জাতীয় শিক্ষানীতি- ২০১০ এর শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আলোচনা কর

জাতীয় শিক্ষানীতি- ২০১০ এর শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আলোচনা কর

জাতীয় শিক্ষানীতি- ২০১০ এর শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আলোচনা কর। ।। Suggestion 24
জাতীয় শিক্ষানীতি- ২০১০ এর শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আলোচনা কর। ।। Suggestion 24
একটি জাতির উন্নয়নে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। মানবতা বিকাশ, জনমুখী উন্নয়নে নেতৃত্ব প্রদান, নীতিবান ও কুসংস্কারমুক্ত জাতি গঠন, অসাম্প্রদায়িক ও দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়া, সচেতনতা বোধ জাগ্রত করা, সৃজনশীলতা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মানব সম্পদের উন্নয়ন শিক্ষার হার বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার সুযোগ প্রদান প্রভৃতি সকল দিকের নির্দেশনা রয়েছে শিক্ষা নীতিতে।

শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ঃ শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়ন ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানে উপযোগী মননশীল, মুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের ও অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পাশাপাশি শিক্ষার মাধ্যমেই জাতিকে দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বৈশিষ্ট্য ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই আলোকে শিক্ষার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও নীতিগত তাগিদ নিম্নরূপঃ

১. শিক্ষার সর্বস্তরের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রতিফলন ঘটানো এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের সচেতন করা।

২. ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাকল্পে শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ও ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা।

৩. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা ও তাদের চিন্তা-চেতনার দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলীর যেমন, ন্যায়বোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনতাবোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তিযুদ্ধ চর্চা, শৃঙ্খলা সৎ জীবনযাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি বিকাশ ঘটানো।

৪. জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা বিকশিত করে প্রজন্ম পরম্পরায় সঞ্চালন ব্যবস্থা করা।

৫. দেশজ আবহাওয়া ও উপাদান সম্পৃক্ততার মাধ্যমে শিক্ষাকে শিক্ষার্থীর চিন্তা-চেতনা ও সৃজনশীলতার উজ্জীবন এবং জীবন ঘনিষ্ঠ জ্ঞান-বিকাশে সহায়তা করা।

৬. দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনের জন্য শিক্ষাকে সৃজনধর্মী, প্রয়োগমুখী ও উৎপাদন সহায়ক করে তোলা শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশে সহায়তা প্রদান করা।

৭. জাতি, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে আর্থ-সামাজিক শ্রেণি বৈষম্য ও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা, অসাম্প্রদায়িকতা বিশ্ব- ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।

৮. বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সেবা ও প্রবণতা অনুযায়ী স্থানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষা লাভের সমান সুযোগ-সুবিধা অবধারিত করা, শিক্ষাকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা।

৯. গণতান্ত্রিক চেতনতাবোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা।


আরো ও সাজেশন:-


১০. মুখস্ত বিদ্যার পরিবর্তে বিকশিত চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি এবং অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতি স্তরে মানসম্পন্ন প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা।

১১. বিশ্ব পরিমণ্ডলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিষয়ে উচ্চমানের দক্ষতা সৃষ্টি করা।

১২. জ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর (ডিজিটাল) বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি (ICT) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য (গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি ) শিক্ষাকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা ।

১৩. শিক্ষাকে ব্যাপকভিত্তিক করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার উপর জোর দেয়া, শ্রমের প্রতি শিক্ষার্থীদেরকে শ্রদ্ধাশীল ও আগ্রহী করে তোলা এবং শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে আত্মঃকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হবার জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষার দক্ষতা অর্জনে সমর্থন করা।

১৪. সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে সম- মৌলিক চিন্তাচেতনা গড়ে তোলা এবং জাতির জন্য সম-নাগরিক ভিত্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে সব ধারার শিক্ষার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যব বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ একই উদ্দেশ্যে মাধ্যমিক স্তরে ও একইভাবে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে পাঠদান।

১৫. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিশুর/শিক্ষার্থীর সুরক্ষা ও যথাযথ বিকাশের অনুকূল আনন্দময় ও পরিবেশ গড়ে তোলা এবং সেটি অব্যাহত রাখা।

১৬. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা।

[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

১৭. শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে যথাযথ মান নিশ্চিত করব এবং পূর্ববর্তী স্তরে জ্ঞান ও দক্ষতার ভিত দৃঢ় করে পরবর্তী স্তরের সাথে সমন্বয় করা।

১৮. শিক্ষার্থীদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ সচেতনতা এবং এতদসংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা।

১৯. সর্বক্ষেত্রে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহী করা এবং মৌলিক জ্ঞান বিজ্ঞানের গবেষণার সাথে সাথে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণায় উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা।

২০. উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষা চর্চা এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে সে লক্ষ্যে যথাযথ আবহ ও পারিপার্শ্বিকতা নিশ্চিত করা।

২১. শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে শিক্ষাদানের উপকরণ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা।

২২. পথশিশুসহ আর্থসামাজিক ভাবে বঞ্চিত সকল ছেলেমেয়েকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা।

২৩. দেশের আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংস্কৃতি ও ভাষায় বিকাশ ঘটানো।

২৪. সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা।

২৫. দেশের জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে উপরিউক্ত শিক্ষার লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যসমূহের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়।

Leave a Comment