বঙ্গবাণী ও কপোতাক্ষ নদ কবিতায় দেশপ্রেম সম্পর্কিত আলোচনা। ‘বঙ্গবাণী’ ও ‘কপোতাক্ষ নদ’ উভয় কবিতাতেই মাতৃভাষা প্রীতির মাধ্যমে দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে- মন্তব্যটির স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হলো।
‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কবি আবদুল হাকিমের ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। মধ্যযুগীয় পরিবেশে বঙ্গভাষী এবং বঙ্গভাষার প্রতি এমন বলিষ্ঠ বাণীবদ্ধ কবিতার নিদর্শন দুর্লভ।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি কবির চতুর্দশপদী কবিতাবলি থেকে গৃহীত হয়েছে। এই কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে।
কবি ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় তাঁর গভীর উপলব্ধি ও বিশ্বাসের কথা নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করেছেন। আরবি ফার্সি ভাষার প্রতি কবির মোটেই বিদ্বেষ নেই।
এইসব ভাষায় আল্লাহ ও মহানবীর স্মৃতি বর্ণিত রয়েছে। তাই এসব ভাষার প্রতি সবাই পরম শ্রদ্ধাশীল। যে ভাষা জনসাধারণের বোধগম্য নয়,
যে ভাষায় অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময় করা যায় না সেসব ভাষাভাষী লোকের পক্ষে মাতৃভাষায় কথা বলা বা লেখাই একমাত্র পন্থা।
একারণেই কবি মাতৃভাষায় গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেছেন। ‘বঙ্গবাণী’ শব্দটির অর্থ বাংলা ভাষা। এমন এক সময় ছিল যখন
মুসলিম সমাজ বাংলাভাষাকে ধর্ম ও জ্ঞান চর্চার বাহন হিসেবে গ্রহণ করতে দ্বিধান্বিত ছিলেন।
আব্দুল হাকিম মধ্যযুগের কবি। কিন্তু আশ্চর্য স্বাভাবিক বুদ্ধিতে তিনি এর ভ্রান্তি বুঝতে পেরেছিলেন। এ ভ্রান্তির কথাই তিনি
বলেছেন ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায়। এ কবিতায় কবি মাতৃভাষা ও স্বদেশের গুণগান গেয়েছেন।
কবির মতে, মানুষ মাত্রই নিজ ভাষায় স্রষ্টাকে ডাকে আর স্রষ্টাও মানুষের বক্তব্য বুঝতে পারেন। কবির চিত্তে তীব্র ক্ষোভ এজন্য যে,
যারা বাংলাদেশের জন্মগ্রহণ করেছে, অথচ বাংলা ভাষার প্রতি
তাদের মমতা নেই, তাদের বংশ ও জন্ম পরিচয় সম্পর্কে কবির মনে সন্দেহ জাগে।
কবি সখেদে বলেছেন, এসব লোক, যাদের মনে স্বদেশের
ও স্বভাষার প্রতি বিন্দুমাত্র অনুরাগ নেই তারা কেন এদেশ পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায় না!
বংশানুক্রমে বাংলাদেশেই আমাদের বসতি, বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষায় বর্ণিত বক্তব্য আমাদের মর্ম স্পর্শ
করে। এই ভাষার চেয়ে হিতকর আর কি হতে পারে!
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মধুসূদন এই নদের তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন।
যখন তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন,তখন জন্মভূমির শৈশব-কৈশোরের বেদনা-বিধুর স্মৃতি তাঁর মনে জাগিয়েছে কাতরতা। মাতা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির
প্রতি মানুষের টান থাকে শৈশব থেকেই। একটি সংস্কৃতি শ্লোকে বলা হয়েছে
‘জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপি গরীয়সী’ অর্থাৎ জননী জন্মভূমি স্বর্গের চেয়ে গরীয়ান। তাই মানুষ তার জন্মভূমিকে কোনদিন ভুলে না।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা থেকে জানা গেছে কবি কত গভীরভাবে কপোতাক্ষ নদী কে ভালোবেসেছেন ও স্মরণ করেছেন।
কপোতাক্ষকে ঘিরেই কবির স্বদেশপ্রেম উচ্চকিত হয়েছে।
তাই কপোতাক্ষ সনেটটির মধ্য দিয়ে কবির প্রগাঢ় স্বদেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। দূরে বসেও তিনি যেন কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি শুনতে পান।
কত দেশে কত নদ-নদী তিনি দেখেছেন, কিন্তু জন্মভূমির এই নদ যেন মায়ের স্নেহডোরে তাঁকে বেঁধেছে, কিছুতেই তিনি তাকে ভুলতে পারেন না। কবির মনে সন্দেহ জাগে, আর কি তিনি এই নদের দেখা পাবেন!
কপোতাক্ষ নদের কাছে তাঁর সবিনয় মিনতি-বন্ধুভাবে তাকে তিনি স্নেহাদরে যেমন স্মরণ করেন, কপোতাক্ষও যেন একই প্রেমভাবে তাঁকে সস্নেহে স্মরণ করে। কপোতাক্ষ নদ যেন তার স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীদের নিকট ব্যক্ত করে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গবাণী ও কপোতাক্ষ নদ উভয় কবিতারই মূলভাব দেশপ্রেম ।
S.S.C
- (উপভোগ হাতে খড়ি, পিত্রালয়, সর্বজনীন, মাননীয়, নিদারুণ, নীলিমা, আশীর্বাদ, চন্দ্রমুখ, কবিত্ব) বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি অংশের বিভিন্ন পরিচ্ছেদ পেশ করবো
- কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মাস্ক পড়ার গুরুত্ব বিষয়ক সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী প্রতিবেদন
- নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ে রুকনউদ্দীন কায়কাউসের
- কোন প্রতিষ্ঠানে কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য সমন্বয় সাধন প্রয়োজন তা ব্যাখ্যা করো
- এসএসসি পরীক্ষা ২০২১ এর জন্য সংশোধিত পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি।
- নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে ‘ঘুষ’
- নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় ‘টাকশাল’
- নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের নবম অধ্যায়ে ‘মানবপাচার
- বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ৩য় অধ্যায়, সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল, বহুনির্বাচনী প্রশ্ন এসএসসি প্রস্তুতি
- নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে ‘পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার’
3 thoughts on “দেশপ্রেম সম্পর্কিত আলোচনা বঙ্গবাণী ও কপোতাক্ষ নদ কবিতায় আলোতে”