পদ্য: পাঞ্জেরী, পাঞ্জেরী’ শব্দটির অর্থ কী?

পদ্য: পাঞ্জেরী

২। দুর্গমগিরি, কান্তার মরু দুস্তর পরবার, লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশিথে যাত্রীরা হুশিয়ার! দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ | ছিড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল আছে কার হিম্মৎ! কে আছাে জোয়ান, হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি নিতে হবে তরী পার।

ক. পাঞ্জেরী’ শব্দটির অর্থ কী?

উত্তর:আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “আলোকবর্তিকা

১.সাধারন অর্থ “মাস্তুল সংলগ্ন বাতি নিয়ে জাহাজের দিকনির্দেশক “
২. প্রতিকী অর্থ হচ্ছে “জাতির পথপ্রদর্শক “
৩.আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “আলোকবর্তিকা

খ. এখনাে তােমার আসমান ভরা মেঘে’ – উক্তিটি দিয়ে কী বােঝানাে হয়েছে?

এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে’? —এ পঙিক্ততে মুসলিম জাতির পরাধীনতা ও দুর্যোগের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
এখানে জাতির কর্ণধার অর্থাৎ পথপ্রদর্শককে প্রতীকী রূপে ‘পাঞ্জেরি’ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। দুর্গম যাত্রাপথে উক্তিটিতে পাঞ্জেরিকে প্রশ্ন করে যাত্রীরা।

পথ চলতে চলতে আর শেষ না হওয়ায় যাত্রীরা শঙ্কিত। তারা কোথাও কোনো কূল-কিনারা দেখতে পাচ্ছে না। এমনকি এতটুকু আশার আলো আকাশে চাঁদ, তা-ও মেঘে ঢাকা। তাই যাত্রীরা পাঞ্জেরিকে প্রশ্নটি করেছে। মূলত প্রশ্নকারীরা হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য অপেক্ষমাণ জনতা। যারা একটা শঙ্কা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছে।

গ. উদ্দীপকের সাথে পাঞ্জেরী’ কবিতার সাদৃশ্য নিরুপন কর।

উত্তর:‘পাঞ্জেরি’ কবিতায় জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার কর্ণধার পাঞ্জেরিকে বন্দরে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের তীব্র বিক্ষোভের কথা ভেবে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন কবি। আর উদ্দীপকে শত বিপদের মুখে যাত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে তরীর হাল ধরার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

মুক্তির দিশারি পাঞ্জেরি ও নাবিকরূপী নেতা-কর্মীদের অবহেলা আর ভুল সিদ্ধান্তের কারণে মুক্তির তরণি নির্দিষ্ট সময়ে বন্দরে এসে পৌঁছতে পারেনি। বন্দরে অপেক্ষমাণ যাত্রীরূপী মুক্তিপাগল জনতার ভিড়ে তাই জমা হয়েছে হতাশার কালো মেঘ আশাভঙ্গের বেদনায় তারা হয়েছে ম্রিয়মাণ। মজলুমের আর্তনাদে ছেয়ে গেছে আকাশ-বাতাস।

তাই বঞ্চিত, আশাহত ও অপেক্ষমাণ মানুষ কৈফিয়ত দাবি করেছে নেতৃত্বের কাছে। ধিক্কার জানাচ্ছে নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্তকে।


এভাবে জাতিকে এই বিপন্নাবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য কবি জাতির কর্ণধারদের জেগে ওঠার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। উদ্দীপকে সংকটময় দিনে জাতিকে এই বিপন্নাবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য কবি যেকোনো কাউকে নেতৃত্বদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

ঘ. কে আছাে জোয়ান হও আগুয়ান’ – এই লাইনটির সাথে পাঞ্জেরী’ কবিতার ভাববস্তু বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: ‘পাঞ্জেরি’ কবিতার ভাববস্তুর সঙ্গে উদ্দীপকের লাইনটির ভাববস্তুর যথার্থ মিল রয়েছে। ‘পাঞ্জেরি’ কবিতা ও উদ্দীপকের আলোকে এ জাতি ছিল হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত। মরুভূমির বুকে সাইমুম ঝড়ের মতো দুর্বার গতিতে এ জাতি ছুটে চলত দিক-দিগন্তে। প্রতিপত্তি ও খ্যাতিতে ভাস্বর ছিল এ জাতি।

কিন্তু শুধু গাফিলতে, শুধু খেয়ালের ভুলে, ঐতিহ্যবাহী এ জাতি আজ পরাস্ত, হতাশাগ্রস্ত। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে তারা দিশেহারা। এ জাতি যেন তার হারানো সম্মান ফিরে পায়, সে জন্য কবি ‘পাঞ্জেরি’ কবিতায় ও উদ্দীপকে সঠিক পথপ্রদর্শকের সন্ধান করেছেন।


সীমাহীন দুর্যোগে পথভ্রান্ত জাতির বিভ্রান্তির ও বিপথে গমনের কারণে যে ঘোর অন্ধকার তাদের জীবনকে অচল রুদ্ধ ও পরাধীন করেছে, তাকে সঠিক স্বাধীন মানবিক পথে উন্নীত করার অনুপ্রেরণা ‘পাঞ্জেরি’র প্রতিটি ছত্রে এবং উদ্দীপকের পঙিক্ত ‘কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান’। অন্ধকার রাতে দিশাহীন নৌকার দাঁড়ীরা যেমন শুধু অনুমান করে দাঁড় টেনে সঠিক পথের সন্ধান পায় না।

তেমনি সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এ জাতিও আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং বন্দরে প্রতীক্ষারত যাত্রীদের মতো দেশের আপামর জনগণ হতাশাগ্রস্ত। তাই কবি আশা করেছেন, সীমাহীন দুর্যোগের পথভ্রান্ত জনতা আলোকবর্তিকারূপী নেতৃত্বের সাড়া পেয়ে সঠিক পথ ধরে আলোর দিকে অগ্রসর হতে পারবে।

কবি সেই পথ খুঁজছেন, যে পথে নতুন সম্ভাবনা ও স্বপ্ন নিয়ে তাদের জীবন পূর্ব গৌরব ফিরিয়ে আনবে।


কবি দৃঢ়চিত্তে জানিয়ে দিয়েছেন যে যদি নবজাগরণের প্রদীপ তারা জ্বালাতে পারে এবং সব ভয়-ভীতি ও বিপদের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করে সঠিক লক্ষ্যের পথে এগোতে পারে, তবে জাতীয় জীবনে বিরাজমান সংকট উত্তরণে কোনো সমস্যা হবে না। নিমজ্জিত জাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দেবে পাঞ্জেরি।


উদ্দীপকের সব সংকট থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য কোনো জওয়ান অর্থাৎ কোনো নেতৃত্বদানকারীকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ, সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া কোনো জাতি সঠিক পথ পায় না। যেমনটি পাঞ্জেরি কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায়।

H.S.C

Leave a Comment