ডব্লিউএইচওর: ডেক্সামেথাসন গুরুতর রোগীদের জন্য

করোনায় আক্রান্তদের মৃত্যুর হার কমাতে সহায়ক ডেক্সমেথাসনের নাম আসতেই ওষুধটির যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওষুধটি সহজলভ্য ও দামে সস্তা হওয়ায় করোনা আক্রান্ত হলেই এটি সেবন করতে পারেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন; কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি সেবনে ভয়াবহ ঝুঁকি রয়েছে।

এটি শুধু গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে বলে এক নির্দেশনায় জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ ছাড়া সংস্থাটি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে গবেষণা স্থগিত করেছে এবং করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের ব্যাপারেও সরে এসেছে। খবর বিবিসি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান অ্যাধানম গেব্রিয়েসাস গত বুধবার বলেন, অবশেষে করোনা চিকিৎসার গবেষণায় আশার আলো দেখা যাচ্ছে, যখন কিনা বিশ্বে ভাইরাসটি সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। করোনা ভাইরাস থেকে জীবনরক্ষাকারী ‘প্রথম ওষুধ’ ডেক্সামেথাসনে আশার আলো দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। একই সঙ্গে তিনি ওষুধটির এ সাফল্যের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের ধন্যবাদ দেন।

ডেক্সামেথাসনকে গত মঙ্গলবার করোনা রোগীদের ‘জীবনরক্ষাকারী ওষুধ’ বলে ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। ফলে ওষুধটি দামে সস্তা হলেও পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশগুলো।

যদিও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ রয়েছে ডেক্সামেথাসন। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কিছু চিকিৎসক।

এ বিষয়ে আরও তথ্য-উপাত্ত চেয়েছেন তারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জেন্সি প্রোগ্রামের প্রধান মাইক রায়ান বলেছেন, যেসব দেশে এই ওষুধটি ব্যবহারের উপকারিতা পাওয়া গেছে, তাদের উচিত এটা শুধু গুরুতর কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা। তিনি এক ব্রিফিংয়ে আরও বলেন, করোনা উপশমের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রয়েছ ডেক্সামেটাসনের।

তাই যারা কোভিড আক্রান্ত হয়ে গুরুতরভাবে ভুগছেন এবং অবস্থা সংকটাপন্ন, শুধু তাদের জন্যই এই ওষুধ সংরক্ষণ করে রাখা উচিত।

জানা গেছে প্রাণঘাতী করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কম ডোজের স্টেরয়েড এই চিকিৎসা একটি বড় ধরনের অগ্রগতি। ভেন্টিলেটরে থাকা করোনা রোগীদের মৃত্যুর হার এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনে ওষুধটি। এ ছাড়া যারা অক্সিজেন সাপোর্টে আছেন; তাদের মৃত্যুর হার এক-পঞ্চমাংশ কমিয়ে আনে।

এদিকে করোনা চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে গবেষণা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটি জানিয়েছে, এতদিন গবেষণায় যা দেখা গেছে, তা হলো হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুহার কমাতে কার্যকর বলে প্রমাণ হয়নি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। তাই এর গবেষণা স্থগিত রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ম্যালেরিয়াসহ নানা রোগে দীর্ঘদিন থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার হয়ে আসছে। ওষুধটি করোনা চিকিৎসায় ভালো ফল দেবেÑ এমন ধারণা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এ থেকে পিছিয়ে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর আগে কয়েকবার ওষুধটি নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের পর গত বুধবার গবেষণা স্থগিত করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

Leave a Comment