জরায়ু মুখের ইচিনেস, জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ কারণ ও প্রতিকার

ভ্যাজাইনা নারী দেহের সবথেকে স্পর্শকাতর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেই ভ্যাজাইনা/যোনিপথের ইচিনেস সব বয়সের মহিলাদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। এটি অস্বস্তিকর ও কষ্টদায়ক উভয়ই হতে পারে, যা একজন মহিলার সামগ্রিক সুস্থতা ও জীবনের মানকে প্রভাবিত করে।

জরায়ু মুখ বা ভ্যাজাইনাল ইচিনেস সাধারণত নানা রকম ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে। একে সামগ্রিক ভাবে ভ্যাজাইনাইটিসও বলে।

এর ফলে সাদা স্রাব, ইচিনেস ও ব্যথা হতে পারে। মেনোপজের পরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়া এবং কিছু স্কিনের ইনফেকশনের কারণেও ভ্যাজাইনাইটিস হতে পারে।

জরায়ু মুখের ইচিনেস, জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ কারণ ও প্রতিকার,যোনিতে চুলকানির চিকিৎসা কী?,জরায়ু মুখ ইচিনেস এর কারণ ও লক্ষণ কী হতে পারে?

Table of Contents

ভ্যাজাইনাইটিস এর প্রকারভেদ

সাধারণ ইচিনেস

এ ক্ষেত্রে সাধারণত ভ্যাজাইনা ও তার আশেপাশে ইচিনেস হয়।

নির্দিষ্ট স্থানের ইচিনেস

ইচিনেস ভ্যাজাইনা এর নির্দিষ্ট স্থানেও হতে পারে, যেমন ভালভা, ল্যাবিয়া বা পেরিনিয়ামে।

আরো পড়ুন: পুরুষাঙ্গের বড় করার ব্যায়াম

জরায়ু মুখ বা ভ্যাজাইনাল ইচিনেস এর লক্ষণ ও উপসর্গ

ইচিনেস

সবচেয়ে সাধারণ এবং সুস্পষ্ট লক্ষণ হল ভ্যাজাইনাল ইচিনেস।

লালচে ফোলা ভাব

আক্রান্ত স্থান লাল ও ফোলা হতে পারে।

জ্বালাপোড়া

ইচিনেসের পাশাপাশি সবসময় অথবা প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করতে পারে।

অস্বাভাবিক স্রাব

মহিলাদের স্বাভাবিকভাবেই মাসের বিভিন্ন সময় কিছুটা স্রাব নির্গত হয়। কিন্তু ভ্যাজাইনায় কোনো ইনফেকশন হলে ইচিনেসের পাশাপাশি স্রাবের পরিমান, রঙ, গন্ধ সব কিছুতে পরিবর্তন হতে পারে।

ব্যথা বা অস্বস্তি

ইন্টিমেটের সময় বা প্রস্রাবের সময় ইচিনেসের কারণে অস্বস্তি হতে পারে।

ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন ও ইচিনেসের কারণ

ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনাইটিস

কোনো কারণে ভ্যাজাইনাতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ব্যাকটেরিয়াগুলোর অতিরিক্ত বৃদ্ধি হলে ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ইচিনেস হতে পারে।

ইষ্ট ইনফেকশন

ক্যান্ডিডা অ্যালবিকানস নামক ছত্রাকের সংক্রমনের ফলে ইনফেকশন হতে পারে। যা ইষ্ট ইনফেকশন নামেও পরিচিত। এর কারণেও ভ্যাজাইনাতে অনেক ইচিনেস হয়।

আরো পড়ুন: পায়খানা রাস্তায় সহবাস করলে কি হয়?,

ট্রাইকোমোনিয়াসিস

ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনালিস নামক পরজীবীর সংক্রমনের ফলেও ভ্যাজাইনাতে ইচিনেস হতে পারে। এই পরজীবী সাধারণত যৌন বাহিত। ইন্টার কোর্সের ফলে এই পরজীবী সংক্রামিত হয়।

এসটিডি (STD)

ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়ার মত যৌন বাহিত রোগের কারণেও ভ্যাজাইনায় ইচিনেস হতে পারে।

অ্যালার্জি

সাবান, ডিটারজেন্ট, ল্যাটেক্স বা ব্যক্তিগত যত্নের পণ্য ব্যবহারে পার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ইচিনেস হতে পারে।

স্কিনে জ্বালাপোড়া

আঁটসাঁট পোশাকের ঘর্ষনের ফলে ভ্যাজাইনার আশেপাশে জ্বালা যন্ত্রনা হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত আর্দ্রতার ফলে বা অন্তর্বাস বেশিক্ষন ভেজা থাকলে বা ঘর্ষণের ফলে ইচিনেস হতে পারে।

আরো পড়ুন: মাসিকের কতদিন পর সহবাস করা যায়

হরমোনের পরিবর্তন

মেনোপজ, গর্ভাবস্থা বা হরমোন থেরাপির কারণে ভ্যাজাইনা শুষ্ক হয়ে যায়, যার কারনেও ইচিনেস হতে পারে।

স্কিন ডিজিজ

স্ক্লেরোসিস বা একজিমার মতো চর্ম রোগের কারণে ভ্যাজাইনার আশেপাশে ইচিং হতে পারে।

ওষুধ

কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইচিং হতে পারে। যেমন, জন্ম নিয়ন্ত্রন পিল, হরমোন থেরাপির ওষুধ, কেমোথেরাপির ওষুধ ইত্যাদি।

আরো পড়ুন: সন্তান জন্মদানের পর সহবাস

ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন ঝুঁকির কারণ

  • ভ্যাজাইনার চারপাশ ঠিকমত পরিষ্কার না করলে অথবা অতিরিক্ত পরিষ্কার করার জন্য সাবান বা বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ভ্যাজাইনার স্বাভাবিক উপকারি জীবাণুর ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ হয়ে চুলকানি হতে পারে।
  • আনপ্রটেক্টেড ইন্টারকোর্সের ফলে এসটিডি ছড়ায় যার কারণেও ভ্যাজাইনাল ইচিনেস বা ঘা হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে অনেক সময় মহিলাদের ভ্যাজাইনাল ইচিনেস বৃদ্ধি পায়।
  • অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ভ্যাজাইনাল ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যকে নষ্ট করে, যার কারনে ইষ্ট ইনফেকশন বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে যে কোনো ধরনের ইনফেকশনের সারতে সময় লাগে। ভ্যাজাইনাল ইচিনেস জনিত যে কোনো রোগ ডায়াবেটিসের কারণে বেড়ে যেতে পারে।

আরো পড়ুন: মাথা ব্যথার দোয়া,মাথা ব্যথা দূর করার দোয়া

ভ্যাজাইনাল ইচিনেসের চিকিৎসা

ইচিনেসের কারণের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিত্সার জন্য অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমনের জন্য এন্টিবায়োটিক ও ইষ্ট ইনফেকশনের জন্য অ্যান্টি ফাঙ্গাল জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধও ব্যবহার করা যেতে পারে। মুখে খাবার ঔষধের পাশাপাশি আক্রান্ত স্থানে বা ইচিনেসের জায়গায় মলম বা ক্রিম দেয়া যায়। তবে কোনো কারণে অ্যালার্জিক রিয়েকশন দেখা দিলে অ্যালার্জির মূল কারণ সনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলতে হবে।

এই সমস্যা প্রতিরোধে করণীয়

ভ্যাজাইনাল ইচিনেস প্রতিরোধ ও ভ্যাজাইনাল হেলথ বজায় রাখতে হাইজিন বজায় রাখা এবং বাতাস চলাচল করে এমন অন্তর্বাস পরিধান করা উচিত। আর্দ্রতা ও ঘর্ষণ কমাতে সুতির অন্তর্বাস এবং ঢিলেঢালা পোশাক ব্যবহার করা উত্তম। প্রটেক্টেড ইন্টারকোর্স ভ্যাজাইনাল ইচিনেস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। ভ্যাজাইনা পরিষ্কার করতে হালকা, গন্ধহীন সাবান ও পানি ব্যবহার করতে হবে। ভ্যাজাইনাতে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত নয়। ডায়াবেটিস থেকে থাকলে তা নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।

জরায়ু মুখ বা ভ্যাজাইনাল ইচিনেস এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সঠিক যত্ন, স্বাস্থ্যবিধি এবং ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকলে ভ্যাজাইনাল ইচিনেস অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। ভ্যাজাইনা ও তার আশেপাশে স্বাস্থ্যকর এবং আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সঠিক রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিত্সা পরিকল্পনার জন্য একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Leave a Comment