অনুচ্ছেদ পদ্মা বহুমুখী সেতু-পদ্মা সেতু
আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর প্রভাব
ভূমিকা : বাংলাদেশ দক্ষিণ-এশিয়ার উন্নয়নশীল একটি দেশ। নদীমাতৃক এদেশটিতে দেশি-বিদেশি অনেক নদী জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাই স্বভাবতই এদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের প্রধান ৩টি নদী হলো পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা। এদের মধ্যে যমুনা ও মেঘনা নদীর ওপর দিয়ে ইতিমধ্যে সেতু তৈরি হয়েছে। বাকি ছিল শুধু পদ্মা নদী। দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের লোকজনকে পদ্মা নদী পার হয়ে রাজধানী ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে হয়। তাই বর্তমান সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। পদ্মা সেতু তৈরি হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উভয়ভাবেই লাভবান হবে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী,
‘পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রতি এক টাকা খরচের বিপরীতে দুই টাকা লাভবান হবে বাংলাদেশ।’
পদ্মা সেতুর ইতিহাস : ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মেনিফেস্টোর মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল অন্যতম। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করে। এজন্য বিশ্বব্যাংক, ADB (Asian Development Bank) জাইকা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অজুহাত তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সাথে সাথে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ প্রদান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর বিভিন্ন তর্ক-বিতর্কের পর আওয়ামীলীগ সভানেত্রী এবং তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা মহান জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।
পদ্মা সেতুর বর্ণনা : দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার, প্রস্থ ২১.১০ মিটার। মোট পিলার সংখ্যা ৪২টি। ৪০টি নদীর মধ্যে, ২টি সংযোগ সেতুর সাথে। পাইল সংখ্যা ২৬৪টি। নদীর ভেতরের ৪০টি পিলারে ৬টি করে মোট ২৪০টি এবং সেতুর দুই পাশের দুটি পিলারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল থাকবে। পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানো হচ্ছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় : প্রথমে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করে। ২০১১ সালে সংশোধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয় সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
২০২১ সালে যাবতীয় কাজ শেষ করে ২০২২ সালে পদ্মাসেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে বলে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছেন। পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপনে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। দেশের মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ ভালো কিছু করতে পারে এবং বাংলাদেশ এখন একটি সক্ষম দেশ- এটা প্রমাণিত হয়েছে। বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে সমস্যা, ঋণ স্থগিত ও নানা দীর্ঘসূত্রিতার ফলে সেতুর বাস্তবায়ন কাজ বেশ বিলম্বিত হয়। যে সেতু নির্মাণ শেষ করার কথা ছিল ২০১৪ সালে। এখন সেই সেতু চলার উপযোগী হবে ২০২২ সালে। দীর্ঘ সময় গ্যাপ। তাই ব্যয় বৃদ্ধি। নানা দুনীর্তির অভিযোগও রয়েছে ব্যয় বৃদ্ধির পিছনে। ২০২০ সালের শেষে এসে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। আগামী দুই বছর সময় লাগবে। তাতে ব্যয় আরও বাড়তে পারে। তারপর একটি বড় সেতুর স্থাপনা চালু হতে যাচ্ছে, এটাই আমাদের বড় আনন্দ। আমাদের বড় অর্জন।
পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক সুপ্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে সেতুর ডিজাইন পরামর্শক মনসেল ২০১০ সালে এক বিশ্লেষণ বা স্টাডি রিপোর্ট সেতুর বোনফিট কস্ট রেশিও (বিসিআর) ১ দশমিক ৭ এবং ইকোনমিক ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন (ইআরআর) ১৮ শতাংশ উল্লেখ করেছেন। সেতু নির্মাণ ব্যয় যুক্ত হয়ে বিসিআর ২ দশমিক ১ এবং ইআরআর দাঁড়াবে ২২ শতাংশ। অর্থাৎ এ সেতু নির্মাণ অর্থনৈতিক বিবেচনায় লাভজনক হবে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ দূরত্ব ২ থেকে ৪ ঘণ্টা কমে আসবে। রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ পথ হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, কাঁচামাল সরবরাহ সহজলভ্য হবে এবং শিল্পায়নের প্রসার ঘটবে, অর্থাৎ ছোট বড় নানা শিল্প কারখানা ২১টি জেলায় গড়ে উঠবে। কৃষির ব্যাপক উন্নতি ঘটবে। কৃষক পণ্যমূল্য ভাল পাবে। উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ডিজাইন পরামর্শক ছাড়াও বিশ^ব্যাংকের স্বাধীন পরামর্শক এবং সেতু বিভাগ নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও সেতু নির্মাণের অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করেছে। এসব সমীক্ষা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, সেতু নির্মাণের অর্থনৈতিক প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের বার্ষিক জিডিপি ২ শতাংশ এবং দেশের সার্বিক জিডিপি ১ শতাংশের অধিক হারে বাড়বে।
পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে দেশের সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামোর উন্নতি হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে (এন-৮) ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সংযোগ স্থাপিত হবে। সেতুর উভয় পাড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক ও প্রাইভেট শিল্পনগরী গড়ে উঠবে। বিনিয়োগ বাড়বে এবং বাড়বে কর্মসংস্থান। মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর সচল হবে। পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে এবং দক্ষিণ বাংলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু মাজার, মাওয়া ও জাজিরা পাড়ের রিসোর্টসহ, নতুন পুরানো পর্যটন কেন্দ্র দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হবে। বর্তমানে ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী, পদ্মানদী পার হয়ে যেখানে ১২ হাজার যান চলাচল করে, সেখানে সেতু খুলে দিলেই যান চলাচল দ্বিগুণ হতে পারে এবং প্রতি বছর যানবাহন ৭-৮ শতাংশ বেড়ে ২০৫০ সালে ৬৭ হাজার যানবাহন চলবে। এ ধরনের পর্যবেক্ষণ আমরা বিশ্বাসযোগ্য ধরে নিতে পারি। কারণ, আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখছি যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতুর অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে যানবাহন বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোগ-চাহিদা বৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, বাস্তবে প্রসার ঘটেছে এর চেয়ে আরও বেশি।
যে কোনো সেতু বা স্থাপনার ব্যয় নির্বাহ করার জন্য টোল আদায় করার নিয়ম সব দেশে রয়েছে। নিজস্ব অর্থায়ন বা ঋণে সেতু হলেও টোল আদায় ছাড়া বড় প্রকল্পের কোনো উপায় থাকে না। আমাদের দেশে ছোট ছোট সেতুর টোল এখনও আদায় করা হচ্ছে। যা করা উচিত নয়। একমাত্র জাতীয় ভিত্তিক, বড় স্থাপনার টোল আদায়ের নিয়ম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছে। কাজেই পদ্মাসেতু থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে সেতুর অর্থ আদায় করতে হবে। করা উচিতও হবে। তবে কত হবে, কীভাবে হবে, কত বছরের মধ্যে এই খরচের অর্থ আদায় করা হবে, ইত্যাদি আলোচনার বিষয়।
পদ্মাসেতুর ব্যয় নির্বাহের জন্য সেতু বিভাগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকার এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ১ শতাংশ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে ১৪০ কিস্তিতে এই ঋণের অর্থ সেতু বিভাগ পরিশোধ করবে। কাজেই টোল এমনভাবে আদায় করতে হবে, যাতে ঋণের অর্থ ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় খরচ টোল থেকে করা যায়। বর্তমানে ফেরি পারাপার খরচের চেয়ে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করলে ঋণের টাকা সহজে শোধ করা যাবে। কিন্তু এইটি করা ঠিক হবে না। তাতে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। যে কারণে পদ্মাসেতু করা, তার উপকার আমরা পাবো না। পণ্যের আনা-নেয়ার ব্যয় বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষ উপকার পাবে না। তাই ঋণের চুক্তির মেয়াদ কমপক্ষে ৫০ বছর করে সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে। তার ফলে টোলের আদায়কৃত অর্থ কম হবে। যানবাহনের ব্যয় কম হবে। পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে। কৃষক ও ব্যবসায়ী সকলে উপকৃত হবে।
যেমন যমুনা সেতুর কথা বলুন। এই সেতুর টোল অধিক। সেতুর খরচের অর্থ ইতোমধ্যে আদায় হয়ে গিয়েছে। অথচ সেতুর টোল এখনও কমানো হয় নাই। যমুনা সেতুর টোল কমানো উচিত। তাতে পণ্যের ব্যয় কমবে। মানুষ উপকৃত বেশি হবে। পণ্য আনার খরচের ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে বগুড়ার ৩ টাকার মূল্যের সবজি ঢাকায় আমাদের ৩০ টাকা কিনতে হয়। অনুরূপ পদ্মাসেতুর টোল অধিক হারে হলে পণ্য মূল্যে স্থিতি থাকবে না।
অর্থনীতিবিদদের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্বাস, পদ্মাসেতু চালু হলে দেশের সার্বিক দারিদ্র্যতার সূচক হ্রাস পাবে। মানুষের আয় রোজগার বাড়বে। পদ্মাসেতুর এপার ও ওপারে নানা স্থাপনা গড়ে উঠবে। শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে। যার ফলে মানব উন্নয়ন সূচকের অনেক অগ্রগতি হবে। যানবাহনের এই টোল আদায়ও আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধির বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বিভিন্ন সামাজিক সূচকের ক্রম উন্নতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্প নিজস্ব অর্থে করার কারণে বাংলাদেশের সক্ষমতার স্বীকৃতি মিলেছে। আমরা পারি। আমরা সক্ষম। আমাদের মেধা আছে। আমাদের জ্ঞান অন্যদের চেয়ে কম নয়। এই সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের নিকট অতুল্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদ্মাসেতু চালু হোক। অর্থনীতিতে সুবাতাস প্রবাহিত হোক।
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব : পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার জনগণের ভাগ্য বদলাবে। সাথে রাজধানী ঢাকার পৌনে দুই কোটি মানুষের খাদ্যদ্রব্যের জোগান সুলভ মূল্যে সম্ভব হবে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে দ্রুত হারে।
দারিদ্র্য বিমোচন : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২৩.২৪ এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১২.৯ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্য হলো পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে এবং অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে ২১টি জেলার সাথে কম খরচে ঢাকায় পণ্য পরিবহন করা যাবে। ফলে ঐসব এলাকায় পণ্যমূল্য আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে। তখন জনগণ উৎপাদনে উৎসাহ পাবে এবং দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাস পাবে।
যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি : প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমরা প্রায়ই দেখতে পাই পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া, মাওয়া, জাজিরা ঘাটে শত শত বাস, ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে কম সময়ে কম টাকায় ঢাকার সাথে যোগাযোগ সম্ভব হবে। তাছাড়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ হবে, যা যোগাযোগব্যবস্থাকে আরও গতিশীল এবং সহজতর করবে।
কৃষিক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কৃষিক্ষেত্রে বেশ উন্নত। যেমন : যশোরের ফুল চাষ সারাদেশসহ পাশের দেশগুলোতে বিখ্যাত। বরিশালে প্রচুর ধান উৎপাদন হয়। ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জে প্রচুর পাট উৎপাদিত হয়। এসব পণ্য পরিবহনে সময় এবং ব্যয় উভয়ই বেশি হয়। অনেক সময় কৃষিপণ্য পঁচে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়। কৃষকরা উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু পদ্মা সেতু সম্পন্ন হলে কৃষি উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
শিল্পক্ষেত্রে : পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে শিল্পের বেশিরভাগ কাঁচামাল আসবে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে। ফলে ঢাকা এবং চিটাগাংয়ের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল সংকটে ভুগবে না। কাঁচামাল সরবরাহ খরচ অনেক গুণ হ্রাস পাবে। দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সরকারের ভিশন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।
পদ্মা সেতুর রাজনৈতিক গুরুত্ব : পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে বর্তমান সরকার রাজনৈতিকভাবে খুবই লাভবান হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছিল। দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভোট সংখ্যা আওয়ামী লীগের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পারে। সরকার হিসেবে আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতুকে সফলতা হিসেবে দেখাতে পারবে।
বৈশ্বিক পরিচিতি : পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম সেতু হবে। বিশ্বের প্রথম ১০টি সেতুর মধ্যে নাম আসবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। ঋণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে যে বাগ্-বিতণ্ডা হয়েছিল তা সারাবিশ্বে আলোচিত হয়েছিল। সেতুর কাজ সমাপ্ত হলে বর্তমান সরকার সক্ষমতা এবং সফলতার পরিচয় পাবে, অপরদিকে বিশ্বব্যাংকের প্রতি সমালোচনা বৃদ্ধি পাবে। এদিক থেকে বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক সফলতার পরিচয় পাবে।
পদ্মা সেতুর নেতিবাচক প্রভাব : পদ্মা সেতুর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক থাকলেও এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। দুই পাড়ের লোকজনের কর্মসংস্থান লোপ পাবে। লঞ্চ, স্টিমার, ফেরিমালিকদের ব্যবসায় মন্দা দেখা দেবে। সেতুর উভয় পাশে নতুন শহর গড়ে উঠবে যাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। ওই এলাকার গরিব মানুষের কর্মসংস্থান লোপ পাবে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
উপসংহার : পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস, গোডাউন গড়ে উঠবে। বিদেশিরা ওইসব এলাকায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে। গতিশীল হবে অর্থনীতির চাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে নতুন গতি। উন্নত হবে দেশ, উন্নত হবে ওই এলাকার মানুষের জীবনমান। পূরণ হবে বাঙালির একটি স্বপ্নের নাম, যা অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেবে।