চন্দনের বহুবিধ গুণাবলী ও রাসুল (সা) এর বাণী,রক্ত চন্দন এর উপকারিতা,চন্দন কাঠের ব্যবহার,রক্ত চন্দন বীজ,রক্ত চন্দন এর উপকারিতা

বিষয়: লাল চন্দন কাঠ কি, লাল চন্দন কাঠের কি কোনও গন্ধ থাকে, লাল চন্দন Red Sanndalwood এর বিশ্বজোড়া কদরের কারণ

চন্দন একটি সুগন্ধি ভেষজ উদ্ভিদ। শ্বেত ও রক্ত দুই ধরনের চন্দনগাছ আছে। শ্বেত চন্দনের বৈজ্ঞানিক নাম Santalum album এবং রক্ত চন্দনের বৈজ্ঞানিক নাম Pterocarpus santalinus। এদের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ভারতে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশেও এই সুগন্ধি গাছ পাওয়া যায়।

শ্বেত চন্দনগাছের উচ্চতা প্রায় ৪-৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এরা চিরসবুজ গাছ এবং শত বছর বাঁচে। গাছের পাতার ওপরের অংশ উজ্জ্বল সবুজ থাকে। এটি পাতলা এবং দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতি। এ গাছে লাল রঙের ছোট ছোট ফুল ফোটে, ফুল শেষে ফল হয়।

রক্ত চন্দনগাছ থেকে শক্ত, লাল কাঠ পাওয়া যায়। তবে শ্বেত চন্দনের মতো এ কাঠে সুঘ্রাণ নেই। এ গাছ সাধারণত আট মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের পাতা বিপরীত, ৩ থেকে ৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং ফুল হলুদ।

প্রাচীন ভারতে চন্দনকে, বিশেষ করে শ্বেত চন্দনকে পুণ্য অর্জনের উপকরণ হিসেবে সম্মান করা হতো। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এর বহুল ব্যবহার আছে। চন্দনের আছে হাজারো ওষধি গুণ। রূপচর্চার জন্য চন্দনের খ্যাতি যুগ যুগ ধরে। প্রাচীনকালে রূপচর্চার অন্যতম একটি উপাদান ছিল চন্দন। বর্তমান সময়েও বিভিন্ন রকম কসমেটিকস ও সুগন্ধিতে চন্দন ব্যবহৃত হয়। চন্দন ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় বেশ উপকারী। এতে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মুখের বলিরেখা দূর করতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করতে চন্দন ব্যবহার করা হয়।

রক্ত চন্দন কাঠ দেশের বাইরে পাচারের চেষ্টার অভিযোগে দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার চিনের এক নাগরিক। গত রবিবার চিনের কুনমিংগামী বিমানে চড়ার আগে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ব্যক্তির ব্যাগব্যাগেজ তল্লাশি করে রক্ত চন্দনের কাঠ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন শুল্ক বিভাগের এক আধিকারিক।

ওই কাঠগুলির ওজন ৮৬ কেজি। বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি আন্তর্জাতিক বানিজ্য সংক্রান্ত কনভেনশন অনুসারে, রক্ত চন্দনের রফতানি নিষিদ্ধ। যদিও আন্তর্জাতিক চোরা বাজারে এই কাঠের দাম বেশ চড়া। বিভিন্ন ওষুধ তৈরি ও যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির দাওয়াই হিসেবে রক্ত চন্দনের ব্যবহার করা হয়। ভারতের বাজারে এর দাম প্রতি কেজি ১০ হাজার টাকা। চিন, জাপান সহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে রক্ত চন্দনের দাম কয়েকগুণ বেশি।৪৮ বছরের চিনা ব্যক্তির কাছে উদ্ধার হওয়া কাঠের দাম প্রায় ৮.৬ লক্ষ টাকা।

চন্দনের বহুবিধ গুণাবলী ও রাসুল (সা) এর বাণী

চন্দনকে ইংরেজিতে SANDALWOOD বলে। দু’ধরণের চন্দন রয়েছে। একটি ‘সাদা চন্দন’ অন্যটি ‘লাল চন্দন’ তাকে আবার ‘রক্ত চন্দন’ ও বলে। শুধুমাত্র চন্দন বলা হলে, তাহলে সাদা চন্দনকেই বুঝিয়ে থাকে। সাদা ও লাল চন্দন দুটিই আলাদা প্রজাতির গাছ। বৈশিষ্ট্য-গত ভাবে একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। তবে দুটোই মহামূল্যবান গাছ হিসেবে বিবেচিত। ভারতীয় উপমহাদেশে চন্দনের ব্যবহার বহুবিধ। চন্দনের ঘ্রাণ উপাদেয়, এর ঘ্রাণেও রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা। এর ঘ্রাণ ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী। সকল শ্রেণী বয়সের মানুষের নিকট এই ঘ্রাণ পছন্দনীয়। চন্দনের তাজা ঘ্রাণ কিংবা ধোঁয়া শ্বাসনালীর প্রদাহ দূর করে। বাচ্চাদের বদ হজম দূর এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এর তুলনা নাই। পেটের গ্যাস, কলিজার প্রদাহে বড়ই উপকারী।

চন্দনের উপকারিতা নিয়ে স্বয়ং রাসুল (সা) বলেছেন,

“তোমরা ভারতীয় চন্দন কাঠ ব্যবহার করবে, কেননা তাতে সাতটি আরোগ্য রয়েছে। শ্বাসনালীর ব্যথার জন্য এর (ধোঁয়া) নাক দিয়ে টেনে নেয়া যায়, পাঁজরের ব্যথা বা পক্ষাঘাত রোগ দূর করার জন্যও তা ব্যবহার করা যায়” বুখারী-৫৬৯২

সবচেয়ে বড় কথা চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে চন্দনের উপরে কোন ভেষজ উদ্ভিদ আজো আবিষ্কৃত হয়নি। খাজুলি-চুলকানি, চামড়ার কালো ও লালচে দাগ দূর করা, স্ক্রিন ক্যান্সার, চামড়ার এলার্জিতে সারা দুনিয়া-ব্যাপী সমাদৃত এই চন্দন। এর কাষ্ঠ খণ্ডকে পাথরের উপরে ঘষলে মিহি কাই বের হয়। সেটার বর্ণ খুবই সুন্দর, মানুষ চন্দন বর্ণের চামড়া খুবই পছন্দ করে। তাইতো সুশ্রী রমণীরা তাদের গায়ের রং চন্দনের মত করার জন্য উদগ্রীব থাকে এবং মুখমণ্ডলে চন্দন গুড়ো ব্যবহার করত। চন্দন কাঠে তৈল থাকে, এর কাঠ ঘষা কাই চামড়াতে ঘষলে চামড়ার বর্ণ মিহি ও চিকচিক করে। সকল প্রকার চর্মরোগের এই একটিই পাউডার। আগের যুগে শাহী দরবারের মহিলারা চন্দনকে রূপ সজ্জার জন্য ব্যবহার করত। চন্দনের এই সুনামের জন্য বর্তমান সময়ের প্রসাধনী কোম্পানি গুলো ফেস ক্রিমের মধ্যে চন্দনের উপাদান ঢুকিয়ে সেটাকে মুখমণ্ডলে মাখার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফেস পাউডারের বর্ণ ঘ্রাণ অবিকল চন্দনের মতই করা হয়েছে। মূলত কোন ক্যামিকেলের ভিতরেই ভেষজ জিনিষের

আসল চরিত্র-উপাদান সজীব থাকেনা। ক্রেতারা ভেবে থাকেন আসল গুনাগুণ বুঝি ক্রিমের ভিতরেই রয়েছে। চন্দনের যথাযথ কার্যকারিতা প্রত্যাশা করলে সরাসরি চন্দন কাঠ থেকেই তা সংগ্রহ করা উচিত।

চন্দন ঔষধ হিসেবে খাওয়া হয়। পেটের গ্যাস, বদহজম, অন্ত্রের দুর্বলতা দূর করতে চন্দনের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। চন্দনের লাকড়িই খাওয়া হয়! যেহেতু মানুষ লাকড়ি খেতে পারেনা। তাই পাথরে পিষে পাউডার বানিয়ে বড়ি আকারে খাওয়া লাগে। এটা একটা কঠিন কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আমার দাদীর সেই ঔষধে চন্দনের ব্যবহার লক্ষণীয়। কিছু মহিলা ছিল যাদের অহরহ কাজই ছিল এসব কাঠকে পিষে মিহি বানানো। এখানে বড়ির বিজ্ঞাপন দেওয়া উদ্দেশ্য নয়। যে সব মহিলারা এসব পিষতে গিয়ে নিজের হাতকে একটি বাটিতে ধৌত করতেন। সে পানি গুলো পান করার জন্য অনেকে আবদার করত। অগ্রিম বলে যেত যাতে করে, পরবর্তী বারে তাকে সুযোগ দেওয়া হয়। কৌতূহল বশত এসব মহিলাদের প্রশ্ন করতাম এতে কি ফায়দা? তারা বলত বাবারে পেট নিয়ে কষ্ট আছি, তাই এই পানি পান করি, ভাল লাগে, কিছুদিন সুস্থ থাকি। তখনও গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট তৈরি হয়নি, মানুষ সোডা খেয়ে কষ্ট নিবারণ করত। তার চেয়ে চন্দনের পানি ছিল অনেক যুতসই। এই পানির মাধ্যমে উপকার পেত বলেই অনেকে এমনটি করত। যেখানে স্বয়ং রাসুল (সা) বলেছেন, “চন্দনে সাত ধরণের রোগের আরোগ্য রয়েছে”

ভারতীয় পুরাণে চন্দনকে ধর্মীয় সম্মান দেওয়া হয়েছে। শুধু বিশ্বাসের উপর নির্ভর করেই হিন্দু ধর্মে চন্দনের বহুবিধ ব্যবহার দেখা যায়। হিন্দু ধনী ব্যক্তিরা মারা গেলে পরে চন্দন জালিয়ে লাশ দাহ করার ঐতিহ্য বহুকাল ধরে চলে আসছে। মহা মূল্যবান এই চন্দন কাঠের খাটিয়া বানিয়ে ঘুমানোর জন্য বহু বিশ্বনেতাদের মনে খায়েশ জন্মে কিন্তু বেশীর ভাগকেই হতাশ হতে হয়েছে। কেননা একটু ঘ্রাণ নেবার জন্যও চন্দন যেখানে দুঃপ্রাপ্য, সেখানে খাটিয়া বানানোর জন্য তো আরো দুষ্কর হতে বাধ্য।

চন্দন কী?

আর পাঁচটা গাছের মতোই চন্দনের গাছও হয়। এই গাছকেও অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। চন্দনের বৈজ্ঞানিক নাম সন্তলম অ্যালবাম (Santalum album)। এটি মাঝারি মাপের একটি গাছ যা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া যায়।(1) এই গাছের কাঠ দিয়ে বিভিন্ন মূর্তি, সাজসজ্জার নানা ধরনের জিনিস, যাগযজ্ঞ করার কাজে এবং ধূপকাঠি বানানোর পাশাপাশি আরও নানা কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি সুগন্ধি এবং অ্যারোমাথেরাপির কাজেও এই চন্দন তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

এবার চলুন জেনে নিই চন্দনের প্রকারভেদ সম্পর্কে।

চন্দনের প্রকারভেদঃ

চন্দনের কয়েকটি প্রকার নিয়ে আমরা নীচে আলোচনা করলাম।

  • ভারতীয় চন্দনঃ এই চন্দন গাছ সাধারণত ১৩-২০ ফিট উচ্চতা অবধি বাড়তে পারে। এর বেশ কিছু ঔষধি গুণও রয়েছে। এই চন্দন থেকে তৈরি হওয়া এসেন্সিয়াল অয়েল বেশ দামে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও ভারতীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এই চন্দন এবং এই গাছ মোটামোটি ১০০ বছর অবধি বাঁচতে পারে। তবে বর্তমানে এই গাছ সংরক্ষণের আওতায় রয়েছে।
  • লাল চন্দনঃ এই লাল চন্দন রক্ত চন্দন নামেও পরিচিত। দক্ষিণ ভারতের পূর্বঘাট পর্বতে এই গাছ পাওয়া যায়। এই গাছ তার কাঠের জন্যই মূলত ভীষণভাবে জনপ্রিয়, আরেকটি কারণ হল এর লাল রঙ। তবে এই গাছের কাঠ দেখতে সুন্দর হলেও এর গন্ধ একেবারে নেই বললেই চলে। এই গাছ মাপে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং বড়জোর ২০-২৫ ফিট পর্যন্ত বাড়তে পাড়ে। এই লাল চন্দনে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ থাকে।
  • শ্বেত চন্দনঃ এটি একটি চিরহরিৎ গাছ এবং যা ঔষধি গুণেও ভরপুর। সাধারণত শ্বেত চন্দন এবং হলুদ চন্দন একই গাছ থেকে পাওয়া যায়। শ্বেত চন্দন থেকেই নানা রকমের সুগন্ধি, এসেনশিয়াল অয়েল, সাবান এবং প্রসাধনী দ্রব্য বানানো হয়ে থাকে।
  • মলয়গিরি চন্দনঃ এটিও একটি চিরহরিৎ গাছ, যা মোটামোটি ২০-৩০ ফিট উঁচু হয়ে থাকে। মহীশূর, কুর্গ, হায়দ্রাবাদ, নীলগিরি এবং দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতে এই গাছ পাওয়া যায়। সাধারণত চন্দন বেশ কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। তারমধ্যে মলয়গিরি চন্দন বা শ্রীখণ্ডকেই সবচেয়ে মিষ্টি এবং আসল বলে মনে করা হয়ে থাকে। খাট, কোনও আসবাবের পায়া বা সুন্দ্র বাক্স বানানোর কাজে এই গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়।

এবার চলুন জেনে নিই চন্দন কাঠের ঔষধি গুণ সম্পর্কে।

চন্দন কাঠের ঔষধি গুণঃ

চন্দনকে ঔষধি গুণের খনি বলে মনে করা হয়। এতে অ্যান্টিপায়রেটিক (জ্বর কমানোর গুণ), অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যাস্কেবেটিক (antiscabetic) এবং মূত্রবর্ধক (diuretic) গুণ পাওয়া যায়। চন্দন কাঠ ব্রঙ্কাইটিস, সিস্টিসিস (মূত্রাশয় ফুলে যাওয়ার সমস্যা), ডিসুরিয়া ( প্রস্রাবের সময় জ্বালা করার সমস্যা) এবং মূত্র পথের রোগের (urinary tract diseases) ক্ষেত্রেও সমাধানে কাজে আসে।( আবার লাল বা রক্ত চন্দনেও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টঅক্সিডেন্ট এবং ব্যথা কমানোর গুণ পাওয়া যায়।

এই প্রবন্ধে চন্দনের আরও গুণাগুণ সম্পর্কে নীচে জানতে পারবেন।

এবার আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে নিই চন্দনের উপকারিতা ও গুণাগুণগুলি সম্পর্কে।

চন্দনের উপকারিতা ও গুণাগুণঃ

এবার আমরা আলোচনা করব আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য চন্দন কী কী ভাবে উপকারী। জেনে নিন কীভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আপনি চন্দন ব্যবহার করতে পারবেন। তবে পাঠকদের মনে রাখতে হবে নীচে আলোচ্য রোগগুলির চিকিৎসার ওষুধ কিন্তু এই চন্দন নয়। বলা ভালো চন্দন আমাদের কিছু শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচতে এবং তাদের লক্ষ্ণ দূর করতে কিছুটা সাহায্য করে থাকে। আর যদি রোগ গুরুতর হয়, তাহলে কিন্তু অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপকারিতা ১ঃ অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ-

আমরা শুরুতেই জানিয়েছি যে চন্দন বেশ কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। তার মধ্যে রক্ত চন্দনে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ। এনসিবিআই (National Center for Biotechnology Information) -তে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এই বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। ওই গবেষণা অনুযায়ী, শ্বেত চন্দনে থাকা ফ্লেবোনাইডস এবং পলিফেনোলিক যৌগ চন্দনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণের জন্য দায়ী। এছাড়াও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে, ফোলা বা মাথা ব্যথার মতো সমসস্যার সমাধানের জন্য চন্দনের প্রলেপ লাগানোর কথাও উল্লেখ রয়েছে। তাই সামান্য ফোলার মতো কোনও সমস্যা সমাধানের জন্য চন্দনের ব্যবহার লাভজনক।

উপকারিতা ২ঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ-

ফ্রি- রেডিকেলসের কারণে আমাদের স্বাস্থ্যে বিভিন্ন প্রভাব পড়ে। সেই কারণে আমাদের শরীরে হার্টের রোগ, ক্যান্সার এবং বিভিন্ন ধরনের গুরুতর রোগ দেখা দেয়। সেই জায়গায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের কোষকে মুক্ত কণা বা ফ্রি র‍্যাডিকেল থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এবং জারণ থেকে হওয়া সমস্যা থেকে সমাধান দিতে এবং তা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে থাকে। এবার আসি চন্দনের প্রসঙ্গে। একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, চন্দনে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ। সেই গবেষণায় বলা হয়েছে, চন্দনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ডিপিপিএইচ র‍্যাডিকেলের (DPPH radical) ক্ষেত্রে কার্যকরী। এর পাশাপাশি ফ্রেপ এসে (FRAP assay – ferric reducing ability of plasma- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরখ করার পরীক্ষা)-তেও চন্দনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ থাকার কথা প্রমাণিত হয়েছে।

উপকারিতা ৩ঃ ক্যান্সার-

ক্যান্সার যে একটি গুরুতর রোগ, সেই বিষয়ে কারোরই কোনও দ্বিমত নেই। তবে এই রোগের হাত থেকে বাঁচতে চন্দন বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। এনসিবিআই-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, চন্দনের তেলে অ্যান্টিক্যান্সার গুণ পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি চন্দন গাছ থেকে পাওয়া আলফা স্যান্টালোল (α-santalol)-এও অ্যান্টিক্যান্সার এবং কেমোপ্রিভেন্টিভ গুণ থাকার কথা প্রকাশিত হয়েছে।

উপকারিতা ৪ঃ অ্যান্টিসেপ্টিক-

ছোটখাটো কোনও আঘাত বা ঘা’য়ের ক্ষেত্রে চন্দনের ব্যবহার করা যেতে পারে। যেহেতু চন্দনে অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ থাকে তাই তা চোট উপশমের ক্ষেত্রে লাভজনক হয়ে থাকে। যদিও এই বিষয়ে তেমন কোনও উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোট কিংবা ঘায়ের পরিস্থিতির ওপরই এর প্রভাব নির্ভর করে। চোট গভীর হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপকারিতা ৫ঃ বমির সমস্যায়-

অতিরিক্ত চিন্তা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা বমির সমস্যা দূর করতেও চন্দন কাঠ উপকার করে। এক চামচ চন্দনের গুঁড়ো এবং এম্বালিসা অফিসিনালিস (embalica officinalis) এক কাপ উষ্ণ গরম জলে মিশিয়ে খেলে বমি-বমি ভাবের সমস্যা থেকে রেহাই পায়া যেতে পারে।

উপকারিতা ৬ঃ ত্বকের অ্যালার্জি দূর করতে চন্দনের ভূমিকা

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে, ত্বকের অ্যালার্জি দূর করতে চন্দনের ভূমিকা রয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এটি সোরিয়াসিস (psoriasis- ত্বক সম্বন্ধীয় এক ধরনের রোগ) এবং অ্যাটোপিক ডার্মাটিটিস (atopic dermatitis- ত্বকে লাল র‍্যাশ বেরোয় যার ফলে চুলকুনিও দেখা দেয়) -এর উপশমেও লাভদায়ক। এর আলফা স্যান্টালোল যৌগে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণই এর জন্য দায়ী। তবে এই নিয়ে আরও অনেক গবেষণা দরকার।

উপকারিতা ৭ঃ পেটের সমস্যার সুরাহায় চন্দন-

পেটের সমস্যার সমাধানেও চন্দনের ব্যবহার লাভজনক হতে পারে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এই বিষয়টি সামনে এসেছে। চন্দন গাছে থাকে অ্যান্টি-আলসার গুণ। এর মধ্যে থাকে হাইড্রোঅ্যালকোহলিক নির্যাসের (Hydroalcoholic Extract) কারণেই এই গুণ থাকে বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি ইউনানি চিকিৎসায় গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। (7)

উপকারিতা ৮ঃ জ্বরের উপশমে-

কারোর যদি হালকা জ্বর হয়ে থাকে, তাহলে তা উপশমেও চন্দনের ফায়দা দেখা যায়। আসলে চন্দনে মজুত থাকে অ্যান্টি-পায়রেটিক (antipyretic) গুণ। অ্যান্টি-পায়রেটিক গুণ জ্বর কমানোর কাজে উপযোগী। তাই চন্দনের এই গুণের কারণে জ্বরে উপশম হয়ে থাকে।

উপকারিতা ৯ঃ হেঁচকি বন্ধ করতে-

বারবার হেঁচকি ওঠার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গরুর দুধের সঙ্গে চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। এবার এই মিশ্রণটি নাকের মধ্যে ফোঁটা ফোঁটা করে নিতে হবে। তবে এর কোনও বৈজ্ঞানিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। অনেকে এটিকে কেবল একটি ঘরোয়া টোটকা হিসেবেই ব্যবহার করে থাকেন।

উপকারিতা ১০ঃ ব্রণ’র উপশমে চন্দন-

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য তৈরি হওয়া বেশ কিছু প্রসাধন সামগ্রীতে চন্দন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্রণর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তা হওয়ার পর আবার ফুলতে শুরু করে। তাই এই সময় অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ যুক্ত চন্দন ব্যবহার করলে তা যে শুধু ত্বককে ঠাণ্ডা করে তাই নয়, বরঙ তা ব্রণর ফুলে যাওয়া কয়ামতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণ, যা এই ব্রণ বকমাতেও লাভদায়ক। তবে এই নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

এবার চলুন দেখে নিই চন্দনের ব্যবহার।

চন্দনের ব্যবহারঃ

নীচে চলুন দেখে নিই কীভাবে চন্দনের ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • উজ্জ্বল ত্বক পেতে চন্দনের ফেস্প্যাক বানিয়ে তা লাগানো যেতে পারে।
  • ঘা কিংবা চোট পেলে সেখানে চন্দনের প্রলেপ লাগানো যেতে পারে।
  • চন্দনের তেল দিয়ে অ্যারোমাথেরাপি নেওয়া যেতে পারে।
  • গায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে চন্দনের পেস্ট বা চন্দনের তেল স্নানের জলে মিশিয়ে তা দিয়ে স্নান করা যেতে পারে।
  • বাজারে বেশ কিছু স্যান্ডালউড সাবানও পাওয়া যায়, সেই সাবানও ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • দুধের সঙ্গে চন্দন গুঁড়ো মিশিয়ে তা খাওয়া যেতে পারে। তবে তা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে একবার পরামর্শ করে নেবেন।

এবার চলুন জেনে নিই বাড়িতে কীভাবে আপনি চন্দনের তেল বানাতে পারবেন।

চন্দন তেল বানানোর পদ্ধতিঃ

চলুন দেখে নিই কীভাবে বাড়িতে বসেই চন্দনের তেল বানানো যেতে পারে।

  • উপকরণঃ
  • অবশ্যই লাগবে চন্দনের গুঁড়ো বা পাউডার (বাজার কিংবা অনলাইনেই তা পাওয়া যায়)
  • আধ থেকে এক কাপ বা প্র্যোজন অনুযায়ী ভার্জিন অলিভ অয়েল বা সাধারণ অলিভ অয়েল
  • ছোট কাঁচের জার বা বোতল
  • পদ্ধতিঃ
  • এক কাপ অলিভ অয়েল নিয়ে তাতে প্রয়োজন অনুযায়ী চন্দন গুঁড়ো বা পাউডার মেশাতে হবে।
  • এবার সেই কাঁচের জারে ঢেলে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে যাতে তেলের মধ্যে পাউডার ভালো করে গুলে যায়।
  • এরপর এক সপ্তাহ পর্যন্ত এই কাঁচের জারটি একটি পরিষ্কার এবং শুকনো জায়গায় রেখে দিতে হবে।
  • মাঝে মাঝে বোতলটি ভালো করে ঝাঁকিয়ে নেবেন।
  • এক সপ্তাহ পর তেলের এই মিশ্রণটি ভালো করে ছেঁকে নিতে হবে।
  • এবার সেটি অন্য একটি কাঁচের জারে রেখে ঠাণ্ডা কোনও জায়গায় রেখে দিন।
  • এবার নিজের সময় সুবিধে মতো এটি ব্যবহার করুন।

এবার চলুন জেনে নিই কীভাবে অনেক দিন পর্যন্ত চন্দন সংরক্ষিত করা যায়।

কীভাবে চন্দন অনেকদিন পর্যন্ত সুরক্ষিত রাখবেন?

নীচে চলুন দেখে নিই কীভাবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চন্দন সুরক্ষিত রাখা যায়।

  • চন্দনের পেস্টকে কোনও এয়ার-টাইট কন্টেইনারে রেখে তা কোনও ঠাণ্ডা জায়গায় এক থেকে দু’দিন অবধি রেখে দিতে পারেন।
  • চন্দনের পাউডারও কোনও পরিষ্কার এবং শুকনো জায়গায় রাখতে পারেন।
  • চন্দনের তেলও এয়ার-টাইট কোনও পাত্রে ভরে রাখলে তা অনেকদিন পর্যন্ত থেকে যায়।

বি.দ্রঃ আজকাল বাজারে চন্দনের পাউডার বা তেলের কৌটোয় এক্সপায়ারি ডেট লেখাই থাকে। তাই সেই তারিখ দেখেই এই জিনিস কিনুন।

তবে এত কিছুর পাশাপাশি জানিয়ে রাখি চন্দনেরও কিন্তু কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

এবার চলুন দেখে নিই সেই ক্ষতিকারক দিকগুলি।

চন্দনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

চন্দনের ক্ষতিকর দিকগুলি নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করব ঠিকই, কিন্তু তার সবগুলির বিরুদ্ধে তেমন কোনও উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবু আপনাদের সাবধান করে দেওয়ার জন্য আমরা নীচে হাতে গোনা কয়েকটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আপনাদের জানাচ্ছি।

  • কারোর যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তাহলে হতে পারে যে চন্দন থেকে তার শরীরে চুলকুনি, জ্বালা করা কিংবা র‍্যাশ বেরোনোর সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
  • আবার চন্দন খেলে অনেকের ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই বিষয়ে তেমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
  • গর্ভবতী বা যাঁরা এখনও শিশুদের বুকের দুধ পান করান, তাঁদের চন্দন খাওয়া থেকে দূরে থাকা উচিত।

উপসংহারঃ

এতক্ষণ ধরে আমরা আলোচনা করলাম স্বাস্থ্য এবং ত্বকের জন্য চন্দন ব্যবহারের উপকারিতা। আশা করি, এই প্রতিবেদন পড়ে অনেকেই চন্দন ব্যবহারে এবার আগ্রহী হবেন। তবে মনে রাখবেন প্রয়োজনের তুলনায় বেশী ব্যবহার করলে আবার তা ক্ষতিকারক প্রমাণ হতে পারে। তাই উপকার পেতে পরিমিত মাত্রাতেই চন্দন ব্যবহার করুন। আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, চন্দন কিন্তু কখনওই কোনও রোগের চিকিৎসা নয়। আমরা বারবার বলব, যদি কোনও গুরুতর শারীরিক সমস্যায় আপনি ভোগেন, তাহলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এমন আরও অনেক তথ্য পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment