পাকিস্তানি আমলে বাংলাদেশের প্রতি বৈষম্য,পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রের শাসন ও জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন, পাকিস্তান আমলের বৈষম্য ও বাংলাদেশ

প্রশ্ন সমাধান: পাকিস্তানি আমলে বাংলাদেশের প্রতি বৈষম্য

পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বেশি সুযােগ-সুবিধা ভােগ করেছে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানিদেরকে তাদের ন্যায্য অধিকার ভােগ করতে দেওয়া হয়নি। বরং রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকার প্রথম থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করেছিল।

রাজনৈতিক বৈষম্য

পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবর্গের বিরােধিতার জন্য গণতন্ত্র উত্তরণের কোনাে প্রচেষ্টা করা হয়নি। লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও পূর্ব পাকিস্তানকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা সমগ্র পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ জন হওয়া সত্ত্বেও এ অঞ্চল হতে জনসংখ্যা অনুপাতে কেন্দ্রীয় আইনসভা ও শাসন-ব্যবস্থায় প্রতিনিধিত্বের অধিকার দেওয়া হয়নি। ১৯৪৭-৫৮ সাল পর্যন্ত ৪ জন রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে মাত্র ১ জন। ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের এবং তিনিও ছিলেন উর্দুভাষী। এ সময়ে ৭ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৩ জন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের এবং এদের মধ্যে ১ জন ছিলেন উর্দুভাষী।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কিন্তু। নানান অজুহাতে পূর্ব পাকিস্তানে হক সাহেবের নেতৃত্বে গঠিত প্রাদেশিক মন্ত্রিসভাকে পদচ্যুত করে পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় শাসন চালু করা হয়। ১৯৫৬ সালে যে শাসনতন্ত্র চালু হয়েছিল তা ১৯৫৮ সালে বাতিল করে সামরিক শাসন জারি করা হয়।

১৯৬২ সালে আইয়ুব খান রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার প্রবর্তন করে সারাদেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়-দফা দাবি উত্থাপন করেন। সর্বস্তরের জনগণ ছয়-দফার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর না করে দেশকে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।

প্রশাসনিক বৈষম্য

পাকিস্তানের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানিদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত নগণ্য। সামরিক, বেসামরিক ও অন্যান্য চাকরিতে নিয়ােগের ব্যাপারে বৈষম্য ব্যাপক ছিল। নিচে বৈষম্যের কিছু চিত্র তুলে ধরা হল :

বিভিন্ন বিভাগপশ্চিম পাকিস্তানপূর্ব পাকিস্তান
কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস৮৪%১৬%
ফরেন সার্ভিস৮৫%১৫%
বিদেশে মিশন প্রধান (সংখ্যা)৬০
সৈন্যবাহিনী৯৫%৫%
প্রধান সারির সেনা অফিসার (সংখ্যা)১৬ জন১জন
পাইলট৮৯%১১%
আর্মডফোর্স (সংখ্যা)৫০,০০০২০,০০০
পাকিস্তান এয়ার লাইন্স (সংখ্যা)৭০০২৮০
পি, আই, এ পরিচালক সংখ্যাএক জন মাত্র
পি, আই, এ আঞ্চলিক ম্যানেজার সংখ্যাকেউ ছিল না
রেলওয়ে বাের্ড পরিচালকএক জন মাত্র

১৯৬৬ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রশাসন ব্যবস্থায় পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যা ছিল নিম্নরূপ :

শ্রেণীমােটপশ্চিম পাকিস্তানেরপূর্ব পাকিস্তানেরশতকরা হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের
১ম শ্রেণী২,৮১৬ জন২,১০৪ জন৭১২ জন২৩%
২য় শ্রেণী৫,৯৫১ জন৪,৭১১ জন১,২৪০ জন২৬%
৩য় শ্রেণী৭০,০০০ জন৫০,৭০০জন১৯,৩০০ জন২৭%
৪র্থ শ্রেণী২৬,০০০ জন১৮,০০০ জন৮,০০০ জন৩০%

১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে ১৯৬৮-৬৯ সাল পর্যন্ত বেসামরিক খাতে পাকিস্তানে মােট ব্যয় হয়েছিল ৭১৮ কোটি টাকা। পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে পড়েছিল ১৮৪ কোটি টাকা মাত্র।

অর্থনৈতিক বৈষম্য

পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে তুলা উৎপাদনের কোনাে চেষ্টা করা হয়নি। মুদ্রা ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ছিল। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্টেট ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকসমূহের হেড অফিস পশ্চিম পাকিস্তানে থাকায় অর্থ পাচার হত অবাধ গতিতে। উদ্বৃত্ত আর্থিক সঞ্চয় পশ্চিম পাকিস্তানে জমা থাকত। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে মূলধন গড়ে উঠতে পারেনি। পাকিস্তানের ১৯৪৭-৭১ সালের আর্থিক ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে নিম্নলিখিত চিত্র দৃষ্ট হয় :

১। পূর্ব পাকিস্তানের অর্জিত বিদেশি মুদ্রা দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে।

২। পূর্ব পাকিস্তান যে পরিমাণ আয় করত, সে পরিমাণ ব্যয় করতে পারত না।

৩। পূর্ব পাকিস্তানের পাট দিয়ে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হত, তা পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় করা হত। পাট থেকে মােট বৈদেশিক মুদ্রার তিন ভাগের দুইভাগ অর্জিত হত।

৪। মােট বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণের শতকরা ১০ ভাগ থেকে ১৫ ভাগ মাত্র খরচ হত পূর্ব পাকিস্তানে।

৫। মােট রাজস্বের শতকরা ৯৪ ভাগ পশ্চিম পাকিস্তানে খরচ হত, বিদেশি মিশনসমূহ পশ্চিম পাকিস্তানে থাকায় পশ্চিম পাকিস্তানের আয় বেড়েই চলছিল।

৬। পশ্চিম পাকিস্তানে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের দ্বিগুণ।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৭। পূর্ব পাকিস্তানে যেসব কলকারখানা তৈরি হয়েছিল তাদের মালিক ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি। এ খাত থেকে যে আয় হত, তাও ব্যয় হত পশ্চিম পাকিস্তানে।

সামরিক বৈষম্য

প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিনটি সদর দপ্তর ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। দেশরক্ষা বাহিনীর চাকরিগুলাে ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের একচেটিয়া অধিকারে। পূর্ব পাকিস্তানে কোনাে অস্ত্রাগার তৈরি হয়নি। সামরিক বাহিনীতে শেষ পর্যন্ত যেসব পূর্ব পাকিস্তানি যােগদান করেছিল, তাদের সংখ্যা শতকরা দশের বেশি হয়নি।

সাংস্কৃতিক বৈষম্য

পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব বাংলার ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করতে পাকিস্তান শাসকচক্র তৎপর হয়ে ওঠে। এ সম্বন্ধে ভাষা আন্দোলনে আলােচনা হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানকে শিক্ষা, কৃষি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শােষণ করেছিল।

প্রশ্ন সমাধান: পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রের শাসন ও জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল

পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রের শাসন

১৯৫৪ সালে মে মাসে ৯২-ক ধারা অনুযায়ী পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয় এবং মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে পূর্ব বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠানাে হয়। হক সাহেব নিজ বাড়িতে অন্তরীণ হন। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ প্রায় ১৬শ নেতা-কর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫৪ সালের ২৪শে অক্টোবর এক ঘােষণায় গােলাম মােহাম্মদ গণপরিষদ বাতিল করে দেন। আবার তিনিই ১৯৫৫ সালে জুন মাসে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নতুন গণপরিষদ গঠন করতে বাধ্য হন।

১৯৫৫ সালের ৬ই জুন তারিখে ৯২-ক ধারা প্রত্যাহার করা হলে ফজলুল হকের মনােনীত প্রার্থী আবু হােসেন সরকারের নেতৃত্বে নতুন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এ মন্ত্রিসভা একুশ দফা বাস্তবায়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। মুসলিম লীগ ও যুক্তফ্রন্ট মিলিতভাবে চৌধুরী মুহম্মদ আলীর নেতৃত্বে ১৯৫৫ সালের ১১ই আগস্ট নতুন কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে। ইস্কান্দার মির্জা ১৯৫৬ সালের ২৩শে মার্চ পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন।

১৯৫৬ সালের মার্চ মাসে শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর কেন্দ্রে মুসলিম লীগ কোয়ালিশন সরকারের পতন হয়। ১৯৫৬ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর শহীদ সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে রিপাবলিকান- আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়। এ সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জন্য যুক্ত নির্বাচন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করে। ১৯৫৭ সালের ১৬ই অক্টোবর তাঁর সরকারের পতন হয়। এদিকে পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য সংকটকে কেন্দ্র করে আবু হােসেন সরকারের পতন হলে ১৯৫৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর আতাউর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হয়।

১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে ইসমাইল ইব্রাহিম চন্দ্রিগড়-এর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ-রিপাবলিকান মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। চুন্দ্রিগড় প্রধানমন্ত্রিত্ব লাভের পর পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরােধিতার সম্মুখীন হয়। পরে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। অতঃপর ফিরােজ খান নুনের নেতৃত্বে রিপাবলিকান দল কেন্দ্রে মন্ত্রিসভা গঠন করে।

প্রধানমন্ত্রী ফিরােজ খান নুন ১৯৫৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনতারিখ ঘােষণা করেন। পূর্ব পাকিস্তানে পরিস্থিতি দিন দিন ঘােলাটে হতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটির পর একটি নাটকীয় ঘটনা ঘটতে লাগল। ১৯৫৮ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর প্রাদেশিক পরিষদে তুমুল ঝগড়া ও মারামারিতে ডেপুটি স্পীকার শাহেদ আলী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল

ডেপুটি স্পীকার শাহেদ আলীর মৃত্যর পর ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা দেশের শাসনন্ত্র, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা এবং আইন পরিষদ বাতিল করেন। সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘােষণা করে সমগ্র পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করেন।

১৯৫৮ সালের ২৭শে অক্টোবর আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে অপসারণ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি মৌলিক গণতন্ত্র নামে এক অভিনব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

১৯৬০ সালে তিনি মৌলিক গণতন্ত্রীদের আস্থামূলক ভােটে পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধান প্রণয়ন করেন। এ সংবিধান মতে সমস্ত ক্ষমতাই ন্যস্ত থাকে প্রেসিডেন্টের হাতে।

১৯৬৫ সালে মৌলিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মিস ফাতেমা জিন্নাহকে কেন্দ্র করে আইয়ুব-বিরােধী জোট গড়ে ওঠে। কিন্তু আইয়ুব খান জয়ী হয়।

১৯৬৫ সালে কাশ্মীরের অধিকার নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের যুদ্ধ বাধে। যুদ্ধের পর আইয়ুব-বিরােধী আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে।

১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ছয়-দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান বাধ্য হয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।

প্রশ্ন সমাধান: যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন

যুক্তফ্রন্ট গঠন (১৯৫৪)

১৯৫৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজাম-এ-ইসলাম, বামপন্থী গণতন্ত্রী দল- এ চারটি বিরােধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণা ২১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।

একুশ দফার প্রধান দফা ছিল পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন। অন্যান্য উল্লেখযােগ্য দফাগুলাে ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদান, বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমীতে রূপান্তর, ভাষা আন্দোলনের শহীদের জন্য শহীদ মিনার নির্মাণ, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটির দিন ঘােষণা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলােকে আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, শ্রমিকদের অধিকারের স্বীকৃতি, পাটশিল্প জাতীয়করণ, পাটচাষিদের ন্যায্য মূল্য প্রদান, বন্যানিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ, সেচ পরিকল্পনা গ্রহণ, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন ইত্যাদি।

যুক্তফ্রন্ট- এর নেতৃত্বে ছিলেন এ. কে. ফজলুল হক, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী, মাওলানা আতাহার আলী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নির্বাচনী সফরকালে তাঁরা ২১ দফা কর্মসূচি প্রচার করেন এবং জনগণকে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে তােলেন।

১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন

সর্বজনীন ভােটাধিকার এবং স্বতন্ত্র নির্বাচকমণ্ডলী- এ ভিত্তিতে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক আইন পরিষদের মােট ৩০৯টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২৩টি আসন লাভ করে। অন্যান্য আসনগুলাের মধ্যে মুসলিম লীগ ৯টি আসন, নির্দলীয় সদস্যগণ ৪টি এবং খেলাফত রাব্বানী ১টি আসন লাভ করে। এ নির্বাচনে ৭২টি আসন অমুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত ছিল।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

নির্বাচনের তাৎপর্য

১। এ নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ নির্বাচনে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

২। এ নির্বাচন ছিল মূলত পূর্ব বাংলার জনতার বিজয়। তাদের এ জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনার ফলে স্বাধীন ও  সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য হয়।

৩। এ নির্বাচন প্রমাণ করেছে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণই এ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে প্রত্যাখ্যান করে।

৪। এ নির্বাচনে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলেই ঐক্যবদ্ধ ছিল।

৫। এ নির্বাচন পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগের শাসনের অবসান ঘটায়।

যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা

নির্বাচনের পর ২৫শে মার্চ পূর্ব বাংলায় গভর্নর চৌধুরী খালেকুজ্জামান ফজলুল হককে মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানান। ২রা এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। পরে তা সম্প্রসারিত হয়। এর সর্বমােট সদস্যসংখ্যা ছিল ১৪ জন। হক সাহেব হলেন মুখ্যমন্ত্রী। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যক্তিগত রেষারেষি এবং মন্ত্রিত্ব নিয়ে বিরােধ দেখা দেয়। তদুপরি মুসলিম লীগের চক্রান্তে যুক্তফ্রন্ট বেশি দিন টিকতে পারেনি।

১৯৫৪ সালের মে মাসে ফজলুল হক কলকাতা ভ্রমণে গিয়ে অসতর্কভাবে এমন সব বক্তব্য রাখেন যা পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠীর কাছে গ্রহণযােগ্য ছিল না। ইতিমধ্যে আদমজি জুট মিলস এবং চন্দ্রঘােনা পেপার মিলে বাঙালি ও বিহারি শ্রমিকদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়। এতে বহু শ্রমিক নিহত হয়। এ অজুহাতে ১৯৫৪ সালের ৩০শে মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল ঘােষণা করে। এভাবে পূর্ব বাংলায় সংসদীয় গণতন্ত্রের অবসান হয়।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment