নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ে রুকনউদ্দীন কায়কাউসের

[নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ে রুকনউদ্দীন কায়কাউসের কথা উল্লেখ আছে]

রুকনউদ্দীন কায়কাউস লখনৌতির (গৌড়) সুলতান। তিনি ছিলেন বুগরা খানের পুত্র। বুগরা খান সিংহাসন ত্যাগ করলে তিনি ক্ষমতালাভ করেন। মুঙ্গেরের মহেশ্বর ও লক্ষ্মীসরাই এবং দেবকোট, ত্রিবেণী ও মহাস্থান থেকে তাঁর লিপি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া লখনৌতি টাঁকশাল থেকে প্রচারিত তাঁর অসংখ্য মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। কোনো কোনো মুদ্রা ও লিপিতে তিনি নিজেকে ‘সুলতান-বিন-সুলতান’ (সুলতানের পুত্র সুলতান) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

মুঙ্গেরে প্রাপ্ত তাঁর মহেশ্বর ও লক্ষ্মীসরাই লিপি, দিনাজপুরে প্রাপ্ত দেবকোট লিপি, হুগলিতে প্রাপ্ত ত্রিবেণী লিপি ও বগুড়ায় প্রাপ্ত মহাস্থান লিপি এবং লখনৌতি টাঁকশাল থেকে প্রচারিত কিছু মুদ্রা থেকে অনুমান করা যায়, কায়কাউস তাঁর রাজ্য সম্প্রসারণে সক্ষম হয়েছিলেন। লিপিগুলোর প্রাপ্তিস্থল থেকে প্রমাণিত হয়, তাঁর রাজ্য পশ্চিমে বিহার, উত্তরে দেবকোট এবং দক্ষিণে সাতগাঁও পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

তিনি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার দিকে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিলেন এবং নবলব্ধ স্থানে রাজস্ব থেকে মুদ্রা জারি করেছিলেন। মুদ্রাপ্রমাণে এটুকু বলা যায়, পূর্ববঙ্গের অন্তত কিছু এলাকা তাঁর দখলে ছিল।

১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ ধ্বংস এবং শেষ আব্বাসীয় খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহ নিহত হলেও কায়কাউসের মুদ্রায় খলিফার নাম উত্কীর্ণ হয়েছিল। এ থেকে খিলাফতের প্রতি সুলতানের আনুগত্যের প্রমাণ মেলে।

ধারণা করা হয়, সুলতান তাঁর রাজ্যকে বিহার ও লখনৌতি—এই দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন এবং অঞ্চল দুটি শাসনের জন্য দুজন দক্ষ সহকারী নিযুক্ত করেছিলেন। ইখতিয়ার উদ্দীন ফিরুজ ইতগীন বিহারের এবং শাহাবুদ্দীন জাফর খান বাহরাম ইতগীন লখনৌতির শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।

লখনৌতি প্রদেশ দেবকোট থেকে সাতগাঁও পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সুলতান তাঁর লিপিতে নিজেকে সুলতান-উস-সালাতিন (সুলতানদের সুলতান) বলে আখ্যায়িত করেছেন; এমনকি বিহার ও লখনৌতিতে তাঁর অধীন শাসনকর্তাদ্বয়ও নিজেদের দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রূপে অভিহিত করেছেন।

এ ধরনের উচ্চ উপাধি ধারণের উদ্দেশ্য ছিল এটা প্রকাশ করা যে, তাঁরা দিল্লির খলজিদের চেয়ে কোনো অংশেই কম নন। তাঁদের দৃষ্টিতে দিল্লির খলজিরা শুধু জবরদখলকারী হিসেবেই বিবেচিত ছিলেন। লিপি ও মুদ্রা অনুসারে কায়কাউসের রাজত্বের শেষ বছর ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ। কিভাবে তাঁর শাসনের অবসান ঘটে তা জানা যায়নি। ইতিহাসবিদদের ধারণা, সম্ভবত তিনি অপুত্রক অবস্থায় মারা যান কিংবা তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর।

S.S.C

4 thoughts on “নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ে রুকনউদ্দীন কায়কাউসের”

Leave a Comment