প্রশ্ন সমাধান: চলতি মূলধন বলতে কি বোঝায়?, কার্যকরী মূলধন নির্ধারণের বিবেচ্যগুলো আলোচনা কর,চলতি মূলধন চক্র কাকে বলে?
চলতি মূলধন বলতে কি বোঝায়?, চলতি মূলধন কাকে বলে?
যেসব নগদ অর্থ হতে কাঁচামাল, কাঁচামাল হতে উৎপাদিত পণ্য হতে বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রাপ্য দেনা এবং প্রাপ্য. দেনা থেকে নগদ অর্থে রূপান্তরিত হয়ে ব্যবসায়ের কাজকর্মকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে তাদেরকেই কার্যকর মূলধন বলে।
যেমন : কাঁচামাল, মজুরি প্রদান, উৎপাদন ও দৈনন্দিন খরচ, বিদ্যুৎ, মেরামত বিজ্ঞাপন ইত্যাদি । কার্যকরী সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য মূলধনের যে অংশ ব্যয় করা হয় তাকেই কার্যকরী মূলধন বলে।
জনাবে বলতে গেলে দৈনন্দিন ব্যবসা কার্য চালু রাখার জন্য যেসব অর্থের দরকার হয় তাকে কার্যকরী মূলধন বলে। কার্যকর মূলধন ব্যবসায় দৈনন্দিন বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয় বলে একে পরিবর্তনশীল মূলধন বা আবর্ত মূলধনও বলা হয় আসলে চলতি সম্পদ এবং চলতি দায়ের বিয়োগ ফলের অতিরিক্ত অংশটুকুকেই কার্যকরী মূলধন বোঝানো হয়ে থাকে। কার্যকরী মূলধন সম্পর্কে দুটি ধারণা বর্তমান, মোট কার্যকরী মূলধন এবং নিট কার্যকরী মূলধন।
নগদ অর্থ, ব্যাংকে জমা অর্থ, দেনাদার, জাপা বিল, আতঃমজুদ গণা, অগ্রিম প্রদত্ত ব্যয়, স্বল্পমেয়াদি আমানত এবং বিনিয়োগের সমষ্টিকেই কার্যকরী মূলধন বলা হয় ।
দীর্ঘমেয়াদি মোট কার্যকরী মূলধন বা মোট চলতি সম্পদ = অভ্যন্তরীণ দায় + দীর্ঘমেয়াদি দেনা + চলতিদায় স্থায়ী সম্পত্তিতে বিনিয়োগকৃত অর্থ ।
দ্বিতীয় ধারণা অর্থাৎ নিট কার্যকর মূলধন বলতে বোঝায় চলতি সম্পদ-চলতি দায় অথবা অভ্যন্তরীণ দীর্ঘমেয়াদি দায় + দীর্ঘমেয়াদি বহির্দায়-স্থায়ী সম্পত্তিতে আবদ্ধ মূলধন ।
Net working capital-current assets-current liabilities (or, Net working capital = Equity plus long term debts minus as much as blocked in fixed assets.)
কার্যকরী মূলধনকে ব্যবসায়ের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। সেজন্য কার্যকরী মূলধনের দক্ষ ব্যবস্থাপনা কারবারের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য। সেজন্য কার্যকরী মূলধন যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে কারবারের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং উপার্জন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় ৷
আবার কার্যকরী মূলধনকে সময়ের ভিত্তিতে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-(ক) স্থায়ী কার্যকরী মূলধন এবং (খ) অস্থায়ী কার্যকরী মূলধন ।
আরো ও সাজেশন:-
চলতি মূলধন চক্র কাকে বলে? অথবা, চলতি মূলধনের চক্রের সংজ্ঞা দাও ।
চলতি মূলধন চক্র : স্থায়ী মূলধন ব্যতীত ব্যবসায় কার্য পরিচালনা করার জন্য যে মূলধনের প্রয়োজন হয় তাবে চলতি মূলধন বলে ।
অথবা প্রতিদিন কারবার পরিচালনা করতে যে সমস্ত মূলধন খরচ করতে হয়, তাকে চলতি মূলধন বলে কাঁচামাল ক্রয়, কাঁচামাল থেকে অসমাপ্ত পণ্য ও তৈরি পণ্য, তৈরি পণ্য বিক্রয় বিক্রয়লব্ধ অর্থ আদায় পর্যন্ত কার্য প্রক্রিয়াটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধারাবাহিক ভাবে শেষ হয় এবং একটি কার্য প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে অপর একটি কার্য প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনে এবং ব্যবসায়িব প্রতিষ্ঠানের তৈরি পণ্য ক্রয়ের জন্য চলতি মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
কোনো প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল ক্রয় বা তৈরি পণ্য ক্রয় কর থেকে আরম্ভ করে পণ্য বিক্রয় লব্ধ অর্থ আদায় করা পর্যন্ত কার্য প্রক্রিয়াটি যে নির্দিষ্ট সময় ধরে চলে ঐ সময়কে কার্যকর মূলধন আবর্তন বলে। প্রতিটি নির্দিষ্ট আবর্তকাল ধরে কার্যকর মূলধন ক্রমাগত ভাবে এবং চক্রাকারে পরিবর্তন ঘটে।
S.C Kuchahal এর মতে, “কার্যকর মূলধন আবর্তন বলতে সেই সময় দৈর্ঘ্যকে বোঝায় যা মজুতাগারে আগত কাঁচামালের জন্য মূল্য প্রদানের সময় থেকে বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রাপ্য অর্থ আদায়ের সময়ের মধ্যে অতিবাহিত হয়। নগদ থেকে পণ্যে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পুনরায় নগদ অর্থে রূপান্তরিত হতে অনেক সময় লাগে। এই সময় লাগার কারণগুলি নিয়ে
প্রদত্ত হলো :
(i) কাঁচামাল সাথে সাথে উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত হয় না। গুদামজাত অবস্থায় এগুলো কিছুদিন পড়ে থাকে ।
(ii) উৎপাদন প্রক্রিয়ার সময় অসমাপ্ত পণ্যে কাঁচামাল মজুরি ও উপরি খরচ বাবদ খরচের টাকা কিছুদিন আটকা থাকে ।
(iii) উৎপাদিত পণ্য বাকিতে বিক্রিত পণ্যে টাকা ক্রেতাদের নিকট থেকে অনেকদিন পরে পাওয়া যায়।
নিম্নে একটি রেখাচিত্রের সাহায্যে এই আবর্ত দেখানো হলো :
কার্যকর মূলধনের আবর্তনের সময় যত কম হবে প্রতিষ্ঠানের কার্যকর মূলধনের পরিমাণ তত কম হবে এবং নগদ অর্থ দ্রুত ফিরে আসবে।
আবার আবর্তের সময় যতদীর্ঘ হবে কার্যকর মূলধনের পরিমাণ তত বেশি হবে এবং নগদ অর্থ তত বিলম্বে ফিরে আসবে। কোন প্রতিষ্ঠানে কার্যকর মূলধন বেশিবার আবর্তিত হলে লাভের পরিমাণ বেশি হয় পক্ষান্তরে কার্যকর মূলধন কম আবর্তিত হলে লাভের পরিমাণ কম হয় ।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
কার্যকরী মূলধন নির্ধারণের বিবেচ্যগুলো আলোচনা কর, চলতি চলতি মূলধন নির্ধারণের বিবেচ্য বিষয়সমূহ বর্ণনা কর
কোনো প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধনের পরিমাণ এমন হওয়া উচিত যাতে তা কোনোক্রমেই অলস আকারে পড়ে না থাকে অথবা ঘাটতি না হয় । এরূপ কাম্য চলতি মূলধনের পরিমাণ কোনো একক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল নয়। এটি নির্ভর করে একাধিক বিষয়ের উপর
নিম্নে কার্যকরী/চলতি মূলধনের পরিমাণ নির্ধারণের বিবেচ্য বিষয়সমূহ আলোচনা করা হলো :
১. ব্যবসায়ের প্রকৃতি : ব্যবসায়ের প্রকৃতির উপর চলতি মূলধনের পরিমাণ নির্ভর করে । সাধারণত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য কম চলতি মূলধনের প্রয়োজন হয় এবং উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক পরিমাণ চলতি মূলধনের প্রয়োজন পড়ে ।
২. কার্যস্তর : প্রতিষ্ঠানের কার্যস্তর দ্বারা চলতি মূলধন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। যে সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যস্তর অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত সে সকল প্রতিষ্ঠানে অধিক পরিমাণে চলতি মূলধনের প্রয়োজন পড়ে। অন্যদিকে, যে সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যস্তর ছোট সে সকল প্রতিষ্ঠানে অপেক্ষাকৃত কম চলতি মূলধনের প্রয়োজন পড়ে।
৩. কাঁচামালের সহজলভ্যতা : কাঁচামালের সহজলভ্যতার উপরও চলতি মূলধনের পরিমাণ ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। যে সকল কাঁচামাল কোনো সুনির্দিষ্ট ঋতুতে পাওয়া যায় কিন্তু উৎপাদন কার্য চলে সারা বছরব্যাপী, সেই সকল কাঁচামাল মজুদের জন্য ব্যাপক চলতি মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
৪. ক্রয়নীতি : প্রতিষ্ঠানের ক্রয় নীতির উপর চলতি মূলধনের পরিমাণ নির্ভর করে। কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যদি বাকিতে কাঁচামাল ক্রয়ের নীতি গ্রহণ করে এবং তা পরিশোধের সময় দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে চলতি মূলধনের পরিমাণ কম হলেও চলে, অন্যদিকে নগদে কাঁচামাল ক্রয়ের নীতি গ্রহণ করা হলে অধিক পরিমাণ চলতি মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
৫. বিক্রয় নীতি : বিক্রয় নীতি চলতি মূলধন নির্ধারণের আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হিসেবে গণ্য হয়। প্রতিষ্ঠান যদি বাকিতে বিক্রয় না করে নগদে বিক্রয়ের নীতি অনুসরণ করে অথবা বাকি আদায় যদি খুব তাড়াতাড়ি হয় (দেনাদার আবর্তন), তাহলে চলতি মূলধন কম হলেও অসুবিধা হয় না।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
৬. উৎপাদন সময় : কোনো দ্রব্য উৎপাদন করার জন্য কাঁচামাল ক্রয় হতে শুরু করে তা হতে পরিপূর্ণ দ্রব্য উৎপাদন করার সময়কে উৎপাদন সময় বলে। সে সকল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সময় কম লাগে, সে সকল প্রতিষ্ঠানে কম চলতি মূলধনের প্রয়োজন। অন্যদিকে এরূপ উৎপাদন সময় বেশি হলে চলতি মূলধনের পরিমাণও বেশি হওয়া উচিত ।
৭. লভ্যাংশ নীতি : লভ্যাংশ নীতির দ্বারাও মূলধনের পরিমাণ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। যে সকল প্রতিষ্ঠান নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে, সে সকল প্রতিষ্ঠানে অত্যধিক পরিমাণে নগদের বহিঃপ্রবাহ ঘটে ফলে চলতি মূলধনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে ।
৮. অবচয় নীতি : অবচয় নীতিও চলতি মূলধনের পরিমাণকে প্রভাবিত করে। অবচয় হলো একটা অনগদ খরচ তাই এর ফলে কোনো নগদ বহিঃপ্রবাহ ঘটে না। ফলে অবচয় নীতি পরোক্ষভাবে চলতি মূলধনের উপর প্রভাব বিস্তার করে ।
৯. মুদ্রাস্ফীতি : মুদ্রাস্ফীতির বলে মুদ্রার দাম হ্রাস পায় এবং দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায়। তাই দেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটলে একই কাজের জন্য পূর্বের বছরের তুলনায় বেশি পরিমাণে মূলধনের প্রয়োজন হয় ।
১০. মুনাফার পরিমাণ : মুনাফার পরিমাণ চলতি মূলধনের পরিমাণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। সাধারণত যে সকল প্রতিষ্ঠানের মুনাফা প্রান্ত বেশি হয় সে সকল প্রতিষ্ঠান অপেক্ষাকৃত কম চলতি মূলধনের সাহায্যে চলতে পারে। অন্যদিকে যে সকল প্রতিষ্ঠানে মুনাফার পরিমাণ কম হয় সে সকল প্রতিষ্ঠানে অধিক চলতি মূলধনের প্রয়োজন পড়ে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত বিষয়গুলোকে সঠিকভাবে বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় । তবে এ বিষয়গুলো সকল সময় সমভাবে চলতি মূলধনের উপর প্রভাব বিস্তার নাও করতে পারে ।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- ইজারা অর্থায়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা কর
- লিভারেজ ইজারার সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ লিখ
- লিভারেজ ইজারা বলতে কি বুঝ বিস্তারিত আলোচনা করো
- IAS 17 ও IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 vs IFRS 16 পার্থক্য, IAS 17 ও IFRS 16 মধ্যে পার্থক্য আলোচনা
- আইএফআরএস ১৬ ও আইএসি ১৭ পার্থক্য । আইএফআরএস ১৬ vs আইএসি ১৭ পার্থক্য
- আই এ এস (IAS) অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার হিসাববিজ্ঞানের নীতিসমূহ লেখ