পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ের ‘হাতি আর শিয়ালের গল্প’ নামক গদ্যে ‘গুবরে পোকা’র

গুবরে পোকা Coleoptera বর্গভুক্ত সর্বাধিকসংখ্যক প্রজাতিবিশিষ্ট একদল পোকা। গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে Coleoptera, যার অর্থ ‘Sheathed Wing’ অর্থাৎ খাপবিশিষ্ট ডানা। কারণ প্রায় সব গুবরে পোকার দুই জোড়া ডানা থাকে। সামনের ডানা জোড়া শক্ত ও পুরু হয়। এই জোড়া পেছনের জোড়া এবং এদের পশ্চাৎ অংশের নিরাপত্তা দেয়। গুবরে পোকা সমস্ত পতঙ্গের মধ্যে ৪০ শতাংশ এবং এদের মোট প্রজাতির সংখ্যা চার লাখের মতো।

মেরু অঞ্চল বাদে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই দেখা যায় এদের। প্রায় সব ধরনের খাবার খায়। কিছু প্রজাতি খায় উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ যেমন—পাতা, ফল, বীজ বা গুঁড়ি। অনেকে আবার এদের থেকে ছোট পোকামাকড় শিকার করে খায়। কেউ ছত্রাক খায়, কেউ আবার মল খায়। গুবরে পোকার জীবনচক্রে চারটি ভিন্ন ধাপ আছে। স্ত্রী গুবরে পোকা ডিম পাড়ে। ডিম থেকে লার্ভা বের হয়, যাদের কোনো ডানা থাকে না। লার্ভা থেকে পিউপা পর্যায়ে এরা কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না। পিউপা থেকে এরা পোকায় রূপান্তরিত হয়।

দেহের কেমিক্যাল নিঃসরণের মাধ্যমে গুবরে পোকারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরা চোখে খুব ভালো দেখতে পায় না। কিছু পোকা শব্দ উৎপন্ন করে যোগাযোগের জন্য। এই শব্দ এরা মূলত তৈরি করে এদের মুখের সামনের বড় দাঁত দুটি একে অপরের সঙ্গে ঘষে অথবা ডানা বা পায়ের ঘর্ষণে। কেউ কেউ মৃত গাছের গুঁড়িতে থেকে সেখানে কম্পনের মাধ্যমে শব্দ সৃষ্টি করে।

জোনাকিও এক ধরনের গুবরে পোকা। এরা অন্ধকারে জ্বলে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। Dung Beetle প্রজাতির গুবরে পোকা নিজেদের ওজনের থেকে প্রায় এক হাজার এক শ গুণ বেশি ভার বহন করতে পারে।

গুবরে পোকা আমাদের বাস্তুসংস্থানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা পঁচে যাওয়া প্রাণী ও উদ্ভিদ খায়। কিছু প্রজাতি ফুল থেকে ফুলে মধু খেয়ে পরাগায়নে সাহায্য করে। তবে গুবরে পোকা আমাদের ক্ষতিও করে থাকে। কাঠের পোকা কাঠ কেটে নষ্ট করে। আবার ফসল ভক্ষণকারী গুবরে পোকা আমাদের শস্য খেয়ে ফেলে। এদের ফসলের ক্ষতিকারক বালাই পোকাও বলে।

শিক্ষা

Leave a Comment