বিষয়:পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়, পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধের উপায় ,পাকস্থলী ক্যান্সারের প্রতিকার
কস্থলীর ক্যান্সার (বা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার) এখন বেশ পরিচিত একটি রোগ। এক্ষেত্রে ক্যান্সার সেলস পাকস্থলীতে বা এর আস্তরণের কোষে (আবরণী কলায়) গ্রো করে। বিশ্বব্যাপী এই ক্যান্সারেই তুলনামূলকভাবে বেশি মানুষকে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। শুরুর দিকে তেমন কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে, যে কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণ বা রোগ নির্ণয় চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। খুব দ্রুত ক্যান্সার কোষ ছড়িয়ে যায় এবং পরবর্তীতে ভয়াবহ রূপ নেয়। আজ আমরা জানবো পাকস্থলীর ক্যান্সার নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য।
স্টোমাক ক্যান্সার এর ধরন
পাকস্থলীর যেকোনো অংশে ক্যান্সার হতে পারে। হজম হওয়া খাবার বহনকারী টিউবের যে অংশ পাকস্থলীর সাথে সংযুক্ত হয়, সেই সংযোগ স্থলকে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল জাংশন বলা হয়। গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল জাংশনে ক্যান্সার হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যান্সার পাকস্থলীর প্রধান অংশে দেখা দেয়, যাকে পাকস্থলীর বডি বলা হয়। পাকস্থলীর ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি হয় পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ অঞ্চলে। নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। Adenocarcinoma, Gastrointestinal stromal tumors (GIST), Carcinoid tumors, Lymphoma ইত্যাদি ধরনের হতে পারে এই ক্যান্সার।
চিকিৎসা
এর চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের স্টেজ, কোথায় ক্যান্সার সেলস আছে, রোগীর সামগ্রিক শারীরিক অবস্থা- এগুলোর উপর।
১) সার্জারি
এই রোগের সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হলো টিউমার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা। ক্যান্সারের স্টেজ ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে আংশিক গ্যাস্ট্রেক্টমি (পাকস্থলীর একটি অংশ অপসারণ) বা সম্পূর্ণ গ্যাস্ট্রেক্টমি (পুরো পাকস্থলি অপসারণ) করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে অন্ত্রের একটি অংশ নিয়ে খাদ্যনালীর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়।
২) কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপিতে ক্যান্সার কোষগুলো মেরে ফেলার জন্য এবং এগুলোর বৃদ্ধি দমন করতে পাওয়ারফুল মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। এটি অস্ত্রোপচারের আগে নিওঅ্যাডজুভেন্ট কিংবা অস্ত্রোপচারের পরে অ্যাডজুভেন্ট থেরাপি হিসেবে অথবা অ্যাডভান্সড বা মেটাস্ট্যাটিক ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে দেওয়া যেতে পারে।
৩) রেডিয়েশন থেরাপি
এই চিকিৎসায় ক্যান্সার কোষকে লক্ষ্য করে হাই বীম রে ব্যবহার করা হয়। এটি সার্জারির আগে ও পরে বা কেমোথেরাপির সংমিশ্রণে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪) টার্গেট থেরাপি
কিছু ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্যান্সার কোষকে দমন করে এমন স্পেসিফিক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ওষুধগুলো ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট অণুর সাথে বিক্রিয়া করে সেই কোষ ধ্বংসের কাজ করে থাকে, ক্যান্সার যেন ছড়িয়ে না যায় সেটাও নিশ্চিত করে।
ঝুঁকি কমাতে যা যা করতে পারেন
- বিভিন্ন রঙিন ফলমূল, ফ্রেশ শাক-সবজি, কম তেল মসলাযুক্ত খাবার রাখুন ডায়েট চার্টে
- নোনতা ও আধাসেদ্ধ খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন
- সিগারেট, অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন
- পরিবারের অন্য কারো পাকস্থলী ক্যান্সার এর হিস্ট্রি থাকলে প্রতিবছর ক্যান্সার স্ক্রিনিং করুন
- প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পেলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা হলে এই ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসার সাফল্যের হার বেশি। এই রোগ পুরোপুরিভাবে প্রতিরোধ করা না গেলেও এর ঝুঁকির কারণগুলো জানা থাকলে আমরা সচেতন হতে পারি। আজ পাকস্থলীর ক্যান্সার বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জানা হলো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।