প্রশ্ন সমাধান: নগরায়ণের ইতিবাচক প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর, নগরায়ণের সদর্থক প্রভাবগুলো বর্ণনা কর,নগরায়ণের নেতিবাচক প্রভাব বর্ণনা কর, নগরায়ণের নেতিবাচক দিকসমূহ উল্লেখ কর
নগরায়ণের নেতিবাচক দিকসমূহ উল্লেখ কর ।
উত্তর : গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় শহরে সমাজ কাঠামোতে রূপান্তর হওয়ার প্রক্রিয়ার নাম হলো শহরায়ন। যেক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক পেশার পরিবর্তে শিল্প ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের বা বাণিজ্যভিত্তিক পেশা গড়ে ওঠে এবং মানুষের জীবনাচরণ, গৃহায়ণ ব্যবস্থা, যোগাযোগ ও উৎপাদন ব্যবস্থাতে আধুনিকতার ছোঁয়া লক্ষ করা যায় ।
→ নগরায়ণের নেতিবাচক প্রভাব :
১. নগর জনসংখ্যার দ্রুতবৃদ্ধি : নগরায়ণের প্রভাব বর্তমানে সমগ্র বিশ্বব্যাপী নগর জনসংখ্যার দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩.৭ শতাংশ। আমাদের দেশে ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৪.৭০ কোটি যা মোট জনসংখ্যার ২৭%।
২. নগর দারিদ্র্য বৃদ্ধি : অপরিকল্পিত ও দ্রুত নগরায়ণের ফলে বিশ্বে অনেক দেশে বিশেষ করে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে নগর দারিদ্র্য প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো নগরায়ণের অন্যতম নিয়ামক গ্রাম-শহর অভিগমন প্রক্রিয়ার অভিগমনকারীদের অধিংকাশই গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ।
তাই ধারণা করা হয়, নগর দারিদ্র্যের ৯০ শতাংশই গ্রাম থেকে আগত। বাংলাদেশে নগরায়ণের ফলে নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নগর জনসংখ্যাও দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
৩. আবাসন সমস্যা ও বক্তি সৃষ্টি : নগরায়ণের আরেকটি অন্যতম নৈতিবাচক দিক হলো আবাসন সমস্যা সৃষ্টি ।
বিশেষত নগর দারিদ্র্য উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সরকারের ভ্রান্ত আবাসন নীতিমালার কারণে শহরের এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিম্নবিত্ত শ্রেণি বস্তিতে বসবাস করতে এবং আমানবিক জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
৪. নগর পরিবেশের বিপর্যয় : দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের একটি অনিবার্য ফলশ্রুতি হলো নগর পরিবেশের বিপর্যয়। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে এই দৃশ্য আরও প্রকট।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে, নগরের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অনুভূমিক সম্প্রসারণ, প্রশাসন ব্যবস্থার অদক্ষতা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা, সেবাসমূহের অপর্যাপ্ততা প্রভৃতি নগর পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে।
যার ফলে প্লাবন, জল নিষ্কাশন, পয়ঃনিষ্কাশন, পানি সরবরাহ, আবর্জনা অপসারণ সমস্যা শহরগুলোতে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫. ভাসমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি : গ্রামীণ দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের শিকার হয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার জনগণ শহরমুখী হচ্ছে। আর এসব দরিদ্র্য, অদক্ষ, সহায় সম্বলহীন অভিবাসনকারীরা শহরে ভাসমান জনগোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে।
আর এসব জনগোষ্ঠী ন্যূনতম জীবনমান অর্জনে ব্যর্থ হয়ে শহরে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অরাজকতা সৃষ্টি করছে। এছাড়া তাদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত হয় ।
৬. বেকারত্ব : নগরায়ণের প্রভাবে শহরে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বেকারত্ব বা বেকার দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যাপক হারে শহরে অভিবাসনের ফলে শহরে নতুনভাবে বেকারত্ব দেখা দিচ্ছে।
BBS কর্তৃক Bangladesh Labour force Servey ২০১০-২০১২ অনুযায়ী, শহরে মোট বেকার লোকের সংখ্যা ১০.৫ লক্ষ অর্থাৎ বেকারত্বের হার ১০.৫ শতাংশ। এটা মূলতঃ নগরায়ণেরই ফলশ্রুতি বলা যায় ।
৭. নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি : নগরায়ণের ঊর্ধ্বগতি অনেক ক্ষেত্রে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিপরীতে নগর জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে ঘাটতির জন্ম দেয়।
ফলে নগরীর জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশ পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা, স্যানিটেশন সুবিধা, আবাসন, শিক্ষা, চাকরি প্রভৃতি নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত হয়।”
৮. স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগত সমস্যা : নগরায়ণের ফলে নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নগরের এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগণ মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বা বস্তিবাসী যারা স্বাস্থ্য ও পয়ঃসুবিধা বিবর্জিত ঘন ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করে তাদের মধ্যে শতকরা ৩০- ৪০ ভাগ যেকোনো সময় কোনো না কোনো রোগে ভোগে।
এসব রোগের মধ্যে উদরাময়, শ্বাসকষ্ট, খোসপাচড়া, কৃমিরোগ, জ্বর, টাইফয়েড, হুপিং কাশি এবং বিভিন্ন রকম চোখের রোগ প্রধান ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তো বটেই উন্নত দেশগুলোরও নতুন নগরে নগরীয়তা সৃষ্টি হতে সময় লাগে।
নগরীয়তা নগর বা পৌর প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়া নয় । এ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রূপ নগরের দেহ জ্যোতি, দেহ প্রভা, দেহ সৌন্দর্য এককথায় বলতে গেলে নগর জীবনের সুকুমারত্ব।
নগরায়ণের সদর্থক প্রভাবগুলো বর্ণনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : নগরায়ণের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। মানুষের জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের অনেক উপকরণ দিয়ে থাকে শহরায়ন। অবশ্য সবক্ষেত্রে যে শহরায়ন মানব জীবনকে ধন্য করেছে তা নয় ।
→ নগরায়ণের ইতিবাচক প্রভাব : নিম্নে নগরায়ণের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ বর্ণনা বা আলোচনা করা হলো :
১. গণতন্ত্রের বিকাশ : নগর সমাজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের বিকাশ ঘটে। ব্যক্তি নানামুখী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এখানে ব্যক্তি স্বাধীন মনোভাব প্রকাশের সুযোগ লাভ করে।
২. স্বাস্থ্যের উন্নয়ন : নগর সমাজে চিকিৎসার সবধরনের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। কারণ নগরকে কেন্দ্র করেই মূলত হাসপাতাল, ক্লিনিক, মাতৃসদন কেন্দ্র, নার্সিং হোম, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ডিসপেনসারি গড়ে উঠে। মানুষ চিকিৎসা সামগ্রী, ডাক্তার ও নার্সিং সেবা মূলত নগর থেকেই পায়। তাছাড়া রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এগুলোও মূলত শহরেই লক্ষ করা যায়। ফলে নগর মানুষকে স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে।
৩. উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা : পৃথিবীর সকল দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নগরেই সৃষ্টি করা হয়। কারণ বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ল. কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় । এগুলো মূলত নগর বা শহরকেন্দ্রিকভাবে গড়ে ওঠে এবং গড়ে ওঠার সমান সম্ভাবনা থাকে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানের ।
৪. যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন : শহরে যাতায়াত, ব্যবসায়- বাণিজ্য ও শিল্পদ্রব্য স্থানান্তরের প্রয়োজনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করে। যাতায়াতের জন্য বাস, কোচ, মোটরগাড়ি, টেম্পু ও অন্যান্য উন্নত যানবাহনগুলো মূলত শহরকেন্দ্রিক চলাচল করে। নগরকে কেন্দ্র করেই রেলস্টেশন গড়ে উঠে । নদী বন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরগুলো ও *নগর বা শহরকেন্দ্রিক গড়ে উঠে। ফলে নগরের মানুষ উন্নত যাতায়াত সুবিধা ভোগ করে ।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৫. শিল্পায়ন : শহরকে কেন্দ্র করেই শিল্প কারখানা গড়ে উঠে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া প্রভৃতি শহরের আশেপাশে প্রচুর শিল্প কারখানা স্থাপিত হয়েছে। অর্থাৎ এসব শহরকে কেন্দ্র করে শিল্পায়নের বিকাশ ঘটছে। এর ফলে মানুষ কারখানায় উৎপাদিত প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমাগ্রী দিয়ে তার চাহিদা মিটাচ্ছে।
৬. ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার : শহরকে কেন্দ্র করেই মূলত গড়ে উঠে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আর এ ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার সহজেই সমাজকে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করে। ইউরোপ, আমেরিকার উন্নয়নের মূলে রয়েছে ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার।
৭. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার : প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার এর জন্য প্রয়োজন শিল্প প্রতিষ্ঠান। শহরকেন্দ্রিক শিল্প কারখানা-গড়ে উঠায় সেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত সম্ভব নয় ।
৮. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : শহরায়ন বা নগরায়ণের আধুনিক সরঞ্জাম, বাড়িঘর, যানবাহন, যোগাযোগ মাধ্যম, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা, বৈদ্যুতিক সুবিধা, প্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রাপ্তি, শিক্ষা সুবিধা, চিত্তবিনোদন প্রভৃতি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে সহায়তা করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শহরায়ন মানুষের জীবনে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য ও ঐশ্বর্য এনে দেয় এবং মানুষকে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা প্রদান করে । শহরের কর্মচঞ্চল মানুষ তাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয় তাদের পরিশ্রম দ্বারা ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ নগরায়ণের ইতিবাচক প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর
রচনা ,প্রবন্ধ | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র ও Application | উত্তর লিংক | অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক |
চিঠি ও Letter | উত্তর লিংক | প্রতিবেদন | উত্তর লিংক |
ইমেল ও Email | উত্তর লিংক | সারাংশ ও সারমর্ম | উত্তর লিংক |
Paragraph | উত্তর লিংক | Composition | উত্তর লিংক |
CV | উত্তর লিংক | Seen, Unseen | উত্তর লিংক |
Essay | উত্তর লিংক | Completing Story | উত্তর লিংক |
Dialog/সংলাপ | উত্তর লিংক | Short Stories/Poems/খুদেগল্প | উত্তর লিংক |
অনুবাদ | উত্তর লিংক | Sentence Writing | উত্তর লিংক |
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- সোয়াপ (SWAP) কাকে বলে? , সোয়াপ (SWAP) কতো প্রকার বিস্তারিত আলোচনা করো
- ব্যবসায়িক ঝুকি বলতে কি বুঝায় উদাহরণ সহ আলোচনা করো
- বিনিয়োগ ব্যাংকের ট্রেডিং ব্যবস্থা আলোচনা করো
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization