারো ডায়াবেটিস থাকলে সেক্ষেত্রে অন্যরা কায়িক পরিশ্রম না করলে, ওজন ও মেদ বাড়লে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকেন।
ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন
সবাই হাতের এবং পায়ের কথা ভুলে গিয়ে মুখের যত্ন নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকি। অথচ হাত-পায়ের যত্ন মুখের মতই সমানভাবে ইম্পরট্যান্ট। সূর্যরশ্মির সরাসরি প্রভাবের কারণে মেলানিন উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে আমদের ত্বকে কালচে ছোপ পড়ে। যদি আপনি ফর্সা ত্বকের অধিকারী হয়ে থাকেন কিন্তু হাত পা কাল হয়ে থাকে তাহলে আর লজ্জায় ভুগবেন না। কারণ নিচে দেয়া ১২টি টিপস প্রাত্যহিক ব্যবহার করে আপনার হাত-পায়ের যত্ন নিলে মুখের মত এরাও সুন্দর থাকবে। বিস্তারিত
আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট
স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ
- শীতে ভালো থাকার কিছু টিপস, শীতে ভালো থাকার উপায় জেনে নিন
- ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করলে কি হয়?, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট খারাপ দিক, ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট সুবিধা ও অসুবিধা
- হাত ঝিনঝিন করার ব্যায়াম,হাত ঝিনঝিন ও অবশ ভারের ৬টি ব্যায়াম,হাত ঝিন ঝিন করার ব্যয়াম
- হাত পা ঝিন ঝিন অবশ,হাত পা ঝিন ঝিন করার কারণ,হাত পা ঝিন ঝিন এর চিকিৎসা
- যেসব খাবার গরম করে খাওয়া ক্ষতিকর