পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ের ‘অবাক জলপান’ নাটক ‘চালতা’র

পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ের ‘অবাক জলপান’ নাটক ‘চালতা’র

চালতা মাঝারি আকারের চিরহরিৎ বৃক্ষ। দৃষ্টিনন্দন চালতা ফুল গাছের শাখায় ফুটে প্রকৃতির শুদ্ধতার জানান দেয়। এগুলো উচ্চতায় ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা দীর্ঘ ও সবুজ। পাতার কিনারা হলো খাঁজকাটা।

পাতার শিরাগুলো খুব স্পষ্ট। চালতাগাছের পাতা দেখলে সহজেই চেনা যায়। চালতা বৃহত্তর বঙ্গের তরু। নিচু এলাকা ও স্বাদু পানির এলাকায় ভালো জন্মে চালতাগাছ। চালতার বৈজ্ঞানিক নাম Dillenia indica। চালতা ফল এশীয় হাতিদের অতি প্রিয়। তাই এর ইংরেজি নাম Elephant apple। এই ফলের বীজের বিস্তারে এশীয় হাতিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে হাতির সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে বুনো পরিবেশে চালতাগাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। চালতার আচারের কদর বাংলাজুড়ে।

চালতার ফুল রাজকীয় ও দৃষ্টিনন্দন। দীর্ঘ সবুজ পাতার মাঝে শুভ্র ও সুন্দর চালতা ফুল দেখতে খুবই মনোহারী; যদিও ঘন পাতার আচ্ছাদনে এর ফুল সহজেই চোখে পড়ে না। ফুলগুলো গাছের শাখার শীর্ষে হয়। তবে এই ফুলগুলো নিম্নমুখী অর্থাৎ নিচের দিকে মুখ করে ঝুলে থাকে। চালতা ফুলের সাদা ও নরম পাপড়িও ক্ষণস্থায়ী। দু-এক দিনেই ঝরে পড়ে। ফুলের প্রধান অংশগুলো দৃশ্যমান। সবার বাইরে থাকে পাঁচটি বৃতি। এই বৃতিই ফলে পরিণত হয়। বৃতির পরই পাঁচটি বৃহৎ পাপড়ি। পাপড়ির পরে একটি চাকতির মতো গোলাকার অংশে গর্ভদণ্ডকে ঘিরে অসংখ্য স্বর্ণালি পুংকেশর। গর্ভদণ্ডটি ঠিক মাঝখানে প্রায় ১৫টি গর্ভকেশর তারার মতো ছড়ানো থাকে।

কফ ও কোষ্ঠকাঠিন্যে চালতার রস অনেক কার্যকরী। পাকস্থলির পীড়ায় এটি খাওয়া হয়। পরিপাকতন্ত্র যখন ঠিকমতো কাজ করে না, তখন এর রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। চালতা দিয়ে চাটনি, জ্যাম, জেলি প্রভৃতি বানানো হয়। এটি যেহেতু একটু টক জাতীয়, তাই রান্না করে অন্যান্য তরকারির সঙ্গে খেতে ভালোই লাগে। চালতা ফলে আছে ভিটামিন সি, ট্যানিন, শর্করা ও ম্যালক এসিড। চালতা কাঠের তৈরি নৌকা, গরুর গাড়ি গ্রামবাংলায় একসময় দেখা যেত।

ধীরে ধীরে চালতাগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণ এলাকায় বিশেষত বৃহত্তর বরিশাল এলাকায় এখনো প্রচুর চালতাগাছ দেখা যায়।

P.S.C

Leave a Comment