তাসবিহ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, তাসবিহ সালাতের ফজিলত

Google Adsense Ads

তাসবিহ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, তাসবিহ সালাতের ফজিলত

আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা

আজ ২৯ তারাবি। লাইলাতুল কদর পাওয়ার শেষ সুযোগও আজ। শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে সর্বশেষ রাতও আজ। ২৯ তারাবির রাতে সালাতুত তাসবিহ পড়াও হতে পারে গুনাহ থেকে মুক্তির উপায়। রোজাদার মুমিন মুসলমানের জন্য সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফজিলত ও নিয়মসহ লাইলাতুল কদরে পড়ার বিশেষ কিছু দোয়া তুলে ধরা হলো-

সালাতুত তাসবিহ কী?

সবচেয়ে বেশি তাসবিহ পড়ার মাধ্যমে যে নামাজ পড়া হয়, তাই সালাতুত তাসবিহ। নামাজের বিভিন্ন রোকনে ধাপে ধাপে প্রত্যেক রাকাতে ৭৫ বার তাসবিহ আদায় করতে হয়। এভাবে রাকাত নামাজে ৩০০ বার তাসবিহ পড়ার মাধ্যমে এ নামাজ আদায় করতে হয়। এটি সালাতুত তাসবিহ নামে পরিচিত।

সালাতুতু তাসবির ফজিলত

মানুষের বিগত জীবনের গুনাহ মাফ এবং অনেক সওয়াব লাভ হয়। রমজানে এ নামাজ পড়ার ফজিলত অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। রমজানের জুমআর দিনে এ নামাজে পাওয়া যায় অতিরিক্ত সওয়াব। এ নামাজে سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ – সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ তাসবিহটি ৩০০ বার পড়তে হয়।

তাসবিহ এর নফল নামাজের ফজিলত, তাসবিহ নামাজের উপকারিতা কি কি?

সালাতুত তাসবিহ পড়ার নিয়ম

প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া। প্রতি রাকাতেই একটি সুরা মেলানো। প্রত্যেক রাকাতে سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ অর্থাৎ সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার-এ তাসবিহটি ৭৫ বার পড়তে হবে। প্রতি রাকাতে নিচে উল্লেখিত নিয়ে ৪ রাকাত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে সাতালাতুত তাসবিহ আদায় করতে হয়। নিয়ম হলো-

১. নামাজের নিয়ত বেঁধে তাকবিরে তাহরিমার পর সুরা ফাতেহা পড়ার আগে এ তাসবিহ- سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ – ১৫ বার পড়া।

২. সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা মিলানোর পর রুকুতে যাওয়ার আগে এ তাসবিহ سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ – ১০ বার পড়া।

৩. রুকুতে গিয়ে- سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيْم পড়ার পর এ তাসবিহ- سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ – ১০ বার পড়া।

৪. রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে رَبَّنَا وَ لَكَ الْحَمْد পড়ার পর এ সাতবিহ- سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ – ১০ বার পড়া।

৫. সেজদায় গিয়ে- سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلَى পড়ার পর সেজদাতেই এ তাসবিহ- سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ – ১০ বার পড়া।

৬. দুই সেজদার মাঝে বসে اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ (পারলে) পড়ার পর বসা অবস্থায় এ তাসবিহ- سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ – ১০ বার পড়া।

৭. দ্বিতীয় সেজদায় গিয়ে- سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلَى পড়ার পর সেজদাতেই এ তাসবিহ- سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ – ১০ বার পড়া।

একই নিয়মে দ্বিতীয় রাকাতেও নির্ধারিত তাসবিহ ৭৫ বার পড়া। দুই রাকাত পড়ার পর তাশাহহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত একই নিয়মে বাকি নামাজ সম্পন্ন করা।

তাসবিহ নামাজের ফজিলত ও পুরস্কার,পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর আলোকে তাসবিহ নামাজের গুরুত্ব

মনে রাখতে হবে

তাসবিহ পড়ার সময় যদি কোনো স্থানে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম তাসবিহ পড়া হয় তবে, পরবর্তী যে রোকনে তা স্মরণ হবে সেখানেই তা পড়ে নিলেই হবে।

আর কোনো কারণে যদি এ নামাজে সাহু সেজদার প্রয়োজন হয় তবে ওই সাহু সেজদায় এবং সাহু সেজদার মাঝে বসার সময়ও এ তাসহিব পড়তে হবে না। তাসবিহ পড়ার ক্ষেত্রে স্মরণ রাখার জন্য আঙুলের কর গণনা করা যাবে না তবে আঙুল চেপে তাসবিহ এর সংখ্যা স্মরণ রাখা যাবে।

সালাতুত তাসবিহ-এর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার বাবা) হজরত আব্বাসকে বললেন, ‘হে আব্বাস! হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? আমি কি আপনার সঙ্গে ১০টি সৎকাজ করব না? (অর্থাৎ ১০টি উত্তম তাসবিহ শিক্ষা দেব না) যখন আপনি তা (আমল) করবেন-

সালাতুত তাসবিহ নামাজের গুরুত্ব ও পড়ার নিয়মাবলী পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর আলোকে তাসবিহ সালাত গুরুত্ব

তখন আল্লাহ আপনার আগেরপরেরপুরাতননতুনসবধরনের গুনাহ মাফ করে দেবেন।

ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত গুনাহ মাফ করে দেবেন।

সগিরা ও কবিরা (ছোট ও বড়) গুনাহ মাফ করে দেবেন।

গোপন ও প্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দেবেন।

(হে চাচা!) আপনি ৪ রাকাত নামাজ পড়বেন এবং প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহা পাঠ করবেন এবং যে কোনো একটি সুরা মেলাবেন। (অর্থাৎ প্রত্যেক রাকাতে এ তাসবিহটি ৭৫ বার করে আদায় করতে হবে।)

Google Adsense Ads

(অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে চাচা!) এভাবে যদি প্রতিদিন একবার এ নামাজ পড়তে সক্ষম হন; তবে তা পড়বেন। আর যদি সক্ষম না হন, তবে প্রত্যেক জুমআর দিনে একবার পড়বনে। তাও যদি না পারেন, তবে প্রত্যেক মাসে একবার পড়বেন। তাও যদি না পারেন তবে প্রত্যেক বছর একবার পড়বেন, আর যদি তাও না পারেন তবে আপনার জীবনে অন্তত একবার পড়বেন। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

সালাতুত তাসবিহ গোনাহ মাফের সর্বোত্তম ইবাদাত, সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও এর সহীহ কোন দলিল আছে কিনা?

সালাতুত তাসবিহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত।

যে নামাজে বারবার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ তাসবিহটি পড়া হয়, তাকে সালাতুত তাসবিহ বলেন।
জীবনে অনন্ত একবার ফজিলত পূর্ণ এ নামাজ পড়া আবশ্যক। এ নামাজের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচাকে সুসংবাদ দিয়েছিলেন।
হাদিসটি আমলের নিয়তে তুলে ধরা হলো-

সালাতুত্ তাসবীহ হলো, এক সালামে ৪ রাক’য়াত সালাত; যার মধ্যে মোট ৩০০ বার নিম্নের তাসবীহ পাঠ করতে হয়।
বাংলা উচ্চারণ: সুব্হানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

সালাতের মাঝে তাসবীহ পাঠের নিয়ম: (চার রাক‘য়াতের প্রতি রাক‘য়াতে)

১. সূরা ফাতিহা পড়ার পূর্বে (প্রথম রাক’য়াতে ছানা পড়ার পরে) ১৫ বার
২. সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা পড়ার পরে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে দাড়ানো অবস্থায় ১০ বার
৩. রুকুর তাসবীহ শেষ করে রুকু অবস্থায় ১০ বার
৪. রুকু থেকে দাঁড়িয়ে রব্বানা লাকাল্ হামদ বলার পরে হাত ছাড়া অবস্থায় ১০ বার
৫. প্রথম সিজদার তাসবীহ শেষ করে সিজদারত অবস্থায় ১০ বার
৬. প্রথম সিজদা থেকে উঠে বসে অর্থাৎ দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায় ১০ বার
৭. দ্বিতীয় সিজদার তাসবীহ শেষ করে সিজদারত অবস্থায় ১০ বার

উক্ত নিয়মানুযায়ী মোট ৪ রাক‘য়াত সালাত আদায় করতে হবে। প্রতি রাক‘য়াতে উক্ত তাসবীহ ৭৫ বার করে মোট (৭৫x৪) = ৩০০ বার পাঠ করতে হবে।
প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের সাথে দুরূদ শরীফ পাঠ করা উত্তম । এরপর আল্লাহু আকবার বলে দাড়িয়ে উক্ত নিয়মে বাকি ২ রাক‘য়াত সালাত শেষ করতে হবে।

হাদীস শরীফের আলোকে সালাতুত্ তাসবীহ আদায়ের গুরুত্ব:

আপনার জন্য: আল কোরআনের অনুবাদ ও প্রতিটি সূরার ফজিলত ও তরজমা

পবিত্র হাদীস শরীফে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (দ.) তার আপন চাচা হযরত আব্বাস (রা.) কে এভাবেই প্রত্যেক দিনে একবার অথবা প্রত্যেক সপ্তাহে একবার অথবা প্রত্যেক মাসে একবার অথবা প্রত্যেক বছরে একবার অথবা জীবনে একবার হলেও অবশ্যই এই সালাত আদায় করার জন্য জোড়ালোভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।

সালাতুত তাসবীহ এর ফযীলত:

প্রিয় নবী (দ.) বলেছেন, উক্ত নিয়মে ৪ রাকা’আত নামাজ আদায় করলে তার জীবনের আগের-পরের, পুরাতন-নতুন, ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত, ছগীরা-কবীরা, গোপন-প্রকাশ্য সকল গুনাহ আল্লাহ তা‘য়ালা মাফ করে দিবেন। (সুনানুত তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী শরীফ)

তাও যদি না পারেন তবে প্রতিমাসে একবার পড়বেন। তাও যদি না পারেন তবে প্রত্যেক বছর একবার পড়বেন। আর তাও যদি না পারেন তবে জীবনে অন্তত একবার পড়বেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, বাইকাকি দাওয়াতুল কবিরের বর্ণনা করেছেন, তিরমিজি হজরত আবু রাফে হতে এ হাদিস বর্ণনা করছেন এবং মিশকাত)


সুতরাং অগণিত অসংখ্য নিয়ামাত ও কল্যাণ প্রদানের মাস পবিত্র রমজানে সালাতুত তাসবিহ পড়ে গোনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ ঈমানদারের একান্ত কর্তব্য। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ তাসবিহ নামাজের পরে আমল, তাসবিহ নামাজের পর নবীজির আমল, তাসবিহ নামাজের পর আমল pdf

Google Adsense Ads

Leave a Comment