জাবেদা শেখার সহজ উপায়, জাবেদাভুক্তির নিয়ম, হিসাব বিজ্ঞান সাধারণ জাবেদা
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।
জাবেদা শেখার সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের এই পোস্টে । পুরো পোস্টটি পরলে জাবেদা পানির মত মনে হবে । জাবেদা শেখার সহজ উপায় হিসেবে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের জন্য আমরা হিসাববিজ্ঞানের আধুনিক সুত্র ব্যবহার করবো। মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের কিছু বিষয় সমর্কে জানা উচিত সেগুলো নিচে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো ।
হিসাবরক্ষণ প্রক্রিয়ায় অন্যতম স্তর হচ্ছে জাবেদা দাখিলা। ইংরেজি ‘Journal’ শব্দটি ফরাসি ‘Jour’(জার) শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।যার অর্থ হলো ‘দিবস’ বা ‘দিন’।
হিসাব চক্রের দ্বিতীয় ধাপ হলো লেনদেন গুলো জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ করা।এটি হিসাব চক্রের দ্বিতীয় ধাপ হলেও হিসাবরক্ষণ সংক্রান্ত কার্যাবলির প্রথম অংশ হচ্ছে লেনদেনসমূহের জাবেদাভুক্তকরণ। এ কারণে জাবেদাকে হিসাবের প্রাথমিক বই বলা হয়।
জাবেদা কাকে বলে ?
সাধারণ অর্থে বলতে বোঝানো হয় লেনদেনসমুহের নিয়মতান্ত্রিক লিপিবদ্ধকরণ। অর্থাৎ, লেনদেন সংঘটিত হওয়ার পরে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির ভিত্তিতে ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয় করে তারিখের ক্রমানুসারে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ সহকারে লিপিবদ্ধ করার প্রক্রিয়াই জাবেদা।জাবেদার মাধ্যমে হিসাবের দুইটি পক্ষ খুব সহজেই নির্ধারণ করা যায়। হিসাববিজ্ঞানের যাবতীয় সমস্যা জাবেদার মাধ্যমে সমাধান করা হয়।
যে বইতে লেনদেনগুলোকে তারিখের ক্রমানুসারে ডেবিট-ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত ব্যাখ্যাসহ দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির নিয়ম অনুসারে লিপিবদ্ধ করা হয়,তাকে জাবেদা বলে।
জাবেদা সমুহ/শ্রেণীবিভাগ
প্রতিষ্ঠানের আয়তন,লেনদেনের প্রকৃতি ও সংখ্যা বিবেচনা করে জাবেদাকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।যেমনঃ
১। ক্রয় জাবেদা।
২। বিক্রয় জাবেদা।
৩। ক্রয় ফেরত জাবেদা।
৪। বিক্রয় ফেরত জাবেদা।
৫। নগদ প্রাপ্তি জাবেদা।
৬। নগদ প্রদান জাবেদা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সীমিত আকারের লেনদেন সম্পাদিত হলেও বৃহৎ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অসংখ্য পরিমাণে লেনদেন সংঘটিত হয়।এসব লেনদেনের প্ররিমাণ অত্যন্ত বেশি হওয়ার কারণে লেনদেনসমূহের প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
জাবেদা শেখার সহজ উপায়
খুব সহজে জাবেদা শিখতে হলে আমাদেরকে হিসাব সমীকরণের উপাদানগুলো ভালভাবে বুঝতে হবে এবং লেনদেনের পক্ষ সমূহের ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয় করা জানতে হবে।
এই দুটি ভালভাবে বুঝতে পারলে জাবেদা অনেক সহজ হয়ে যাবে।অর্থের মাধ্যমে লেনদেন সংঘটিত না হলে সেটি জাবেদার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না।মৌলিক হিসাব সমীকরণটি জানা থাকলে জাবেদা করতে সহজ হয়।মেীলিক সমীকরণটি হলো-
A=L+OE
এখানে A=Asset (সম্পদ), L=Liabilities (দায়), OE=Owners Equity (মালিকানা সত্ব)।
হিসাব সমীকরণকে বর্ধিত করলে পাই A=L+(C+R-E-D)|
A= Asset (সম্পদ)
L= Liabilities (দায়)
C= Capital (মুলধন)
R= Revenue (আয়)
E= Expense (ব্যয়)
D= Drawing (উত্তোলন)
হিসাব সমীকবণের বাম পাশ ডেবিট
যেহেতু ব্যয় এবং উত্তোলন এর আগে বিয়োগ চিহ্ন অর্থ্যৎ এগুলো বাদ হবে, তাই হিসাব সমীকরণের বাম পাশের পক্ষ ধরে নিতে হবে।সুতরাং বাম পাশের পক্ষ গুলো হচ্ছে -সম্পদ,ব্যয়,উত্তোলন যেগুলো স্বাভাবিক ভাবে ডেবিট হবে।
হিসাব সমীকরণের ডান পাশ ক্রেডিট
হিসাব সমীকরণের ডান পাশের পক্ষগুলো হচ্ছে -দায়,মুলধন,আয় যেগুলো স্বাভাবিক ভাবেই ক্রেডিট।হিসাব সমীকরণের এইসব বিষয় জানা থাকলে জাবেদা কঠিন মনে হবে না।
জাবেদার ধারণা, গুরুত ও প্রয়োজনীয়তা
জাবেদা হিসাবের প্রাথমিক বই।প্রতিষ্ঠানের হিসাবের বই নির্ভুল ও স্বচ্ছ হওয়া অত্যাবশ্যক।হিসাববিজ্ঞানের মুখ্য এই উদ্দেশ্য অর্জনে জাবেদা কিভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:
১.লেনদেনের সংখ্যা ও পরিমাণ জানা: জাবেদায় লেনদেনগুলো তারিখের ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ করা হয়।ফলে নির্দিষ্ট তারিখে,সপ্তাহে বা মাসে কয়টি লেনদেন বা কত টাকার লেনদেন সংঘটিত হয়েছে তা এখান থেকে জানা যায়।
২.লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভরযোগ্য তথ্যকেন্দ্র: জাবেদায় লেনদেনগুলো সংগঠনের কারন এবং তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বা ব্যাখ্যা সহকারে লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে জাবেদা থেকে যেকোনো সময়ে লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়।
৩.ভুল-ত্রটি হ্রাস: লেনদেন ক্ষতিয়ানে অন্তর্ভুক্তির পূর্বে জাবেদায় লেখা হলে ভুল-ত্রটি ও খতিয়ানে বাদ পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
৪.ধারাবাহিকতা রক্ষা: দৈনন্দিন লেনদেনসমূহ তারিখের ক্রম অনুসারে জাবেদায় লেখা হয়।ফলে লেনদেনের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়।
৫.দ্বৈত সত্তায় বিশ্লেষণ: জাবেদায় লেনদেনগুলো দ্বৈত সত্তায় বিশ্লেষণ করে লিপিবদ্ধ করা হয়।ফলে জাবেদা হতে দ্বৈত সত্তার প্রয়োগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
৬.জাবেদা হিসাবের কোন ধরনের বইঃ জাবেদাকে সহকারি বই বলার আগে জানতে হবে জাবেদা ও সহকারি বই সম্পর্কে।।যে বইতে লেনদেনগুলোকে তারিখের ক্রমানুসারে ডেবিট-ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত ব্যাখ্যাসহ দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির নিয়ম অনুসারে লিপিবদ্ধ করা হয়,তাকে জাবেদা বলে।
অন্যদিকে সহকারি বই বলতে কোনো ঘটনার চুড়ান্ত ফলাফল নির্ণয়ে সাহায্য করাকে বোঝায়।নিচে জাবেদাকে সহকারি বই বলার কারণ দেওয়া হলো –
১. লেনদেনসমুহ জাবেদাভুক্ত করার কারণে পরবর্তীতে খতিয়ানে স্থানান্তর করা সহজ হয়।
২. জাবেদায় লেনদেনসমুহ লেখার কারণে খতিয়ানে তোলার সময় ভুলের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
৩. জাবেদায় লেনদেনসমুহের ব্যাখ্যা থাকে বিধায় লেনদেনের উৎপত্তির কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।
৪. জাবেদায় লিপিবদ্ধকরণের ফলে খতিয়ান হিসাবের শুদ্ধতা ও নির্ভুলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
৫. জাবেদা থেকে খতিয়ানের স্থানান্তরের কোনো ভুল হলে পরবর্তীতে এসব ভুল উদঘাটন করে সমন্বয় জাবেদার সংশোধনী দাখিলার মাধ্যমে সংশোধন করা যায়।
৬. জাবেদা থেকে দৈনন্দিন কাজের আয় ও ব্যয়ের সম্পর্কের ধারণা পাওয়া যায়।ফলে হিসাবের ব্যয় নির্ধারণ সহজ হয়।
৭. সমন্বয় জাবেদাঃ নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে বকেয়া ও অগ্রিম সংক্রান্ত লেনদেন এবং অন্যান্য প্রয়োজর্নীয় সংযোজন, বিয়োজন এবং সংশোধন করার জন্য যে জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় তার নাম সমন্বয় জাবেদা।
যেমন একটি হিসাবকালের শেষে দেখা গেল যে, সারা বছর ক্রয়কৃত পন্য থেকে বিক্রয় করার পরে ২০,০০০ টাকার পন্য অবিক্রিত অবস্থায় আছে,যার নাম সমাপনী মজুদ পন্য।এই সমাপনী মজুদ পন্যের জন্য সমন্বয় জাবেদা হয়।রেওয়ামিল তৈরির পরবর্তী স্তর হচ্ছে সমন্বয় জাবেদা প্রস্তুতকরণ।
৮. জাবেদার বৈশিষ্টঃ হিসাব চক্রের দ্বিতীয় ধাপ হলো লেনদেনগুলো জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ করা।জাবেদার সংজ্ঞা ও লিপিবদ্ধকরণের পদ্ধতি বিশ্লেষণ করলে এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।নিচে এগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
১. হিসাবের প্রাথমিক বই: লেনদেন সংঘটিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম তারিখের ক্রমানুসারে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়।দুতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি মোতাবেক হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম জাবেদা থেকে শুরু হয়।
২. হিসাবের দৈনিক বই: লেনদেনগুলো দৈনিক ভিত্তিতে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়।প্রতিদিনের লেনদেন তারিখ অনুযায়ী জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় বলে জাবেদাকে দৈনিক বই নামে অভিহিত করা হয়।
৩. দ্বৈত সত্তায় বিশ্লেষণ: দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির নিয়ম অনুসারে প্রতিটি লেনদেন দ্বৈত সত্তায় বিশ্লেষণ করে লিপিবদ্ধ করা হয়।একটি পক্ষ ডেবিট ও অপর পক্ষ ক্রেডিট;জাবেদায় এই বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটে।
৪. ব্যাখ্যা প্রদান: প্রতিটি লেনদেন ডেবিট ক্রেডিট বিশ্লেষণ করার পর প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাসহ এই বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়।
৫. জাবেদার ছক: লেনদেনগুলোকে একটি নির্দিষ্ট ছকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছক অনুযায়ী জাবেদা বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠাকে লম্বালম্বিভাবে পাঁচটি ঘরে বিভক্ত করে যথাক্রমে তারিখ,হিসাব শিরোনাম ও ব্যাখ্যা,খতিয়ান পৃষ্ঠা,ডেবিট টাকার ঘর ও ক্রেডিট টাকার ঘর নামকরণ করা হয়।
৬. হিসাবের সহকারি বই: জাবেদায় প্রতিটি লেনদেন এমন ভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় যাতে পরবর্তীতে জাবেদা থেকে লেনদেনগুলো খতিয়ানে স্থানান্তর করা সহজ হয়।সেজন্য জাবেদাকে খতিয়ানের সহকারি বই বলা হয়।
৭. জাবেদার শ্রেণীবিভাগ: প্রতিষ্ঠানের আয়তন,লেনদেনের প্রকৃতি ও সংখ্যা বিবেচনা করে জাবেদাকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় যেমন: ক্রয় জাবেদা,বিক্রয় জাবেদা,ক্রয় ফেরত জাবেদা,বিক্রয় ফেরত জাবেদা,নগদ প্রাপ্তি জাবেদা ও নগদ প্রদান জাবেদা ইত্যাদি।
উপযুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, জাবেদার মাধ্যমে হিসাবরক্ষণ কাজের সূত্রপাত হয়।সব আর্থিক লেনদেনের প্রাথমিক উৎস হলো জাবেদা।লেনদেন জাবেদা ভুক্তকরণ বাধ্যতামূলক না হলেও বর্তমানে প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সযতেœ জাবেদা বই সংরক্ষণ করে থাকে।
ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করার পদ্ধতি
ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের সূত্র: ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করার পদ্ধতি দুই ধরনের-
১। সনাতন পদ্ধতি
২। আধুনিক পদ্ধতি
আমরা ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করার জন্য হিসাববিজ্ঞানের আধুনিক সূত্র ব্যবহার করবো। কারণ আধুনিক পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করা অপেক্ষাকৃত সহজ। তাহলে চলুন দেখে নেই কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে লেনদেনের ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করা যায়-
আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাবকে আমরা মূলত তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। সম্পত্তি, দায় ও মালিকানাস্বত্ত্ব
সম্পত্তি: সম্পত্তি সাধারণত ডেবিট ব্যালেন্স নির্দেশ করে ।
সম্পদ বৃদ্ধি পেলে ——– ডেবিট
সম্পদ হ্রাস পেলে ——–ক্রেডিট
দায়: দায় সাধারণত ক্রেডিট ব্যালেন্স নির্দেশ করে। প্রতিষ্ঠানে-
দায় হ্রাস পেলে ———- ডেবিট
দায় বৃদ্ধি পেলে ———- ক্রেডিট
মালিকানাস্বত্ত্ব: সাধারণত ক্রেডিট ব্যালেন্স নির্দেশ করে। প্রতিষ্ঠানে-
মালিকানাস্বত্ব হ্রাস পেলে —- ডেবিট
মালিকানাস্বত্ব বৃদ্ধি পেলে —- ক্রেডিট
মালিকানাস্বত্বকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। আয়, ব্যয় ও উত্তোলন। প্রতিষ্ঠানে-
আয়: প্রতিষ্ঠানে-
আয় হ্রাস পেলে ———- ডেবিট
আয় বৃদ্ধি পেলে ———- ক্রেডিট
ব্যয়: প্রতিষ্ঠানে-
ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ——– ডেবিট
ব্যয় হ্রাস পেলে ——–ক্রেডিট
উত্তোলন: প্রতিষ্ঠানে-
উত্তোলন হ্রাস পেলে ———- ডেবিট
উত্তোলন বৃদ্ধি পেলে ———- ক্রেডিট
উপরের এই সূত্রটি মনে রাখার জন্য আমরা এইভাবে মনে রাখতে পারি–
সম্পদ/ব্যয়/উত্তোলন বৃদ্ধি পেলে ডেবিট, কমলে ক্রেডিট
আয়/দায়/উত্তোলন কমলে ডেবিট, বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট
কিছু হিসাবের নাম
কিছু হিসাবের নাম মনে রাখলে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় করতে সুবিধা হবে –
সম্পত্তি হিসাবঃ নগদান হিসাব, ব্যাংক হিসাব, আসবাবপত্র হিসাব, কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি হিসাব, অফিস সরঞ্জাম হিসাব, দালানকোঠা হিসাব, বিনিয়োগ হিসাব, দেনাদার হিসাব, প্রাপ্য বিল হিসাব, সমাপনী মজুদ, অগ্রিম ব্যয় হিসাব, প্রাপ্য আয় হিসাব, অগ্রিম বীমা সেলামী হিসাব, সুনাম হিসাব, অগ্রিম ভাড়া হিসাব, প্রদত্ত ঋণ হিসাব, শেয়ার ক্রয় হিসাব, ইজারা সম্পত্তি হিসাব, প্রাথমিক খরচাবলি, মজুদ পণ্য হিসাব ইত্যাদি।
দায় হিসাবঃ ঋণ হিসাব, পাওনাদার হিসাব, প্রদেয় বিল হিসাব, অগ্রিম আয় হিসাব, বকেয় ব্যয় হিসাব, ব্যাংক জমাতিরিক্ত হিসাব প্রভৃতি।
স্বত্বাধিকার হিসাবঃ মুলধন হিসাব, উত্তোলন হিসাব, উত্তোলনের সুদ, আয়কর হিসাব, সাধারণ সঞ্চিতি হিসাব, অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি হিসাব, মুলধনের সুদ প্রভৃতি।
আয় হিসাবঃ বিক্রয় হিসাব, প্রাপ্ত ভাড়া হিসাব, সুদ আয় হিসাব, প্রাপ্ত কমিশন হিসাব, প্রাপ্ত বাট্টা হিসাব, বিক্রয় ফেরত হিসাব, বিনিয়োগের সুদ ব্যয় হিসাবঃ ক্রয় হিসাব, পরিবহন
ব্যয় হিসাবঃ বিক্রয় পরিবহণ হিসাব, বেতন হিসাব, মজুরি হিসাব, ভাড়া হিসাব, মনিহারি হিসাব, বিজ্ঞাপন হিসাব, সুদ ব্যয় হিসাব, প্রদত্ত কমিশন হিসাব, প্রদত্ত বাট্টা হিসাব, অনাদায়ী পাওনা হিসাব, মেরামত হিসাব, অবচয় হিসাব, আমদানি শুল্ক হিসাব, ক্রয় ফেরত হিসাব প্রভৃতি।
ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়
এতক্ষণ আমরা ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয়ের সূত্র সম্পর্কে জানলাম, বিভিন্ন হিসাবের নামও জানলাম এখন চলুন দেখে নেই একটি লেনদেন থেকে কিভাবে ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয় করতে হয়।
১. ধরি, মিঃ ডাবলু ১,০০,০০০ টাকা দিয়ে একটি কম্পিউটার এর ব্যবসায় শুরু করলেন ।
ব্যাখ্যা: এখানে , ডাবলু ১ লক্ষ টাকা দিয়ে ব্যবসায় শুরু করার ফলে ব্যবসায়ে মূলধন নামক দায় বৃদ্ধি পেয়েছে তাই সূত্র অনুযায়ী দায় বৃদ্ধি পেলে হয় ক্রেঃ এবং নগদ টাকা ব্যবসায়ে যুক্ত হওয়ায় নগদান নামে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে তাই সূত্র অনুযায়ী সম্পদ বৃদ্ধি পেলে হয় ডেঃ। অতএব-
নগদান হিসাব (সম্পদ বৃদ্ধি) >> ডেঃ
মূলধন হিসাব (দায় বৃদ্ধি) >> ক্রেঃ
২. আসবাবপত্র ক্রয় করলেন ১০,০০০ টাকার।
ব্যাখ্যা: এখানে , আসবাবপত্র ক্রয়ের ফলে ব্যবসায়ে নতুন আসবাবপত্র যুক্ত হওয়ায় সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে তাই সূত্র অনুযায়ী সম্পদ বৃদ্ধি পেলে হয় ডেঃ এবং যেহেতু নগদ টাকা দিয়ে আসবাবপত্র কেনা হলো তাই নগদ টাকার পরিমাণ ব্যবসায় থেকে কমে যাবে তাই সূত্র অনুযায়ী সম্পদ হ্রাস পেলে হয় ক্রেঃ। অতএব-
আসবাবপত্র হিসাব (সম্পদ বৃদ্ধি) >> ডেঃ
নগদান হিসাব (সম্পদ হ্রাস) >> ক্রেঃ
৩. দোকানের ভাড়া প্রদান করলেন ৩,০০০ টাকা।
ব্যাখ্যা: এখানে , দোকানের ভাড়া বাবদ ৩,০০০ টাকা প্রদান করায় ভাড়া নামক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে তাই সূত্র অনুযায়ী ব্যয় বৃদ্ধি পেলে হয় ডেঃ এবং যেহেতু নগদ টাকা দিয়ে ভাড়া প্রদান করা হলো তাই নগদ টাকার পরিমাণ ব্যবসায় থেকে কমে যাবে তাই সূত্র অনুযায়ী সম্পদ হ্রাস পেলে হয় ক্রেঃ। অতএব-
ভাড়া হিসাব (ব্যয় বৃদ্ধি) >> ডেঃ
নগদান হিসাব (সম্পদ হ্রাস) >> ক্রেঃ
৪. পণ্য /কম্পিউটার (বিক্রয়ের জন্য) ক্রয় করলেন ৭০,০০০ টাকা।
ব্যাখ্যা: এখানে , দোকানে বিক্রয়ের জন্য কম্পিউটার ক্রয় করেছেন যার ফলে ক্রয় নামক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে তাই সূত্র অনুযায়ী ব্যয় বৃদ্ধি পেলে হয় ডেঃ এবং যেহেতু নগদ টাকা দিয়ে পণ্য ক্রয় করা হলো তাই নগদ টাকার পরিমাণ ব্যবসায় থেকে কমে যাবে তাই সূত্র অনুযায়ী সম্পদ হ্রাস পেলে হয় ক্রেঃ। অতএব-
ক্রয় হিসাব (ব্যয় বৃদ্ধি) >> ডেঃ
নগদান হিসাব (সম্পদ হ্রাস) >> ক্রেঃ
৫. ধারে পণ্য ক্রয় করলেন ২,০০,০০০ টাকা।
ব্যাখ্যা: এখানে , দোকানে পণ্য ক্রয় করে টার টাকা প্রদান করা হয় নি, তাই ক্রয় নামক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে তাই সূত্র অনুযায়ী ব্যয় বৃদ্ধি পেলে হয় ডেঃ এবং যেহেতু নগদ টাকা এখানে প্রদান না করে বাকিতে ক্রয় করা হয়েছে তাই পাওনাদার (যাকে টাকা প্রদান করতে হবে) নামক দায় বৃদ্ধি পাবে যাবে তাই সূত্র অনুযায়ী দায় বৃদ্ধি পেলে হয় ক্রেঃ। অতএব-
ক্রয় হিসাব (ব্যয় বৃদ্ধি) >> ডেঃ
পাওনাদার হিসাব (দায় বৃদ্ধি) >> ক্রেঃ
৬. নগদে পণ্য বিক্রয় করলেন ১,০০,০০০ টাকা।
ব্যাখ্যা: এখানে , দোকান হতে পণ্য বিক্রয় করে তার টাকা নগদে পাওয়া গিয়েছে, তাই বিক্রয় নামক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে সুতরাং সূত্র অনুযায়ী আয় বৃদ্ধি পেলে হয় ক্রেঃ এবং যেহেতু নগদ টাকা এখানে পণ্য বিক্রয় করে পাওয়া গেছে, তাই সূত্র অনুযায়ী সম্পদ বৃদ্ধি পেলে হয় ডেঃ। অতএব-
নগদান হিসাব (সম্পদ বৃদ্ধি) >> ডেঃ
বিক্রয় হিসাব (আয় বৃদ্ধি) >> ক্রেঃ
৭. ধারে পণ্য বিক্রয় করলেন ২,০০,০০০ টাকা।
ব্যাখ্যা: এখানে , দোকান হতে পণ্য বিক্রয় করেছি কিন্তু তার টাকা নগদে পাওয়া যায় নি, তাই বিক্রয় নামক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে সুতরাং সূত্র অনুযায়ী আয় বৃদ্ধি পেলে হয় ক্রেঃ এবং যেহেতু নগদ টাকা এখানে পাওয়া যায় নি বাকিতে বিক্রয়ের কারণে, তাই সূত্র অনুযায়ী সম্পদ বৃদ্ধি পেলে হয় ডেঃ। অতএব-
দেনাদার হিসাব (সম্পদ বৃদ্ধি) >> ডেঃ
বিক্রয় হিসাব (আয় বৃদ্ধি) >> ক্রেঃ
৮. পাওনাদারকে পরিশোধ করলেন ১,০০,০০০ টাকা।
ব্যাখ্যা: এখানে , পাওনাদারকে তার পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে, তাই পাওনাদার নামক দায় কমে যাবে সুতরাং সূত্র অনুযায়ী দায় কমলে বা হ্রাস পেলে হয় ডেঃ এবং যেহেতু নগদ টাকা (সম্পদ) দিয়ে পাওনাটা পরিশোধ করা হয়েছে, তাই সূত্র অনুযায়ী সম্পদ হ্রাস পেলে হয় ক্রেঃ। অতএব-
পাওনাদার হিসাব (দায় হ্রাস) >> ডেঃ
নগদান হিসাব (সম্পদ হ্রাস) >> ক্রেঃ
৯. ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবসায় হতে নগদ টাকা নিলেন ১০,০০০ টাকা।
ব্যাখ্যা: এখানে , মালিক তার প্রয়োজনে ব্যবসায় হতে টাকা উত্তোলন করেছেন আর উত্তোলন করলে মালিকানাস্বত্ত্ব কমে যায়, তাই সূত্র অনুযায়ী মালিকানাস্বত্ত্ব কমলে বা হ্রাস পেলে হয় ডেঃ এবং যেহেতু নগদ টাকা (সম্পদ) মালিক ব্যবসায় থেকে নিয়ে গেছে, তাই সূত্র অনুযায়ী সম্পদ হ্রাস পেলে হয় ক্রেঃ। অতএব-
উত্তোলন হিসাব (মালিকানাস্বত্ত্ব হ্রাস) >> ডেঃ
নগদান হিসাব (সম্পদ হ্রাস) >> ক্রেঃ
জাবেদায় লিপিবদ্ধ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ছক আছে এখন উপরের লেনদেনগুলি জাবেদায় কিভাবে লিপিবদ্ধ করতে হয় –
জাবেদার উদাহরণ / হিসাববিজ্ঞান জাবেদা / হিসাব বিজ্ঞান জাবেদা
জাবেদা শেখার সহজ উপায় সম্পর্কিত এই পোস্টে আমরা এতক্ষণ দেখলাম কিভাবে জাবেদা করতে হয় । আর এগুলো মনে রাখতে হলে বেশি বেশি করে প্র্যাক্টিস করতে হবে । জাবেদা প্রশ্ন ও উত্তর নামক পোস্টে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো এগুলো ভালো করে অনুশীলন করলে জাবেদায় আর কোন প্রবলেম থাকবে না আশা করছি ।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।