দারিদ্র্য মানবজীবনের এমন একটি অবস্থা যা মানুষকে জীবনের ন্যূনতম মান রক্ষায়, এমনকি জীবনধারণের নিমিত্তে ও মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। দারিদ্র্য একটি আপেক্ষিক প্রত্যয়।
দারিদ্র্য পরিমাপের কৌশল এবং ক্ষুদ্র অর্থায়ন সেবার প্রভাব আলোচনা কর
যেকোনো দেশের মৌলিক চাহিদার উপর দারিদ্র্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে দারিদ্র্য একটি বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক সমস্যা। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অনুন্নতির প্রদান কারণ হলো দারিদ্র্য । দারিদ্র্য পরিমাপের কতিপয় কৌশল রয়েছে।
দারিদ্র্য পরিমাপের কৌশল : নিম্নে দারিদ্র্য পরিমাপের কৌশলগুলো আলোচনা করা হলো :
১. মাথা গণনা সূচক : একটি দেশের দারিদ্র্য পরিমাপের প্রথম কৌশল হলো মাথা গণনা সূচক। দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যাকে দেশের মোট জনসংখ্যার শতকারা হার প্রকাশ করলে মাথা গণনা সূচক পাওয়া যায় । একে সংক্ষেপে H দ্বারা প্রকল্প করা হয়। মাথা গণনাসূচক দ্বারা দেশের দারিদ্র্যের উপস্থিতি পরিমাপ করা হয়।
২. দারিদ্র্য ব্যবধান সূচক : কোনো দেশের দারিদ্র্য পরিমাপের দ্বিতীয় সূচক হলো দারিদ্র্য ব্যবধান সূচক। দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য রেখা থেকে তাদের আয়ের ব্যবধানের গড় নিয়ে এ গড়কে দারিদ্র্য রেখা অনুপাতে প্রকাশ করে দারিদ্র্য ব্যবধান সূচক নির্ণয় করা হয়। একে সংক্ষেপে PG দ্বারা প্রকাশ করা হয়। দারিদ্র্য সূচক দ্বারা কোনো দেশের দারিদ্র্যের গভীরতা পরিমাপ করা যায়।
৩. দারিদ্র্য ব্যবধানের বর্গসূচক : কোনো দেশের দারিদ্র্য পরিমাপের তৃতীয় সূচক হলো ব্যবধানের বর্গ সূচক। কোনো দেশের দারিদ্র্য রেখার নিচের অবস্থানকারী জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য রেখা থেকে তাদের আয়ের ব্যবধানের বর্গের গড়কে দারিদ্র্য রেখার অনুপাত প্রকাশ করে দারিদ্র্য ব্যবধানের বর্গ সূচক নির্ণয় করা হয়। একে সংক্ষেপে SPG দ্বারা প্রকাশ করা হয় । এক্ষেত্রে সমগ্র জনসংখ্যাব্যাপী আয়ের গড় হিসাব করা হয় ।
৪. আপেক্ষিক দারিদ্র্যের পরিমাপ : আপেক্ষিক দারিদ্র্য বলতে সম্পদের বৈষম্য কারণে এক ব্যক্তির তুলনায় অন্য ব্যক্তির আয় ও ভোগের পরিমাণ কম হওয়া বুঝায়। অর্থাৎ আপেক্ষিক দারিদ্র্য নির্ভর করে সমাজে আয় বণ্টনের বঙ্কিমতার উপর। আয় বণ্টন অসম হলে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী আপেক্ষিক দারিদ্র্যের শিকার হয়। সুতরাং সমাজস্থ মানুষের আয় বণ্টনের অসমতা পরিমাপ করে আপেক্ষিক দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয় ।
৫. গিনি সূচক : সমাজস্থ মানুষের আয়ের প্রকৃত বিন্যাস থেকে কতটুকু তা পরিমাপের অন্যতম সূচক হলো গিনি সূচক। অর্থাৎ সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির আয় যদি সমান হয় তাহলে আয়ের যে বিন্যাস পাওয়া যায় এবং বাস্তবে আয়ের যে বিন্যাস বিরাজমান এই দুইয়ের পার্থক্য গিনি সূচকে ধরা পড়ে। যদি কোনো সমাজের সকল ব্যক্তির আয় সমান হয় তাহলে গিনি সূচকের মান শূন্য হবে। পক্ষান্তরে, সমাজের সকল আয় যদি মান একজন ব্যক্তির আয় সমান হয় তাহলে সূচকের মান হবে ১০০। সুতরাং আয় বণ্টনের অসমা গিনি সহজে ধরা পড়ে।
ক্ষুদ্র অর্থায়ন সেবার প্রভাব : নিম্নে ক্ষুদ্র অর্থায়নের সেবার প্রভাব আলোচনা করা হলো :
১. উন্নয়নের উপর ক্ষুদ্র অর্থায়ন সেবার প্রভাব : উন্নয়নের উপর ক্ষুদ্র অর্থায়নের আনুপাতিক প্রভাব বিরাজমান। UNCDF ২০০৮ সালে এক প্রতিবেদনে অর্থনীতিতে উন্নয়নশীল ভূমিকা রাখে ক্ষুদ্র অর্থায়ন দ্বারা এমন ৩ টি চাবিকাঠির প্রকাশ কর ।
(ক) দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে মৌলিক চাহিদা মিটাতে এবং ঝুঁকি নিবারণের কার্যকর পন্থা ক্ষুদ্র অর্থায়ন ।
(খ) দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কল্যাণে ক্ষুদ্র অর্থায়ন ভূমিকা রাখে ।
(গ) নারী ও পুরুষের সাম্যতা এবং নারীদের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে
২. দরিদ্রতার উপর ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাব : ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের তেমনভাবে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তির নিকট পৌঁছতে পারে না। আয়ের ও সম্পদের বৃদ্ধি ও ঋণগ্রহীতার সংখ্যা হ্রাস দ্বারা ক্ষুদ্র অর্থায়ন কার্যক্রমের সাফল্য নির্ভর করে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। ক্ষুদ্র অর্থায়নের উপর ব্যয়ের মসৃণ প্রভাব, সম্পদের পুনর্বণ্টন এবং গৃহ আবাসস্থলের প্রভাব ।
৩. জীবিকার নিরাপত্তার উপর ক্ষুদ্র অর্থায়ন সেবার প্রভাব : NGO সহ অন্যান্য ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার লক্ষ্য থাকে গ্রাহকের জীবিকার নিরাপত্তার মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসকরণ কার্যক্রম চালু করা। উক্ত প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের সংখ্যা মোট আমানতের পরিমাণ, মোট ঋণের পরিমাণসহ সংখ্যাত্মক তথ্য দ্বারা গ্রাহকের জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
৪. ক্ষুদ্র অর্থায়ন সেবার সামাজিক প্রভাব গতানুগতিকভাবে ক্ষুদ্র অর্থানের প্রভাব গ্রাহকের আয় পরিবর্তনের আশঙ্কায় আরো বিস্তৃত অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে বিবেচনা করা প্রয়োজন । শ্রম বাজার মূলধন বাজার দারিদ্র্য জনগোষ্ঠির পণ্যদ্রব্য যারা সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ব্যাপক প্রভাব সমাজ ব্যবস্থায় ও অর্থনীতিতে পড়ে থাকে।
যদি ক্ষুদ্র অর্থায়ন সামাজিক উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে পরিপূর্ণ করে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিকট আর্থিক সেবাপ্রদানপূর্বক তবে দারিদ্র্য হ্রাসকরণে এর প্রভাব বিশ্লেষণে আরো কয়েকটি দৃশ্যপট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
(ক) পরিবারভিত্তিক ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাব : ক্ষুদ্র অর্থায়নের পরিবারভিত্তিক অনার্থিক প্রভাব হলো স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এই দুটি ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রভাব বিস্তার করে থাকে ।
(খ) লিঙ্গ বিভাজনে ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাব অর্থায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। কারণ নারী- পুরুষ বৈষম্যকরণ নারীদের আদর্শ বিশ্বাস, রেওয়াজ এবং মূল্যবোধ তথা সমাজ ব্যবস্থায় বল প্রয়োগের দ্বারা বাধ্য করা হয়। ক্ষুদ্র অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানসমূহ নারীদের সরাসরি ক্ষমতায়ন প্রদান করতে পারে না। কিন্তু নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং বিদ্যমান বিভিন্ন নেতিবাচক মতাদর্শ ও মানসিকতার বিপক্ষে অবস্থান নিতে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করে থাকে।
(গ) সাম্প্রদায়িকতাভিত্তিক ক্ষুদ্র অর্থানের প্রভাব : সাম্প্রদায়িক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ও ক্ষুদ্র অর্থায়ন ব্যাপক হারে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতির সবক্ষেত্রেই ব্যাপকভাবে জড়িত
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।