জিলকদ মাসের ফজিলত,জিলহজ্জ মাসের ফজিলত,জিলহজ মাসের ফজিলত,জিলকদ মাসের আমল,জিলহজ্ব মাসের আমল,রজব মাসের ফজিলত,জিলহজ্জ মাসের আমল

আজকের বিষয়:জিলকদ মাসের ফজিলত, জিলহজ্জ মাসের ফজিলত,জিলহজ মাসের ফজিলত

জিলকদ হলো আরবি চান্দ্রবছরের একাদশ মাস। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) দ্বিতীয় মাস এবং জিলহজের (হজের মাস) জোড়া মাস। হারাম বা নিষিদ্ধ চার মাসের তৃতীয় মাস হলো এই মাস। হারাম চার মাস হলো মহররম (১ম মাস), রজব (৭ম মাস), জিলকদ (১১তম মাস) ও জিলহজ (১২তম মাস)। হারাম চার মাসের মধ্যে যে তিনটি মাস একসঙ্গে, তার সূচনা মাস হলো জিলকদ মাস। ঈদুল ফিতর (শাওয়াল মাস) ও ঈদুল আজহার (জিলহজ মাস) মাঝামাঝিতে জিলকদ মাসের অবস্থান হওয়ায় এই মাসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।


ইবাদতের প্রস্তুতিমূলক বিশ্রাম
জিলকদ মাসের প্রকৃত আরবি নাম হলো ‘জুলকাআদাহ’। ফারসিতে ‘জিলকাআদা’; উর্দুতে ‘জিলকাআদ’; বাংলায় ‘জিলকদ’ রূপ ধারণ করেছে। ‘জুলকাআদাহ’ বা ‘জিলকদ’ অর্থ হলো বসা বা স্থিত হওয়া, বিশ্রাম নেওয়া। জিলকদ মাসের আগের চার মাস (রজব, শাবান, রমান, শাওয়াল) ধারাবাহিক নির্ধারিত ইবাদতে ব্যস্ততম মাস। যেমন: রমজান হলো আল্লাহর মাস, ইবাদতের ভূমি কর্ষণের মাস, বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাস। শাবান হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাস, ইবাদতের বীজ বপনের মাস; নিসফ শাবান বা শবে বরাত এবং সর্বাধিক নফল রোজা ও নফল ইবাদতের মাস।

রমজান হলো উম্মতের মাস, ফসল তোলার মাস, ফরজ রোজা, তারাবির নামাজ, কিয়ামুল্লাইল; কোরআন নাজিলের মাস এবং ইবাদত–তিলাওয়াতে মশগুল থাকার মাস। শাওয়াল মাস হলো ঈদুল ফিতর, সদকাতুল ফিতর ও নির্ধারিত সুন্নত ছয় রোজার মাস। অনুরূপ জিলকদ মাসের পরের দুই মাস (জিলহজ মাস ও মহররম মাস) ইবাদতে ব্যস্ততর মাস। যেমন: জিলহজ মাস হজ, ঈদুল আজহা ও কোরবানির মাস; মহররম মাস আশুরার মাস। অর্থাৎ জিলকদ মাসের আগের চার মাস যেমন ইবাদতে ব্যস্ততায় মশগুল থাকতে হয়, তেমনি জিলকদ মাসের পরের দুই মাসও ইবাদতে আকুল থাকতে হবে। মাঝের একটি মাস জিলকদ, যেহেতু মুমিন সামান্য বিশ্রামের ফুরসত পেয়ে থাকেন, তাই এ মাসের নাম জুলকাআদাহ (জিলকদ) বা বিশ্রামের মাস।


পাপ পরিহারের ঐতিহাসিক মাস
ঈদুল ফিতর (রোজার ঈদ) বিগত ও ঈদুল আজহা (কোরবানির ঈদ) সমাগত, মাঝে এই জিলকদ মাসে নির্দিষ্ট কোনো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুআক্কাদা আমল নেই বিধায় এটি জিলকদ মাস বা বিশ্রামের মাস। এই সময় আরবের লোকজন বাণিজ্য থেকে ফিরে আসত, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসত, তাই এই মাস বিশ্রামের মাস। ঋতুর পরিবর্তনে এই সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকত না। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত এবং অন্যায়–অপরাধ (মদ্যপান) থেকেও নিবৃত্ত থাকত। এসব কারণেও এই মাসের নাম জিলকদ। (লিসানুল আরব, ইবনে মানজুর)।


মুমিনের সওগাত অবসরে ইবাদত


জিলকদ মাস ইবাদতের ব্যস্ততার পর বিশ্রামের জন্য আল্লাহর উপহার। জিলকদ মাস হলো চার মাস ইবাদতের ক্লান্তির পর পরবর্তী দুই মাসের ইবাদতের জন্য শক্তি অর্জনের প্রস্তুতিমূলক বিশ্রাম। রমজানের পূর্ণ এক মাস ফরজ রোজা পালনের শক্তি অর্জনের জন্য যেমন আগের দুই মাসে (রজব ও শাবান) ১০টি ও ২০টি নফল রোজা এবং রমজানের ২০ রাকাত তারাবির প্রস্তুতি হিসেবে আগের দুই মাসে (রজব ও শাবান) বেশি বেশি নফল নামাজ রয়েছে।

তেমনি জিলকদ মাসের পরে জিলহজ মাসে ৯টি নফল রোজা ও নফল ইবাদত এবং তারপরের মহররম মাসে ১০টি নফল রোজা ও নফল ইবাদতের প্রস্তুতি হিসেবে জিলকদ মাসে বিশ্রামের পাশাপাশি কিছু কিছু নফল ইবাদত করা বাঞ্ছনীয় ও শ্রেয়। হাদিস শরিফে আছে, পরকালে নেককার পরহেজগার দ্বীনদার লোকদের কোনো আক্ষেপ থাকবে না; তবে একটি বিষয়ে তাঁদের আক্ষেপ থাকবে, তা হলো যে সময়টা তাঁরা ইবাদত ছাড়া কাটিয়েছেন, সেই সময়টার বিষয়ে তাঁদের অনুশোচনা থাকবে যে কেন তাঁরা এই সময়টাও নেক আমল দ্বারা পরিপূর্ণ করলেন না। তাহলে তাঁরা আরও বেশি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারতেন। এই একটি মাস ইবাদতে লিপ্ত হতে পারলে বছরের বারোটি মাসের মধ্যে রজব থেকে মহররম পর্যন্ত আটটি মাস একটানা ইবাদতে শামিল হয়ে যায়, যা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘যখনই অবসর পাও দাঁড়িয়ে যাও, তোমার রবের ইবাদতে মশগুল হও।’ (সুরা: ইনশিরাহ, আয়াত: ৭-৮)।


সময় জীবনের মূলধন
সময় হলো মানব জীবনের মূলধন। এই মহামূল্যবান সম্পদ হেলায় নষ্ট করা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘শপথ! সময়ের, নিশ্চয় সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; তবে তারা নয়, যারা ইমান আনে, সৎকর্ম করে, সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উৎসাহ প্রদান করে।’ (সুরা: আসর, আয়াত: ১-৩)। হাদিস শরিফে আছে: তোমরা পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে গুরুত্ব দাও; ব্যস্ততার আগে অবসরকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের আগে প্রাচুর্যকে, বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, মৃত্যুর আগে জীবনকে। (মুসলিম শরিফ ও তিরমিজি শরিফ)। অর্থাৎ অবসরকে কাজে লাগাও (নফল ইবাদতের মাধ্যমে) ব্যস্ততা আসার আগে, সুস্থতাকে কাজে লাগাও (আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্যমে) অসুস্থ হওয়ার আগে, প্রাচুর্যকে কাজে লাগাও (দান করার মাধ্যমে) দারিদ্র্য আসার আগে, যৌবনকে কাজে লাগাও (বেশি বেশি নেক আমলের মাধ্যমে) বার্ধক্য আসার আগে, জীবনকে কাজে লাগাও (পরোপকারের মাধ্যমে) মৃত্যু আসার আগে। (সুনানে তিরমিজি)।


হাদিস শরিফে আছে, ‘কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে কোনো আদম সন্তান পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও নড়তে পারবে না। সে প্রশ্ন পাঁচটি হলো: জীবন কী কাজে শেষ করেছে, যৌবন কী কাজে লাগিয়েছে; কোন পথে আয় করেছে, কোন পথে ব্যয় করেছে এবং নিজের জ্ঞানমতো আমল করেছে কি না।’ (তিরমিজি, ২/৬৭; আরবাঈন, নববি: ১৯, ২০ ও ২১)। অর্থাৎ, জীবনের লক্ষ্য–উদ্দেশ্য কী ছিল? যৌবনকাল বা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কী কাজে ব্যয় করা হয়েছে বা কীভাবে কোন কাজে লাগানো হয়েছে? ধনদৌলত, মানসম্মান কীভাবে অর্জন ও উপার্জন করা হয়েছে? অর্থ–সম্পদ, প্রভাব–প্রতিপত্তি কোন পথে ব্যয় করা হয়েছে? (কীভাবে ভোগ ও উপভোগ করা হয়েছে)। সর্বশেষ প্রশ্নটি থাকবে জ্ঞান ও বিবেকের অনুসরণ করেছে, নাকি নফস ও কুপ্রবৃত্তির আনুগত্য করেছে। হাদিস শরিফে আরও আছে, প্রজ্ঞা মুমিনের হারানো সম্পদ। (তিরমিজি, ৫/৫১; ইবনে মাজা, ২/১৩৯৫)। সময় বা আয়ু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেওয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। রোজ কিয়ামতে কঠিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর আদালতে বিচারের সময় প্রতিটি নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোরআন করিমে বলেন: ‘অতঃপর সেদিন তোমাদের প্রতিটি নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা: তাকাসুর, আয়াত: ৭)।


জিলকদ মাসের আমল
জিলকদ মাসের আমল হলো: প্রতি মাসের মতো এই জিলকদ মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখে নফল রোজা পালন করা। চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের {আদি পিতা প্রথম নবী হজরত বাবা আদম (আ.)} সুন্নত রোজা রাখা। প্রতি সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নতে নববি রোজা পালন করা। প্রতি শুক্রবার নফল রোজা রাখা। সলাতুত তাসবিহ এবং প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত বা দুহা, জাওয়াল ও আউওয়াবিন) পড়া। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা এবং বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। দান-খয়রাত বেশি বেশি করা। জিলহজ মাসের ৯টি সুন্নত রোজা ও মহররম মাসের ১০টি রোজার প্রস্তুতি হিসেবে এই মাসে কিছু হলেও নফল রোজা করা। হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং কোরবানির প্রস্তুতি নেওয়া।


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


টানা চারটি ইবাদতের মাস (রজব, শাবান, রমজান ও শাওয়াল) -এর পরে আসে হিজরি ক্যালেন্ডারের এগারোতম মাস জিলকদ। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) একটি এই মাস।

জিলকদ মাসের প্রকৃত আরবি নাম ‘জুলকাআদাহ’। ফার্সিতে ‘জিলকাআদাহ’; উর্দুতে ‘জিলকাআদ’ আর বাংলায় ‘জিলকদ’ প্রচলিত। জুলকাআদাহ বা জিলকদ অর্থ বসা, স্থিত হওয়া ও বিশ্রাম।

বিশ্রামের মাস

ঈদুল ফিতর বিগত এবং ঈদুল আজহা সমাগত-মাঝের এই জিলকদ মাসে নির্দিষ্ট কোনো ফরজ (দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ব্যতীত), ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও নফল ইবাদত না থাকায় এ মাস জিলকদ বা বিশ্রামের মাস বলে শরিয়তে পরিচিত।

এই সময় প্রাচীন আরবের লোকজন বাণিজ্য থেকে ফিরে আসত, যুদ্ধবিরতিতে চলে যেত। সে কারণেও এই মাস বিশ্রামের। ঋতুর পরিবর্তনে এই সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকত না। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত এবং অন্যায়-অপরাধ (মদ্যপান) থেকেও নিবৃত্ত থাকতে সচেষ্ট থাকত। এসব কারণেও এই মাস বিশ্রামের বলে পরিগণিত হয়।

জিলকদ মাসের আগে-পরের মাসগুলোতে বিভিন্ন ফরজ-ওয়াজিব ও গুরুত্বপূর্ণ নফল আমল রয়েছে, জিলকদ মাসে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্য কোনো বিশেষ আমলের কথা কুরআন-হাদিসে আসেনি। ফলে বান্দা এ মাসে কিছুটা বিশ্রামের অবকাশ পেয়ে থাকে পরবর্তী মাসগুলোর গুরুত্বপূর্ণ আমলের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের। তাই এ মাসকে জিলকদ বা বিশ্রামের মাস বলা হয়।

নফল ইবাদত

তবে জিলকদ মাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশেষ কোনো আমল না থাকলেও অন্যান্য আমল রয়েছে এবং এ আমল বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই করা মুমিনের কর্তব্য। অন্যান্য চান্দ্রমাসের মতো এ মাসেরও ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখের রোজা (আইয়ামে বিজ) রাখা যায় এবং তা অত্যন্ত ফজিলতের। এ ছাড়া সাপ্তাহিক সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা রাখা সুন্নত।

পাশাপাশি অন্যান্য মাসের সাধারণ নফল নামাজগুলো, তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি পাঠ করা যায়। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা এবং বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। দান-খয়রাত বেশি বেশি করা।

কোরবানির প্রস্তুতি

জিলহজ মাসে কোরবানির প্রস্তুতি উপলক্ষে জিলকদ মাসের শেষে চুল-মোচ ও হাত পায়ের নখ কেটে নেওয়া যেতে পারে। কারণ কোরবানির আগ পর্যন্ত ১০ দিন চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত বিরত থাকা প্রিয় নবির সুন্নত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানি দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, তারা যেন জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে কুরবানি সম্পন্ন করা পর্যন্ত নিজ নিজ চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, মিশকাত)

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment